সাংবাদিক দম্পতি খুন-আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করুন
রাজধানীতে নিজ বাসভবনে দুই সাংবাদিক খুন হয়েছেন। রহস্যজনক রয়ে গেছে এই মৃত্যুর কারণ। এটিএন বাংলার সিনিয়র রিপোর্টার মেহেরুন রুনি এবং মাছরাঙা টেলিভিশনের নিউজ এডিটর সাগর সরোয়ার শুক্রবার দিবাগত শেষরাতে কোন কারণে এবং কার দ্বারা খুন হয়েছেন, সে রহস্য হয়তো একদিন উন্মোচিত হবে; কিন্তু তাঁদের পাঁচ বছরের শিশুসন্তান কি কোনো দিনও মা-বাবার আদর-স্নেহ পাবে?
কিংবা এ দুই সাংবাদিকের সহকর্মী ও নিকটজনরা কি কখনো তাঁদের সান্নিধ্য পাবে? সংবাদসেবা থেকেও বঞ্চিত হবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। সংগত কারণেই প্রশ্ন এসে যায়, এ ধরনের মৃত্যু আর কত হবে আমাদের দেশে? প্রশ্ন এসে যায় সামগ্রিকভাবে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে। দেশে সাংবাদিকদের জীবনের নিরাপত্তাহীনতা আজও কী নিদারুণভাবেই প্রকট, এ ঘটনা তার সাক্ষ্য দিচ্ছে।
শনিবার দৈনিক পত্রিকাগুলোতে বেশ গুরুত্বসহকারে আরেকটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জে একটি চা বাগানে দুই পক্ষের সংঘর্ষে দুজন নিহত হয়েছেন। একই দিন চট্টগ্রামের হাটহাজারীতেও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে স্থানীয় দুটি পক্ষের মধ্যে। অবস্থা জটিল হওয়ার কারণে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রশাসন সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করেছে। দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে, মৌলভীবাজারের ঘটনার সঙ্গে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নাম জড়িয়ে গেছে। ঘটনার সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতা কতটুকু এবং সেই ঘটনার জন্য তারা কতটা দায়ী তা বিচার-বিশ্লেষণ করার আগে মানুষ বিষয়টিকে অনাকাঙ্ক্ষিত হিসেবে মন্তব্য করছে। আর এটাই স্বাভাবিক। কারণ মানুষের প্রত্যাশা হচ্ছে, ক্ষমতাসীনদের দল থেকে মানুষকে হয়রানি করা হবে না। চট্টগ্রামের ঘটনায় প্রশাসনের গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে, যদিও স্থানীয় এমপি এবং জেলা পর্যায়ের নেতারা সেখানে উপস্থিত হয়ে শৃঙ্খলা বজায় রাখার চেষ্টা করেছেন। প্রশ্ন উঠেছে, সেখানে সাম্প্রদায়িক শক্তির কোনো ইন্ধন ছিল কি না। কোনো কোনো পত্রিকা বিষয়টি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের খুনের ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কি না তা সন্দেহ করছে। তবে যেকোনো কারণেই হোক না কেন, বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অটুট রাখতে হলে এ ধরনের ঘটনা সম্পর্কে অত্যন্ত সজাগ থাকা প্রয়োজন। ঘটনার শুরুতে স্থানীয় পর্যায়ে উদ্যোগ নিতে পারলে হয়তো বিষয়টি নিয়ে এত উত্তেজনা ছড়াত না।
গ্রামে গ্রামে ঝগড়া-ফ্যাসাদজনিত কারণে হত্যা-সন্ত্রাস এবং মানুষের সহনশীলতার অভাবে হামলা-সংঘর্ষ বাংলাদেশে সম্প্রতি অনেক বেড়ে গেছে। অনেক সময় অতি তুচ্ছ কোনো কারণেও এসব ঘটনার সূত্রপাত হয় বলে জানা যায়। মোটকথা, মানুষের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ কমে গেছে, বিশ্বাস ও আস্থার সংকট আগের চেয়ে অনেক বেশি। সামাজিক অবক্ষয়ের মাত্রাও উল্লেখ করার মতো। এসব কারণ থেকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধা কমে গেছে মানুষের। তার সঙ্গে রাষ্ট্রীয় পর্যায়েও আইনের সঠিক প্রয়োগ হতে দেখা যায় কম। আইন আর দুর্নীতি একসঙ্গে চলতে না পারলেও দুর্নীতি এখন মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে ব্যাপকভাবে। এর পরিণতিতেই আজকে মানুষের অসহনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটছে সংঘর্ষ কিংবা হামলার মতো ঘটনার মধ্য দিয়ে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হলে সবার আগে মানুষের মধ্যে সামাজিক বন্ধন দৃঢ় করতে হবে, সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে; সর্বোপরি আইনকে আইনের পথে চলা নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই মানুষ আইন অবজ্ঞা করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে এমন কোনো ঘটনা ঘটাবে না। তাহলে হয়তো মেহেরুন রুনি ও সাগর সরোয়ারের মতো আর কাউকে এভাবে প্রাণ দিতে হবে না।
No comments