উচ্চ আদালতের নির্দেশ প্রতিপালিত হোক-গাড়ি চালনার লাইসেন্স

পরীক্ষা ছাড়া গাড়ি চালানোর পেশাদার লাইসেন্স না দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। অন্যদিকে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি কারও চাপের মুখে লাইসেন্স না দেওয়ার সুপারিশ করেছে। এই নির্দেশ ও সুপারিশ ইতিবাচক, কিন্তু এর পেছনে রয়েছে মৃত্যু, দায়িত্বহীনতা ও আইন অমান্যের দীর্ঘ ইতিহাস।


অন্তত আশু ব্যবস্থা হিসেবে নির্দেশ ও সুপারিশ দুটি মান্য করে চরম অব্যবস্থার প্রতিকারের সূচনা হোক।
প্রথম প্রশ্ন হলো, আদালতকে কেন এই নির্দেশ দিতে হলো আর সংসদীয় কমিটিরই বা এই সুপারিশের কী প্রয়োজন ছিল? সবাই জানে, পরীক্ষা ছাড়া লাইসেন্স দেওয়া যেমন বেআইনি, কারও চাপে মন্ত্রীর তরফে অনিয়ম করাও বেআইনি। আইন থাকা সত্ত্বেও, অনিয়ম প্রাণঘাতী হওয়া সত্ত্বেও বেআইনি লাইসেন্স দিয়ে সড়ককে ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলা হয়েছে। এ ঘটনাই প্রমাণ করে, বাংলাদেশে বেশির ভাগ রেগুলেটরি বা নিয়ন্ত্রণ সংস্থাই অনিয়মের জন্য দায়ী। যাদের দায়িত্ব ছিল নিয়ম প্রতিষ্ঠা করা, অনিয়মের নজরদারি করা, সেসব রেগুলেটরি সংস্থা যখন অনিয়মের জেনারেটর হয়ে ওঠে, তখন সবকিছু ভেঙে পড়ার অবস্থা সৃষ্টি হয়। জীবনের মূল্যে এই সত্য আজ শিখতে হচ্ছে।
কয়েকটি সংগঠনের করা রিট আবেদনের ভিত্তিতে আদালত যে নির্দেশ দিয়েছেন, সেই নির্দেশ তো আইনের আকারে সব সময় বহালই ছিল! আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এত দিন তাহলে কী করেছে? সংসদীয় কমিটিও কেন এত দিন এ বিষয়ে উদাসীন ছিল?
অন্য সব ক্ষেত্রের মতো যোগাযোগ ক্ষেত্রেও কায়েমি ক্ষমতার দাপট চরম হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি নৌপরিবহনমন্ত্রীর নেতৃত্বে পরিবহনশ্রমিকদের আইন অমান্য করা সেই দাপটের পরিচয়ও দেশবাসী পেয়েছে। একটি গোষ্ঠী বরাবরই আইনের ঊর্ধ্বে থেকে রাষ্ট্রের ভেতরে রাষ্ট্রের মতো আচরণ করছে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং জননিরাপত্তার স্বার্থে সবার আগে এদের দাপট কমাতে হবে। সরকারের উচিত, স্বার্থান্বেষী মহলের অশুভ থাবা থেকে সড়ক পরিবহনকে মুক্ত করা এবং যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
উচ্চ আদালতের নির্দেশ প্রতিপালিত হোক, সংসদীয় কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়িত হোক। সেই সঙ্গে বিনা পরীক্ষায় যেসব লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর তদন্ত করতে হবে। প্রশিক্ষণ ও পরীক্ষা ছাড়া কাউকেই ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়া যাবে না।

No comments

Powered by Blogger.