কুড়িয়ে পাওয়া সংলাপ-কে নই 'প্রতিবন্ধী' আমরা! by রণজিৎ বিশ্বাস
আপনার ভাতের থালার প্রতিটি দানা যেন হয় রজনীগন্ধা ফুলের মতো সুন্দর, সুবাসিত ও ঝরঝরে, একটিও কালো দানা যেন সেই থালায় না থাকে_শ্রমজীবনের সহকর্মীদের উদ্দেশে এই কথাগুলো কি এখনো বলেন? : বলি! বলব না কেন? আপনার কোনো অসুবিধা?
: আমার কোনো অসুবিধা নেই। আমি আপনার অসুবিধার কথা ভাবি।
: আমার অসুবিধার কথা আপনার ভাববার দরকার নেই। আর ভাবেনই যদি, কী অসুবিধা ধরা পড়ে আপনার নেটে?
: আপনাকে আপনার সহশ্রমিকরা পাগল বলে না? উন্মাদ ভাবে না?
: ভাবাভাবিটা তাদের ব্যাপার। যদি একজনও ভাবে যে লোকটা উন্মাদ নয়, কথাগুলো সে নিজের লাভের জন্য বলে না। কথাগুলো মানি, না মানি, সে আমার ব্যাপার, একবার অন্তত মনোযোগ দিয়ে শুনি; আমি তো মনে করি সেটিই আমার লাভ।
আর উন্মাদ যে বললেন, পাগল যে বললেন, সংসারে কে পাগল নয়, কে উন্মাদ নয়! সংসারে শ'প্রতিশত মানসিক স্থিরতা, সুস্থতা ও শুদ্ধতা একজনেরও নেই। অন্তরের দিক থেকে বলুন অথবা শরীরের দিক থেকে ভুবনে হেন মানুষ নেই যিনি হান্ড্রেড পারসেন্ট ফিট, হান্ড্রেড পারসেন্ট সুস্থ। এক-আধটু ঊনতাখর্বতা ও অসুস্থতা আমাদের সবারই আছে। আমি এখন যেখানে শ্রম ঢালছি, সেখানে মানসিক, শারীরিক ও বহুমাত্রিক প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করতে হয়। তাদের সেবা দিতে হয়, তাদের জন্য সেবা ক্রয় করতে হয় এবং এ কাজে জড়িত হওয়ার জন্য অন্যকে উদ্বুদ্ধ করতে হয়।
কাজটি করতে গিয়ে আমার মনে প্রশ্ন জমেছে_এই সমাজে আমরা কে নই প্রতিবন্ধী?
আমরা সবাই তো বিভিন্ন আকৃতির এবং প্রকার ও প্রকৃতির প্রতিবন্ধী। ইটস অ্যা ম্যাটার অব ডিগ্রি অ্যান্ড স্কেইল ওনলি! প্রথাগত হিসেবে যাদের আমরা প্রতিবন্ধীজনার ব্র্যাকেটে ফেলি, তাদের বাইরে আমরা কেউ বিবেচনাপ্রতিবন্ধী, কেউ বিবেকপ্রতিবন্ধী, কেউ দায়িত্বপ্রতিবন্ধী, কেউ সততাপ্রতিবন্ধী, কেউ লুব্ধতাপ্রতিবন্ধী, কেউ সাম্প্রদায়িকতাপ্রতিবন্ধী।
: তাহলে যাদের আমরা প্রতিবন্ধী হিসেবে চিনি, তারা আসলে কী?
: তারা আসলে বিশেষ শ্রেণীর নাগরিক। তারা বিশেষভাবে অক্ষম নয়, বিশেষভাবে সক্ষম মানবসন্তান। তাদের আপনি ভাবতে পারেন আপনার গৃহকোণের 'সুবর্ণসন্তান'।
আপনি তাদের কী নামে ডাকেন?
: আমি ডাকি 'দেবশিশু' নামে। তাদের যদি আপনি 'দেবশিশু' ভাবতে চান; ভাবতে চান যদি 'সুবর্ণশিশু' অথবা 'সুবাসিত সন্তান', আপনি চাইলেই ভাবতে পারবেন না।
: পারব না কেন?
