চালচিত্র-ক্ষমতার রাজনীতি আর বিধ্বস্ত অর্থনীতিতে বিপর্যস্ত জনজীবন by শুভ রহমান
নানা কারণেই সাধারণ মানুষের জীবন এখন অতিষ্ঠ। রাজনৈতিক অঙ্গনে শুধু কথার মারপ্যাঁচ, ক্ষমতাকে ধরে রাখা কিংবা 'মারি অরি পারি যে কৌশলে' ক্ষমতা গ্রাসের পাঁয়তারা দেখতে দেখতে মানুষ ক্লান্ত, অতিষ্ঠ। সাধারণ মানুষের কোনো স্বার্থ নেই এমন রাজনৈতিক বাক্যুদ্ধে কিংবা কলাকৌশলে।
প্রধানত ব্যক্তি কিংবা দলীয় স্বার্থ দিয়েই চালিত হচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো। দীর্ঘকাল ধরেই এমন অনাকাঙ্ক্ষিত, দুর্ভাগ্যজনক অবস্থা কিছুতেই কাটিয়ে উঠতে পারছে না এ দেশ। অথচ কী জন্য এ দেশ স্বাধীন হলো, কী জন্য এত রক্তক্ষয়ের মধ্য দিয়ে দেশে অবশেষে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হলো- সংবেদনশীল মানুষ, চিন্তাশীল মানুষ এর কোনো জবাবই খুঁজে পায় না। শুধু কি বৃথাই যাবে একটা জাতির সংগ্রাম, রক্তক্ষয়! আর কতকাল মানুষ একটা সুস্থ, সুবিবেচক রাজনৈতিক পরিস্থিতি, জনমানুষের কল্যাণের জন্য পরিচালিত সম্ভাবনাময় অর্থনীতি, সুস্থ, সচেতন, অর্থময় উন্নত সংস্কৃতির জন্য বুক বেঁধে থাকবে! মানুষের আশা-ভরসা, আকাঙ্ক্ষা পূরণের একটা শক্ত জমিন মানুষ একান্তভাবেই কামনা করছে। স্বাধীনতার ৪০ বছর পরে, রক্তাক্ত ভাষা সংগ্রামের ৬০ বছর পরে এটা এখন এ দেশের লড়াকু মানুষের নূ্যনতম চাহিদা।
ভাষার মাস যাচ্ছে। কত গর্ব আর অহংকার মিশে আছে আমাদের রক্তাক্ত ভাষাসংগ্রামের জন্য, ভাষাশহীদদের জন্য। একুশের গ্রন্থমেলায় উপচে পড়া মানুষ দেখে, লেখক-পাঠক-প্রকাশকের হার ক্রমেই স্ফীত হয়ে উঠতে দেখে, ধীরগতিতে হলেও শিক্ষার হার বাড়তে দেখে। কিন্তু তার পরও আমাদের লজ্জা আর গ্লানির অবধি নেই। দেশের অর্ধেক নিরক্ষর জনগোষ্ঠী আজও শিক্ষা-সংস্কৃতির আলোকবঞ্চিত, অসংখ্য উলঙ্গ-ক্ষুধার্ত শিশু, আমাদের শিক্ষাদীক্ষা, সভ্যতা-সংস্কৃতির গর্বকে ধুলায় মিশিয়ে দেয়। কবে আমরা এই সীমাহীন গ্লানির দহনজ্বালা থেকে মুক্ত হতে পারব! কবে সাক্ষর হবে গোটা জাতি, সুস্থ সংস্কৃতিই হবে জাতীয় জীবনের মূল চালিকাশক্তি। আমরা চাই, আমাদের রাজনীতিকরা, আমাদের শিক্ষাবিদ ও সংস্কৃতিসেবীরা এ চিন্তায় অস্থির থাকুন। নির্বোধ প্রশান্তি আর অন্ধ আত্মপ্রসাদ আমাদের স্থবির, নিশ্চল করে রাখছে। মাতৃভাষা বাংলা আজও জাতির প্রায় সর্বস্তরেই উপেক্ষিত, অবহেলিত, অচর্চিত। প্রচলিত রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিকব্যবস্থা আমাদের গ্লানিমোচনে কোনো অবদানই রাখতে পারছে না। এ সামগ্রিক ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ছাড়া আমাদের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র অর্থবহ হতে পারবে না।
