সহোদর জুটির নেশনস কাপ!

আইভরি কোস্ট, না জাম্বিয়া—কে জিতবে এবারের আফ্রিকান নেশনস কাপ? উত্তরটা পাওয়া যাবে আজ রাতেই। তবে ফাইনালের আগে এটা অন্তত বলা যাচ্ছে, শিরোপা উঠতে যাচ্ছেন কোনো না কোনো ভাই জুটির হাতে। ফাইনালিস্ট দুই দলেই খেলছেন দুই সহোদর জুটি। আর টুর্নামেন্ট খেলেছেন চার জোড়া সহোদর।


ফেবারিট আইভরি কোস্ট দলে খেলছেন দুই ভাই—কোলো তোরে ও ইয়া তোরে। দিদিয়ের দ্রগবার দলের এই দুই সতীর্থকে মনে করা হচ্ছে বর্তমান ফুটবলের সেরা ‘ভাই জুটি’। কোলো ও ইয়া, ক্লাব ফুটবলেও খেলেন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে, ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের দল ম্যানচেস্টার সিটিতে। বড় ভাই কোলো ডিফেন্ডার। ছোট ইয়া মিডফিল্ডার। উঠতি বয়সেই দুই ভাই মিলে অ্যাসেক মিমোসাস দলের হয়ে জিতেছিলেন আইভরিয়ান লিগ শিরোপা। তবে ম্যান সিটি কিংবা আন্তর্জাতিক ফুটবলে বলার মতো সাফল্য তাঁদের নেই। তবে এবার দেশকে পঞ্চমবারের মতো আফ্রিকান নেশনস কাপ জেতাতে চান দুই ভাই। কোলোই যেমন বলছেন, ‘টুর্নামেন্ট শেষে ট্রফিটা উঁচিয়ে ধরতে পারাটা হবে দারুণ। আমি এবং ইয়া দুজনই একত্রে ট্রফিটা জিততে চাই।’ দুই বছরের ছোট-বড় হলেও সম্পর্কটা তাঁদের বন্ধুর মতো। বড় ভাই, ৩০ বছর বয়সী কোলোর সঙ্গে একত্রে খেলতে পারবেন—এই লোভে ইয়া ২০১০ সালে বার্সেলোনার মতো ক্লাব ছেড়ে যোগ দেন ম্যান সিটিতে। খেয়ালি মিডফিল্ডার ইয়ার সঙ্গে খেলাটা উপভোগ করেন কোলোও, ‘ভাইয়ের সঙ্গে একই দলে খেলাটা অসাধারণ। এটা দলের জন্যও দারুণ ব্যাপার।’
ছোট হলেও দক্ষতায় বড় ভাইকে ছাপিয়েই গেছেন ইয়া। ২৮ বছর বয়সী মিডফিল্ডার গত বছর দ্রগবাদের মতো তারকাদের পেছনে ফেলে জিতেছেন আফ্রিকান বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার। কোলো বলছেন, বড় হয়েও প্রায়ই ছোট ভাইটির কাছ থেকে টিপস নেন, ‘আমি তাকে সাহায্য করতে চেষ্টা করি। কিন্তু খুব বেশি পারি না—সে-ই আমাকে সাহায্য করে। কারণ, তার অভিজ্ঞতা বেশি। সে চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছে এবং বিশ্বসেরা ক্লাব বার্সেলোনায় খেলেছে।’