: পারবেন না, কারণ তার জন্য আপনার প্রস্তুতি দরকার। নিজেকে আপনার ওই পরিবারের মা-বাবা অথবা ভাইবোনের আসনে বসিয়ে পুরো বিষয়টা দেখতে হবে, যে পরিবারে একটি প্রতিবন্ধী শিশু আছে অথবা একটি 'অটিস্টিক' শিশু আছে। আপনাকে ভাবতে হবে_এই সন্তানটি হতে পারত আমারও সন্তান। এমন একটি বিশেষ শিশু স্বর্গলোক থেকে নেমে আসতে পারত আমারও ঘরে। আপনাকে ভাবতে হবে_বিশেষ এই শিশুটিকে নিয়ে তার মা-বাবার অনুভূতি কী রকম; তাঁদের সুবাসিত সংগ্রামের গতি-প্রকৃতি কেমন।
: তারপর?
: তারপর আপনি বুঝতে পারবেন কী যন্ত্রণায় তাঁদের দিন পার হয়, আর রাত ভোর হয়।
: আপনি যে বললেন, 'অটিস্টিক শিশু', তারা কেমন? বাংলায় তাদের কী বলে?
: বাংলায় তাদের যা বলা যাবে, তা ইংরেজির চেয়ে কঠিন হবে। যেমন, 'আত্মসংবৃত সন্তান'। এরা নিজেদের গুটিয়ে রাখে, অনেক সময় কারো সঙ্গে কথা বলে না, সহসা ক্ষিপ্ত হয়ে যায়। এটি ব্রেইন সেলের এক ধরনের 'ডিজ-অর্ডার' থেকে হয়। কিন্তু তিন বছর বয়স হওয়ার আগে বোঝা যায় না যে ওরা 'অটিজম' (আত্মসংবৃতি)-এর শিকার হতে যাচ্ছে। এটি এক ধরনের অদৃশ্য প্রতিবন্ধিত্ব, নীরব প্রতিবন্ধিত্ব অথবা বলতে পারেন ছদ্মপ্রতিবন্ধিত্ব।
: এটি কি মানুষের মধ্যে আগে ছিল না?
: না থাকার কোনো কারণ নেই। মানুষের ইতিহাস যত পুরনো, হতে পারে এটিও তত পুরনো। এটিকে মানুষ যখন চিহ্নিত করতে পারেনি, তখন অটিস্টিক শিশুদের মানসিক প্রতিবন্ধী বা উন্মাদ ভাবা হতো। আমরা কেউ কেউ তাদের 'পাগল' বলতাম আর উপদ্রুত মা-বাবার বুকের ভেতর যন্ত্রণার বর্শাফলক গেঁথে দিতাম।
: এদের বিশেষ নাগরিক বলার কারণ কী?
: কারণ একাধিক। বয়সের অঙ্ক যত বড়ই হোক, প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক মানুষরা বৈশিষ্ট্যবিচারে শিশুই। এদের অপেক্ষা করানো যায় না। অন্যদের যা কাল দিলেও চলবে, ওদের দিতে হবে আজ; অন্যদের যা আজ দিতে হবে, ওদের দিতে হবে এখনই। দ্বিতীয়ত, ওরা অনেক 'স্বাভাবিক নাগরিক'-এর চেয়ে শুচিশুদ্ধ ও পবিত্র। ওরা মিথ্যা বলে না, ওরা অন্যকে ঠকায় না, অন্যের স্বার্থের হানি করে না; ওদের মধ্যে হিংসা নেই, নেই কোনো দ্বেষবিদ্বেষ। শ্লেষ, বিদ্রূপ, কটাক্ষ, ঈর্ষা, অসূয়া, অকৃতজ্ঞতা, কৃতঘ্নতা ইত্যাদি ওদের ভাবনায় নেই, নেই ওদের 'ভোকাবুলারি'তেও। তৃতীয়ত, প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিকদের কোনো কোনো দিক স্বাভাবিক মানুষের চেয়েও প্রখর ও বিকশিত হয়। বলা হয়, আইনস্টাইন, লুই পাস্তুর ও হেমিংওয়ের সঙ্গে অটিজমের সামান্য স্পর্শ ছিল। সুরস্রষ্টা বিথোফেন ছিলেন শ্রবণপ্রতিবন্ধী। জন মিল্টন 'প্যারাডাইস লস্ট' ও 'প্যারাডাইস রিগেইনড' রচনার আগেই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। পুরোপুরি। বিখ্যাত সেই রচনা শুরু করার আগে স্বর্গলোকের মহাপ্রভুর উদ্দেশে তিনি যা নিবেদন করেছিলেন তার মর্মার্থ বুঝতে পারে কয়জন চক্ষুষ্মান?
