যুব সম্প্রদায় সম্পর্কে ইসলাম by মুফতি এনায়েতুল্লাহ
হজরত আবু উসামা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে কোনো যুবক দুনিয়ার মজা ও খেলাধুলা ছেড়ে দিয়ে তার যৌবন নিয়ে আল্লাহর আনুগত্যের প্রতি মনোনিবেশ করবে, আল্লাহ তাকে নিরানব্বই জন 'সিদ্দিক'-এর মর্যাদাদান করবেন।
(তাবারানি) এই হাদিসে দুনিয়ার মজা ও খেলাধুলা বলতে অশল্গীল ও চরিত্রবিধ্বংসী কর্মকাণ্ডকে বোঝানো হয়েছে।
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) অপর এক হাদিসে বলেছেন, কঠিন হাশরের উত্তপ্ত দিনে আল্লাহর আরশের ছায়াপ্রাপ্ত সাত প্রকারের ব্যক্তির মধ্যে অন্যতম ব্যক্তি সেই যুবক (যুবতী), যে আল্লাহর অনুশাসন মেনে তার ইবাদত-বন্দেগিতে জীবন কাটায় এবং অবৈধ প্রেম বা কুপ্রস্তাব সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাখ্যান করে।_বুখারি ও মুসলিম
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) অন্যত্র আরও ইরশাদ করেছেন, 'আমার পুরো উম্মত হলো একটি দেহের ন্যায়, যদি সেই দেহের কোনো একটি অঙ্গে যেমন_ চোখে বা মাথায় ব্যথা পায়, তাহলে তার ব্যথায় সারা শরীর ব্যথিত হয়।' (মুসলিম)। অথচ আজ সমগ্র মুসলিম উম্মাহ ক্ষতবিক্ষত, কিন্তু কারও মধ্যেই কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। উম্মাহকে এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য উম্মাহর শ্রেষ্ঠ সন্তান তরুণ-যুবকদের দরকার। যদি উম্মাহর এই সন্তানগুলো ঘুরে দাঁড়ায়, তাহলে পৃথিবীতে শান্তির সুবাতাস বইতে বাধ্য।
আমরা সাধারণত জীবন গঠনের প্রাথমিক শিক্ষা পাই পিতা-মাতার কাছ থেকে। এরপরই আমাদের জীবনে চলে আসে বন্ধুমহল। পিতা-মাতার স্নেহের কোল থেকে বেরিয়ে মানুষ প্রথম যাদের মাঝে বিচরণ করে তারা হলো বন্ধু। আর বন্ধুদের উচিত হলো বন্ধুর সঙ্গে এমন চরিত্র উপস্থাপন করা যাতে বন্ধু সেই চরিত্রের মাধ্যমে প্রভাবিত হয় এবং সব ধরনের সৎ কাজে উৎসাহিত করা এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করা। কিন্তু বর্তমান সমাজের বন্ধুমহল এবং পরিবেশ-পারিপাশর্ি্বকতার অবস্থা এমন যে সে কারণেই মানুষ খারাপ হয়ে যায়। কোনো মানুষ প্রথম অসৎ কাজটি শেখে বন্ধুর কাছ থেকে। অশ্লীল সিনেমা, সিগারেট, ইভটিজিং, গাঁজা, মদ, অপরাধমূলক কাজগুলো বন্ধুদের প্ররোচনায়ই করা শুরু করে। এ সমাজে নামাজের দিকে ডাকার মতো বন্ধুর তুলনায় আড্ডা দিতে ডাকার মতো বন্ধুর সংখ্যাই বেশি। সুতরাং বন্ধুদের দ্বারা পাশবিক চরিত্র দমনের চেয়ে বিকাশই বেশি হয়। এ জন্যই হাদিসে বলা হয়েছে, 'তোমরা বন্ধু নির্বাচনে সতর্ক হও', কারণ বন্ধুর চারিত্রিক প্রভাবেই মানুষ বেড়ে ওঠে। আর এভাবেই যুবসমাজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপস্থিত।
বর্তমান সমাজে চলমান একটি বাস্তবতা হলো, আমরা আমাদের যুব-তরুণদের দ্বীন ও ইসলামের বিভিন্ন বিষয় থেকে ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃতভাবে বিরত রাখার চেষ্টা করে থাকি। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, সুকৌশলে আমরা যুবকদের ইসলাম সংক্রান্ত বিষয় থেকে দূরে সরিয়ে রাখি। এ ক্ষেত্রে তরুণ-যুবকদের সামনে তুলে ধরা হয়, যৌবনকাল হচ্ছে এনজয় করার সময়। আর যদি কোনো যুবক ইসলাম নিয়ে অধ্যয়ন করতে চায়, ইসলাম সম্পর্কে মানুষকে দাওয়াত দিতে চায় তাহলে তাকে উৎসাহদানকারীর চেয়ে নিরুৎসাহিতকারীর সংখ্যাই সমাজে বেশি দেখা যায়। তাকে বলা হয় আরে রাখো, ধর্মকর্ম তো বার্ধক্যের জন্য। আগে কিছুদিন আনন্দ-ফুর্তি করো। নিজের ক্যারিয়ার গড়ো।
