পাখিঃ পিগমি রেন বাবলার by রোনাল্ড হালদার
লাউয়াছড়া ন্যাশনাল পার্ক নানা কারণেই আমার কাছে পাখি পর্যবেক্ষণের জন্য পছন্দের গন্তব্য। এটি সেই স্থান, যেখান থেকে আমার পাখি নিয়ে কাজ করার শখ শুরু হয়েছে। প্রথমবারের মতো স্কারলেট মিনিভেট (বাংলা নাম সিঁদুরে সাহেলি) অথবা ক্লোরোপসিস (বাংলা নাম সবুজপাতা বুলবুলি)
দেখার সেসব শিহরণ-জাগানিয়া মুহূর্তগুলো এখনো আমার মানসপটে ভেসে ওঠে। পাখিগুলোর চোখ ধাঁধানো লাল ও হলুদ অথবা সবুজ রং স্বভাবতই আমাকে জাদুমন্ত্রের মতো সম্মোহিত করত। এ ছাড়া লাউয়াছড়াই প্রথম বড়পাতার চিরসবুজ বন, যেখানে আমার প্রথম পদচারণে। এ বনে যেসব বন্ধুর সঙ্গে আমি পাখি দেখতে গিয়েছি, তাদের আজও আমার মনে আছে। কাজেই এ পার্ক আমার জন্য স্মৃতিবেদনাতুর স্থানও বটে।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি বন্ধুদের একজন ফোন করে আমাকে জানান, ওই বনে তিনি একটি খুবই দুর্লভ প্রজাতির পাখি দেখছেন। তাঁর মুখে শোনার পর দুর্লভ প্রজাতির পাখিটি দেখার জন্য ওই পার্ক আমাকে টানছিল। কারণ, বন্ধুর মুখে শোনা ওই পাখি আমি বাংলাদেশে কখনো দেখিনি। অনেক বছর আগে আমি সেটা শিলংয়ে দেখেছি বলে মনে পড়ছে।
অতএব, অন্য এক বন্ধুকে নিয়ে ৯ ফেব্রুয়ারি লাউয়াছড়া ন্যাশনাল পার্কের উদ্দেশে রওনা হয়ে গেলাম। আমি জানতাম, গভীর এ জঙ্গলে পাখিটির অবস্থান শনাক্ত করা কত কঠিন হবে! এটি খুবই ছোট্ট প্রজাতির পাখি। আকারে লেজ ছাড়া একটি টেইলর পাখির (বাংলা নাম টুনটুনি) মতো হবে। এ পাখি সাধারণত জঙ্গলের আর্দ্রতাপূর্ণ ঘনপাতা আচ্ছাদিত অন্ধকারে থাকতে ভালোবাসে।
পাখিরা সাধারণত ভোরে চারণভূমিতে বিচরণ শুরু করে। তাই বিরল প্রজাতির এ পাখি দেখার সুবর্ণ সুযোগের আশায় খুব ভোরে বনের একটি স্থানে আমরা অবস্থান নিলাম। এক সপ্তাহ আগে এ জায়গায় আমার বন্ধু ওই প্রজাতির পাখি দেখেছিল।
শুরু থেকেই আমাদের অনুসন্ধানের প্রকৃতিটা ছিল নিরলস। তবে সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে আমাদের হতাশা পেয়ে বসছিল। তিন ঘণ্টা পরও পাখিটির হদিস মিলল না। একপর্যায়ে ওই জায়গায় পাখিটি দেখার আশাই ছেড়ে দিলাম আমরা।
তবে একেবারে হাল ছেড়ে দিইনি। পাখি দেখার আশায় বনের অন্য এলাকায় আমরা প্রচেষ্টা চালাতে লাগলাম। প্রায় দুপুরের দিকে বনের ঘনপাতা আচ্ছাদিত একটি অংশের পাতা নড়ে উঠলে সেদিকে আমার দৃষ্টি আটকে গেল। বিমোহিতচিত্তে আমি অপেক্ষা করতে থাকলাম। পাখিটির মুখ আমার দিকে ফেরানোর আশায় দম বন্ধ করে রাখলাম। একটু পরই আমার আশা পূর্ণতা পেল। কয়েক সেকেন্ডের জন্য পাখিটি আমার ক্যামেরার লেন্সের দিকে চোখ তুলে তাকাল। মুহূর্তের এ সুযোগ আমি ব্যর্থ হতে দিইনি। দুর্লভ আর পলায়নপর এ পাখি হচ্ছে পিগমি রেন বাবলার।
No comments