নির্বাচন আসছে, তাই-আরও বরাদ্দ চাই

সাংসদেরা বলছেন, আগামী দুই বছরে তাঁদের নির্বাচনী এলাকায় প্রচুর উন্নয়নকাজ করতে হবে। এ জন্য বরাদ্দ চাই। এলাকায় রাস্তাঘাট, কালভার্ট, সেতু, স্কুল-কলেজ হোক—এটা সবাই চান। স্থানীয় পর্যায়ে উন্নয়নকাজ সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হলে এলাকার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড যেমন বৃদ্ধি পায়, তেমনি ওই সব উন্নয়নকাজের মাধ্যমে এলাকার মানুষের


কর্মসংস্থানও হয়। বাজারে কেনাকাটা বাড়ে। পণ্যের চাহিদা বাড়ে। ফলে উৎপাদন গতি পায়। কিন্তু সমস্যা হলো, এখন যেসব উন্নয়ন প্রকল্পের কথা উঠছে, তার বেশির ভাগই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে প্রণীত। এতে যদি কিছু উন্নতি হয়, সেটা হবে প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের। কিন্তু এলাকার উন্নয়ন কতটা হবে, সে ব্যাপারে সংশয় আছে?
দুই বছর আগে একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল। চার হাজার ৬৯১ কোটি টাকার এ প্রকল্পের আওতায় ঢাকার বাইরের সাংসদদের জন্য ২৮৬টি নির্বাচনী এলাকার পল্লি অবকাঠামোগত উন্নয়নের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। এটা যথেষ্ট নয় বলে মনে করছেন সাংসদেরা। তাঁরা আরও অনেক প্রকল্প জমা দিয়েছেন মন্ত্রণালয়ে। স্থানীয় সরকার বিভাগ এসব প্রকল্পের জন্য আরও দুই হাজার ৬৮৪ কোটি টাকা বরাদ্দের দাবি জানিয়েছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় কাজের পরিধি নিশ্চয়ই বাড়বে; কিন্তু এর লক্ষ্য হতে হবে স্থানীয় উন্নয়ন। শুধু রাজনৈতিক বিবেচনায় কোনো প্রকল্প গ্রহণ করা উচিত নয়।
চলতি অর্থবছরের ৪৬ হাজার কোটি টাকার এডিপি সংশোধন করে সাড়ে ৪০ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়। একদিকে বৈদেশিক সাহায্যপ্রাপ্তিতে ঘাটতি, অন্যদিকে প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নে সক্ষম না হওয়ায় এডিপির আকার ছোট করতে হয়। একই সঙ্গে আবার পুরোনো প্রকল্পগুলোর সঙ্গে আরও ১৩৯টি নতুন প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, এটা পরস্পরবিরোধী কাজ।
যদি টাকার অঙ্ক কমিয়ে আনা হয়, তাহলে প্রকল্পের সংখ্যা বাড়ানোর ভিত্তি কোথায়? এর মধ্যে রাজনৈতিক চাপে ১১১টি প্রকল্পে সামান্য করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এভাবে প্রকল্পগুলো কোনোরকমে টিকিয়ে রাখা হবে। ওগুলো সহজে শেষ হবে না, সাধারণ মানুষও তার কোনো সুফল সহজে পাবে না; লাভ হবে রাজনৈতিক নেতাদের। তাঁরা এলাকার উন্নয়ন করতে তৎপর বলে দাবি করতে পারবেন। এর অর্থ হলো, রাজনৈতিক ও দলীয় স্বার্থের কাছে স্থানীয় উন্নয়নের স্বার্থ বিসর্জন দেওয়া।
এক দশক আগে বিশ্বব্যাংকের এক গবেষণায় বলা হয়েছিল, বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি নির্বাচনী তহবিল সংগ্রহ করা হয় বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্প থেকে। এডিপিতে প্রকল্পের সংখ্যা বাড়ানোর ধুম দেখে মনে হয়, কথাটা পুরোপুরি সত্য। প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের ভাগ্যের চাকায় তেল ঢালার জন্য এডিপির ব্যবহার শুধু অন্যায় নয়, অপরাধও।
এডিপিকে নির্বাচনী উদ্দেশ্য সাধনের হাতিয়ার হিসেবে না দেখে এলাকার প্রকৃত উন্নয়নের উপায় হিসেবেই দেখতে হবে। এ জন্য স্থানীয় সরকারব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করা এবং তাদের মাধ্যমে মূল প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।

No comments

Powered by Blogger.