রোজার পার্থিব উদ্দেশ্য by মোঃ আমিনুল হক সাদী

দীর্ঘ এক মাসের রোজা পাপ-পঙ্কিলতা থেকে মুসলিম সমাজকে মুক্ত করে। সুন্দর, নির্মল জীবন গঠনে সহায়তা করে। নানা রকম ঝগড়া-ফ্যাসাদ, হিংসা-বিদ্বেষ, মারামারি, আত্মকলহ ও নানা অমানবিক কার্যকলাপ দূর করে। রমজান মাস ত্যাগ ও তিতিক্ষার মাস। এ মাসে সিয়াম সাধনার ফলে মানুষের মধ্যে ত্যাগ-তিতিক্ষা, ধৈর্য, সবর, সহনশীলতা সৃষ্টি হয়।


আর ইমানের অর্ধেক অংশই হচ্ছে ধৈর্য ও সবর। তাই নবীজি (সা.) বলেছেন_ রোজা ঢালস্বরূপ। ঢাল যেমন শত্রুর আঘাত থেকে রক্ষা করে, তেমনি রোজা পাপ-পঙ্কিলতা থেকে মানুষকে রক্ষা করে। অভাবের কারণে কেউ যদি বিয়ে করতে সক্ষম না হয় কিংবা স্ত্রীর ভরণপোষণে অসমর্থ হয় সে ক্ষেত্রে তাকে বেশি বেশি করে রোজা রাখতে বলা হয়েছে। অর্থাৎ রোজা মানুষের রিপুকে সংযত ও নিয়ন্ত্রণ করে। রোজার দ্বারা মানুষ নানাবিধ দৈহিক ও মানসিক উপকারিতা লাভ করে। রোজার দ্বারা আত্মা পবিত্রতা লাভ করে। এমন অনেক মানুষ আছে যারা অভাবহীনতার কারণে অভাবগ্রস্তদের কষ্ট কখনও উপলব্ধি করেনি, তারা রোজা রাখার মাধ্যমে সামান্য হলেও অভাবগ্রস্তদের কষ্ট উপলব্ধি করে তাদের প্রতি সহানুভূতি সৃষ্টির বাস্তব প্রেরণা লাভ করে। রমজান মাসে রোজা রাখলে রুজি বৃদ্ধি পায়, ধনসম্পদ বৃদ্ধি পায়। আসমান-জমিনের সব ফেরেশতা আল্লাহতায়ালার দরবারে রোজদারের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। শয়তানকে দলবলসহ বন্দি করা হয়। আল্লাহর দরবারে রহমতের দরজা খোলা থাকে। রোজাদারের জন্য বেহেশতের দরজা খুলে দেওয়া হয় এবং দোজখের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। সিয়াম সাধনার মাধ্যমে মূলত দুটি কাজ সম্পাদিত হয়। এক. ক্ষুধার যন্ত্রণার মধ্যেও আল্লাহর হুকুম পালন করা। দুই. সিয়াম সাধনার মাধ্যমে নিজের আত্মাকে পাপমুক্ত করা।
তাই মুমিনের কর্তব্য হলো, রমজান মাসে রোজা রাখার মাধ্যমে সারাবছর দ্বীনের আহকাম সঠিকভাবে পালন করার জন্য নিজেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করে নেওয়া। সিয়াম সাধনার পাশাপাশি একজন মুমিন বান্দাকে যা করতে হবে তা হচ্ছে_ ক. পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে হবে। খ. হালাল রুজি খেতে হবে। গ. মিথ্যাচার থেকে সম্পূর্ণভাবে বিরত থাকতে হবে। ঘ. অন্যের বদনাম/গিবত করা থেকে সম্পূর্ণভাবে বিরত থাকতে হবে। ঙ. ঘুষ নেওয়া-দেওয়া বন্ধ করতে হবে। চ. মানুষের জন্য অমঙ্গলজনক সব কাজ বন্ধ করতে হবে। ছ. ফিতরা, জাকাত আদায় করতে হবে। জ. সর্বোপরি ইসলামের যাবতীয় হুকুম-আহকাম মেনে চলতে হবে।
 

No comments

Powered by Blogger.