একুশের চাওয়া একুশের পাওয়া-বাংলাদেশের সংবিধান by আনিসুজ্জামান
বাংলাদেশ যখন স্বাধীন হলো, তখন আমাদের একটা আশু কর্তব্য হয়ে দাঁড়ালো নিজেদের সংবিধান রচনা। সংবিধান কথাটা তখনো চালু হয়নি, প্রচলিত শব্দ ছিল শাসনতন্ত্র। সেই শাসনতন্ত্র প্রণয়ন করতে পাকিস্তানের লেগেছিল ন বছর। আমাদের লক্ষ্য হলো ন মাসে তা লিখে ফেলা।
অবশ্য অমন নির্দিষ্ট করে সময় বেঁধে দেওয়া হয়নি। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে যাঁরা পাকিস্তান গণপরিষদ ও প্রাদেশিক পরিষদে নির্বাচিত হয়েছিলেন, তাঁদের নিয়ে ১৯৭২ সালে গঠিত হয়েছিল বাংলাদেশ গণপরিষদ। এপ্রিল মাসে সেই গণপরিষদ সংবিধান-প্রণয়নের জন্যে একটি কমিটি করে দেন আইনমন্ত্রী ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে। আশা প্রকাশ করা হয়, যতশীঘ্রসম্ভব সংবিধান প্রণীত হবে।
আমি তখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। বাংলা বিভাগের অধ্যক্ষ সৈয়দ আলী আহসান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিযুক্ত হওয়ায় তাঁর জায়গায় আমি সদ্য সদ্য বিভাগীয় অধ্যক্ষতার দায়িত্ব নিয়েছি। সংবিধান-প্রণয়নের দায়িত্ব নিয়ে কামাল হোসেন এত্তেলা পাঠালেন, বাংলায় সংবিধান রচিত হবে, ইংরেজি খসড়ার বাংলা তৈরি করার দায়িত্ব নিতে হবে আমাকে।
সংবিধান তো বাংলায়ই হতে হবে। এ-বিষয়ে কারো মনে কোনো সন্দেহ ছিল না। বাংলাভাষায় তখন পর্যন্ত কোনো সংবিধান রচিত হয়নি, কোনো সংবিধানের বাংলা অনুবাদও আমাদের সামনে ছিল না। অতএব সামনে কোনো আদর্শ ছাড়াই আমাদের এগোতে হবে। ঢাকায় এসে কামালের সঙ্গে আলোচনার পর আমি আমার স্কুলজীবনের বন্ধু নেয়ামাল বাসিরকে এ-কাজে টানলাম। সে তার আরেকজন সহকর্মীকে আমাদের সঙ্গে যুক্ত করল। তাঁর নাম ছিল বোধহয় আলম, নামটা ভুলে গেছি বলে লজ্জিত ও ক্ষমাপ্রার্থী। ঠিক হলো, আমরা তিনজন মিলে কাজটা করব। সংবিধান-প্রণয়ন কমিটির সভায় আমি আমন্ত্রণক্রমে উপস্থিত থাকব। সেখানে বাংলা ও ইংরেজি দুই ভাষ্যই উপস্থিত করা হবে। আলোচনার পর উভয়পাঠের চূড়ান্ত রূপ স্থির করা হবে।
আরম্ভের—অথবা আরম্ভেরও আগে আরম্ভের—দিনটার কথা স্পষ্ট মনে পড়ে। সচিবালয়ে আইনমন্ত্রীর অফিসকক্ষে এক বিকেলে ড. কামাল হোসেন ও আমি মুখোমুখি বসেছি। মন্ত্রণালয়ের প্যাডের কাগজে কামাল প্রিঅ্যাম্বলটা লিখতে শুরু করলেন। এক পৃষ্ঠা লেখা হয়ে গেলে প্যাড থেকে কাগজটা ছিঁড়ে নিয়ে তিনি আমার দিকে দিলেন। আমি আরেকটা প্যাডের কাগজে লিখতে শুরু করলাম: ‘আমরা, বাংলাদেশের জনগণ, ...।’ সর্বশরীর রোমাঞ্চিত হলো। পরদিন গণপরিষদ-ভবনেই গেলাম সরাসরি। এখন যেখানে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর, সেখানে তখন গণপরিষদ এবং তার দপ্তর—দুইই। আমার জন্যে একটা ঘর বরাদ্দ হয়েছে—আইনমন্ত্রীর ওখানকার দপ্তরের কাছাকাছি। আমার কাছেই সংবিধানের কাজের জন্যে নেয়ামাল ও তার সহকর্মীর ঘর—সেখানেই বেশিরভাগ কাগজপত্র রাখা।
