সময়ের প্রতিবিম্ব-নারায়ণগঞ্জে গণভোট ও কমিশনের অগ্নিপরীক্ষা by এবিএম মূসা

একটি মহকুমা শহর, পাশে বয়ে চলেছে শীতলক্ষ্যা। পশ্চিমপাড়ের জেটিতে প্রতিদিন দু-তিনটি স্টিমচালিত স্টিমার ভেড়ে। শহরে আছে কয়েক শ হোসিয়ারি কারখানা। এখান থেকে গেঞ্জি-চাদর-গামছা গাঁটে গাঁটে যায়, ভারতের বিভিন্ন স্থানে। নদীর ঘাটে বিলেতি কোম্পানির বিচিত্র নামের সব স্টিমার: অস্ট্রিচ, কিউই ইত্যাদি। স্টিমার যায় মুন্সিগঞ্জ, চাঁদপুর, বরিশাল হয়ে গোয়ালন্দ; তারপর শিয়ালদহ-কলকাতা।


স্বল্প পরিচিত সেই শহরটি এখন জাতীয় রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে। প্রতিদিন দৈনিক পত্রিকা আর বেসরকারি টেলিভিশনে আলোচিত হচ্ছে ছোট্ট শহরটির পৌরসভা থেকে প্রথম করপোরেশনে রূপান্তরের পর মেয়র নির্বাচন। বিশেষ করে একটি প্রধান রাজনৈতিক দলের দুই বিপরীত চরিত্রের প্রার্থী যাচাই-বাছাই আলোচনা করছে গণমাধ্যম আর ভোটদাতারা।
নারায়ণগঞ্জে আমি প্রথম এসেছিলাম ১৯৪৮ সালে যখন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্র। খবর পেলাম, অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী পাকিস্তান সৃষ্টির ছয় মাস পর পূর্ব পাকিস্তানে আসবেন। পূর্ব পাকিস্তানের নব্য প্রধানমন্ত্রী—মুখ্যমন্ত্রী বলা হতো না—খাজা নাজিমউদ্দিনের মোসলেম লীগ সরকার তাঁকে স্টিমার থেকে নামতে দেবে না। আমরা যাঁরা ইতিমধ্যে মোসলেম লীগ সরকারের স্বল্পকালীন দুঃশাসনে ক্ষুব্ধ জনগণকে সংঘবদ্ধ করছি, তারা তাঁকে অভ্যর্থনা জানাতে দল বেঁধে নারায়ণগঞ্জে আসার সিদ্ধান্ত নিলাম। আরেকটি উদ্দেশ্য ছিল রবাহূত হয়ে ঢাকায় একটি যুব সম্মেলনে যোগদান। সম্মেলনের উদ্যোক্তা একসময়ের অবিভক্ত বাংলার কয়েকজন তরুণ মোসলেম ছাত্রলীগ নেতা। নুরুদ্দিন, আনোয়ার হোসেন, কামরুদ্দিন, ইয়ার মোহাম্মদ, শামসুজ্জোহা, শেখ মুজিবুর রহমান প্রমুখ। ঢাকার আবুল হাসনাত রোডের সেই সম্মেলনেই আমি প্রথম মুজিব ভাইকে দেখলাম, মোহিত হলাম আর ভাবশিষ্য বনে গেলাম।
শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে স্টিমার থেকে নামার পর জননিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার করে একই স্টিমারে ফেরত পাঠাল। আমরা ঢাকায় যাওয়ার জন্য ঢুকে গেলাম ছোট্ট শহরটিতে। বোস কেবিনের বিখ্যাত মেওয়া-এলাচদানা-ভরা রাজভোগ খেয়ে ঢাকা রওনা হলাম। হুডখোলা ফোর্ড কোম্পানির ট্যাক্সি, ছয়জন করে যাত্রী ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ফেরি করে। ট্যাক্সির লাইনম্যান চিৎকার করে ডাকছে, ‘ঢাকা এ্যাকজন, এ্যাকজন। ভাড়া ৫০ পয়সা তথা আট আনা। নারায়ণগঞ্জ-ঢাকার আদিরাস্তা ফতুল্লা, চাষাঢ়া, শ্যামপুর, পঞ্চবটী, পোস্তগোলা, সূত্রাপুর আর লক্ষ্মীবাজার, পুরোনো রাস্তা ধরে এলাম ভিক্টোরিয়া পার্কে। সদরঘাটে চিত্তরঞ্জন এভিনিউতে একটি হোটেলে ঠাঁই হলো। পরদিন দল বেঁধে গেলাম আবুল হাসনাত রোডের সম্মেলনস্থলে, যেখানে দেখা হলো মুজিব ভাই ও পরবর্তীকালের আওয়ামী লীগের আয়োজক প্রতিষ্ঠাতার সঙ্গে যাদের প্রায় সবাইকে এত দিনে হারিয়ে ফেলেছি।
