কোর্টের আদেশ লঙ্ঘনের অভিযোগে নৌসচিবকে উকিল নোটিস- আজ এগারোটার মধ্যে ৪ ফেব্রুয়ারির নিয়োগ বাতিল না করলে মামলার হুমকি
সমুদ্র পরিবহন অধিদফতরের 'প্রকৌশলী ও জাহাজ জরিপকারক' নিয়োগের ক্ষেত্রে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের বিরম্নদ্ধে হাইকোর্টের আদেশ লঙ্ঘনের গুরুত্ব অভিযোগ উঠেছে। এক্ষেত্রে সরকারী নিয়মনীতির প্রতিও বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো হয়েছে।
এছাড়া বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন (বিএসসি) ও বাংলাদেশ অভ্যনত্মরীণ নৌ-পরিবহন কর্পোরেশনের (বিআইডবিস্নউটিসি) মতামতও অগ্রাহ্য করা হয়েছে বলে সংশিস্নষ্টরা মনে করছেন। রবিবার সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী মোহাম্মাদ হোসেন নৌ সচিব, সমুদ্র পরিবহন অধিদফতরের মহাপরিচালক এবং নৌ-মন্ত্রণালয়ের সহকারী (সচিব জাহাজ শাখা) এ বিষয়ে উকিল নোটিস দিয়েছে। ওই নোটিসে বলা হয়েছে, আজ সোমবার বেলা ১১টার মধ্যে নিয়োগ বাতিল না করলে এদের বিরম্নদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করা হবে। উকিল নোটিসে সচিবকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে, আপনি অসৎ উদ্দেশ্যে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে এ ধরনের নিয়োগ দিয়েছেন।সূত্র মতে, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় গত ৪ ফেব্রম্নয়ারি বিএসসির উপ-মহাব্যবস্থাপক (জাহাজ মেরামত) নৌ-প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইউসুফ এবং বিআইডবিস্নউটিসির নির্বাহী প্রকৌশলী জিয়াউল ইসলামকে প্রকৌশলী ও জাহাজ জরিপকারক পদে সমুদ্র পরিবহন অধিদফতরে প্রেষণে নিয়োগ দেয়। সংশিস্নষ্ট নিয়োগবিধি অনুযায়ী, অধিদফতরের এ পদে কোন নৌ-প্রকৌশলীকে নিয়োগ দেয়া হলে তিনি গ্রেড-১-এর মর্যাদা এবং সে অনুযায়ী বেতন ভাতাদি পাবেন।
শামসুল আলম নামের একজন নৌ-স্থপতির দায়েরকৃত এক রিট পিটিশনের পরিপ্রেেিত বিচারপতি সৈয়দ রিফাত আহমেদ ও বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ গত ১৭ ডিসেম্বর এক আদেশে সমুদ্র পরিবহন অধিদফতরের প্রকৌশলী ও জাহাজ জরিপকারক পদে নৌপ্রকৌশলীদের (গ্রেড-১) চুক্তিভিত্তিক অথবা প্রেষণে নিয়োগের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। কিন্তু হাইকোর্টের আদেশের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে মন্ত্রণালয় নৌপ্রকৌশলী মোহাম্মদ ইউসুফকে প্রেষণে নিয়োগ দিয়েছে। এমনকি আদালতের আদেশের কপি হাতে পেলেও নৌসচিব আব্দুল মান্নান হাওলাদার তা মোটেও আমলে নেননি বলে সংশিস্নষ্টরা অভিযোগ করেন।
সূত্র জানায়, জনবল সঙ্কটের কারণে খুড়িয়ে চলা সমুদ্র পরিবহন অধিদফতরে অন্য সংস্থা থেকে প্রকৌশলী ও জাহাজ জরিপকারক নিয়োগের ল্যে প্রয়োজনীয় শিাগত ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মকর্তাদের নামের তালিকা চেয়ে নৌ মন্ত্রণালয় গত ২৫ জানুয়ারি বিএসসি, চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর কর্তৃপ, বিআইডবিস্নউটিএ এবং বিআইডবিস্নউটিসিতে চিঠি পাঠায়। বিএসসি গত ২৭ জানুয়ারি চার কর্মকর্তার নাম পাঠালেও সেখানে জনবল সঙ্কটের কথা উলেস্নখ করে তাদের কোন কর্মকর্তাকে অন্য কোথাও প্রেষণে নিয়োগ না দেয়ার অনুরোধ জানায়। কিন্তু