ইতিমধ্যে বাংলাদেশের সংবিধান-রচনায় কারিগরি সাহায্য করার জন্যে কমনওয়েলথ সচিবালয় থেকে মি. গাথরি নামে এক আইরিশ আইনজ্ঞকে পাঠানো হলো। তিনি আইনি মুশাবিদা-বিশেষজ্ঞ। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের প্রাইভেট মেম্বরস বিল প্রণয়নকারী একটি আইনি সংস্থায় কাজ করেন। খুবই সজ্জন মানুষ। তিনি কামাল হোসেনের ইংরেজি খসড়ায় কিছু পরিবর্তন সাধন করেন, আমরা তা দেখে আবার বাংলাটা বদলাই। ইংরেজির বাংলা ভাষ্য যদি নিজেদের কাছে আড়ষ্ট লাগে, কামালকে বলি, ইংরেজির ধরনটা একটু পালটে দিতে। তিনি পালটে দেন। তাঁকে বলি কোনো বিধানের, কোনো আইনি শব্দের, তাৎপর্যটা বুঝিয়ে দিতে। তিনি বুঝিয়ে দেন। আমরা কাজে অগ্রসর হই।
সংবিধানের খসড়া-প্রণয়ন কমিটি অনেকগুলো সভায় মিলিত হয়। সদস্যদের মধ্যে তর্কবিতর্ক হয়। তর্ক হয় জাতীয় সংগীত নিয়ে, ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে, রাষ্ট্রায়ত্তকরণ নিয়ে, মৌলিক অধিকারের শর্তসাপেক্ষতা নিয়ে—এরকম অনেক কিছু নিয়ে। তর্ক হয় বাংলা ভাষ্য নিয়ে। আমরা স্পিকার-ডেপুটি স্পিকারের বাংলা করছিলাম অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ। একজন বললেন, ওতে একেবারে কলেজের প্রিন্সিপাল মনে হয়। জেনারেল ওসমানী একবার জিজ্ঞাসা করলেন, বাহিনীর অন্য কোনো বাংলা নেই? জানতে চাইলাম, কেন। বললেন, লালবাহিনী-নীলবাহিনী শুনতে শুনতে বাহিনী কথাটার ওপর অশ্রদ্ধা এসে গেছে; প্রতিরক্ষা বাহিনীর জন্যে অন্য শব্দ ব্যবহার করলে ভালো হয়। সংবিধান শব্দ কেন শাসনতন্ত্রের চেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য, যে-ব্যাখ্যা সবাই মেনে নেন। ওমবুডসম্যানের বাংলা ন্যায়পালও (এটি নেয়ামাল বাসির-উদ্ভাবিত শব্দ) অনুমোদন লাভ করে কিছু আলোচনার পরে।
একটা ভুল (সেটা আমারই) কিন্তু রয়ে যায়। ইউনিটারির অর্থে বাংলায় লিখেছিলাম একক, যদিও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পাঠ্যবইতেই আছে এককেন্দ্রিক। আসলে কেন্দ্র শব্দটিতে অরুচি ধরে গিয়েছিল পাকিস্তানের অভিজ্ঞতা থেকে, তাই সেটা এড়াতে একক করি। পরে আতাউর রহমান কায়সার ব্যক্তিগত পর্যায়ে কথাটা উত্থাপন করেছিলেন আমার কাছে। তাঁকে এই জবাবই দিয়েছিলাম।
পরে আনুষ্ঠানিকভাবে একটি কমিটি গঠিত হয় অধ্যাপক সৈয়দ আলী আহসানকে সভাপতি, বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক অধ্যাপক মযহারুল ইসলামকে সদস্য এবং আমাকে সদস্য-সচিব করে। এই কমিটি দুই সন্ধ্যায় বসে ইংরেজির সঙ্গে মিলিয়ে বাংলা ভাষ্য অনুমোদন করেন। গণপরিষদে সংবিধান বিল উত্থাপনের সময়ে এই কমিটিকেই ধন্যবাদ দেওয়া হয়েছিল।
