পদমর্যাদা শুধু চাকরিরতদের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ- সংবাদ ভাষ্য by মুনতাসীর মামুন
ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্স সব দেশেই কমবেশি আছে। থাকতে হয় হয়ত। রাষ্ট্র গঠন যেদিন থেকে হয়েছে, রাষ্ট্রাচারের উদ্ভবও তখন। ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্স হায়ারার্কি নিয়ন্ত্রণ করে।
রাষ্ট্রাচারে হায়ারার্কি, উচ্চপর্যায় সব সময় রাখতে চায়, যেন এই হায়ারার্কি না থাকলে সবকিছু ভেঙ্গে পড়বে।ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্স না থাকলে কী হয়? আমাদের এবং বাংলাদেশের ১৫ কোটি ৯৯ লাখ ৯৯ হাজার লোকের কিছুই আসে যায় না। কিন্তু ঐ যে, এক হাজার তাদের আসে যায় কারণ তাদের জীবনের সমসত্ম আশা আকাঙ্ৰা ঐ ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্সেই নিহিত। কে আগে কে পরে।
বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্রে ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্স নিয়ে এত মাতামাতি নেই। মাথাও ঘামায় না কেউ। খুব ফর্মাল কিছু হলে সেই প্রেসিডেন্স মানা হয়। কিন্তু বাংলাদেশে ১৯৭৫ থেকে ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্স নিয়ে ঝামেলা হচ্ছে। আমলাতন্ত্রে, কোন কোন ৰেত্রে আমাদের মতো আদার ব্যাপারীদের ওপরও তা অভিঘাত হানছে। এর কারণ, আমাদের এখানে ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্স ১৯৭৫ সাল থেকে ব্যবহৃত হচ্ছে অপ্রিয়, বেআইনী, বর্বর আধিপত্য বিসত্মারের জন্য। সম্প্রতি, হাইকোর্ট বর্তমান ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্স অবৈধ বলে ঘোষণা করেছে, নতুনভাবে ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্স তৈরির নির্দেশ দিয়েছে, এ জন্য কিছু দিক নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। এ ধরনের মামলা ও রায় বাংলাদেশে প্রথম। এ রায়ের সব পর্যালোচনার সঙ্গে আমরা একমত নই কিন্তু, আদেশের স্পিরিটটিকে সমর্থন করি। অধিকাংশ মানুষই করে।
১৯৯৫ সালে আওয়ামী লীগ যখন ৰমতায় আসে তখন এই ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্সের কথা তুলেছিলাম, লিখেছিলাম, সংসদেও এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল, তারপর বিষয়টি চাপা পড়ে গিয়েছিল। এর আগেও যে ঐ বিষয় নিয়ে লিখতে বাধ্য হইনি তা নয়। আমাদের মূল প্রশ্ন ছিল জনপ্রতিনিধিদের স্থান কোথায় হবে? তারা যাদের চাকরি দেয় তাদের নিচে? পরে শুনেছি, আরও উচ্চতর কর্তৃপৰের মনোবাসনাও নাকি তাই। সবচেয়ে বড় কথা সংসদ সদস্যরাও তাই মেনে নিয়েছিলেন। তখন মনে হয়েছিল, আচ্ছা, এত কম সম্মানবোধ নিয়ে একজন কীভাবে জনপ্রতিনিধি হন? অবশ্য, বোধ বিষয়টা বাঙালীর এমনিতেই কম।