রাজনৈতিকব্যবস্থা শুধু ক্ষমতাকেন্দ্রিক হয়ে থাকলে চলবে না। মহাজোটের এমন অভূতপূর্ব বিজয়ও শুধু ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতির কারণেই অর্থহীন হয়ে যাচ্ছে। ভাষার মাসে, আত্মজাগরণের মাসে আমাদের ক্ষমতাসর্বস্ব রাজনীতির বন্ধ্যাত্ব ও সীমাবদ্ধতা ঘুচিয়ে, অক্ষমতার বেড়ি ভেঙে বেরিয়ে আসতে হবে মুক্ত চেতনার অঙ্গনে। রাজনীতিকে সুস্থ, দায়িত্বশীল কল্যাণকর করতে পারলেই আমরা অর্থনৈতিক দৈন্য ঘুচিয়ে দিতে পারব। সাধারণ মানুষ ভালোভাবে বাঁচার জন্যই ভোট দেয়, জীবনযুদ্ধে পিষ্ট, পরাস্ত হওয়ার জন্য নয়- বাজারের নিত্যদুর্ভোগ সওয়ার জন্য নয়। সীমান্তে নির্বিচারে বিএসএফের গুলি খেয়ে মরার জন্য নয়, অনন্তকাল ধরে অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত থাকার জন্য নয়। সড়ক দুর্ঘটনায়, গুপ্তহত্যায়, রহস্যজনক সব হত্যায়, ডাকাতি, রাহাজানি, মৌলবাদী তাণ্ডব, অনিয়ন্ত্রিত ছাত্রসন্ত্রাস, দলাদলি, হানাহানিতে প্রাণ দেওয়ার জন্য নয়। বিনা চিকিৎসা কিংবা অপচিকিৎসায় মরার জন্য নয়। শেয়ারবাজারে দরপতনে দিশাহারা হয়ে স্বল্পপুঁজির মধ্যবিত্ত মানুষ আত্মহত্যা করে বসবে- এ জন্য নয়। নূ্যনতম এই উপলব্ধিটুকু কবে আর হবে এ দেশের ক্ষমতাধরদের। বন্ধ হোক চিরতরে ক্ষমতার অপব্যবহার, জনগণের ক্ষমতা-লুণ্ঠন ও আত্মসাৎ, জনগণের আমানতের খেয়ানত।
আত্মশুদ্ধি, আত্মজাগরণ, আত্মবিকাশের মাসে নির্বাচন কমিশন, নির্বাচন পরিচালনার ব্যবস্থা নিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কোনোরকম প্রতারণা চলতে পারে না। সাধারণ মানুষ দেশের রাজনীতিকদের চেয়েও অনেক বেশি অভিজ্ঞ, পোড়-খাওয়া, সত্যিকার লড়াকু। কোন নির্বাচন কমিশন তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে, তা তাদের কাছ থেকেই চূড়ান্তভাবে জানতে হবে। শুধু প্রত্যাখ্যানের রাজনীতি দিয়ে, শুধু বিরোধিতার খাতিরে বিরোধিতার রাজনীতি দিয়ে হবে না। মানুষ আজিজ-মার্কা কমিশন দেখেছে, 'সালসা' (সাঈদ-লতিফুর-সাহাবুদ্দীন) ব্যবস্থার নির্বাচনও ভোলেনি, আবার ইয়াজউদ্দিনের তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার ভয়াবহ পরিণতিও প্রত্যক্ষ করেছে- নির্বাচন কমিশন কোনটা সাংবিধানিক, কোনটা ন্যায়সংগত, কোনটা নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হবে, তা মানুষই বলে দেবে চূড়ান্তভাবে। বিগত ১০টি নির্বাচন কমিশনের চেয়ে অনেক বেশি গণতান্ত্রিকভাবেই এবারকার নতুন রকিব নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে। জাতির ঐক্যের প্রতীক রাষ্ট্রপতির পরম দেশপ্রেমিক প্রয়াসের মধ্য দিয়ে গঠিত এই নতুন নির্বাচন কমিশনকে মানুষের রায় পাওয়ার আগেই প্রত্যাখ্যান করা, এর বিরোধিতা করে অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা কখনোই দেশপ্রেমমূলক কাজ হিসেবে গণ্য হতে পারে না। অচিরেই ডিসিসির নির্বাচন ও শরীয়তপুর-৩-এর উপনির্বাচন পরিচালনা