অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত হোক-আইনজীবীর মৃত্যু

বিএনপি-সমর্থক আইনজীবী এম ইউ আহমেদের মৃত্যুর কারণ নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে পরিবার ও দলের পক্ষ থেকে। গত ২ আগস্ট হাইকোর্টের একটি বেঞ্চে হট্টগোল ও হাতাহাতির ঘটনায় এই আইনজীবীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল ১১ আগস্ট। এরপর অসুস্থ অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।


তিনি জামিন পান ১৭ আগস্ট। গত শুক্রবার ২৬ আগস্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান এম ইউ আহমেদ।
পরিবারের অভিযোগ, গ্রেপ্তারের পর পুলিশ নির্যাতন চালিয়েছিল আইনজীবী এম ইউ আহমেদের ওপর। পুলিশ অবশ্য নির্যাতনের কথা অস্বীকার করে বলেছে, গ্রেপ্তারের পর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। ইতিমধ্যে পরিবারের পক্ষ থেকে একটি মামলাও করা হয়েছে। সরকার তথা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্তব্য হবে সেই মামলাটি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনায় সহায়তা করা। এম ইউ আহমেদ কোন রাজনৈতিক দলের সমর্থক বা বিরোধী ছিলেন, তা এখানে বিবেচ্য নয়। বিবেচ্য হলো, তিনি সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী এবং পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর অসুস্থ হয়ে তিনি মারা গেছেন। এখন এই মৃত্যুর কারণ খুঁজে বের করা প্রয়োজন। আমরা মনে করি, একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তই তাঁর মৃত্যুরহস্যের উদ্ঘাটন এবং সব বিভ্রান্তির অবসান ঘটাতে পারে।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এই মৃত্যুকে একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড হিসেবে উল্লেখ করেছেন। স্ত্রী সেলিনা আহমেদ অভিযোগ করে বলেছেন, তাঁর স্বামীকে সুস্থ অবস্থায় গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশের হেফাজতে নির্যাতন করা হয়েছে, এতে তিনি সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেন। হূদরোগ ইনস্টিটিউটে ভর্তি করার দুই দিন পর জ্ঞান ফিরে এলে তিনি ডিবি হেফাজতে নির্যাতনের কথা জানিয়েছিলেন বলে তাঁর স্ত্রী দাবি করেছেন।
আইনজীবী এম ইউ আহমেদের মৃত্যুর এই ঘটনার একটি রাজনৈতিক দিক রয়েছে। তিনি বিএনপি-সমর্থক জাতীয়তাবাদী আইনজীবী সমিতির সদস্য। হাইকোর্টে মুফতি ফজলুল হক আমিনীর সংবিধান ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলা-সংক্রান্ত বক্তব্যের শুনানিতে খালেদা জিয়ার একই ধরনের বক্তব্য প্রসঙ্গে আদালত খালেদা জিয়ার দেশপ্রেম নিয়ে প্রশ্ন তুললে এজলাসে যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়, সেই ঘটনায় ও পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে করা মামলায় তিনি গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। এই ঘটনা দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে যথেষ্ট উত্তাপ ছড়িয়েছিল। আইনজীবী এম ইউ আহমেদের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে নতুন করে কোনো রাজনীতি হোক, তা প্রত্যাশিত নয়।
আমাদের দেশে পুলিশি হেফাজতে নির্যাতন নতুন ঘটনা নয়, এ ক্ষেত্রে পরিবারের অভিযোগ অনুযায়ী সেই ধরনের কিছু ঘটেছে কি না, তা তদন্ত করে বের করা জরুরি। সরকারকে সব ধরনের রাজনৈতিক সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে এই কাজটি করতে হবে এবং পুলিশি নির্যাতনের অভিযোগ প্রমাণিত হলে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণও নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়াত আইনজীবী এম ইউ আহমেদের পরিবারের প্রতি রইল আমাদের শোক ও সমবেদনা।

No comments

Powered by Blogger.