ভারতে রপ্তানি-তৈরি পোশাককে স্পর্শকাতর তালিকার বাইরে রাখুন by ফারুক হাসান
১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের পর থেকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্কে ব্যাপ্তি বেড়েছে, গভীরতা বেড়েছে এবং নতুন মাত্রাও যোগ হয়েছে। তথাপি দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক সম্পর্ক এখনো প্রাথমিক পর্যায়েই রয়ে গেছে। সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্যের একটি প্রগাঢ় সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, বিশেষ করে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে
এ যাব ৎ সে রকম কোনো অগ্রগতি সাধিত হয়নি, এমনকি সাফটা চুক্তি সম্পাদনের পরও সার্কভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে ব্যাপক পরিসরে বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি। বিশ্বের অন্যতম উদীয়মান অর্থনীতির দেশ ভারতের জন্য বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান নিঃসন্দেহে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তথাপি এ দুটি দেশের বাণিজ্যে চরম ভারসাম্যহীনতা রয়েছে।
২০০৯-১০ অর্থবছরে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ২ দশমিক ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। উল্লিখিত অর্থবছরে ভারত থেকে ৩ দশমিক ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের আমদানির বিপরীতে বাংলাদেশ থেকে ভারতে আমরা রপ্তানি করতে পেরেছি মাত্র ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের কিছু বেশি। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যগুলোর মধ্যে অধিকাংশই হচ্ছে তৈরি পোশাকসামগ্রী এবং অধিকাংশ তৈরি পোশাকই সাফটার আওতায় ভারতের শুল্কমুক্ত বাজারে প্রবেশাধিকার পাচ্ছে না। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য ভারতের যে স্পর্শকাতর তালিকা রয়েছে, সেখানে ৪৮০টি পণ্যকে ভারতের শুল্কমুক্ত বাজারে প্রবেশাধিকারের বাইরে রাখা হয়েছে এবং এগুলোর মধ্যে ১৫৪টি হচ্ছে তৈরি পোশাক (৭৮টি নিটওয়্যার এবং ৭৬টি ওভেন পোশাক)।
আমরা ভারত সরকারকে ধন্যবাদ জানাই এ জন্য যে ২০০৮ সাল থেকে বাংলাদেশ প্রতিবছর ভারতে ৮০ লাখ পিস তৈরি পোশাক (স্পর্শকাতর পণ্য) শুল্কমুক্তভাবে রপ্তানি করার সুযোগ পাচ্ছে। সম্প্রতি এ কোটা আরও ২০ লাখ পিস বাড়ানো হয়েছে। যদিও প্রথম দুটি বছরে আমরা কোটার শতভাগ সম্পাদন করতে পারিনি, তার পরও শেষ দুটি বছরে দেখা গেছে যে ছয় মাসের মধ্যেই কোটা শেষ হয়ে গেছে। চলতি বছর প্রথম ছয় মাসে এক কোটি পিসের কোটা শেষ হয়ে গেছে। এটি বলার আর অপেক্ষা রাখে না যে আমাদের এ শিল্পের যে সক্ষমতা তার তুলনায় কোটার পরিমাণ খুবই কম। সর্বোপরি কোটার আওতায় রপ্তানির ক্ষেত্রে এখনো আমাদের ৮ থেকে ১২ শতাংশ কাউন্টারভেইলিং ডিউটি পরিশোধ করতে হয়, যার মধ্যে ৪ শতাংশ হচ্ছে বিশেষ অতিরিক্ত শুল্ক (স্পেশাল এডিশনাল ডিউটি) এবং এটি ছাড়যোগ্য। আমরা ইতিমধ্যেই ভারত সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছি এই বিশেষ অতিরিক্ত শুল্ক প্রত্যাহারের বিষয়ে।
আমরা মনে করি, এ মুহূর্তে সাফটার আওতায় বাণিজ্যিকভাবে অর্থবহ শুল্কমুক্ত বাজারের প্রবেশাধিকার পাওয়া, বিশেষ করে তৈরি পোশাক পণ্যের মতো বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ পণ্যসামগ্রীকে স্পর্শকাতর তালিকার আওতামুক্ত করা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি কিছু অশুল্ক বাধা যেমন জটিল ভিসা পদ্ধতি, ট্রানজিট সমস্যা এবং বাণিজ্যের কিছু কৌশলগত বাধা, যেগুলো প্রকারান্তরে দুটি দেশের বাণিজ্যের ভারসাম্যহীনতার পেছনে অন্যতম নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে, সেগুলো দূর করতে হবে।
