হাসিনা কিলিং মিশনের বৈঠক হয়েছিল হাওয়া ভবনেই!- মুফতি হান্নানের সেই সাৰাতকারটি এবার ওয়েবসাইটে

একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার অন্যতম আসামি মুফতি হান্নানের বহুল আলোচিত সেই সাৰাতকার (প্রোট্রর্েট অব জিহাদ) এখন ওয়েবসাইটে পাওয়া যাচ্ছে। ওয়েবসাইটের এই সাৰাতকার দেখলে যে কেউ মনে করবেন, স্বাভাবিক পরিস্থিতিতেই মুফতি হান্নান এই বক্তব্য দিয়েছেন।
সাৰাতকারে তার বক্তব্য একেবারেই সাবলীল। মুফতি হান্নানের বলার ধরন দেখলে মানবিক যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা বলবেন, নিঃসন্দেহে এই বক্তব্য কোন রকম ভয়ভীতি কিংবা প্ররোচনা ব্যতিরেকে স্বাভাবিক অবস্থায়ই দিয়েছেন। দেশের বিশিষ্ট সাংবাদিক-কলামিস্ট মুক্তিযুদ্ধ ও ধর্মীয় জঙ্গীবাদ বিষয়ক গবেষক শাহরিয়ার কবির নির্মিত 'প্রোর্ট্রেট অব জিহাদ' কিংবা জিহাদের প্রতিকৃতি নামে ওই ভিডিও ডকুমেন্টারিতে ধারণ করা হয়েছে ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত বাংলাদেশে হরকত-উল-জিহাদের নেতা মুফতি হান্নান। সাৰাতকারে বিএনপি-জামায়াত জোট শাসনামলে ৰমতাসীন দলের অঘোষিত যুবরাজের হাওয়া ভবনে হামলার সিদ্ধানত্ম হয়। এই সভায় জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, বঙ্গবন্ধুর খুনী নূর চৌধুরীসহ ধর্মান্ধ জঙ্গী রাজনীতির শীর্ষ তিন-চার নেতার উপস্থিতির কথা তিনি বলেছেন। িি.িনফরহভড়২৪.পড়স,িি.িংযঁপযরহঃধ.পড়স শীর্ষক ওয়েবসাইটে মুফতি হান্নানের সাৰাতকারটি দেখা যাবে।
লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবিরের এই প্রামাণ্যচিত্রে ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার অপারেশনাল কমান্ডার হুজি নেতা মুফতি হান্নান, হাওয়া ভবনে বৈঠক হওয়া থেকে শুরম্ন করে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম জিয়ার পুত্র তারেক রহমান, তার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু, চারদলীয় জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ এবং বঙ্গবন্ধু হত্যার পলাতক আসামি মেজর নূর জড়িত থাকার চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়ে জবানবন্দী প্রদান করেছে।
লেখক ও সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির নির্মিত 'পোর্ট্রেট অব জিহাদ' বা 'জিহাদের প্রতিকৃতি' নামের প্রামাণ্য তথ্যচিত্রে অপারেশনাল কমান্ডার হুজি নেতা মুফতি হান্নানের পুরো জবানবন্দীটিও ধারণ করা হয়েছে। হামলার মূল ষড়যন্ত্রই ছিল শেখ হাসিনাকে নিশ্চিহ্ন করা। যার মূল পরিকল্পনায় ছিলেন বঙ্গবন্ধুর খুনী অবসরপ্রাপ্ত মেজর নূর এবং তারেক জিয়া নিজে। এ ছাড়া হারিছ চৌধুরী এবং জামায়াত নেতা মুজাহিদও জড়িত ছিলেন। চারটি গোপন বৈঠকের মাধ্যমেই ২১ আগস্ট হামলার পুরো চক্রানত্ম করা হয় হাওয়া ভবনে। ১৪ আগস্ট হাওয়া ভবনের বৈঠকে দেয়া তিনটি প্রসত্মাবের একটিকে অনুসরণ করে চালানো হয় মূল হামলা।