ঢাকা থেকে কুমিল্লা ফেরার পথে নারায়ণগঞ্জে এসে শুনলাম, সেখানে শহীদ সোহরাওয়ার্দীর একজন অনুগত গুণগ্রাহী খান সাহেব ওসমান আলীর বাসায় আমাদের থাকার ব্যবস্থা হয়েছে। সারা বাংলায় তখনো আওয়ামী মোসলেম লীগের ব্যাপ্তি ঘটেনি, কিন্তু এরই মধ্যে খান সাহেব ওসমান আলী নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের প্রথম শক্ত দুর্গটি গড়ে তুলেছেন। সেই ঘাঁটি আমৃত্যু আগলে ছিলেন তাঁর সুযোগ্য পুত্রদ্বয় শামসুজ্জোহা আর মোস্তফা সরওয়ার। সেই দুর্গে বারবার আঘাত হেনেছে মোসলেম লীগ আমলের সরকার, জিয়াউর রহমানের সামরিক শাসন, এরশাদের একাধিপত্য স্বৈরশাসন। সেই সব প্রতিহত করে ঘাঁটি আগলে যাঁরা ছিলেন, সেই খান সাহেব ওসমানের প্রকৃত সুজন উত্তরসূরি—জোহা ও মোস্তফা সরওয়ার একে একে দুনিয়া থেকে বিদায় নিলেন। অন্যদিকে সর্বশেষ বংশধরদের কয়েকজন কালক্রমে তাঁর কীর্তিকে ম্লান করে দিয়ে পরিচিত হলেন আওয়ামী লীগের ভেকধারী গডফাদার ও দখলদার আর বাজিকর নামে। আসন্ন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে প্রকাশিত গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে তাঁদের একজনের কীর্তিকাহিনি আর নির্বাচনী সম্পৃক্ততা নিয়ে প্রতিবেদন। ভেবে দুঃখ পাই, খানসাহেব ওসমানের গড়া এককালের শান্তির নীড় এখন সন্ত্রাসের নারায়ণগঞ্জ। সেই নারায়ণগঞ্জের সিটি করপোরেশন নির্বাচনই আমার আজকের আলোচ্য বিষয়।
খান সাহেবের প্রয়াণের পর দীর্ঘদিন নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের কর্মীরা ছিল নিষ্প্রাণ। দীর্ঘ কয়েক বছর পর অসাম্প্রদায়িক নারায়ণগঞ্জে শান্তি ও সৌহার্দ্য ফিরিয়ে আনলেন, সন্ত্রাসমুক্ত পরিবেশ প্রতিষ্ঠা করলেন আলী আহমদ চুনকা। তাঁর পূর্বপরিচিতি ছিল মোসলেম লীগের স্বেচ্ছাসেবক তথা মাস্তান, বর্তমানকালের আওয়ামী লীগের গডফাদারদের সমতুল্য। খান সাহেব, ভাসানী ও বঙ্গবন্ধুর সংস্পর্শে এসে হয়ে গেলেন নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের প্রধান স্তম্ভ। হাল ধরলেন খান সাহেবের ও সমমানের আওয়ামী নেতাদের তিরোধানের পর বিপর্যস্ত দলটির, চাঙা করে তুললেন হতোদ্যম সমর্থক ও কর্মীদের। এ ছাড়াও দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালন করে সন্ত্রাসীমুক্ত নারায়ণগঞ্জে অভূতপূর্ব জনপ্রিয়তা অর্জন করলেন। কৃতজ্ঞ নারায়ণগঞ্জবাসী তাঁকে পৌরপিতা নির্বাচন করলেন জিয়াউর রহমানের আমলের নিপীড়ন এবং বিএনপি-সন্ত্রাসীদের সকল হুমকি-ধমকি, মামলা-হামলা উপেক্ষা করে। তাঁর অকালমৃত্যুর পর কন্যা আইভী দায়িত্ব নিলেন পিতার অসমাপ্ত কাজগুলো সম্পন্ন করার। বিরূপ পরিবেশে দলের নিভু-নিভু প্রদীপটি জ্বালিয়ে রাখলেন। কীভাবে, সেই কাহিনি পরে বলছি।