: যাদের সন্তানের প্রতিবন্ধিত্ব আছে, তাদের উদ্দেশে আপনি কী বলেন?
: আমি সব সময় বলি একটি সহজ কথা। নিজেকে ক্ষুদ্র ভাববেন না, বিশেষ দেবশিশুটিকে লুকিয়ে রাখবেন না, বাইরে এনে আনন্দের সব আয়োজনে তাকে সঙ্গে রাখবেন এবং রবিবাণীতে সান্ত্বনা খুঁজবেন_'হাতের কাছে, কোলের কাছে যা আছে তা অনেক আছে।'
: তেমন করে ভাবার লোক কি পেয়েছেন?
: পেয়েছি। একাধিক পেয়েছি। একজনের কথা বলি_তাঁর তিন সন্তানের দুইজন অসামান্য মেধাবী, নিজ নিজ জীবনে তুলনাবিরল সাফল্যের অধিকারী। দুইজনই পিএইচডি করেছে। একজন ঢাকায়, একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যশস্বী শিক্ষক, অন্যজন যুক্তরাষ্ট্রে একটি বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। তাঁর কনিষ্ঠ সন্তানটি অটিস্টিক। তিনি নিজে তাঁর নিত্যসহচর; তাকে স্কুলে নিয়ে আসেন, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে-আয়োজনে নিয়ে যান এবং তার প্রসঙ্গ এলেই ভাগ্যপ্রসন্ন এক ঋদ্ধ জননীর মতো বলেন_ব্রিলিয়ান্ট ওই দুটির আমি মা বটে; কিন্তু 'সন্তান' বলতে এটিই আমার।
লেখক : কথাসাহিত্যিক ও সমাজকল্যাণ সচিব
: আমার অসুবিধার কথা আপনার ভাববার দরকার নেই। আর ভাবেনই যদি, কী অসুবিধা ধরা পড়ে আপনার নেটে?
: আপনাকে আপনার সহশ্রমিকরা পাগল বলে না? উন্মাদ ভাবে না?
: ভাবাভাবিটা তাদের ব্যাপার। যদি একজনও ভাবে যে লোকটা উন্মাদ নয়, কথাগুলো সে নিজের লাভের জন্য বলে না। কথাগুলো মানি, না মানি, সে আমার ব্যাপার, একবার অন্তত মনোযোগ দিয়ে শুনি; আমি তো মনে করি সেটিই আমার লাভ।
আর উন্মাদ যে বললেন, পাগল যে বললেন, সংসারে কে পাগল নয়, কে উন্মাদ নয়! সংসারে শ'প্রতিশত মানসিক স্থিরতা, সুস্থতা ও শুদ্ধতা একজনেরও নেই। অন্তরের দিক থেকে বলুন অথবা শরীরের দিক থেকে ভুবনে হেন মানুষ নেই যিনি হান্ড্রেড পারসেন্ট ফিট, হান্ড্রেড পারসেন্ট সুস্থ। এক-আধটু ঊনতাখর্বতা ও অসুস্থতা আমাদের সবারই আছে। আমি এখন যেখানে শ্রম ঢালছি, সেখানে মানসিক, শারীরিক ও বহুমাত্রিক প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করতে হয়। তাদের সেবা দিতে হয়, তাদের জন্য সেবা ক্রয় করতে হয় এবং এ কাজে জড়িত হওয়ার জন্য অন্যকে উদ্বুদ্ধ করতে হয়।
কাজটি করতে গিয়ে আমার মনে প্রশ্ন জমেছে_এই সমাজে আমরা কে নই প্রতিবন্ধী?
