আঞ্চলিক সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে দু'শতাংশ জিডিপি বাড়তে পারে- রফতানি, ট্রানজিট ও বন্দর ফি থেকে এক শ' কোটি ডলার আয় হবে

দীর্ঘ মেয়াদী আঞ্চলিক সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ বছরে অতিরিক্ত দুই শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়াতে পারে। এক শ' কোটি মার্কিন ডলার আয় করতে পারবে রফতানি, ট্রানজিট ও বন্দর ফি খাত থেকে।
এছাড়া বন্দর ও অভ্যনত্মরীণ রম্নট ব্যবহারের মাধ্যমে আয় হবে ৩০ থেকে ৪০ কোটি ডলার। শনিবার আঞ্চলিক সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে জিডিপি প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি ও দারিদ্র্য বিমোচন শীর্ষক সেমিনারে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়। ওই সেমিনারে বলা হয়, বৈরি মনোভাব থেকে বেরিয়ে দারিদ্র্য দূরীকরণ ও প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য আঞ্চলিক সম্পর্ক আরও উন্নয়ন করতে হবে। এ েেত্র বিরোধী রাজনৈতিক দল বিভ্রানত্মিমূলক প্রচার চালালে হবে না। আঞ্চলিক সম্পর্ক উন্নয়নে জনগণের সহায়তার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকেও কাজ করতে হবে।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) উদ্যোগে ওই সেমিনার আয়োজন করা হয়। অর্থনীতিবিদ ড. ওয়াহিউদ্দিন মাহমুদের সভাপতিত্বে সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পিআরই ভাইস চেয়ারম্যান সাদিক আহমেদ ও প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান।
ওই সেমিনারে অর্থমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে বলেন, আঞ্চলিক সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে গ্যাস, কয়লা ও বিদু্যত সমস্যা সমাধানে যৌথভাবে কাজ করা সম্ভব। এ জন্য বর্তমান সরকার আঞ্চলিক সম্পর্ক উন্নয়নের প্রতি বেশি জোড় দিয়েছে। তিনি বলেন, ১৯৭২ সালের পর গত ৩৮ বছরে এ সম্পর্ক উন্নয়নে কোন ধরনের পদপে নেয়া হয়নি।
পরারষ্ট্রমন্ত্রী ড. দীপুমনি বলেন, ১৯৭৫ সালের পর ট্রানজিট নিয়ে রাজনৈতিকভাবে বিস্ফোরণ ছিল। মানুষকে বিভ্রানত্ম করতে গিয়ে নিজেদের পায়ে কুড়াল মারতে আপত্তি করেনি। ুদ্র সঙ্কীর্ণতা থেকে ভারত বিরোধিতা করে এসেছে। বর্তমান সরকার শুধু ভারত নয়, পুরো আঞ্চলিক সম্পর্ক উন্নয়ন করবে। আঞ্চলিক সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে সীমানত্ম এলাকায় দারিদ্র্য বিমোচন সম্ভব। তিনি বলেন, ভৌগোলিক অবস্থান থেকে গুরম্নত্বপূর্ণ অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। কিন্তু এই সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। আঞ্চলিক সম্পর্ক উন্নয়নের ব্যাপারে মানুষের বৈরি মনোভাব থেকে আমরা বের হয়ে আসতে পেরেছি। বর্তমান পাশর্্ববর্তী সব দেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করা হচ্ছে। এ েেত্র বিরোধী দল বিভ্রানত্মিমূলক প্রচার চালালে হবে না। দীপুমনি বলেন, উন্নয়ন ও গণতন্ত্র ভিন্ন জিনিস নয়। উন্নয়নের পাশাপাশি গণতন্ত্র চর্চা করতে হবে। আমরা বিদু্যত আমদানির কথা বলব ভুটান থেকে। আমদানি করতে হলে ভারতের ভূখ- ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক বাদ দিয়ে করা সম্ভব হবে না।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়, মাথা পিছু আয় কম, দারিদ্র্যের হার বেশি ও আঞ্চলিক সম্পর্কে ঘাটতি থাকার কারণে দেশে উন্নয়ন বড় চ্যালেঞ্জ হিসাবে দেখা দিয়েছে। বিদু্যত সমস্যার জন্য প্রতিবছর এক বিলিয়ন ডলারের জিডিপি কম হচ্ছে। এরমধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতি দুর্যোগ রয়েছে। আঞ্চলিক সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে সীমানত্ম এলাকায় ব্যবসা বাণিজ্যে অবরোধ কমিয়ে আনা গেলে বিনিয়োগ ও জিডিপিতে ভূমিকা রাখবে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক আরও উন্নয়নের মাধ্যমে রফতানি আয় ৩৫ কোটি মার্কিন ডলার থেকে বৃদ্ধি করে ৮০ থেকে ৯০ কোটি ডলারে উন্নীত করা সম্ভব।
সেমিনারে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, নিজ নিজ অবস্থান থেকে আঞ্চলিক সম্পর্ক উন্নয়ন করতে হবে। রাসত্মা ঘাট উন্নয়ন, অবকাঠামো উন্নয়ন ও বন্দর উন্নয়নের ব্যয় অনেক বেশি। উভয় দেশ মিলে তা করতে পারলে ভাল হবে। ভুটান থেকে বিদু্যত আমদানির কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু কি দামে আনা হবে সে বিষয় আগে ঠিক করতে হবে।
সংসদ সদস্য এম কে আলমগীর বলেন, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী ভারতের সঙ্গে আলোচনার পর ইতিবাচক মনোভাব দেখা গেছে। কিন্তু লণীয় বিষয় হচ্ছে, অনেক েেত্র দায়িত্বহীন মনত্মব্য করা হচ্ছে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপাকি আলোচনা হয়েছে। এটাকে বহুপাকি দৃষ্টিভঙ্গি থেকে না দেখে দ্বিপাকি আলোচনার দৃষ্টিতে দেখা উচিত।
সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পিআরআই-এর চেয়ারম্যান জাহিদ সাত্তার। আরও বক্তব্য রাখেন ফারম্নক আহমেদ, ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.