ও এ দুই নির্বাচনের রায়ের ভেতর দিয়ে এ কমিশনের গ্রহণযোগ্যতা প্রতিষ্ঠিত বা বস্তুনিষ্ঠভাবে প্রত্যাখ্যাত হয়ে যাবে। তত্ত্বাবধায়ক না দলীয়, না অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, কোন ব্যবস্থা জনগণ চায়, তা চূড়ান্তভাবে প্রমাণিত হয়ে যাবে। গায়ের জোরে এর কোনো একটিকে নাকচ করে দেওয়া এ দেশের সচেতন গণমানুষ একটি রাজনৈতিক শূন্যতা সৃষ্টির মাধ্যমে দেশে অসাংবিধানিক শাসন ডেকে আনার অশনিসংকেত হিসেবেই গণ্য করবে। ইতিহাস সে ভুল ক্ষমা করবে না।
নেতিবাচক, অন্তঃসারশূন্য রাজনীতি যতই সংকীর্ণ ব্যক্তি ও দলীয় স্বার্থ হাসিলে ফলপ্রসূ প্রমাণিত হোক, কখনোই কোনো দেশেই তা সাধারণ মানুষ ও সমাজের এতটুকু কল্যাণ সাধন করতে পারে না। আমাদের দেশেরও অনুন্নয়ন ও সর্বনাশের মূলে রয়েছে এই নেতিবাচক, অসংস্কৃত ও অপরিণামদর্শী রাজনীতি। জাতি এ থেকে পরিত্রাণ চায়। লজ্জাজনক এবং হাস্যকরভাবেই বিরোধী দল দাবি করছে, তারা সরকারের বিরোধিতার নৈতিক কর্তব্য পালন করছে। কিন্তু সংসদে যাওয়ার নৈতিক কর্তব্যটুকু তারা পালন করছে না! রাজনৈতিক ভ্রষ্টাচার আর কাকে বলে! আশপাশের সব গণতান্ত্রিক দেশ, নব্য স্বাধীন ও উন্নয়নগামী দেশ নিজেদের ভুলত্রুটি শুধরে নিয়ে, সুস্থ, গঠনমূলক, দায়িত্বশীল রাজনীতি অনুসরণ করবে, প্রকৃত গণতন্ত্রের চর্চা করবে, সব জাতীয় স্বার্থের প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ অবস্থান ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে, এগিয়ে যাবে সত্যিকার উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে, জনগণের জীবনমান ও সংস্কৃতিকে ঈর্ষণীয়ভাবে উন্নত ও আধুনিক- সর্বতোভাবে অগ্রসর করে নেবে আর আমরা স্বাধীন ও উন্নয়নগামী দেশ হয়েও শুধুই পিছিয়ে যেতে থাকব, মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তির কাছে, একাত্তরের পরাজিত শক্তি ও যুদ্ধাপরাধীদের কাছে আত্মসমর্পণ করে সহিংস ও হিংসাত্মক রাজনীতির ধারকদের ক্রীতদাস হয়ে থাকব- এটা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না।
১১.০২.২০১২
ভাষার মাস যাচ্ছে। কত গর্ব আর অহংকার মিশে আছে আমাদের রক্তাক্ত ভাষাসংগ্রামের জন্য, ভাষাশহীদদের জন্য। একুশের গ্রন্থমেলায় উপচে পড়া মানুষ দেখে, লেখক-পাঠক-প্রকাশকের হার ক্রমেই স্ফীত হয়ে উঠতে দেখে, ধীরগতিতে হলেও শিক্ষার হার বাড়তে দেখে। কিন্তু তার পরও আমাদের লজ্জা আর গ্লানির অবধি নেই। দেশের অর্ধেক নিরক্ষর জনগোষ্ঠী আজও শিক্ষা-সংস্কৃতির আলোকবঞ্চিত, অসংখ্য উলঙ্গ-ক্ষুধার্ত শিশু, আমাদের শিক্ষাদীক্ষা, সভ্যতা-সংস্কৃতির গর্বকে ধুলায় মিশিয়ে দেয়। কবে আমরা এই সীমাহীন গ্লানির দহনজ্বালা থেকে মুক্ত হতে পারব! কবে সাক্ষর হবে গোটা জাতি, সুস্থ সংস্কৃতিই হবে জাতীয় জীবনের মূল চালিকাশক্তি। আমরা চাই, আমাদের