মন্ত্রণালয় তাদের অনুরোধ অগ্রাহ্য করে উপ-মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ ইউসুফকে প্রেষণে নিয়োগ দিয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, নৌ-মন্ত্রণালয় তার অধীনস্থ যে কোন সংস্থার কর্মকর্তাদের জনস্বার্থে অন্য সংস্থায় সংযুক্তিতে নিয়োগ দিতে পারে। তবে প্রেষণে নিয়োগের এখতিয়ার সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের এবং সে েেত্র এ সংক্রানত্ম ফাইলে সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে অথবা প্রধানমন্ত্রীর সংস্থাপন বিষয়ক উপদেষ্টা এইচটি ইমামের সম্মতিসূচক স্বারের প্রয়োজন রয়েছে। কারণ সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের সম্মতি ছাড়া প্রেষণে নিযুক্ত কর্মকর্তারা বর্তমান কর্মস্থল থেকে বেতন-ভাতা উত্তোলনের সুযোগ পাবেন না। কিন্তু মোহাম্মদ ইউসুফ এবং জিয়াউল ইসলামের নিয়োগের েেত্র এসব নিয়মনীতি অনুসরণ করা হয়নি।
এছাড়া মন্ত্রণালয়ের চাহিদার পরিপ্রেেিত বিএসসি তাদের কর্মকর্তাদের নামের তালিকা পাঠালেও বিআইডবিস্নউটিসি, বিআইডবিস্নউটিএ এবং চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপ তালিকা পাঠানোর আগেই মন্ত্রণালয় এ নিয়োগ চূড়ানত্ম করে। তড়িঘড়ি করে এ কাজের পেছনে সচিব আব্দুল মান্নান হাওলাদারের বিশেষ স্বার্থ রয়েছে বলে মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা অভিযোগ করেছেন।
উলেস্নখ্য, জিয়াউল ইসলাম বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র থাকাকালীন জামায়াতে ইসলামীর সহযোগী সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। এখনও তিনি গোপনে জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে অভিযোগ রয়েছে। বিএসসি কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইউসুফের বিরম্নদ্ধে কোটি কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। তার কারণে প্রায় ৬০০ কোটি টাকা মূল্যের বিএসসির তিনটি বড় জাহাজ_ বাংলার গৌরব, বাংলার ঊর্মি ও বাংলার মনি বেশ কয়েক বছর অযত্ন-অবহেলায় পড়ে থেকে অকেজো হয়ে গেছে বলে সূত্র জানায়।
এ ব্যাপারে আলাপ করা হলে সচিব আব্দুল মান্নান হাওলাদার বলেন, একটি গুরম্নত্বপূর্ণ সংস্থার লোকবল সঙ্কটে কর্মকা-ে বিঘ্ন ঘটার কারণে দু'জন সার্ভেয়ার নিয়োগ দিয়েছেন। এৰেত্রে আদালতের রায়ের কথা উলেস্নখ করে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কেউ যদি উকিল নোটিস দেয় তা হলে বিষয়টি এক রকম। তবে এৰেত্রে আদালতে কোন আদেশ দিলে বিষয়টি ভিন্ন। তিনি পাল্টা প্রশ্ন রেখে বলেন, সার্ভেয়ারের অভাবে যেখানে জাহাজ জরিপ করা সম্ভব হচ্ছে না, সেখানে আদালতের এমন আদেশের অর্থ কি। এখানে স্থায়ীভাবে লোকবল নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরম্ন করা সম্ভব কি-না জানতে চাইলে সচিব বলেন, কেউ নৌপ্রকৌশলী হিসেবে পাস করার সরকারী চাকরির চেয়ে দেশে-বিদেশে উচ্চ বেতনে চাকরির দিকে বেশি ঝোঁকার কারণে এৰেত্রে স্থায়ীভাবে লোক পাওয়া অনেকটা দুরূহ। প্রেষণে নিয়োগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, একই মন্ত্রণালয়ের অধীনে হওয়ায় সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের অনুমতির প্রয়োজন হয় না।
No comments