বৃষ্টির পানি ব্যবহার-বরেন্দ্র অঞ্চলে সবুজের সমারোহ
এক সময় যে বরেন্দ্র অঞ্চলে পানির অভাবে সবুজের সমারোহ দূরে থাক, স্বাভাবিক কৃষিকাজ পর্যন্ত সম্ভব ছিল না, সেখানে এখন শস্যশ্যামল মাঠ আর গাছগাছালি চিত্ত হরণ করে। ওই এলাকাকে দেখে এখন মনেই হবে না যে, এখানে এক সময় খরার সঙ্গী হিসেবে মঙ্গা মানুষের জীবনযন্ত্রণার কারণ ছিল।
এখন পরিকল্পিত উপায়ে পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা নেওয়ার কারণে এলাকার মানুষের অভাব যেমন ঘুচেছে, তেমনি বিভিন্ন অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক উদ্যোগ মানুষকে স্বাবলম্বী ও কর্মচঞ্চল হতে উৎসাহিত করে চলেছে। শনিবার সমকালের লোকালয় পৃষ্ঠায় প্রকাশিত এক রিপোর্টে দেখা যায়, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা 'বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ)' প্রায় ছয় বছর আগে নওগাঁর সাপাহার ও পোরশাসহ ওই অঞ্চলের সেচ সুবিধার বাইরে থাকা অনাবাদি জমিগুলো চাষাবাদের আওতায় আনতে 'বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ও সেচ প্রকল্প' নামে এক কার্যক্রম গ্রহণ করে। প্রকল্পের আওতায় পানির ধারণক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ওই অঞ্চলের খালগুলো পুনর্খনন করা হয়। খালের পাশাপাশি পুকুরগুলোও পুনর্খনন করা হয়। মরুময়তা থেকে এলাকাকে রক্ষায় খালের পাড়ে বনাঞ্চলও সৃষ্টি করা হয়। রিপোর্টে দেখা যায়, বরেন্দ্র অঞ্চলের দুটি উপজেলায় এ পর্যন্ত ২৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ ৫৮টি খাল পুনর্খননের মাধ্যমে বছরে গড়ে ৬০ লাখ ঘনমিটার বৃষ্টির পানি ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে। এর ফলে এলাকাটিতে সারাবছর চাষবাস করা ছাড়াও মরুপ্রবণতা রোধ করা সম্ভব হয়েছে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তরও নিচে নেমে যাওয়ার পরিবর্তে উপরের দিকে উঠে আসছে। এভাবে এলাকাটি একটি পরিকল্পিত গাছগাছালি ও ফসলের সমারোহে চিরকালীন গ্রামের শ্যামল শোভার আদল পেয়েছে। নিশ্চিতভাবেই এলাকার মানুষ এসব কানায় কানায় পূর্ণ খালে মাছের চাষ করার মাধ্যমে তাদের আমিষ চাহিদার বিরাট অংশ পূরণ করতে পারছে। পরিকল্পিত উদ্যোগ একটি এলাকার বিবর্ণ চিত্রটা পাল্টে নতুন সবুজের সমারোহপূর্ণ শস্যশ্যামল, নয়নাভিরাম গ্রামবাংলা আমাদের উপহার দিয়েছে। এতে এলাকার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে বসবাসকারী প্রতিটি পরিবার তাদের আটপৌরে অভাবগ্রস্ত জীবনের নতুন স্পন্দন আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছে। এ ধরনের সুদূরপ্রসারী চিন্তা নিয়ে যে কোনো ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক উদ্যোগ যত বেশি গৃহীত হবে ততই আমাদের চারপাশটা আরও সবুজ হয়ে উঠবে
No comments