পক্ষান্তরে আমরা যদি কোরআন-সুন্নাহর দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাব, ইসলাম মানবজীবনের সবচেয়ে বেশি মূল্যবান সময় নির্ধারণ করেছে যৌবনকালকে। প্রতিটি মানুষের যৌবনকাল হচ্ছে ইসলামের দৃষ্টিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, 'কিয়ামতের দিন কোনো বনি আদমই পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগে এক কদম আগে বা পিছে নড়ার অনুমতি পাবে না। এর মধ্যে প্রথম প্রশ্ন হবে তার জীবন সম্পর্কে, কোথায় সে এটি ব্যয় করেছে। দ্বিতীয় প্রশ্ন করা হবে তার যৌবনকাল সম্পর্কে, কী কাজে সে যৌবনকাল নষ্ট করেছে। তৃতীয় প্রশ্ন_ সম্পদ কীভাবে উপার্জন করা হয়েছে। চতুর্থ প্রশ্ন_ উপার্জিত সম্পদ কোন কাজে এবং কোথায় ব্যয় করেছে। পঞ্চম ও শেষ প্রশ্ন_ যেসব বিষয়ে সে জ্ঞানার্জন করেছিল তার কতটুকু আমল করেছে।' _বুখারি
ইসলাম যেখানে যৌবনকালকে এত গুরুত্ব দিয়েছে, মুসলিম উম্মাহর শ্রেষ্ঠ সন্তানদের যৌবনকালকে ভালো কাজে ব্যয় করার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছে, সেখানে আমাদের দেশে অপশক্তিগুলো তরুণদের নেশা, সন্ত্রাস অপকর্মের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
কিন্তু তাদের যদি প্রশ্ন করা হয়, মৃত্যুর পর কবরে তাকে কয়টি ও কী কী প্রশ্ন করা হবে? কিয়ামতের দিন কোন প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগে সে নড়তে পারবে না? অধিকাংশ যুবকই বলতে পারবে না। কারণ কেউ তাকে এসব বিষয়ের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেনি।
আজ আন্তর্জাতিক যুব দিবস। আমরা চাই হালের তরুণ-যুবকরা গড্ডলিকা প্রবাহে না ভেসে ইসলাম সম্পর্কে জানবে, ইসলাম প্রচারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে এবং সে অনুযায়ী জীবনযাপনে অভ্যস্ত হবে।
muftianaet@gmail.com
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) অপর এক হাদিসে বলেছেন, কঠিন হাশরের উত্তপ্ত দিনে আল্লাহর আরশের ছায়াপ্রাপ্ত সাত প্রকারের ব্যক্তির মধ্যে অন্যতম ব্যক্তি সেই যুবক (যুবতী), যে আল্লাহর অনুশাসন মেনে তার ইবাদত-বন্দেগিতে জীবন কাটায় এবং অবৈধ প্রেম বা কুপ্রস্তাব সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাখ্যান করে।_বুখারি ও মুসলিম
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) অন্যত্র আরও ইরশাদ করেছেন, 'আমার পুরো উম্মত হলো একটি দেহের ন্যায়, যদি সেই দেহের কোনো একটি অঙ্গে যেমন_ চোখে বা মাথায় ব্যথা পায়, তাহলে তার ব্যথায় সারা শরীর ব্যথিত হয়।' (মুসলিম)। অথচ আজ সমগ্র মুসলিম উম্মাহ ক্ষতবিক্ষত, কিন্তু কারও মধ্যেই কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। উম্মাহকে এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য উম্মাহর শ্রেষ্ঠ সন্তান তরুণ-যুবকদের দরকার। যদি উম্মাহর এই সন্তানগুলো ঘুরে দাঁড়ায়, তাহলে পৃথিবীতে শান্তির সুবাতাস বইতে বাধ্য।
