বায়ার্নকে বেছে নিলেন গার্দিওলা

২০০৮-০৯ মৌসুমের কথা। জীবনে প্রথম বার্সেলোনার মতো বড় কোনো দলের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন পেপ গার্দিওলা। এর আগে কোচিংয়ে অভিজ্ঞতা বলতে ছিল বার্সারই ‘বি’ দলের হয়ে এক বছর কাজ করা।
সিনিয়র দলের দায়িত্ব নেওয়ার স্বপ্ন নিশ্চয়ই দেখতেন। কিন্তু অভাবিতভাবে সেই স্বপ্ন পূরণ হয়ে গেল এক বছরের মধ্যেই। তার চেয়েও অভাবিত হয়ে এল প্রথম মৌসুমেই অবিশ্বাস্য সাফল্য। একটি ক্লাবের হয়ে এক বছরে জেতা সম্ভব এমন ছটি শিরোপাই ঘরে তুললেন। অবিস্মরণীয় সেই যাত্রাপথে চ্যাম্পিয়নস লিগও জিতল বার্সা। কোয়ার্টার ফাইনালে ক্ষুধার্ত বার্সার সামনে পড়েছিল বায়ার্ন মিউনিখ।
ড্রয়ে বায়ার্নকে পেয়ে খুশিই হয়েছিলেন গার্দিওলা। তিনি তো আর এটা জানতেন না দুই লেগ মিলিয়ে বায়ার্নকে ৫-১-এ গুঁড়িয়ে দেবে বার্সা। গার্দিওলা খুশি ছিলেন আসলে কঠিন একটা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়ে। বায়ার্ন একটা ঐতিহ্যবাহী দল, বিরাট ক্লাব, বিরাট স্টেডিয়াম। ইউরোপেও যাদের ঐতিহ্য সমৃদ্ধ। একসময় টানা তিনবার ইউরোপিয়ান কাপও জিতেছিল তারা। বায়ার্নের আরেকটা জিনিস গার্দিওলার পছন্দ ছিল। বার্সেলোনার মতো বায়ার্নও তারকার চেয়ে উঠতি তরুণদের পেছনেই বিনিয়োগ করে বেশি। বায়ার্ন তখন গার্দিওলার কাছে একটা ‘অ্যাডভেঞ্চার’। তিন বছর পরও বায়ার্ন অভিযান গার্দিওলাকে প্রলুব্ধ করে। করে বলেই ইংলিশ ফুটবলের লোভনীয় হাতছানি অগ্রাহ্য করে বায়ার্নের কোচ হয়ে গেলেন। ডাগ-আউটে দাঁড়াবেন অবশ্য আগামী জুলাই থেকে।
ফুটবল তাঁকে ক্লান্ত করে তুলেছিল বলেই ছুটিতে গিয়েছিলেন। কিন্তু ওটাই তাঁর ভালোবাসার জায়গা। বেশি দিন কি আর দূরে থাকতে পারেন! গার্দিওলা ফিরছেন জানানোর পর থেকেই তাঁকে নিয়ে আগ্রহী উঠেছিল অনেক ক্লাব। কিন্তু বায়ার্ন তাঁকে খুব করে পেতে চেয়েছিল বলেই হয়তো ওপরে ওপরে অস্বীকার করে ভেতরে ভেতরে এগিয়ে গেছে। পরশুও প্রথম দিকে জানানো হয়েছিল, গার্দিওলার ব্যাপারে আগ্রহী নয় বায়ার্ন। অথচ হুট করেই খবর এল, সবকিছুই ঠিক হয়ে গেছে। তিন বছরের চুক্তিতে জার্মান-সেরা ক্লাবটিতে আসছেন বার্সার অবিশ্বাস্য এক অধ্যায়ের নায়ক এই তরুণ কোচ। ইয়ুপ হেইঙ্কেসের উত্তরসূরি হতে যাচ্ছেন তিনি।
গার্দিওলাকে নিতে পেরে উচ্ছ্বসিত বায়ার্ন চেয়ারম্যান কার্ল-হেইঞ্জ রুমেনিগে। দুই মৌসুম ধরে শিরোপা-খরায় ভুগছে বায়ার্ন। দুই বছর হয়তো এমন বড় কিছু নয়। কিন্তু বায়ার্নের মতো সাফল্যবুভুক্ষু একটা দলের জন্য আবার অনেক কিছুই। এ কারণেই গার্দিওলা-শরণ। ‘পেপ বিশ্বের সফলতম কোচদের একজন। আমি নিশ্চিত, সে বায়ার্ন এবং জার্মান ফুটবলে বাড়তি একটা রংই যোগ করবে’—বলেছেন রুমেনিগে। বায়ার্ন কিংবদন্তি ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ারও বলেছেন, ‘কল্পনা করতে পারি ওর কাছে রাশি রাশি প্রস্তাব ছিল। শেষ পর্যন্ত গার্দিওলাকে নিয়ে আসতে পারায় বায়ার্নকে অভিনন্দন জানাই।’
কারও কারও আশঙ্কা, বাড়তি প্রত্যাশার চাপ নিয়েই বায়ার্নে আসছেন গার্দিওলা, যে ক্লাবটি আবার কোচের ব্যাপারে খুব বেশি ধৈর্যশীল বলে পরিচিত নয়। ভীষণ জনপ্রিয় ইয়ুর্গেন ক্লিন্সমান পর্যন্ত ১০ মাসের বেশি টিকতে পারেননি। ২০০৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত সাতজন কোচ পেয়েছে দলটি। লুই ফন গলের মতো শ্রদ্ধাভাজন কোচও দুই মৌসুমের বেশি টেকেননি। তবে বায়ার্নকে সর্বশেষ চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতানো ওটমার হিজফেল্ডের ধারণা, বায়ার্নে সফলই হবেন এই স্প্যানিশ কোচ, ‘ও বিশ্বের অন্যতম সেরা। খুবই সাফল্যের সঙ্গে কাজ করেছে। তা ছাড়া ওর মানসিকতাও বায়ার্নের সঙ্গে যায়। ও এমন একজন কোচ যে লাগামটা ধরে রাখতে জানে। দলের মধ্যে ওর যোগাযোগও ভালো, যেটা বায়ার্নে খুবই জরুরি। ও তরুণও। তা ছাড়া জার্মান ভাষাটা শেখার জন্য ছয় মাস সময়ও পাচ্ছে।’ এএফপি, রয়টার্স।

No comments

Powered by Blogger.