২০০৬ সালে ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্স বাতিলের বিরম্নদ্ধে রিট করেন জুডিশিয়াল সার্ভিস এ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব আতাউর রহমান। বিচারপতিদ্বয় যে রায় দিয়েছেন তাতে আটটি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে_
১. সংবিধান দেশের সর্বোচ্চ আইন বলে ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্স করতে গেলে সংবিধানিক পদগুলোকে সামনে রাখতে হবে।
২. সংবিধানে স্বীকৃত ও সংজ্ঞায়িত পদগুলোর মধ্যে রয়েছেন জেলা জজ, অতিরিক্ত জেলা জজ ও তিনবাহিনীর প্রধানেরা। এগুলোও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আসবে।
৩. বিচার বিভাগের অন্য সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবু্যনালের জজ ও স্পেশাল ট্রাইবু্যনালের জজ। তাদের মর্যাদাও হবে জেলা জজদের সমান।
৪. সংবিধানের ১৫২ অনুচ্ছেদে জেলা জজদের সংজ্ঞায় বলা আছে, জেলা জজ বলতে অতিরিক্ত জেলা জজদেরও বোঝায়। তাই তাদেরকে জেলা জজদের ঠিক পরের অবস্থানই দিতে হবে। তাদের পরে থাকবে তিন বাহিনীর প্রধানদের অবস্থান।
৫. চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটদের পদগুলো অতিরিক্ত জেলা জজ পদমর্যাদার বলে তাদেরও সমান মর্যাদায় রাখতে হবে।
৬. আদালত মনে করেন জেলা জজদের তুলনা করা যায় নির্বাহী আইন বিভাগের সদস্যদের সঙ্গে। যেহেতু জেলা জজ বলতে অতিরিক্ত জেলা জজ পদমর্যাদার সব বিচারককেই বোঝায় সেহেতু তাদের সবার অবস্থান হবে তিন বাহিনীর প্রধানদের ওপরে।
৭. সচিবদের পদমর্যাদা হবে তিন বাহিনীর প্রধানদের নিচে।
৮. জেলা জজদের বিষয়ে ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্সে বলা হয়েছিল, তারা তাদের নির্ধারিত কর্মৰেত্রের বাইরে সমান মর্যাদা পাবে না। এখন থেকে জেলা জজরা যে কোন জায়গায় একই পদমর্যাদা পাবে।"
[[আমাদের সময় ৫.২.১০]
এতদিনের ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্স যার ভিত্তি ঔপনিবেশিক মনমানসিকতা তা বাতিলের সিদ্ধানত্ম স্বাভাবিকভাবেই প্রবল মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। "এই রায়কে কেউ কেউ যুগানত্মকারী হিসেবে গণ্য করলেও আরেক অংশ এটাকে মেনে নিতে পারছে না। আইন বিশেষজ্ঞদের মতে এই রায় সঠিক ও যথার্থ হয়েছে। পাশাপাশি সরকারকে বিচার বিশেস্নষণ করে সংশিস্নষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি সুরাহা করতে হবে।" [জনকণ্ঠ ৬.২.১০]
অন্যদিকে প্রাক্তন সামরিক ও বেসামরিক আমলা যাঁদের কয়েকজন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন তাঁদের মতে, এই রায় "নির্বাহী বিভাগের কর্মকা-ের ওপর সরাসরি হসত্মৰেপ"' এবং "আদালতের এ আদেশ কার্যকর হলে দেশে বিশৃঙ্খল অবস্থা হবে।" তারা আরও বলেন, "পদমর্যাদা ঠিক করে দেয়া হাইকোর্টের কাজ নয়।" [আ. সময়, ৬.২.১০]