জিয়া-পরবর্তী এরশাদ-আমলে, আরও পরে ১/১১-পরবর্তী পরিস্থিতিতে নারায়ণগঞ্জে খান সাহেবের অপোগণ্ড উত্তরসূরিরা আওয়ামী লীগের দলের ও কর্মীদের দুঃসময়ে বারবার গা ঢাকা দিয়েছিলেন। ফিরে এলেন আওয়ামী শাসনের নিরাপত্তার বলয়ে। শ্রদ্ধেয় মতিয়া চৌধুরীর ভাষায় গর্ত থেকে বেরিয়ে সব মূষিক এখন হুলো বিড়ালের মতো গর্জন করেছে। নারায়ণগঞ্জের জনগণের ভাগ্যের পরিহাস, ভেবে দুঃখ পাই, খান সাহেব ওসমান, শামসুজ্জোহা আর মোস্তফা সরওয়ারের পরিবারের পরিচয়ে পরিচিত সেই হুলো বিড়ালগুলো। কয়েক বছর আগে তাদের একজন শামীম ওসমানের হিন্দু মন্দির দখলের ওপর একটি প্রতিবেদন লিখেছিলাম। ইতিপূর্বে বরিশালের সর্বজনশ্রদ্ধেয় প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আবদুর রব সেরনিয়াবাতের এক নাতির কীর্তিকলাপ নিয়ে লিখেছিলাম। ‘দাদাকে চিনতাম নাতিকে চিনি না।’ এবার দুঃখের সঙ্গে লিখলাম, ‘বাবাকে আর ভাইদের চিনতাম, ছোট ভাইকে চিনি না।’ অবশ্য আমার প্রতিবেদন ছাপা হওয়ার পর মন্দিরটি দখলমুক্ত হয়েছে।
সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের অন্যতম প্রার্থী আইভীর পরিচিতিতে এবার লিখছি ‘বাবাকে চিনতাম, বাপের সকল চারিত্রিক গুণের অধিকারী মেয়েকে চিনলাম।’ সামরিক সরকারের আওয়ামী বৈরী মহলের এবং প্রশাসনিক দাপট উপেক্ষা করে বাবা আলী আহমদ চুনকা আওয়ামী লীগের অস্তিত্ব বজায় রেখেছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর নারায়ণগঞ্জের সুশীল আওয়ামী নেতৃত্বে যে শূন্যতা দেখা দিয়েছিল, তা পূরণের জন্য সুদূর নিউজিল্যান্ড থেকে তাঁকে উড়িয়ে আনলেন দলের অতীত দিনের স্মৃতিঘেরা নিবেদিত আওয়ামী লীগকর্মী ও নেতারা। শুধু চুনকার মেয়ের পরিচয়ে মাত্র দুই সপ্তাহে অপরিচিত আইভী নারায়ণগঞ্জবাসীর মন জয় করে নিলেন। পিতার শূন্যস্থান পূরণ করে পৌরসভার হাল ধরলেন, আওয়ামী বৈরী পরিবেশে দলকে সুশীল করলেন। পৌরমাতা নির্বাচিত নারায়ণগঞ্জকে সন্ত্রাসী চাঁদাবাজ-দখলবাজ-দখলদারদের হাত থেকে উদ্ধার করলেন।
কী অদ্ভুত সাদৃশ্য—একইভাবে আজ থেকে ৩০ বছর আগে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের এমনি দুর্দিনে দিল্লি থেকে ছুটে এসেছিলেন শেখের মাইয়্যা শেখ হাসিনা। বাংলার মানুষ শেখ হাসিনাকে, বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যাকে মাথায় তুলে নেতৃত্বের আসনে যেভাবে বসিয়েছিলেন, নারায়ণগঞ্জের দলমত-নির্বিশেষে শান্তিপ্রিয় সকল নাগরিক প্রয়াত চুনকার প্রতি ভালোবাসা ও প্রীতির পরাকাষ্ঠায় আইভীকে ভাসিয়ে নিয়ে গেলেন। সুদীর্ঘ ১১ বছর নারায়ণগঞ্জের কর্তৃত্বে থেকে দলীয় কর্মকাণ্ডের স্রোত নানা প্রতিবন্ধক অপসারণ করে প্রবহমান রেখেছেন তিনি। একইভাবে ঐতিহ্যময় শহরটিকে করেছেন সন্ত্রাসমুক্ত। নিজে অর্জন করেছেন অসীম জনপ্রিয়তা।