অত্যনত্ম সাবলীল ভঙ্গিতে দেয়া জবানবন্দীতে এই অপারেশনের মূল কমান্ডার মুফতি হান্নান নিজেই আবার অপারেশন ব্যর্থ হবার কারণও বর্ণনা করেছেন। বিশেষ এক স্থানে গোপনে ধারণ করা সাাতকারে মুফতি হান্নান ফাঁস করে দেয় এক সময়ের আলোচিত 'হাওয়া ভবনে' অনুষ্ঠিত এই হত্যা চক্রানত্মের গোপন বৈঠকের কথা।
হাওয়া ভবনের ওই বৈঠকে সে সময়ের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জ্যেষ্ঠপুত্র তারেক রহমান, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও বঙ্গবন্ধুর খুনী ফ্রিডম পার্টি নেতা মেজর নূর এবং স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকে শেখ হাসিনাকে মেরে ফেলার নৃশংস সিদ্ধানত্ম নেয়া হয়। বৈঠকের সিদ্ধানত্মের বিষয়ে মুফতি হান্নান তার সাাৎকারে জানায়, শেখ হাসিনাকে মেরে ফেলতে হবে। তাঁকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করা যাবে না। মুজাহিদ সাহেব শেখ হাসিনাকে ইসলামের বিরম্নদ্ধে ষড়যন্ত্রকারী এবং স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাবর তাঁকে দেশ থেকে চিরতরে বিদায় করে দেয়া বা শেষ করে দেয়া উচিত বলে মনত্মব্য করেন। মেজর নূর তিন রকমের পরামর্শ দেন। যার মধ্যে জনসভায় আক্রমণ করে তাঁকে শেষ করে দেয়ার পদ্ধতিটিই সকলের মনোপূত হওয়ায় তাঁকে হত্যার সিদ্ধানত্ম গৃহীত হয়।
মুফতি হান্নানের ভাষ্য অনুযায়ী, ২১ আগস্টে শেখ হাসিনা বেঁচে যাওয়ায় অপারেশনকে ব্যর্থ বলে ধরা হয়। অপারেশন ব্যর্থ হওয়া নিয়ে মুফতি হান্নান বলেছেন, তখন আমি আমাদের দারম্নল আরকান অফিসে ছিলাম। এর আগে ২০ আগস্ট হামলার জন্য তৎকালীন উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু তার ভাই তাজউদ্দীন, হরকত-উল-জিহাদ নেতা আবু তাহের, জান্দাল ও কাজলের কাছে ১৫টি গ্রেনেড দেন। অর্থ ও জনবল দিয়ে সবরকম সাহায্য করার ওয়াদাও তিনি দিয়েছিলেন। সকালে অফিসে ব্রিফিংয়ের পর একটি কালো ব্যাগে গ্রেনেডগুলো ভরে দুপুর ১২টায় টার্গেটের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরম্ন হয়। জনসভার স্টেজ কোথায় হবে, তা ঠিক ছিল না। হঠাৎ করে ভ্রাম্যমাণ স্টেজ হয়ে যাওয়ায় হামলায় কোন ডিসিপিস্নন ছিল না। হামলা করার পর হামলাকারীরা মোবাইলে জানায় সেখানে কি ঘটেছে। অতিরিক্ত ভিড় এবং স্টেজ কোথায়, তার সঠিক তথ্য না থাকাতেই মূলত হামলা টার্গেট পর্যনত্ম পেঁৗছতে ব্যর্থ হয়। সে সময় জনসভার দৰিণ ও পশ্চিম দিকে হামলাকারীরা অবস্থান নেয় এবং জামায়াতের সক্রীয় ১৫ জনের মতো হামলায় অংশ নেন বলে তিনি জানান। প্রচ- ভিড়ের কারণে কারও সঙ্গে কারও যোগাযোগ ঠিকভাবে না হওয়াতেও সমস্যা হয়েছিল। এর মধ্যেই দৰিণ দিকে হঠাৎ একটি গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ফেলায় যে যার হাতের গ্রেনেড শূন্য ছুড়ে মারা আরম্ভ করে। যে কারণে অনেক গ্রেনেডই ওপরে ফেটে যায়। তার বর্ণনা মতে, ২০-৩০টি গ্রেনেড মানুষকে সঠিকভাবে আঘাত হানতে পারেনি। যেগুলো ওপরেই বিস্ফোরিত হয়েছিল। একই সময় রাইফেলের গুলি চালানো হলেও হাসিনার কোন সমস্যা হয়নি বলে আমরা তখনই জানতে পারি । এরপর হামলাকারীরা বেরিয়ে চলে আসে।

No comments

Powered by Blogger.