সব পক্ষের যৌক্তিক আচরণই কাম্য-শেয়ারবাজার কোন পথে?

শেয়ারবাজারকে ঘিরে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের আচরণে যৌক্তিকতার ঘাটতি বিভিন্ন দিক থেকেই পরিলক্ষিত হচ্ছে। সাম্প্রতিক অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে বিরাট ধসের পরও অনেকেরই তা থেকে যথেষ্ট শিক্ষা হয়নি, যথেষ্ট সচেতনতাবোধ তৈরি হয়নি।


আর তাই বাজারে দরপতনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কিছুসংখ্যক বিনিয়োগকারী রাস্তায় নামছেন, বিক্ষোভ-মিছিল করছেন, অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করছেন। এমনকি শেয়ারবাজারে কারসাজির দায়ে সরকার গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পাঁচজনের বিরুদ্ধে গত সপ্তাহে মামলা দায়ের করার একটি ‘নেতিবাচক’ প্রভাবও বাজারে পড়েছে, ঘটেছে দরপতন। আর কতিপয় বিনিয়োগকারী রাস্তায় নেমেছেন। এটা নিতান্তই যুক্তিহীন ও অগ্রহণযোগ্য আচরণ।
আসলে যাঁরা এসব আচরণ করছেন আর যাঁরা সমর্থন ও মদদ দিচ্ছেন, তাঁরা কিন্তু এমন বার্তাই আসলে দিচ্ছেন যে শেয়ারবাজারে কারসাজি যে-ই করুক না কেন, তাতে বাজার ও বিনিয়োগকারীরা যতই ক্ষতিগ্রস্ত হন না কেন, কারও বিরুদ্ধে মামলা করা বা ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না। এমন দৃষ্টিভঙ্গি বজায় থাকলে দীর্ঘমেয়াদে কারসাজিকারকেরা উ ৎ সাহিত হবেন, যা আরও বড় ক্ষতি ডেকে আনতে পারে—এই কঠিন সত্যটি যেন অনেকেই বুঝতে চাইছেন না। একইভাবে তাঁরা মানতে চাইছেন না যে কৃত্রিমভাবে চাঙা করার বিভিন্ন প্রয়াস যুক্তিসংগত কারণেই বেশিদিন স্থায়ী হতে পারেনি। নানাভাবে বাজারকে চাঙা করার চেষ্টা চালানো হয়েছিল। অথচ তখন নিম্নমুখী প্রবণতাই ছিল বাজারের বাস্তবতা। আর তাই সেসব চেষ্টা তেমন একটা কাজে লাগেনি। বরং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কিছু মধ্যমেয়াদি পদক্ষেপ বাজারকে ধীরে ধীরে কিছুটা স্থিতিশীল ও ঊর্ধ্বমুখী করে, যা আবার একটা পর্যায়ে গিয়ে মূল্য সংশোধনের ধারায় প্রবেশ করে। তবে এটি প্রলম্বিত হয়ে দরপতনের ধারা শুরু হয়। সংকুচিত হতে থাকে লেনদেন।
এ রকম একটা পরিস্থিতিতে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) তালিকাভুক্ত সব শেয়ারের অভিহিত মূল্য ১০ টাকা করার নির্দেশনা জারি করেছে। বলা হয়েছে, ১ ডিসেম্বর থেকে এই অভিহিত মূল্যের সমতা কার্যকর করতে হবে। এর ফলে ১০ টাকা আর ১০০ টাকার শেয়ারের মধ্যে কোনো মূল্য পার্থক্য থাকবে না। অভিহিত মূল্যের এই পার্থক্য অনেক সময়ই বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্তির মধ্যে ফেলে। সমতা বিধানের মূল উদ্দেশ্য হলো এই বিভ্রান্তি মোচন করা এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের মধ্যে তুলনা সহজ করা। দুর্ভাগ্যজনকভাবে ২০০৯ সালের মাঝামাঝিতেই অভিহিত মূল্যের সমতা আনয়নের নামে দেশের শেয়ারবাজারে বিপর্যয়ের অন্যতম বীজটি রোপণ করা হয়েছিল। কখনো এসইসি, কখনো অর্থ মন্ত্রণালয় আবার কখনো বা স্টক এক্সচেঞ্জগুলো ১০০ টাকার অভিহিত মূল্য ১০ টাকায় রূপান্তরের নামে এতটাই বিভ্রান্তি ছড়ায় যে মাঝখান থেকে সুযোগসন্ধানী বিভিন্ন মহলের পক্ষে এটা নিয়ে কারসাজি করা সহজ হয়ে পড়ে। এর মূল্য দিতে হয় হাজার হাজার সাধারণ বিনিয়োগকারীকে। এবার যেন আর কোনোভাবেই এ রকম পরিস্থিতির উদ্ভব না হয়, সেদিকে এসইসিকে নজর রাখতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.