আমরা যারা রাষ্ট্রাচারের বাইরে আমজনতা যাদের বলা হয়, তাদের মতে, ঔপনিবেশিক মানসের প্রভাবে তৈরি করা ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স যুগোপযোগী করা বাঞ্ছনীয়। দিন বদলের দিক থেকেও। সে দিক থেকে এই রায়ের মূল স্পিরিট সমর্থনযোগ্য কিন্তু রায়টি আরও ভারসাম্যপূর্ণ হলে ভাল হতো। যদি এ দেশটি পুরোপুরি সভ্য, উন্নত ও গণতান্ত্রিক হতো, তাহলে এ ধরনের ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্স চালু থাকত না, আদালতে যাওয়ার প্রশ্নও উঠত না। কিন্তু এ দেশ তো তা নয়। আইন অন্ধ মানি, কিন্তু বাসত্মব বিবেচনায় না রাখলে অন্ধ পদে পদে হোঁচট খাবে। কেউ তাকে পথ চলতে সাহায্য করবে না। তা ছাড়া অনেকের মতে, আমলাতন্ত্রের বিশেষ করে সামরিক আমলাতন্ত্রের বিরম্নদ্ধে পুঞ্জীভূত ৰোভের প্রতিফলন দেখা গেছে এই রায়ে। এটি ঠিক নাও হতে পারে। তবে, অধিকাংশের ধারণা তাই-ই এবং বিচারকের রায়ে তো রাগ-অনুরাগ প্রকাশ পাওয়া বাঞ্ছনীয় নয়। তবে, আমলাতন্ত্র যদি অনুভব করে বিশেষ করে সামরিক আমলাতন্ত্র যে সমসত্ম পেশাদারী এবং সাধারণ মানুষরা তাদের ব্যাপারে কী পরিমাণ ৰুব্ধ তাহলে হয়ত তারা সংযমী আচরণ করবে।
এই রায়ের অন্য কতগুলো দিক আছে। এই রায় ও প্রতিক্রিয়া স্পষ্ট করে তুলেছে রাষ্ট্রের তিনটি বাহু_আইন, বিচার ও নির্বাহী বিভাগের মধ্যে দ্বন্দ্ব বিদ্যমান। আরও আশঙ্কার কারণ এই যে, আইন, বিচার ও নির্বাহী বিভাগের কর্মকর্তারা যদি পরমতসহিষ্ণু না হন এবং তাদের পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক না থাকে তবে এই রাষ্ট্র পরিচালনা সহজ হবে না। আমরা মনে করি, তিনটি বিভাগেরই কর্মরতরা এমন অনেক কাজ করেছেন যা রাষ্ট্র সমাজের জন্য ৰতিকারক। সুতরাং পরস্পরের প্রতি ৰোভ আরও কেদ তুলে আনবে যা কারও জন্য ভাল নয়। প্রতিটি বিভাগের প্রতিই আমাদের ৰোভ আছে। জনপ্রতিনিধিরা কি আমলাতান্ত্রিক সরকারকে সহায়তা করেননি? করেছেন! বিচার বিভাগ কি অগণতান্ত্রিক শাসনকে বৈধ বলেনি? বলেছে। নির্বাহী বিভাগ কি সব সময় অগণতান্ত্রিক শাসনের হয়ে কাজ করেনি? করেছে। অন্যদিকে আমরা যাদের রাষ্ট্রাচারে কোন পদমর্যাদা নেই, স্থান নেই তারা এ রাষ্ট্র গঠন থেকে তার গণতান্ত্রিক কাঠামো ফিরিয়ে আনার জন্য শুধু ত্যাগ-তিতিৰা নয়, প্রাণও দিয়েছি।
আমরা লড়াই করেছি, এই রাষ্ট্রে যাতে সিভিল কর্তৃত্ব বজায় থাকে তার জন্য এবং আমাদের কষ্টের ফল ভোগ করছেন এই তিন বিভাগের কর্মকর্তারা। সুতরাং, রাষ্ট্রাচারের বাইরে যাঁরা তাঁদের কথারও গুরম্নত্ব দিতে হবে।
বিচার বিভাগ অনেক সিদ্ধানত্ম দিতে পারে কিন্তু তা কার্যকর করার দায়িত্ব নির্বাহী বিভাগের ওপর। আইন প্রণেতারা আইন করতে পারেন, জনপ্রতিনিধি হিসেবে অনেক নির্দেশ দিতে পারেন, কিন্তু তা উপেৰিত হলে কী করবেন? সুতরাং সব দিক বিবেচনা করেই নতুন ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্স তৈরি করা উচিত এবং তা জরম্নরী।