শেষ পর্যন্ত নভেম্বরের মধ্যেই সংবিধান প্রণয়ন শেষ হয়ে গেল। যখন লেখা হলো যে, বাংলা পাঠ মূল বলে গণ্য হবে এবং ইংরেজি ও বাংলা পাঠের মধ্যে বিরোধ হলে বাংলা পাঠই প্রাধান্য পাবে, তখন বেশ ভয় পেয়েছিলাম মনে মনে। পরে বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের এক লেখায় পড়েছি, ইংরেজি-বাংলার অসামঞ্জস্য নিয়ে নাকি দুটি মামলা হয়েছিল—তাতে হাইকোর্ট রায় দিয়েছিলেন, আসলে ইংরেজি-বাংলায় বিরোধ নেই।
১৯৭২ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাশ কালটা ঢাকায় থাকি। তাছাড়া এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিমাসের অর্ধেকই ঢাকায় থেকেছি সংবিধানের বাংলা ভাষ্য প্রণয়নের কাজে। অনেক খেটেছিলাম। কখনো গভীর রাতে ঘরে না ফিরে কামালের বসার ঘরে রাত কাটিয়ে সকালে আবার একসঙ্গে ফিরেছি গণপরিষদে। আমার সহকর্মী দুজনও খুব খেটেছিলেন। স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান বাংলায় রচিত হবে, সেটাই হবে বাংলায় লেখা প্রথম সংবিধান—এই লক্ষ্য গতি দিয়েছিল আমাদের কাজে।
আমি তখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। বাংলা বিভাগের অধ্যক্ষ সৈয়দ আলী আহসান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিযুক্ত হওয়ায় তাঁর জায়গায় আমি সদ্য সদ্য বিভাগীয় অধ্যক্ষতার দায়িত্ব নিয়েছি। সংবিধান-প্রণয়নের দায়িত্ব নিয়ে কামাল হোসেন এত্তেলা পাঠালেন, বাংলায় সংবিধান রচিত হবে, ইংরেজি খসড়ার বাংলা তৈরি করার দায়িত্ব নিতে হবে আমাকে।
সংবিধান তো বাংলায়ই হতে হবে। এ-বিষয়ে কারো মনে কোনো সন্দেহ ছিল না। বাংলাভাষায় তখন পর্যন্ত কোনো সংবিধান রচিত হয়নি, কোনো সংবিধানের বাংলা অনুবাদও আমাদের সামনে ছিল না। অতএব সামনে কোনো আদর্শ ছাড়াই আমাদের এগোতে হবে। ঢাকায় এসে কামালের সঙ্গে আলোচনার পর আমি আমার স্কুলজীবনের বন্ধু নেয়ামাল বাসিরকে এ-কাজে টানলাম। সে তার আরেকজন সহকর্মীকে আমাদের সঙ্গে যুক্ত করল। তাঁর নাম ছিল বোধহয় আলম, নামটা ভুলে গেছি বলে লজ্জিত ও ক্ষমাপ্রার্থী। ঠিক হলো, আমরা তিনজন মিলে কাজটা করব। সংবিধান-প্রণয়ন কমিটির সভায় আমি আমন্ত্রণক্রমে উপস্থিত থাকব। সেখানে বাংলা ও ইংরেজি দুই ভাষ্যই উপস্থিত করা হবে। আলোচনার পর উভয়পাঠের চূড়ান্ত রূপ স্থির করা হবে।
আরম্ভের—অথবা আরম্ভেরও আগে আরম্ভের—দিনটার কথা স্পষ্ট মনে পড়ে। সচিবালয়ে আইনমন্ত্রীর অফিসকক্ষে এক বিকেলে ড. কামাল হোসেন ও আমি মুখোমুখি বসেছি। মন্ত্রণালয়ের প্যাডের কাগজে কামাল প্রিঅ্যাম্বলটা লিখতে শুরু করলেন। এক পৃষ্ঠা লেখা হয়ে গেলে প্যাড থেকে কাগজটা ছিঁড়ে নিয়ে তিনি আমার দিকে দিলেন। আমি আরেকটা প্যাডের কাগজে লিখতে শুরু করলাম: ‘আমরা, বাংলাদেশের জনগণ, ...।’ সর্বশরীর রোমাঞ্চিত হলো। পরদিন গণপরিষদ-ভবনেই গেলাম সরাসরি। এখন যেখানে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর, সেখানে তখন গণপরিষদ এবং তার দপ্তর—দুইই। আমার জন্যে একটা ঘর বরাদ্দ হয়েছে—আইনমন্ত্রীর ওখানকার দপ্তরের কাছাকাছি। আমার কাছেই সংবিধানের কাজের জন্যে নেয়ামাল ও তার সহকর্মীর ঘর—সেখানেই বেশিরভাগ কাগজপত্র রাখা।