আমরা সবাই তো বিভিন্ন আকৃতির এবং প্রকার ও প্রকৃতির প্রতিবন্ধী। ইটস অ্যা ম্যাটার অব ডিগ্রি অ্যান্ড স্কেইল ওনলি! প্রথাগত হিসেবে যাদের আমরা প্রতিবন্ধীজনার ব্র্যাকেটে ফেলি, তাদের বাইরে আমরা কেউ বিবেচনাপ্রতিবন্ধী, কেউ বিবেকপ্রতিবন্ধী, কেউ দায়িত্বপ্রতিবন্ধী, কেউ সততাপ্রতিবন্ধী, কেউ লুব্ধতাপ্রতিবন্ধী, কেউ সাম্প্রদায়িকতাপ্রতিবন্ধী।
: তাহলে যাদের আমরা প্রতিবন্ধী হিসেবে চিনি, তারা আসলে কী?
: তারা আসলে বিশেষ শ্রেণীর নাগরিক। তারা বিশেষভাবে অক্ষম নয়, বিশেষভাবে সক্ষম মানবসন্তান। তাদের আপনি ভাবতে পারেন আপনার গৃহকোণের 'সুবর্ণসন্তান'।
আপনি তাদের কী নামে ডাকেন?
: আমি ডাকি 'দেবশিশু' নামে। তাদের যদি আপনি 'দেবশিশু' ভাবতে চান; ভাবতে চান যদি 'সুবর্ণশিশু' অথবা 'সুবাসিত সন্তান', আপনি চাইলেই ভাবতে পারবেন না।
: পারব না কেন?
: পারবেন না, কারণ তার জন্য আপনার প্রস্তুতি দরকার। নিজেকে আপনার ওই পরিবারের মা-বাবা অথবা ভাইবোনের আসনে বসিয়ে পুরো বিষয়টা দেখতে হবে, যে পরিবারে একটি প্রতিবন্ধী শিশু আছে অথবা একটি 'অটিস্টিক' শিশু আছে। আপনাকে ভাবতে হবে_এই সন্তানটি হতে পারত আমারও সন্তান। এমন একটি বিশেষ শিশু স্বর্গলোক থেকে নেমে আসতে পারত আমারও ঘরে। আপনাকে ভাবতে হবে_বিশেষ এই শিশুটিকে নিয়ে তার মা-বাবার অনুভূতি কী রকম; তাঁদের সুবাসিত সংগ্রামের গতি-প্রকৃতি কেমন।
: তারপর?
: তারপর আপনি বুঝতে পারবেন কী যন্ত্রণায় তাঁদের দিন পার হয়, আর রাত ভোর হয়।
: আপনি যে বললেন, 'অটিস্টিক শিশু', তারা কেমন? বাংলায় তাদের কী বলে?
: বাংলায় তাদের যা বলা যাবে, তা ইংরেজির চেয়ে কঠিন হবে। যেমন, 'আত্মসংবৃত সন্তান'। এরা নিজেদের গুটিয়ে রাখে, অনেক সময় কারো সঙ্গে কথা বলে না, সহসা ক্ষিপ্ত হয়ে যায়। এটি ব্রেইন সেলের এক ধরনের 'ডিজ-অর্ডার' থেকে হয়। কিন্তু তিন বছর বয়স হওয়ার আগে বোঝা যায় না যে ওরা 'অটিজম' (আত্মসংবৃতি)-এর শিকার হতে যাচ্ছে। এটি এক ধরনের অদৃশ্য প্রতিবন্ধিত্ব, নীরব প্রতিবন্ধিত্ব অথবা বলতে পারেন ছদ্মপ্রতিবন্ধিত্ব।
: এটি কি মানুষের মধ্যে আগে ছিল না?