গত কয়েক বছর নানা উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জ সফরের সময় জানতে চেষ্টা করছি আইভীর স্বল্পসময়ে অর্জিত ক্যারিশমার পরিমাপ কী? বিগত সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী প্রার্থী কবরীর সমর্থনে আয়োজিত জনসভায় উপস্থিত ছিলাম। মঞ্চে আমার ডানে আইভী, বাঁয়ে কবরী। সভা শেষে মঞ্চ থেকে নেমে সরু গলি দিয়ে বেরোতে পারি না। রাস্তাজুড়ে কয়েক হাজার নানা বয়সী মহিলা। তারা শুধু আইভীকে, চুনকার মাইয়্যাকে একনজর দেখতে এসেছে। এরপর কয়েক দিন আগে অন্য ধরনের নির্বাচনী আবহাওয়া-উত্তপ্ত পরিবেশে আমার সর্বসময়ের সঙ্গী ও অনুচর সাইদুজ্জামান শাহীনের আত্মীয়ার বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। সেখানে দুই প্রার্থী আইভী ও তৈমুরের সঙ্গে আসন্ন নির্বাচন নিয়ে অনেক কথা হয়। তাঁরা উদ্বেগের সঙ্গে প্রকাশ করলেন স্থানীয় নির্বাচনে প্রশাসনের পক্ষপাতিত্বের আর নির্বাচনের সময়ের আগে ও পরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে দুর্ভাবনার কথা। সন্ত্রাসমুক্ত নির্বাচনের জন্য সেনাবাহিনী মোতায়েনের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করলেন।
ঢাকায় ফিরে নির্বাচন কমিশনার একান্ত সুহূদ সাখাওয়াত হোসেনকে আমার জানা নারায়ণগঞ্জের প্রাক-নির্বাচন পরিস্থিতি অবহিত করেছি। তাঁর সঙ্গে আলোচনায় আমি আমার বোঝা পরিস্থিতি বর্ণনা করলাম। তাঁর আহূত সভায় একজন প্রার্থীর সমর্থনে হাততালি দেওয়া প্রশাসক এখনো বহাল তবিয়তে আছেন কেন তা জানতে চাইলাম। বর্তমান প্রশাসনের বিশেষ করে পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে সন্ত্রাসীদের দহরম-মহরমের শোনা কথা শোনালাম। বলেছি, নারায়ণগঞ্জবাসী এমনই ভীতসন্ত্রস্ত যে জুনিয়র ওসমান-ভ্রাতাদের দাপটে ভীতসন্ত্রস্ত আওয়ামীপন্থী হয়েও নারায়ণগঞ্জবাসীর অনেকেই আদৌ ভোটকেন্দ্রেই হয়তো যাবে না, এমন আভাসও পেয়েছি। তেমনটি হলে বিএনপির তৈমুরের জন্য হবে পোয়াবারো, আওয়ামী লীগের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ।
অতীতের ও বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ পরিচিতিটি আসল প্রতিপাদ্য বিষয় নয়। প্রতিপাদ্য হচ্ছে, (এক) নারায়ণগঞ্জে আগামী সাধারণ নির্বাচনটি কেমন হবে তার রূপায়ণ থেকে বোঝা যাবে দলীয় সরকারের ‘তত্ত্বাবধানে’ ছোটবড় কোনো ধরনের সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন সম্ভব কি না। ২০১৪ সালে দলটির মাস্তান ও গডফাদারদের এবং বশংবদ প্রশাসনের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন আগাম কোনো ব্যবস্থা নিতে পারবে কি না। