একটি শুভ উদ্যোগ-সেবার আদর্শ ছড়িয়ে যাক সবার মাঝে

ব্যতিক্রমী একটি উদ্যোগ নিয়ে উদাহরণ সৃষ্টি করল জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হসপিটাল। দেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে একদিন যাঁরা নিজেদের জীবন উৎসর্গ করার মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে জীবন বাজি রেখে লড়াই করেছেন, তাঁদের অনেকেই আজ বয়সের ভারে ন্যুব্জ। অনেকেরই দিন কাটে কায়ক্লেশে দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে।


সেই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্বল্প খরচে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হসপিটাল। দেশের দুস্থ মুক্তিযোদ্ধারা এখন এখান থেকে স্বল্পমূল্যে চিকিৎসা নিতে পারবেন।
এমনিতে বাংলাদেশের সরকারি স্বাস্থ্যসেবার চিত্র সুখকর নয়। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে অনেক ক্ষেত্রেই হয়রানির একশেষ হতে হয় নিরীহ মানুষদের। অন্যদিকে বেসরকারি পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা এখন লাভজনক একটি ব্যবসা। দেশে আজ বড় বড় হাসপাতাল গড়ে উঠেছে। উন্নত বিশ্বের মতো আধুনিক চিকিৎসাও এখন বাংলাদেশে সম্ভব। অনেক জটিল রোগের চিকিৎসা বাংলাদেশে হচ্ছে। দেশের চিকিৎসকরা আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসাপদ্ধতি প্রয়োগ করছেন। নিজেদের মান আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নীত করেছেন। কিন্তু দেশের অভ্যন্তরে আধুনিক মানের যে হাসপাতালগুলো গড়ে উঠেছে, সেখানে চিকিৎসা আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের আয়ের তুলনায় যথেষ্ট ব্যয়বহুল। এই ব্যয়নির্ভর চিকিৎসাসেবা গ্রহণের সামর্থ্য দেশের অনেক মানুষেরই নেই। অন্যদিকে আজ দেশের বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকেই চরম দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে টিকে আছেন। জীবনধারণের জন্য অনেককেই বেছে নিতে হয়েছে ছোট ছোট কাজ। একদিন যে সূর্যসন্তানরা নিজেদের জীবন বাজি রেখে দেশের জন্য লড়াই করেছেন, তাঁদের অনেকেই আজ জীবনযুদ্ধে পরাস্ত। অনেকেরই দিনের খাবার জোটে না। দেশের জন্য লড়াই করে স্বাধীনতার সূর্য ছিনিয়ে আনা সেই সূর্যসন্তানদের অনেককেই জীবনধারণের জন্য ভিক্ষাবৃত্তিও বেছে নিতে হয়েছে। এমন অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধারা দেশের আধুনিক মানের কোনো হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যেতে পারেন না। জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হসপিটাল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য স্বল্পমূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে সে ক্ষেত্রে একটি উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। শুধু চিকিৎসাই নয়, এ দেশের এই বীর সন্তানদের দেখতে আসছেন দেশের বিশিষ্টজনরা। এটাও জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হসপিটালের একটি উদাহরণযোগ্য কাজ।
মানুষের মৌলিক চাহিদার একটি হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা ও চিকিৎসা। কিন্তু সরকারি পর্যায়ে সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা যায়নি। জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হসপিটাল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য স্বল্পমূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে যে উদাহরণ সৃষ্টি করেছে, সেটা সবার জন্য অনুকরণযোগ্য হতে পারে। দেশের বড় বড় হাসপাতাল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য শুধু নয়, দেশের স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য এমন ইউনিট গঠন করলে অনেক মানুষ উপকৃত হতে পারে। বড় হাসপাতালগুলোতে স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য এমন সুলভ অথচ আধুনিক চিকিৎসার আলাদা ইউনিট করা মোটেও অসম্ভব নয়। সামান্য ব্যবসায়িক মনোবৃত্তি ত্যাগ করতে পারলেই সেটা সম্ভব। এভাবেই সেবার আদর্শ সবার মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব। সেটা দিতে পারলেই দেশের জন্য অনেক কিছু করা হবে।

No comments

Powered by Blogger.