: না থাকার কোনো কারণ নেই। মানুষের ইতিহাস যত পুরনো, হতে পারে এটিও তত পুরনো। এটিকে মানুষ যখন চিহ্নিত করতে পারেনি, তখন অটিস্টিক শিশুদের মানসিক প্রতিবন্ধী বা উন্মাদ ভাবা হতো। আমরা কেউ কেউ তাদের 'পাগল' বলতাম আর উপদ্রুত মা-বাবার বুকের ভেতর যন্ত্রণার বর্শাফলক গেঁথে দিতাম।
: এদের বিশেষ নাগরিক বলার কারণ কী?
: কারণ একাধিক। বয়সের অঙ্ক যত বড়ই হোক, প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক মানুষরা বৈশিষ্ট্যবিচারে শিশুই। এদের অপেক্ষা করানো যায় না। অন্যদের যা কাল দিলেও চলবে, ওদের দিতে হবে আজ; অন্যদের যা আজ দিতে হবে, ওদের দিতে হবে এখনই। দ্বিতীয়ত, ওরা অনেক 'স্বাভাবিক নাগরিক'-এর চেয়ে শুচিশুদ্ধ ও পবিত্র। ওরা মিথ্যা বলে না, ওরা অন্যকে ঠকায় না, অন্যের স্বার্থের হানি করে না; ওদের মধ্যে হিংসা নেই, নেই কোনো দ্বেষবিদ্বেষ। শ্লেষ, বিদ্রূপ, কটাক্ষ, ঈর্ষা, অসূয়া, অকৃতজ্ঞতা, কৃতঘ্নতা ইত্যাদি ওদের ভাবনায় নেই, নেই ওদের 'ভোকাবুলারি'তেও। তৃতীয়ত, প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিকদের কোনো কোনো দিক স্বাভাবিক মানুষের চেয়েও প্রখর ও বিকশিত হয়। বলা হয়, আইনস্টাইন, লুই পাস্তুর ও হেমিংওয়ের সঙ্গে অটিজমের সামান্য স্পর্শ ছিল। সুরস্রষ্টা বিথোফেন ছিলেন শ্রবণপ্রতিবন্ধী। জন মিল্টন 'প্যারাডাইস লস্ট' ও 'প্যারাডাইস রিগেইনড' রচনার আগেই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। পুরোপুরি। বিখ্যাত সেই রচনা শুরু করার আগে স্বর্গলোকের মহাপ্রভুর উদ্দেশে তিনি যা নিবেদন করেছিলেন তার মর্মার্থ বুঝতে পারে কয়জন চক্ষুষ্মান?
: যাদের সন্তানের প্রতিবন্ধিত্ব আছে, তাদের উদ্দেশে আপনি কী বলেন?
: আমি সব সময় বলি একটি সহজ কথা। নিজেকে ক্ষুদ্র ভাববেন না, বিশেষ দেবশিশুটিকে লুকিয়ে রাখবেন না, বাইরে এনে আনন্দের সব আয়োজনে তাকে সঙ্গে রাখবেন এবং রবিবাণীতে সান্ত্বনা খুঁজবেন_'হাতের কাছে, কোলের কাছে যা আছে তা অনেক আছে।'
: তেমন করে ভাবার লোক কি পেয়েছেন?
: পেয়েছি। একাধিক পেয়েছি। একজনের কথা বলি_তাঁর তিন সন্তানের দুইজন অসামান্য মেধাবী, নিজ নিজ জীবনে তুলনাবিরল সাফল্যের অধিকারী। দুইজনই পিএইচডি করেছে। একজন ঢাকায়, একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যশস্বী শিক্ষক, অন্যজন যুক্তরাষ্ট্রে একটি বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। তাঁর কনিষ্ঠ সন্তানটি অটিস্টিক। তিনি নিজে তাঁর নিত্যসহচর; তাকে স্কুলে নিয়ে আসেন, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে-আয়োজনে নিয়ে যান এবং তার প্রসঙ্গ এলেই ভাগ্যপ্রসন্ন এক ঋদ্ধ জননীর মতো বলেন_ব্রিলিয়ান্ট ওই দুটির আমি মা বটে; কিন্তু 'সন্তান' বলতে এটিই আমার।
লেখক : কথাসাহিত্যিক ও সমাজকল্যাণ সচিব
No comments