রাজনীতিকরা, আমাদের শিক্ষাবিদ ও সংস্কৃতিসেবীরা এ চিন্তায় অস্থির থাকুন। নির্বোধ প্রশান্তি আর অন্ধ আত্মপ্রসাদ আমাদের স্থবির, নিশ্চল করে রাখছে। মাতৃভাষা বাংলা আজও জাতির প্রায় সর্বস্তরেই উপেক্ষিত, অবহেলিত, অচর্চিত। প্রচলিত রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিকব্যবস্থা আমাদের গ্লানিমোচনে কোনো অবদানই রাখতে পারছে না। এ সামগ্রিক ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ছাড়া আমাদের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র অর্থবহ হতে পারবে না।
রাজনৈতিকব্যবস্থা শুধু ক্ষমতাকেন্দ্রিক হয়ে থাকলে চলবে না। মহাজোটের এমন অভূতপূর্ব বিজয়ও শুধু ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতির কারণেই অর্থহীন হয়ে যাচ্ছে। ভাষার মাসে, আত্মজাগরণের মাসে আমাদের ক্ষমতাসর্বস্ব রাজনীতির বন্ধ্যাত্ব ও সীমাবদ্ধতা ঘুচিয়ে, অক্ষমতার বেড়ি ভেঙে বেরিয়ে আসতে হবে মুক্ত চেতনার অঙ্গনে। রাজনীতিকে সুস্থ, দায়িত্বশীল কল্যাণকর করতে পারলেই আমরা অর্থনৈতিক দৈন্য ঘুচিয়ে দিতে পারব। সাধারণ মানুষ ভালোভাবে বাঁচার জন্যই ভোট দেয়, জীবনযুদ্ধে পিষ্ট, পরাস্ত হওয়ার জন্য নয়- বাজারের নিত্যদুর্ভোগ সওয়ার জন্য নয়। সীমান্তে নির্বিচারে বিএসএফের গুলি খেয়ে মরার জন্য নয়, অনন্তকাল ধরে অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত থাকার জন্য নয়। সড়ক দুর্ঘটনায়, গুপ্তহত্যায়, রহস্যজনক সব হত্যায়, ডাকাতি, রাহাজানি, মৌলবাদী তাণ্ডব, অনিয়ন্ত্রিত ছাত্রসন্ত্রাস, দলাদলি, হানাহানিতে প্রাণ দেওয়ার জন্য নয়। বিনা চিকিৎসা কিংবা অপচিকিৎসায় মরার জন্য নয়। শেয়ারবাজারে দরপতনে দিশাহারা হয়ে স্বল্পপুঁজির মধ্যবিত্ত মানুষ আত্মহত্যা করে বসবে- এ জন্য নয়। নূ্যনতম এই উপলব্ধিটুকু কবে আর হবে এ দেশের ক্ষমতাধরদের। বন্ধ হোক চিরতরে ক্ষমতার অপব্যবহার, জনগণের ক্ষমতা-লুণ্ঠন ও আত্মসাৎ, জনগণের আমানতের খেয়ানত।
আত্মশুদ্ধি, আত্মজাগরণ, আত্মবিকাশের মাসে নির্বাচন কমিশন, নির্বাচন পরিচালনার ব্যবস্থা নিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কোনোরকম প্রতারণা চলতে পারে না। সাধারণ মানুষ দেশের রাজনীতিকদের চেয়েও অনেক বেশি অভিজ্ঞ, পোড়-খাওয়া, সত্যিকার লড়াকু। কোন নির্বাচন কমিশন তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে, তা তাদের কাছ থেকেই চূড়ান্তভাবে জানতে হবে। শুধু প্রত্যাখ্যানের রাজনীতি দিয়ে, শুধু বিরোধিতার খাতিরে বিরোধিতার রাজনীতি দিয়ে হবে না। মানুষ আজিজ-মার্কা কমিশন দেখেছে, 'সালসা' (সাঈদ-লতিফুর-সাহাবুদ্দীন) ব্যবস্থার নির্বাচনও ভোলেনি, আবার ইয়াজউদ্দিনের তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার ভয়াবহ পরিণতিও প্রত্যক্ষ করেছে- নির্বাচন কমিশন কোনটা