সেমিফাইনালে জাম্বিয়ার কাছে হেরে বিদায় নেওয়া ঘানা দলেও খেলেছেন দুই সহোদর—আন্দ্রে আইয়ু ও জর্ডান আইয়ু। ফুটবলারের বাইরেও আলাদা একটা পরিচিতি আছে তাঁদের। আফ্রিকার বিখ্যাত ফুটবলার আবেদি পেলের ছেলে তাঁরা। একসময় দুই ভাই-ই খেলতেন ফরাসি ক্লাব অলিম্পিক মার্শেইয়ে। ২০ বছরের জর্ডান স্ট্রাইকার, দুই বছরের বড় আন্দ্রে মিডফিল্ডার। বড় ভাই আবদুল ডাক পেলে তিন ভাই একসঙ্গে জাতীয় দলে খেলার অনন্য কীর্তিই গড়ে ফেলতেন। কিন্তু দুই বছর আগে ঘানার হয়ে নেশনস কাপ আর ২০১০ বিশ্বকাপ খেললেও এবার দলের সার্বিয়ান কোচ গোরান স্টেভানোভিচের নজর কাড়তে ব্যর্থ আবদুল। দুই আইয়ু এবং আবদুলের বাবা আবেদি পেলের নেতৃত্বেই ঘানা সর্বশেষ আফ্রিকান নেশনস কাপ জিতেছিল ১৯৮২ সালে।
বাবা খেলেছেন, এখন খেলছেন ছেলে—শুধু ঘানা দলেই নয়, এমনটা এবারের টুর্নামেন্টে দেখা গেছে সহ-আয়োজক গ্যাবন দলেও। পিয়েরে আয়ুবামেয়াং ‘প্যান্থারদের’ হয়ে খেলেছিলেন ১৯৯৪ ও ১৯৯৬ নেশনস কাপ। তাঁর ছেলে পিয়েরে ইমেরিখ আয়ুবামেয়াং খেলেছেন এবার। তাঁর পেনাল্টি মিসেই মালির কাছে হেরে কোয়ার্টার ফাইনালে বিদায় নেয় গ্যাবন।
জাম্বিয়ার অধিনায়ক ক্রিস্টোফার কাতোঙ্গো মাঠে জুটি বেঁধে খেলছেন ছোট ভাই ফেলিক্সের সঙ্গে। চীনা লিগে খেলা ক্রিস্টোফার অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার, ফেলিক্সও মিডফিল্ডার, খেলেন জাম্বিয়ার ঘরোয়া লিগেই। সেমিফাইনালে চার ভাইয়ের লড়াইয়ে আইয়ু সহোদরদের হারিয়ে ফাইনালে উঠেছেন দুই জাম্বিয়ান সহোদর কাতোঙ্গো-ফেলিক্স।
টুর্নামেন্টে দুই ভাইয়ের অন্য জুটিটা হয়েছিল বুরকিনা ফাসো দলে। গ্রুপ পর্বেই দল বিদায় নেওয়ায় দুই সহোদর ট্রায়োরে অ্যালাইন ও বারট্রান্ডকে বাকি টুর্নামেন্ট কাটাতে হয়েছে দর্শক হয়েই। তবে এবার টুর্নামেন্ট খেলেই ইতিহাস হয়ে গেছেন ১৬ বছর বয়সী বারট্রান্ড। আফ্রিকান নেশনস কাপের ইতিহাসে তিনিই তৃতীয় সর্বকনিষ্ঠ ফুটবলার।

ফুটবলে সহোদর জুটি
 ১৯৩০ সালে প্রথম বিশ্বকাপের ১৩টি দলের তিনটিতে খেলেছেন ভাইদের জুটি।
 দুই ভাইয়ের প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের কীর্তি জার্মানির দুই ওয়াল্টার সহোদরের—ফ্রিটজ ও ওটমার। ১৯৫৪ সালে বিশ্বকাপ জিতেছিলেন তাঁরা।
 ওয়াল্টার সহোদরের কীর্তিকে ১৯৬৬ বিশ্বকাপে ছুঁয়ে ফেলেন ইংল্যান্ডের চার্লটন সহোদর—জ্যাক ও ববি।
 বিশ্বকাপের রানার্সআপ দলের অংশ হওয়ার একমাত্র কৃতিত্ব হল্যান্ডের ফন ডার কেরখপ সহোদর রেনে ও উইলির। তা-ও একবার নয়, দুই দফায় ১৯৭৪ এবং ১৯৭৮ বিশ্বকাপে টানা দুবার ফাইনাল খেলেছিলেন তাঁরা।
ওয়েবসাইট অবলম্বনে খলিলুর রহমান

No comments

Powered by Blogger.