ঘটনার রহস্য উন্মোচন করুন-জবাই করে শিশু হত্যা

দিনাজপুর শহরের উপকণ্ঠে একটি কোচিং সেন্টারে ছয় বছরের শিশু নূর ইসলামকে জবাই করে হত্যার ঘটনাটি দুর্বোধ্য, রহস্যময় বলে মনে হচ্ছে। কোচিং সেন্টারের একজন শিক্ষক শাহীনুর ইসলামকে ঘটনার পরপরই এলাকাবাসী আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেন।


তিনি হত্যার ঘটনা অস্বীকার করেছেন; কিন্তু নিহত নূর ইসলামের ভাই সাত বছর বয়সী নয়ন, যে নিজেকে ওই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বলে দাবি করেছে, তার বর্ণিত বিবরণ সত্য বলেই মনে হয়। তার ভাষ্য অনুযায়ী, কোচিং সেন্টারের দুই শিক্ষক তার ছোট ভাই নূর ইসলামকে তার চোখের সামনেই জবাই করেছে; ওই নৃশংস দৃশ্য দেখে সাত বছরের নয়ন পালানোর চেষ্টা করলে তাকেও তাঁরা ইটের আঘাতে ও ক্ষুর মেরে গুরুতর জখম করেন। জখম অবস্থাতেই নয়ন পালিয়ে নিজের প্রাণ রক্ষা করতে সক্ষম হয়।
ঘটনার বিবরণে এই পৈশাচিক হত্যাকাণ্ডের কোনো উদ্দেশ্য বা কারণের উল্লেখ নেই। শিশু দুটির বাবা দরিদ্র রিকশাচালক রশিদুলের সঙ্গে কোচিং সেন্টারের শিক্ষক শাহীনুর ও আশরাফুলের কোনো পূর্বশত্রুতাও ছিল না। হত্যাকাণ্ডের কারণ সম্পর্কে পুলিশও কোনো অনুমান করতে পারছে না। তবে তাদের সন্দেহ, আটক শাহীনুর ও পলাতক আশরাফুল ছাড়া আরও এক বা একাধিক ব্যক্তি ওই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। যে বাড়িটি ভাড়া নিয়ে কোচিং সেন্টারটি চলছিল, সেটির মালিককেও পুলিশ গতকাল আটক করেছে।
সন্দেহ নেই যে এই রহস্যময় হত্যাকাণ্ড পুলিশের জন্য একটি জটিল মামলা; রহস্য উদ্ঘাটনের কাজটি পুলিশের জন্য এক বিরাট চ্যালেঞ্জ। তবে যেহেতু মূল অভিযুক্তদের একজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পেরেছে, তাই বিষয়টি এমন নয় যে পুলিশকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে অনুসন্ধানের পথ হাতড়াতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া। ওই এলাকার বিক্ষুব্ধ মানুষের ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, মহাসড়ক অবরোধ ইত্যাদি প্রতিক্রিয়ার চাপে দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ প্রতিশ্রুতি যেন সাময়িক বিষয় না হয়। নিহত শিশুর বাবা দরিদ্র রিকশাচালক বলে যেন মামলাটি অবহেলিত না হয়; তিনি যেন ন্যায়বিচার পান। শিশু হত্যার এই নৃশংস ঘটনাটির রহস্য উন্মোচনের মধ্য দিয়ে বড় কোনো অপরাধচক্রের সন্ধান পাওয়া যায় কি না, সেটিও দেখার বিষয়। এলাকার জনসাধারণের মধ্যে নানা ধরনের জল্পনা-কল্পনা চলছে, সেসবেরও অবসান হওয়া প্রয়োজন।

No comments

Powered by Blogger.