মৌল বিষয় রাষ্ট্রে নিরস্ত্রদের আধিপত্য থাকতে হবে। নিরস্ত্রদের প্রতিনিধিত্ব করেন জনপ্রতিনিধিরা। সুতরাং রাষ্ট্রে সবার ওপরে স্থান হবে তাদেরই। প্রেসিডেন্ট থেকে এমপি এই ক্রম থাকবে সবার ওপরে। একটি পত্রিকায় দেখলাম, রায়ে এই নির্দেশনা আছে সুপ্রীমকোর্টের প্রধান বিচারপতির মর্যাদা স্পিকারের সমান হবে। এটি গ্রহণযোগ্য নয়। কোন দেশেই তা নেই।
জনপ্রতিনিধি ছাড়া বাকি যারা সরকার থেকে বেতন পান সবাই সিভিল সার্ভেন্ট, তারতম্য থাকতে পারে মাত্র। এখানে সংবিধানের কোন প্রশ্ন নেই। সবাই সেবক এবং সবাই আমাদের কাছে দায়বদ্ধ। প্রধানমন্ত্রী বা সংসদ সদস্যরা আমাদের কাছে দায়বদ্ধ আর আদালতের বিচারকরা দায়বদ্ধ নয় এই দৃষ্টিভঙ্গি সঠিক নয়। সিভিল কর্তৃত্ব সৃষ্টি করে আইন বিভাগ এবং তা কার্যকর হবে নির্বাহী বিভাগের মাধ্যমে। সুতরাং সচিবদের স্থান হবে নির্বাহীদের মধ্যে। ক্রমানুসারে কেবিনেট সচিব হয়ত আগে আসতে পারেন। সামরিক প্রধানরা এবং পুলিশ প্রধানের মর্যাদা সচিবের সমমানের হতে পারে কিন্তু তাঁদের কাজ করতে হবে নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ের সচিবের মাধ্যমে। আগে যে রাষ্ট্রাচার ছিল তাতে তিন বাহিনী প্রধান ও কেবিনেট সচিবের পদমর্যাদা ছিলসংসদ সদস্যদের ওপরে। এটি কোনক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটি কীভাবে সম্ভব যেখানে সংসদীয় কমিটি তাদের ডেকে আনতে পারে? এটি আমাদের নয়, সরকারের লজ্জা। এটি সংসদ অবমাননার শামিল। আমরা সংসদ সদস্যদের অনুরোধ করব আপনারা আমাদের সম্মান অৰুণ্ন রাখুন এবং সেই সম্মান অৰুণ্ন রাখতে হলে বর্তমান ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্সে নিজেদের স্থান করে নেবার জন্য অবশ্যই আপনাদের সোচ্চার হতে হবে। এরপরে আর কোন পদের মর্যাদা বা ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্সে রাখা অপ্রয়োজনীয়। এখানে উলেস্নখ্য, হাইকোর্টের বিচারপতি, সুপ্রীমকোর্টের বিচারপতি ও প্রধান বিচারপতির মর্যাদা আমরা মনে করি যথাযথভাবেই আছে। তাঁদের কোন রকম হেয় করা হয়নি।
স্থানীয় পর্যায়ে পদমর্যাদা আবশ্যক হয়ে পড়ে। জেলা জজ স্থানীয় একটি পদ, জাতীয় পদ নয়। ডেপুটি কমিশনার পদটিও সে রকম। এটিকে সেভাবে বিবেচনা করাই যুক্তিযুক্ত। একজন সচিব একটি মন্ত্রণালয়ের (জাতীয়) প্রধান নির্বাহী, সেনাপ্রধানও তাই। স্থানীয় পর্যায়ে ডিসি বা জেলা জজ একই মর্যাদার হতে পারেন বা জেলা জজ একধাপ উপরে থাকতে পারেন কিন্তু জাতীয় ৰেত্রে পারেন না। জেলা জজের পদও একটি চাকুরি। এ বিষয়টি বিবেচনায় রাখা বাঞ্ছনীয়। কন্ট্রোলার অব অডিট এ্যান্ড এ্যাকাউন্টস বা পাবলিক সার্ভিস কমিশনের প্রধানের (খুব সম্ভব) পদও তো সাংবিধানিক। তাঁরা কোন পদমর্যাদা পাবেন? এর বাইরে যাঁরা রাষ্ট্রে অধিক সম্মানীয় তাদের মর্যাদা কী হবে এ প্রশ্নগুলোরও আসবে। একজন