আমরা সাধারণত জীবন গঠনের প্রাথমিক শিক্ষা পাই পিতা-মাতার কাছ থেকে। এরপরই আমাদের জীবনে চলে আসে বন্ধুমহল। পিতা-মাতার স্নেহের কোল থেকে বেরিয়ে মানুষ প্রথম যাদের মাঝে বিচরণ করে তারা হলো বন্ধু। আর বন্ধুদের উচিত হলো বন্ধুর সঙ্গে এমন চরিত্র উপস্থাপন করা যাতে বন্ধু সেই চরিত্রের মাধ্যমে প্রভাবিত হয় এবং সব ধরনের সৎ কাজে উৎসাহিত করা এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করা। কিন্তু বর্তমান সমাজের বন্ধুমহল এবং পরিবেশ-পারিপাশর্ি্বকতার অবস্থা এমন যে সে কারণেই মানুষ খারাপ হয়ে যায়। কোনো মানুষ প্রথম অসৎ কাজটি শেখে বন্ধুর কাছ থেকে। অশ্লীল সিনেমা, সিগারেট, ইভটিজিং, গাঁজা, মদ, অপরাধমূলক কাজগুলো বন্ধুদের প্ররোচনায়ই করা শুরু করে। এ সমাজে নামাজের দিকে ডাকার মতো বন্ধুর তুলনায় আড্ডা দিতে ডাকার মতো বন্ধুর সংখ্যাই বেশি। সুতরাং বন্ধুদের দ্বারা পাশবিক চরিত্র দমনের চেয়ে বিকাশই বেশি হয়। এ জন্যই হাদিসে বলা হয়েছে, 'তোমরা বন্ধু নির্বাচনে সতর্ক হও', কারণ বন্ধুর চারিত্রিক প্রভাবেই মানুষ বেড়ে ওঠে। আর এভাবেই যুবসমাজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপস্থিত।
বর্তমান সমাজে চলমান একটি বাস্তবতা হলো, আমরা আমাদের যুব-তরুণদের দ্বীন ও ইসলামের বিভিন্ন বিষয় থেকে ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃতভাবে বিরত রাখার চেষ্টা করে থাকি। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, সুকৌশলে আমরা যুবকদের ইসলাম সংক্রান্ত বিষয় থেকে দূরে সরিয়ে রাখি। এ ক্ষেত্রে তরুণ-যুবকদের সামনে তুলে ধরা হয়, যৌবনকাল হচ্ছে এনজয় করার সময়। আর যদি কোনো যুবক ইসলাম নিয়ে অধ্যয়ন করতে চায়, ইসলাম সম্পর্কে মানুষকে দাওয়াত দিতে চায় তাহলে তাকে উৎসাহদানকারীর চেয়ে নিরুৎসাহিতকারীর সংখ্যাই সমাজে বেশি দেখা যায়। তাকে বলা হয় আরে রাখো, ধর্মকর্ম তো বার্ধক্যের জন্য। আগে কিছুদিন আনন্দ-ফুর্তি করো। নিজের ক্যারিয়ার গড়ো।
পক্ষান্তরে আমরা যদি কোরআন-সুন্নাহর দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাব, ইসলাম মানবজীবনের সবচেয়ে বেশি মূল্যবান সময় নির্ধারণ করেছে যৌবনকালকে। প্রতিটি মানুষের যৌবনকাল হচ্ছে ইসলামের দৃষ্টিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, 'কিয়ামতের দিন কোনো বনি আদমই পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগে এক কদম আগে বা পিছে নড়ার অনুমতি পাবে না। এর মধ্যে প্রথম প্রশ্ন হবে তার জীবন সম্পর্কে, কোথায় সে এটি ব্যয় করেছে। দ্বিতীয় প্রশ্ন করা হবে তার যৌবনকাল সম্পর্কে, কী কাজে সে যৌবনকাল নষ্ট করেছে। তৃতীয় প্রশ্ন_ সম্পদ কীভাবে উপার্জন করা হয়েছে। চতুর্থ প্রশ্ন_ উপার্জিত সম্পদ কোন কাজে এবং কোথায় ব্যয় করেছে। পঞ্চম ও শেষ প্রশ্ন_ যেসব বিষয়ে সে জ্ঞানার্জন করেছিল তার কতটুকু আমল করেছে।' _বুখারি
ইসলাম যেখানে যৌবনকালকে এত গুরুত্ব দিয়েছে, মুসলিম উম্মাহর শ্রেষ্ঠ সন্তানদের যৌবনকালকে ভালো কাজে ব্যয় করার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছে, সেখানে আমাদের দেশে অপশক্তিগুলো তরুণদের নেশা, সন্ত্রাস অপকর্মের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
কিন্তু তাদের যদি প্রশ্ন করা হয়, মৃত্যুর পর কবরে তাকে কয়টি ও কী কী প্রশ্ন করা হবে? কিয়ামতের দিন কোন প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগে সে নড়তে পারবে না? অধিকাংশ যুবকই বলতে পারবে না। কারণ কেউ তাকে এসব বিষয়ের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেনি।
আজ আন্তর্জাতিক যুব দিবস। আমরা চাই হালের তরুণ-যুবকরা গড্ডলিকা প্রবাহে না ভেসে ইসলাম সম্পর্কে জানবে, ইসলাম প্রচারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে এবং সে অনুযায়ী জীবনযাপনে অভ্যস্ত হবে।
muftianaet@gmail.com
No comments