জঙ্গী অর্থায়ন ঠেকাতে সংশোধন হচ্ছে মানি লন্ডারিং আইন- পুলিশের দেয়া প্রসত্মাব বিবেচনা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক by মিজান চৌধুরী

অবৈধ লেনদেন, বিদেশে টাকা পাচার ও জঙ্গী অর্থায়ন ঠেকাতে সংশোধন হচ্ছে মানিলন্ডারিং আইন! গোয়েন্দা সংস্থা স্পেশাল ব্রাঞ্চ ও পুলিশ বিভাগের দেয়া সংশোধনের প্রস্তাবটি বিবেচনা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বিশেষ করে পাচারকৃত অর্থ সংক্রান্ত অপরাধ ঘটনায় গোয়েন্দা ও পুলিশের তদনত্ম প্রতিবন্ধকতা দূর করা হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয় বলেছে, মানিলন্ডারিং আইন সংশোধনের আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতামত চাওয়া হয়েছে। ওই মতামতের ভিত্তিতে আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হবে।
জঙ্গী অর্থায়ন, বিদেশে পাচারকৃত অর্থ ও অবৈধ লেনদেন তদন্তের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে গোয়েন্দা ও পুলিশ বিভাগের। মানিলন্ডারিং আইনের অনেক ধারায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মতা কম দেয়া আছে। এর ফলে পাচারকৃত অর্থ সংক্রানত্ম তথ্য নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয়হীনতা সৃষ্টি হয়েছে। পাচারকৃত অর্থ সংক্রানত্ম অপরাধ তদনত্মের কোন তথ্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে না দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। অন্যদিকে একটি নামে মাত্র আইন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোন মনিটরিং করছে না এমন অভিযোগ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর উর্ধতন কর্মকর্তাদের। তাঁদের মতে মানিলন্ডারিং আইন সংশোধন না করা হলে তদনত্ম কাজে মারাত্নক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। আইনগত জটিলতার কারণে ভিকটিম তির শিকার হচ্ছে।
সম্প্রতি পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার ভেতরে এ আইনটি সংস্কারের গুরম্নত্ব তুলে একাধিক বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠকের পর আইনের প্রচলিত কয়েকটি ধারা সংশোধনের সুপারিশ করে গোয়েন্দা সংস্থা স্পেশাল বিভাগ ও পুলিশের প্রধান কার্যালয় থেকে অর্থমন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করেছে। ওই প্রসত্মাবে মানিলন্ডারিং আইনের ২(গ), ৯(১), ১২(১) ও ২৪(১) ধারার কিছু সংশোধনের প্রস্তাব জানানো হয়।
এ ব্যাপারে আইজিপি নুর মোহাম্মদ জনকণ্ঠকে জানান, বর্তমান প্রোপটে মানিলন্ডারিং আইনটি সংশোধন করা প্রয়োজন। এ আইন সংশোধন নিয়ে পুলিশ বিভাগের মধ্যে একটি বৈঠক হয়েছে। সেখানে আইনটি সংশোধনের গুরম্নত্ব নিয়ে আলোচনা হয়। বর্তমান মানিলন্ডারিং আইনে অর্থ পাচার সংক্রানত্ম মামলা পুলিশের নিরপে তদনত্মে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। আইনটি সংশোধন করা হলে পুলিশ বিভাগের প েঅর্থ সংক্রানত্ম মামলার েেত্র আরও বেশি সুবিধা হবে। বিভিন্ন দিক বিবেচনা করেই পুলিশ বিভাগ থেকে এ আইন সংশোধনের প্রসত্মাব দেয়া হয়।
মানিলন্ডারিং আইনের প্রচলিত ধারা ২(১) নম্বরে বলা আছে তদনত্মকারী সংস্থা অর্থ দুর্নীতি দমন কমিশন আইন-০৪ এর অধীনে গঠিত দুর্নীতি দমন কমিশন পুলিশ বাহিনী বা সরকার অনুমোদিত অন্য কোন সংস্থা এবং কমিশনের নিকট থেকে মতা প্রাপ্ত কোন কর্মকর্তাও ইহার অনত্মর্ভুক্ত হবেন। পুলিশের সংশোধনী প্রসত্মাবে বলা হয়, মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন সজ্ঞায়িত সম্পৃক্ত অপরাধ হিসেবে বর্ণিত ১৬টির মধ্যে কেবল দুর্নীতি ও ঘুষ ব্যতীত অন্যান্য অপরাধ পুলিশের তদনত্মের মধ্যে রয়েছে। উক্ত আইনে বর্ণিত সকল অপরাধ পুলিশ বাহিনী দিয়ে তদনত্ম হওয়া বাঞ্ছনীয়।