বীরোত্তম বা একজন একুশে/স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্তের অবস্থান কোথায় হবে সেটিও তো নির্ধারিত হতে হয়। অপ্রাসঙ্গিক হলেও একটি কথা বলি। রাষ্ট্রীয় অনেক অনুষ্ঠানে দেখা যায়, সচিব টচিব তো বটেই কিন্তু জাতীয় কোন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব বা জাতীয় পদকধারীরা নিমন্ত্রিত হন না। সবাইকে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না কিন্তু কিছু তো করা যাবে। পৃথিবীর কোন সভ্য দেশে কিন্তু এমনটি ঘটে না। হোয়াইট হাউসে রাষ্ট্রীয় ভোজসভায় সচিব বা আমলাদের থেকে শিল্প সংস্কৃতি ও পেশাজীবী জগতের মান্য ব্যক্তিদের নিমন্ত্রণ করা হয়, কারণ তাতে ভোজসভার গুরম্নত্ব বাড়ে।
আদালতের রায়ের পরিপ্রেৰিতে বলতে হয়, আদালতের আরেকটি বিষয় বিবেচনায় রাখলে ভাল হয়।
"ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্স অনুমোদন করেন রাষ্ট্রপতি নিজেই। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এটি প্রণয়ন করা হয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সারসংৰেপ তৈরি করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুমোদনের জন্য পাঠায়। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর রাষ্ট্রপতির কাছে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়। সে হিসেবে ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্স জারি হয় রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে। আর রাষ্ট্রপতি তাঁর কোন কাজের জন্য আদালতের কাছে জবাবদিহি করবেন না।" (দৈনিক জনকণ্ঠ, ৫-২-১০)
আমাদের মূল কথা, বর্তমান ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্স বদলাতে হবে এর কোন বিকল্প নেই। এবং নতুন ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্সে যাতে সিভিল কর্তৃত্ব প্রতিফলিত হয় তার দিকে নজর রাখতে হবে। রাষ্ট্রে কিছু পদের মর্যাদা ঠিক করা যেতে পারে ৪৯/৫০টি পদ নয় এবং সব বিভাগের সেন্টিমেন্টের কথা মনে রেখেই তা প্রণীত হতে হবে। এই পদমর্যাদা সংবিধান বা সাধারণ মানুষের কাছে বড় বিষয় নয়, যারা চাকরি করেন তাঁদের জন্য বড় বিষয়। পঞ্চম সংশোধনী বা অষ্টম সংশোধনীর মতো এসব রাষ্ট্রাচারের বিষয় রাষ্ট্রে বা সমাজে তেমন অভিঘাত সৃষ্টি করে না। আদালত অনেক নির্দেশনা। পর্যবেৰণ/পরামর্শ দিতে পারে কিন্তু তা কার্যকরের ৰমতা জনপ্রতিনিধি ও নির্বাহীদের প্রতি। এটি বিবেচনায় রেখে আমরা আদালতের এমন পরামর্শও দিক নির্দেশনা। রায় চাই যা তিনটি বিভাগের সম্পর্ক আরও সংঘাতময় ও জটিল করে তুলবে না।
সুতরাং, রাষ্ট্রাচারের বাইরে যাঁরা তাঁদের কথারও গুরম্নত্ব দিতে হবে।
