পবিত্র কোরআনের আলো-কৃপণ ও লোকদেখানো দানকারীদের প্রতি আল্লাহর ধিক্কার

৩৭. আল্লাযীনা ইয়াব্খালূনা ওয়া ইয়া'মুরূনান না-ছা বিলবুখ্লি ওয়া ইয়াকতুমূনা মা-আ-তা-হুমুল্লা-হু মিন্ ফাদ্বলিহি; ওয়া আ'তাদ্না লিলকা-ফিরীনা আ'যা-বাম্ মুহীনা। ৩৮. ওয়াল্লাযীনা ইউনফিক্বূনা আমওয়া-লাহুম রিআ-আন না-ছি ওয়ালা ইউ'মিনূনা বিল্লাহি ওয়ালা বিলইয়াওমিল আখিরি; ওয়া মান ইয়াকুনিশ্ শাইত্বানু লাহূ ক্বারীনান ফাছাআ ক্বারীনা।


৩৯. ওয়ামা-যা আ'লাইহিম লাও আ-মানূ বিল্লাহি ওয়ালইয়াওমিল আখিরি ওয়াআনফাক্বূ মিম্মা রাযাক্বাহুমুল্লাহু; ওয়াকা-নাল্লাহু বিহিম আ'লীমা।
[সুরা : আন নিসা, আয়াত : ৩৭-৩৯]
অনুবাদ : ৩৭. যারা নিজেরা কৃপণতা করে এবং মানুষকে কৃপণতা করার আদেশ দেয়, আর আল্লাহ তায়ালা তাদের যা দান করেছেন তা গোপন করে রাখে (আমি তাদের পছন্দ করি না)। আমি অবাধ্যদের জন্য লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তির ব্যবস্থা করে রেখেছি।
৩৮. (আমি এদেরও পছন্দ করি না) যারা লোকদেখানোর জন্য ধনসম্পদ ব্যয় করে, তাঁরা আল্লাহ তায়ালা এবং শেষ বিচারের দিনেও বিশ্বাস করে না; শয়তান যদি কোনো ব্যক্তির সঙ্গী হয়, তবে সে খুব খারাপ সঙ্গী। ৩৯. কী এমন খারাপ হয়ে যেত, যদি তারা আল্লাহর ওপর ও পরকালের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করত, এরপর আল্লাহ তাদের যা কিছু দান করেছেন তা থেকে সৎ পথে ব্যয় করত! তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা ভালোভাবেই জানেন।
ব্যাখ্যা : এই আয়াতগুলো আগের আয়াতের ধারাবাহিকতায় এসেছে, যেখানে শুধু এক আল্লাহর ইবাদত ও মানুষের সঙ্গে উত্তম আচরণ করার কথা বলা হয়েছে। উত্তম আচরণ না করার কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, অহংকার ও দাম্ভিকতা। এ আয়াতে বলা হচ্ছে কৃপণতার কথা। কৃপণরাও মানুষের সঙ্গে অসদাচরণকারীদের দলভুক্ত। ৩৭ নম্বর আয়াতে শানেনুজুল এ রকম_কিছু ইহুদি ও ইসলামবিদ্বেষী লোক মদিনার দানশীল আনসারদের আল্লাহর পথে খরচ করতে বাধা দিত। এরা তাদের কৃপণতা অবলম্বন করতে প্ররোচিত করত। এদের সম্পর্কেই এ আয়াতটি নাজিল হয়। এ আয়াতে কৃপণ এবং আল্লাহর অবাধ্যদের অভিন্নভাবে পরকালের কঠিন শাস্তির সংবাদ দেওয়া হয়েছে। এ আয়াতে সম্পদ গোপন করে রাখার যে কথাটি বলা হয়েছে, তা কৃপণতাবশত গোপন করা। তাফসিরকাররা বলেছেন, এখানে দ্বীনী শিক্ষা গোপন করাও হতে পারে এর অর্থ। যেমন_ইহুদিরা তাদের তাওরাত কিতাবে বর্ণিত শেষ নবী ও তাঁর রিসালাতের কথা গোপন করত। গোপন করা বলতে সব ধরনের গোপন করাই বোঝানো হয়েছে। ৩৮ নম্বর আয়াতে লোকদেখানোর জন্য ধনসম্পদ ব্যয় করার অসৎ প্রবণতাকে ধিক্কার জানানো হয়েছে। যারা আল্লাহ ও পরকালের ওপর বিশ্বাস রাখে না; অথচ লোকদেখানোর জন্য দান-খয়রাত করে তারা আসলে শয়তানের প্ররোচনায় এসব করে। শয়তান যাদের সঙ্গী তারা কখনো সত্য পথ খুঁজে পাবে না। ৩৯ নম্বর আয়াতে আফসোস করে বলা হয়েছে, এরা যদি আল্লাহর পথে আসত, শেষ বিচারের দিনে বিশ্বাস রাখত, সৎ পথে সম্পদ ব্যয় করত, তবে কী ক্ষতি হতো! এতে তো তাদের কল্যাণই হতো। কিন্তু তারা কল্যাণের পথে এল না।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.