প্রচলিত আইনের ৯(১) ধারায় উলেস্নখ আছে এই আইনের অধীনে অপরাধসমূহ দুর্নীতি দমন কমিশন আইন-০৪ এর অধীনে তফসিলভুক্ত অপরাধের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশন, পুলিশ বাহিনী বা সরকার অনুমোদিত অন্য কোন সংস্থা তদনত্ম করবে। পুলিশের সংশোধনী প্রসত্মাবে বলা হয় কোন হত্যাকান্ড সংঘটিত হলে ফৌজদারী কার্যবিধি অনুসারে পুলিশ বাহিনী তদনত্ম করার বিধান রয়েছে। কিনত্মু এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত অবৈধ ভাবে প্রেরিত পাচারকৃত অর্থের বিষয়ে দুদকের অনুমোদন ছাড়া পুলিশ বাহিনী কর্তৃক তদনত্ম করার অবকাশ নেই। ফলে নিরপ তদনত্মে নিয়মিত বাধার সৃষ্টি হচ্ছে। আইনগত জটিলতার কারণে ভিকটিম তিগ্রসত্ম হচ্ছেন। অন্যদিকে সম্ভাব্য দায়ী ব্যক্তি লাভবানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। এই আইনের সংশোধনের প্রয়োজন।
প্রচলিত আইনের ২১(১) ধারায় বলা আছে, ফৌজদারী কার্যবিধি যা কিছু থাকুক না কেন দুর্নীতি দমন কমিশন, পুলিশ বাহিনী বা সরকার অনুমোদিত ক্রমে অন্য কোন সংস্থা সরাসরি আবেদন বা দুনর্ীতি দমন কমিশন কতর্ৃক কোন আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে প্রদত্ত অনুমোদন পত্র ব্যতিরেকে কোন আদালত এই আইনের অধীনে কোন অপরাধ বিচারকে আমলে গ্রহণ করবে না। সংশোধিত প্রসত্মাবে পুলিশ বিভাগ থেকে বলা হয়, প্রতিবেশী দেশসহ বিশ্বের প্রায় সকল দেশে মানিলন্ডারিং সংক্রানত্ম মামলাগুলোর তদনত্ম পুলিশ করে। পুলিশের পাশাপাশি কোন কোন দেশে ২/১টি সংখ্যা তদনত্ম করে। কিনত্মু পুলিশ বাহিনী অর্থ পাচারের তদনত্ম করে না এমন নজির কোথাও নেই।
মানিলন্ডারিং আইনের ২৪(১) ধারায় বলা আছে এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণে বাংলাদেশ ব্যাংক পুলিশ বাহিনী বা সরকার অনুমোদন ক্রমে কোন সংস্থার ফাইনান্সিয়াল গোয়েন্দা ইউনিট (এফআইইউ) নামে একটি ইউনিট থাকবে। সংশোধনী প্রসত্মাবে বলা হয় মানিলন্ডারিং আইনটি কার্যকর, শক্তিশালী করণ ও সবের্াচ্চ সরকার সরাসরি সম্পৃক্তকরণের কারণে এ প্রধান তদনত্ম প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা গুরম্নত্ব দেয়ার স্বার্থে উক্ত আইনে বর্ণিত সংশোধন দরকার।
এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মানিলন্ডারিং বিভাগের মহাব্যবস্থাপকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি। অফিসিয়াল প্রশিণে তিনি ঢাকার বাইরে অবস্থান করছেন। তবে ওই বিভাগের অপর এক কর্মকর্তা জানান, পুলিশের প্রসত্মাবটি বিবেচনাধীন রয়েছে। তাদের অভিযোগ জঙ্গী অথায়ন ঠেকাতে ও তাদের চিহ্নিত করতে পুলিশী জঙ্গীবাদের পাওয়া তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে সমন্বয় করছে না স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এজন্য দেশে অবৈধ লেনদেন, জঙ্গী অথর্ায়ন ঠেকানো যাচ্ছে না। এেেত্র একাধিকবার চিঠি দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে তথ্য চেয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, পাচারকৃত অর্থের তথ্য আদান-প্রদান ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প থেকে চুক্তি করার জন্য সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া, জাপান, মালদ্বীপ, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য, আমিরাত, হংকং, কানাডা, মরিশাস, ভারত, নেপাল, নরওয়ে, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, মিয়ানমার, ফিলিপিন্স, অস্ট্রেলিয়া ও আফগানিসত্মানসহ বিশ্বের ২৪টি দেশের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে বেশি কয়েকটি দেশের সঙ্গে চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.