বিচার বিভাগ অনেক সিদ্ধানত্ম দিতে পারে কিন্তু তা কার্যকর করার দায়িত্ব নির্বাহী বিভাগের ওপর। আইন প্রণেতারা আইন করতে পারেন, জনপ্রতিনিধি হিসেবে অনেক নির্দেশ দিতে পারেন, কিন্তু তা উপেৰিত হলে কী করবেন? সুতরাং সব দিক বিবেচনা করেই নতুন ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্স তৈরি করা উচিত এবং তা জরম্নরী।
মৌল বিষয় রাষ্ট্রে নিরস্ত্রদের আধিপত্য থাকতে হবে। নিরস্ত্রদের প্রতিনিধিত্ব করেন জনপ্রতিনিধিরা। সুতরাং রাষ্ট্রে সবার ওপরে স্থান হবে তাদেরই। প্রেসিডেন্ট থেকে এমপি এই ক্রম থাকবে সবার ওপরে। একটি পত্রিকায় দেখলাম, রায়ে এই নির্দেশনা আছে সুপ্রীমকোর্টের প্রধান বিচারপতির মর্যাদা স্পিকারের সমান হবে। এটি গ্রহণযোগ্য নয়। কোন দেশেই তা নেই।
জনপ্রতিনিধি ছাড়া বাকি যারা সরকার থেকে বেতন পান সবাই সিভিল সার্ভেন্ট, তারতম্য থাকতে পারে মাত্র। এখানে সংবিধানের কোন প্রশ্ন নেই। সবাই সেবক এবং সবাই আমাদের কাছে দায়বদ্ধ। প্রধানমন্ত্রী বা সংসদ সদস্যরা আমাদের কাছে দায়বদ্ধ আর আদালতের বিচারকরা দায়বদ্ধ নয় এই দৃষ্টিভঙ্গি সঠিক নয়। সিভিল কর্তৃত্ব সৃষ্টি করে আইন বিভাগ এবং তা কার্যকর হবে নির্বাহী বিভাগের মাধ্যমে। সুতরাং সচিবদের স্থান হবে নির্বাহীদের মধ্যে। ক্রমানুসারে কেবিনেট সচিব হয়ত আগে আসতে পারেন। সামরিক প্রধানরা এবং পুলিশ প্রধানের মর্যাদা সচিবের সমমানের হতে পারে কিন্তু তাঁদের কাজ করতে হবে নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ের সচিবের মাধ্যমে। আগে যে রাষ্ট্রাচার ছিল তাতে তিন বাহিনী প্রধান ও কেবিনেট সচিবের পদমর্যাদা ছিলসংসদ সদস্যদের ওপরে। এটি কোনক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটি কীভাবে সম্ভব যেখানে সংসদীয় কমিটি তাদের ডেকে আনতে পারে? এটি আমাদের নয়, সরকারের লজ্জা। এটি সংসদ অবমাননার শামিল। আমরা সংসদ সদস্যদের অনুরোধ করব আপনারা আমাদের সম্মান অৰুণ্ন রাখুন এবং সেই সম্মান অৰুণ্ন রাখতে হলে বর্তমান ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্সে নিজেদের স্থান করে নেবার জন্য অবশ্যই আপনাদের সোচ্চার হতে হবে। এরপরে আর কোন পদের মর্যাদা বা ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্সে রাখা অপ্রয়োজনীয়। এখানে উলেস্নখ্য, হাইকোর্টের বিচারপতি, সুপ্রীমকোর্টের বিচারপতি ও প্রধান বিচারপতির মর্যাদা আমরা মনে করি যথাযথভাবেই আছে। তাঁদের কোন রকম হেয় করা হয়নি।
স্থানীয় পর্যায়ে পদমর্যাদা আবশ্যক হয়ে পড়ে। জেলা জজ স্থানীয় একটি পদ, জাতীয় পদ নয়। ডেপুটি কমিশনার পদটিও সে রকম। এটিকে সেভাবে বিবেচনা করাই যুক্তিযুক্ত। একজন সচিব একটি মন্ত্রণালয়ের (জাতীয়) প্রধান নির্বাহী, সেনাপ্রধানও তাই। স্থানীয় পর্যায়ে ডিসি বা জেলা জজ একই মর্যাদার হতে পারেন বা জেলা জজ একধাপ উপরে থাকতে পারেন কিন্তু জাতীয় ৰেত্রে পারেন না। জেলা জজের পদও একটি চাকুরি। এ বিষয়টি বিবেচনায় রাখা বাঞ্ছনীয়। কন্ট্রোলার অব অডিট এ্যান্ড এ্যাকাউন্টস