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ২০০৬ সালের নির্বাচনটি নিয়ে, বিএনপি-প্রভাবিত প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে এমনি আশঙ্কা ব্যক্ত করেই আওয়ামী লীগ লগি-বৈঠা আন্দোলনের সূচনা করেছিল। শেষ পর্যন্ত এই ‘আন্দোলনের ফসল’ আলোচিত ১/১১। তত্ত্বাবধায়ক সরকার অথবা এ ধরনের একটি নিরপেক্ষ কর্তৃত্বের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বিএনপির দাবির যৌক্তিকতা বা অসারতা প্রমাণিত হবে। (দুই) নারায়ণগঞ্জের নির্বাচন পঞ্চদশ সংশোধনীর ওপর হবে একটি প্রতীকী গণভোট। আগামী ২০১৪ সালের ‘ফাইনালের’ আগেই নারায়ণগঞ্জের সেমিফাইনালে রেফারিদের পরিচয় জানা যাবে, চেনা যাবে। (তিন) আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নির্বাচনের মানদণ্ডটি জানা যাবে নারায়ণগঞ্জে দলটির সমর্থিত প্রার্থীর পরিচয়। এখনই বোঝা যাবে আওয়ামী লীগ কি জনসমর্থনে আস্থাবান হয়ে নাকি মাস্তান-নির্ভরতার নিরিখে ভবিষ্যতের সংসদের ৩০০ প্রার্থী বাছাই করবে। নারায়ণগঞ্জে কোন প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়া হবে তা থেকে এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে। (চার) সর্বোপরি নারায়ণগঞ্জে হবে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানে ব্যক্তিত্ব ও প্রভাব প্রয়োগে দৃঢ়তার চরম পরীক্ষা। নারায়ণগঞ্জের নির্বাচন প্রাক্কালে বর্তমান কমিশনের মনোভাবটি শান্তিপ্রিয় সন্ত্রাসবিরোধী নাগরিকদের কাছে স্বচ্ছ নয়। কেউ কেউ আমাকে সরাসরি প্রশ্ন করলেন, নারায়ণগঞ্জের সুশীল সমাজের সর্বস্তরে নাগরিকদের দাবি উপেক্ষা করে চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের আপত্তি মেনে নিয়ে কেন সেনাবাহিনী মোতায়েনে নির্বাচন কমিশনের অনীহা? বস্তুত, নির্বাচন কমিশন বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের প্রভাবমুক্ত হয়ে সুষ্ঠু ও স্বাধীনভাবে নির্বাচন করতে সক্ষম কি না, সেটা নারায়ণগঞ্জের এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
আমি ব্যক্তিগতভাবে নারায়ণগঞ্জের নির্বাচনের ব্যাপারে আগ্রহী। কারণ এখানেই এবার দিবালোকের মতো পরিষ্কার হয়ে যাবে কেন সংসদে তড়িঘড়ি সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল করা হলো। আমার চূড়ান্ত সুপারিশ হচ্ছে, নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী সমর্থক, সুশীল সমাজ ও আওয়ামী মনোভাবাপন্ন নিরপেক্ষ জনগণকেই নির্ধারণ করার অধিকার দিতে হবে তারা ঠ্যাঙ্গাড়ু ‘নগরপিতা’ নাকি মমতাময়ী ‘নগরমাতাকে’ মেয়র পদে দেখতে চান—সংগঠনের কেন্দ্র থেকে চাপিয়ে দেওয়া কোনো সিদ্ধান্ত নয়।
এবিএম মূসা: সাংবাদিক ও কলাম লেখক।

No comments

Powered by Blogger.