তবে যা-ই হোক, বাংলাদেশ হচ্ছে বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম তুলা আমদানিকারী দেশ। অন্যদিকে ভারত হচ্ছে বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম তুলা উ ৎ পাদনকারী দেশ এবং একই সঙ্গে অন্যতম তুলা রপ্তানিকারী দেশ। টেক্সটাইল, তৈরি পোশাকের কাঁচামাল, এক্সেসরিজ, ডাইস, কেমিক্যালস এবং টেক্সটাইল মেশিনারির জন্য বাংলাদেশ ভারতের একটি বড় বাজার হতে পারে। প্রকৃতপক্ষে এখানে একটি আঞ্চলিক ভ্যালু চেইন এবং উ ৎ পাদন নেটওয়ার্ক উন্নয়নের অপার সম্ভাবনা আছে, যা সার্কভুক্ত দেশগুলোকে একে অপরের সহযোগী হিসেবে গড়ে ওঠার বিষয়ে একটি অত্যন্ত কার্যকরী কৌশল হিসেবে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে পারে। এমনকি আমরা আমাদের নিজস্ব আঞ্চলিক ব্র্যান্ড উন্নয়নের কথাও ভাবতে পারি।
এই সবকিছুর জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন সার্কভুক্ত সব দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বগুলোর এক হয়ে দৃঢ়তার সঙ্গে সমন্বিত প্রয়াস গ্রহণ। সার্কের আঞ্চলিকতাবাদ গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজন প্রাতিষ্ঠানিক ও প্রশাসনিক সংস্কার, যা এ অঞ্চলের সদস্যগুলোর মধ্যে উন্নত সংযোগ, মৌলিকভাবে স্থিতিশীল আর্থিক খাত, কারিগরি কলাকৌশলের ক্ষেত্রে যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ, জ্বালানি নিরাপত্তা, শিল্পোদ্যোগ ও নতুন নতুন উদ্ভাবনের পথগুলো উন্মোচন করবে। বিশেষ করে, দৃষ্টি দিতে হবে জ্ঞান ভাগাভাগি এবং দক্ষতা উন্নয়নের ওপর। এ ক্ষেত্রে ভারত সবার জন্য উন্নত শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার মাধ্যমে একটি বিশাল ভূমিকা রাখতে পারে। ভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে এ ধরনের যৌথ উদ্যোগ নেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের দেশের কারিগরি ও ভোকেশনাল ট্রেনিং সেন্টারগুলোকে কাজে লাগানো যেতে পারে।
বাংলাদেশ বিশাল জনসংখ্যার একটি ছোট দেশ। সার্ক এবং ভারতের নিজস্ব প্রবৃদ্ধি আঞ্চলিক প্রতিবেশী দেশগুলোর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ওপর যথেষ্ট নির্ভরশীল। ভারত ইতিমধ্যেই বিশ্বে একটি উদীয়মান অর্থনীতি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে এবং বাংলাদেশের মতো প্রতিযোগী দেশগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে ভারতের অবশ্যই একটি বিশাল ভূমিকা রয়েছে। বাণিজ্যে ছাড় প্রদান এ প্রক্রিয়ার একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হতে পারে।
যা-ই হোক, ভারতের ২৮ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাকের স্থানীয় বাজার গড়ে ১৮ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। মধ্যবিত্ত শ্রেণীর জনসংখ্যা দ্রুত হারে বাড়ছে এবং আশা করা হচ্ছে, পরবর্তী পাঁচ বছরের মধ্যে ২৬৭ মিলিয়ন স্পর্শ করবে। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার আয় ও ক্রয়ক্ষমতার কারণে ভারত বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের অন্যতম সম্ভাবনাময়ী রপ্তানি গন্তব্যে পরিণত হচ্ছে। আমরা ২০১০-১১ অর্থবছরে ভারতে মাত্র ৩৫ দশমিক ৯৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছিলাম, যা ওই অর্থবছরে আমাদের মোট পোশাক রপ্তানির মাত্র শূন্য দশমিক ২০ শতাংশ। যা-ই হোক, ২০০৯-১০ অর্থবছরের তুলনায় ২০১০-১১ অর্থবছরে আমাদের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৮৬ দশমিক ৭৬ শতাংশ। ভারতের পাশে আমাদের যে ভৌগোলিক অবস্থান, তা আমাদের জন্য একটি বড় সুবিধা। বাংলাদেশে তৈরি পোশাকের উ ৎ পাদন ব্যয় কম। ভারতের মধ্যবিত্ত শ্রেণীর জনগণের প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে মানসম্পন্ন পোশাক পাওয়ার যে চাহিদা রয়েছে, তা সরবরাহের সম্ভাবনা ও সামর্থ্য দুটোই আমাদের রয়েছে।
সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশ ও ভারতের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে যে উন্নয়ন ঘটেছে, তা যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক। তার পরও এ বিষয়ে উভয় দেশের নেতাদের বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। সম্ভবত সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিশ্বাস ও আস্থার সম্পর্ক রচনা করা। এর কোনো বিকল্প নেই। আমরা আশা করি, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন ঢাকা সফরকালে বাংলাদেশ ও ভারতের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বিষয়টি একটি নতুন মোড় পাবে।
ফারুক হাসান: বিজিএমইএর সহসভাপতি এবং জায়ান্ট গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
২০০৯-১০ অর্থবছরে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ২ দশমিক ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। উল্লিখিত অর্থবছরে ভারত থেকে ৩ দশমিক ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের আমদানির বিপরীতে বাংলাদেশ থেকে ভারতে আমরা রপ্তানি করতে পেরেছি মাত্র ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের কিছু বেশি। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যগুলোর মধ্যে অধিকাংশই হচ্ছে তৈরি পোশাকসামগ্রী এবং অধিকাংশ তৈরি পোশাকই সাফটার আওতায় ভারতের শুল্কমুক্ত বাজারে প্রবেশাধিকার পাচ্ছে না। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য ভারতের যে স্পর্শকাতর তালিকা রয়েছে, সেখানে ৪৮০টি পণ্যকে ভারতের শুল্কমুক্ত বাজারে প্রবেশাধিকারের বাইরে রাখা হয়েছে এবং এগুলোর মধ্যে ১৫৪টি হচ্ছে তৈরি পোশাক (৭৮টি নিটওয়্যার এবং ৭৬টি ওভেন পোশাক)।
আমরা ভারত সরকারকে ধন্যবাদ জানাই এ জন্য যে ২০০৮ সাল থেকে বাংলাদেশ প্রতিবছর ভারতে ৮০ লাখ পিস তৈরি পোশাক (স্পর্শকাতর পণ্য) শুল্কমুক্তভাবে রপ্তানি করার সুযোগ পাচ্ছে। সম্প্রতি এ কোটা আরও ২০ লাখ পিস বাড়ানো হয়েছে। যদিও প্রথম দুটি বছরে আমরা কোটার শতভাগ সম্পাদন করতে পারিনি, তার পরও শেষ দুটি বছরে দেখা গেছে যে ছয় মাসের মধ্যেই কোটা শেষ হয়ে গেছে। চলতি বছর প্রথম ছয় মাসে এক কোটি পিসের কোটা শেষ হয়ে গেছে। এটি বলার আর অপেক্ষা রাখে না যে আমাদের এ শিল্পের যে সক্ষমতা তার তুলনায় কোটার পরিমাণ খুবই কম। সর্বোপরি কোটার আওতায় রপ্তানির ক্ষেত্রে এখনো আমাদের ৮ থেকে ১২ শতাংশ কাউন্টারভেইলিং ডিউটি পরিশোধ করতে হয়, যার মধ্যে ৪ শতাংশ হচ্ছে বিশেষ অতিরিক্ত শুল্ক (স্পেশাল এডিশনাল ডিউটি) এবং এটি ছাড়যোগ্য। আমরা ইতিমধ্যেই ভারত সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছি এই বিশেষ অতিরিক্ত শুল্ক প্রত্যাহারের বিষয়ে।
আমরা মনে করি, এ মুহূর্তে সাফটার আওতায় বাণিজ্যিকভাবে অর্থবহ শুল্কমুক্ত বাজারের প্রবেশাধিকার পাওয়া, বিশেষ করে তৈরি পোশাক পণ্যের মতো বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ পণ্যসামগ্রীকে স্পর্শকাতর তালিকার আওতামুক্ত করা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি কিছু অশুল্ক বাধা যেমন জটিল ভিসা পদ্ধতি, ট্রানজিট সমস্যা এবং বাণিজ্যের কিছু কৌশলগত বাধা, যেগুলো প্রকারান্তরে দুটি দেশের বাণিজ্যের ভারসাম্যহীনতার পেছনে অন্যতম নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে, সেগুলো দূর করতে হবে।
তবে যা-ই হোক, বাংলাদেশ হচ্ছে বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম তুলা আমদানিকারী দেশ। অন্যদিকে ভারত হচ্ছে বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম তুলা উ ৎ পাদনকারী দেশ এবং একই সঙ্গে অন্যতম তুলা রপ্তানিকারী দেশ। টেক্সটাইল, তৈরি পোশাকের কাঁচামাল, এক্সেসরিজ, ডাইস, কেমিক্যালস এবং টেক্সটাইল মেশিনারির জন্য বাংলাদেশ ভারতের একটি বড় বাজার হতে পারে। প্রকৃতপক্ষে এখানে একটি আঞ্চলিক ভ্যালু চেইন এবং উ ৎ পাদন নেটওয়ার্ক উন্নয়নের অপার সম্ভাবনা আছে, যা সার্কভুক্ত দেশগুলোকে একে অপরের সহযোগী হিসেবে গড়ে ওঠার বিষয়ে একটি অত্যন্ত কার্যকরী কৌশল হিসেবে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে পারে। এমনকি আমরা আমাদের নিজস্ব আঞ্চলিক ব্র্যান্ড উন্নয়নের কথাও ভাবতে পারি।