বা পাবলিক সার্ভিস কমিশনের প্রধানের (খুব সম্ভব) পদও তো সাংবিধানিক। তাঁরা কোন পদমর্যাদা পাবেন? এর বাইরে যাঁরা রাষ্ট্রে অধিক সম্মানীয় তাদের মর্যাদা কী হবে এ প্রশ্নগুলোরও আসবে। একজন বীরোত্তম বা একজন একুশে/স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্তের অবস্থান কোথায় হবে সেটিও তো নির্ধারিত হতে হয়। অপ্রাসঙ্গিক হলেও একটি কথা বলি। রাষ্ট্রীয় অনেক অনুষ্ঠানে দেখা যায়, সচিব টচিব তো বটেই কিন্তু জাতীয় কোন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব বা জাতীয় পদকধারীরা নিমন্ত্রিত হন না। সবাইকে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না কিন্তু কিছু তো করা যাবে। পৃথিবীর কোন সভ্য দেশে কিন্তু এমনটি ঘটে না। হোয়াইট হাউসে রাষ্ট্রীয় ভোজসভায় সচিব বা আমলাদের থেকে শিল্প সংস্কৃতি ও পেশাজীবী জগতের মান্য ব্যক্তিদের নিমন্ত্রণ করা হয়, কারণ তাতে ভোজসভার গুরম্নত্ব বাড়ে।
আদালতের রায়ের পরিপ্রেৰিতে বলতে হয়, আদালতের আরেকটি বিষয় বিবেচনায় রাখলে ভাল হয়।
"ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্স অনুমোদন করেন রাষ্ট্রপতি নিজেই। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এটি প্রণয়ন করা হয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সারসংৰেপ তৈরি করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুমোদনের জন্য পাঠায়। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর রাষ্ট্রপতির কাছে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়। সে হিসেবে ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্স জারি হয় রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে। আর রাষ্ট্রপতি তাঁর কোন কাজের জন্য আদালতের কাছে জবাবদিহি করবেন না।" (দৈনিক জনকণ্ঠ, ৫-২-১০)
আমাদের মূল কথা, বর্তমান ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্স বদলাতে হবে এর কোন বিকল্প নেই। এবং নতুন ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্সে যাতে সিভিল কর্তৃত্ব প্রতিফলিত হয় তার দিকে নজর রাখতে হবে। রাষ্ট্রে কিছু পদের মর্যাদা ঠিক করা যেতে পারে ৪৯/৫০টি পদ নয় এবং সব বিভাগের সেন্টিমেন্টের কথা মনে রেখেই তা প্রণীত হতে হবে। এই পদমর্যাদা সংবিধান বা সাধারণ মানুষের কাছে বড় বিষয় নয়, যারা চাকরি করেন তাঁদের জন্য বড় বিষয়। পঞ্চম সংশোধনী বা অষ্টম সংশোধনীর মতো এসব রাষ্ট্রাচারের বিষয় রাষ্ট্রে বা সমাজে তেমন অভিঘাত সৃষ্টি করে না। আদালত অনেক নির্দেশনা। পর্যবেৰণ/পরামর্শ দিতে পারে কিন্তু তা কার্যকরের ৰমতা জনপ্রতিনিধি ও নির্বাহীদের প্রতি। এটি বিবেচনায় রেখে আমরা আদালতের এমন পরামর্শও দিক নির্দেশনা। রায় চাই যা তিনটি বিভাগের সম্পর্ক আরও সংঘাতময় ও জটিল করে তুলবে না।
No comments