সাংবিধানিক, কোনটা ন্যায়সংগত, কোনটা নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হবে, তা মানুষই বলে দেবে চূড়ান্তভাবে। বিগত ১০টি নির্বাচন কমিশনের চেয়ে অনেক বেশি গণতান্ত্রিকভাবেই এবারকার নতুন রকিব নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে। জাতির ঐক্যের প্রতীক রাষ্ট্রপতির পরম দেশপ্রেমিক প্রয়াসের মধ্য দিয়ে গঠিত এই নতুন নির্বাচন কমিশনকে মানুষের রায় পাওয়ার আগেই প্রত্যাখ্যান করা, এর বিরোধিতা করে অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা কখনোই দেশপ্রেমমূলক কাজ হিসেবে গণ্য হতে পারে না। অচিরেই ডিসিসির নির্বাচন ও শরীয়তপুর-৩-এর উপনির্বাচন পরিচালনা ও এ দুই নির্বাচনের রায়ের ভেতর দিয়ে এ কমিশনের গ্রহণযোগ্যতা প্রতিষ্ঠিত বা বস্তুনিষ্ঠভাবে প্রত্যাখ্যাত হয়ে যাবে। তত্ত্বাবধায়ক না দলীয়, না অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, কোন ব্যবস্থা জনগণ চায়, তা চূড়ান্তভাবে প্রমাণিত হয়ে যাবে। গায়ের জোরে এর কোনো একটিকে নাকচ করে দেওয়া এ দেশের সচেতন গণমানুষ একটি রাজনৈতিক শূন্যতা সৃষ্টির মাধ্যমে দেশে অসাংবিধানিক শাসন ডেকে আনার অশনিসংকেত হিসেবেই গণ্য করবে। ইতিহাস সে ভুল ক্ষমা করবে না।
নেতিবাচক, অন্তঃসারশূন্য রাজনীতি যতই সংকীর্ণ ব্যক্তি ও দলীয় স্বার্থ হাসিলে ফলপ্রসূ প্রমাণিত হোক, কখনোই কোনো দেশেই তা সাধারণ মানুষ ও সমাজের এতটুকু কল্যাণ সাধন করতে পারে না। আমাদের দেশেরও অনুন্নয়ন ও সর্বনাশের মূলে রয়েছে এই নেতিবাচক, অসংস্কৃত ও অপরিণামদর্শী রাজনীতি। জাতি এ থেকে পরিত্রাণ চায়। লজ্জাজনক এবং হাস্যকরভাবেই বিরোধী দল দাবি করছে, তারা সরকারের বিরোধিতার নৈতিক কর্তব্য পালন করছে। কিন্তু সংসদে যাওয়ার নৈতিক কর্তব্যটুকু তারা পালন করছে না! রাজনৈতিক ভ্রষ্টাচার আর কাকে বলে! আশপাশের সব গণতান্ত্রিক দেশ, নব্য স্বাধীন ও উন্নয়নগামী দেশ নিজেদের ভুলত্রুটি শুধরে নিয়ে, সুস্থ, গঠনমূলক, দায়িত্বশীল রাজনীতি অনুসরণ করবে, প্রকৃত গণতন্ত্রের চর্চা করবে, সব জাতীয় স্বার্থের প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ অবস্থান ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে, এগিয়ে যাবে সত্যিকার উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে, জনগণের জীবনমান ও সংস্কৃতিকে ঈর্ষণীয়ভাবে উন্নত ও আধুনিক- সর্বতোভাবে অগ্রসর করে নেবে আর আমরা স্বাধীন ও উন্নয়নগামী দেশ হয়েও শুধুই পিছিয়ে যেতে থাকব, মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তির কাছে, একাত্তরের পরাজিত শক্তি ও যুদ্ধাপরাধীদের কাছে আত্মসমর্পণ করে সহিংস ও হিংসাত্মক রাজনীতির ধারকদের ক্রীতদাস হয়ে থাকব- এটা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না।
১১.০২.২০১২
No comments