এই সবকিছুর জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন সার্কভুক্ত সব দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বগুলোর এক হয়ে দৃঢ়তার সঙ্গে সমন্বিত প্রয়াস গ্রহণ। সার্কের আঞ্চলিকতাবাদ গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজন প্রাতিষ্ঠানিক ও প্রশাসনিক সংস্কার, যা এ অঞ্চলের সদস্যগুলোর মধ্যে উন্নত সংযোগ, মৌলিকভাবে স্থিতিশীল আর্থিক খাত, কারিগরি কলাকৌশলের ক্ষেত্রে যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ, জ্বালানি নিরাপত্তা, শিল্পোদ্যোগ ও নতুন নতুন উদ্ভাবনের পথগুলো উন্মোচন করবে। বিশেষ করে, দৃষ্টি দিতে হবে জ্ঞান ভাগাভাগি এবং দক্ষতা উন্নয়নের ওপর। এ ক্ষেত্রে ভারত সবার জন্য উন্নত শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার মাধ্যমে একটি বিশাল ভূমিকা রাখতে পারে। ভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে এ ধরনের যৌথ উদ্যোগ নেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের দেশের কারিগরি ও ভোকেশনাল ট্রেনিং সেন্টারগুলোকে কাজে লাগানো যেতে পারে।
বাংলাদেশ বিশাল জনসংখ্যার একটি ছোট দেশ। সার্ক এবং ভারতের নিজস্ব প্রবৃদ্ধি আঞ্চলিক প্রতিবেশী দেশগুলোর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ওপর যথেষ্ট নির্ভরশীল। ভারত ইতিমধ্যেই বিশ্বে একটি উদীয়মান অর্থনীতি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে এবং বাংলাদেশের মতো প্রতিযোগী দেশগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে ভারতের অবশ্যই একটি বিশাল ভূমিকা রয়েছে। বাণিজ্যে ছাড় প্রদান এ প্রক্রিয়ার একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হতে পারে।
যা-ই হোক, ভারতের ২৮ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাকের স্থানীয় বাজার গড়ে ১৮ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। মধ্যবিত্ত শ্রেণীর জনসংখ্যা দ্রুত হারে বাড়ছে এবং আশা করা হচ্ছে, পরবর্তী পাঁচ বছরের মধ্যে ২৬৭ মিলিয়ন স্পর্শ করবে। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার আয় ও ক্রয়ক্ষমতার কারণে ভারত বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের অন্যতম সম্ভাবনাময়ী রপ্তানি গন্তব্যে পরিণত হচ্ছে। আমরা ২০১০-১১ অর্থবছরে ভারতে মাত্র ৩৫ দশমিক ৯৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছিলাম, যা ওই অর্থবছরে আমাদের মোট পোশাক রপ্তানির মাত্র শূন্য দশমিক ২০ শতাংশ। যা-ই হোক, ২০০৯-১০ অর্থবছরের তুলনায় ২০১০-১১ অর্থবছরে আমাদের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৮৬ দশমিক ৭৬ শতাংশ। ভারতের পাশে আমাদের যে ভৌগোলিক অবস্থান, তা আমাদের জন্য একটি বড় সুবিধা। বাংলাদেশে তৈরি পোশাকের উ ৎ পাদন ব্যয় কম। ভারতের মধ্যবিত্ত শ্রেণীর জনগণের প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে মানসম্পন্ন পোশাক পাওয়ার যে চাহিদা রয়েছে, তা সরবরাহের সম্ভাবনা ও সামর্থ্য দুটোই আমাদের রয়েছে।
সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশ ও ভারতের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে যে উন্নয়ন ঘটেছে, তা যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক। তার পরও এ বিষয়ে উভয় দেশের নেতাদের বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। সম্ভবত সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিশ্বাস ও আস্থার সম্পর্ক রচনা করা। এর কোনো বিকল্প নেই। আমরা আশা করি, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন ঢাকা সফরকালে বাংলাদেশ ও ভারতের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বিষয়টি একটি নতুন মোড় পাবে।
ফারুক হাসান: বিজিএমইএর সহসভাপতি এবং জায়ান্ট গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
No comments