ইতিমধ্যে বাংলাদেশের সংবিধান-রচনায় কারিগরি সাহায্য করার জন্যে কমনওয়েলথ সচিবালয় থেকে মি. গাথরি নামে এক আইরিশ আইনজ্ঞকে পাঠানো হলো। তিনি আইনি মুশাবিদা-বিশেষজ্ঞ। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের প্রাইভেট মেম্বরস বিল প্রণয়নকারী একটি আইনি সংস্থায় কাজ করেন। খুবই সজ্জন মানুষ। তিনি কামাল হোসেনের ইংরেজি খসড়ায় কিছু পরিবর্তন সাধন করেন, আমরা তা দেখে আবার বাংলাটা বদলাই। ইংরেজির বাংলা ভাষ্য যদি নিজেদের কাছে আড়ষ্ট লাগে, কামালকে বলি, ইংরেজির ধরনটা একটু পালটে দিতে। তিনি পালটে দেন। তাঁকে বলি কোনো বিধানের, কোনো আইনি শব্দের, তাৎপর্যটা বুঝিয়ে দিতে। তিনি বুঝিয়ে দেন। আমরা কাজে অগ্রসর হই।
সংবিধানের খসড়া-প্রণয়ন কমিটি অনেকগুলো সভায় মিলিত হয়। সদস্যদের মধ্যে তর্কবিতর্ক হয়। তর্ক হয় জাতীয় সংগীত নিয়ে, ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে, রাষ্ট্রায়ত্তকরণ নিয়ে, মৌলিক অধিকারের শর্তসাপেক্ষতা নিয়ে—এরকম অনেক কিছু নিয়ে। তর্ক হয় বাংলা ভাষ্য নিয়ে। আমরা স্পিকার-ডেপুটি স্পিকারের বাংলা করছিলাম অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ। একজন বললেন, ওতে একেবারে কলেজের প্রিন্সিপাল মনে হয়। জেনারেল ওসমানী একবার জিজ্ঞাসা করলেন, বাহিনীর অন্য কোনো বাংলা নেই? জানতে চাইলাম, কেন। বললেন, লালবাহিনী-নীলবাহিনী শুনতে শুনতে বাহিনী কথাটার ওপর অশ্রদ্ধা এসে গেছে; প্রতিরক্ষা বাহিনীর জন্যে অন্য শব্দ ব্যবহার করলে ভালো হয়। সংবিধান শব্দ কেন শাসনতন্ত্রের চেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য, যে-ব্যাখ্যা সবাই মেনে নেন। ওমবুডসম্যানের বাংলা ন্যায়পালও (এটি নেয়ামাল বাসির-উদ্ভাবিত শব্দ) অনুমোদন লাভ করে কিছু আলোচনার পরে।
একটা ভুল (সেটা আমারই) কিন্তু রয়ে যায়। ইউনিটারির অর্থে বাংলায় লিখেছিলাম একক, যদিও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পাঠ্যবইতেই আছে এককেন্দ্রিক। আসলে কেন্দ্র শব্দটিতে অরুচি ধরে গিয়েছিল পাকিস্তানের অভিজ্ঞতা থেকে, তাই সেটা এড়াতে একক করি। পরে আতাউর রহমান কায়সার ব্যক্তিগত পর্যায়ে কথাটা উত্থাপন করেছিলেন আমার কাছে। তাঁকে এই জবাবই দিয়েছিলাম।
পরে আনুষ্ঠানিকভাবে একটি কমিটি গঠিত হয় অধ্যাপক সৈয়দ আলী আহসানকে সভাপতি, বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক অধ্যাপক মযহারুল ইসলামকে সদস্য এবং আমাকে সদস্য-সচিব করে। এই কমিটি দুই সন্ধ্যায় বসে ইংরেজির সঙ্গে মিলিয়ে বাংলা ভাষ্য অনুমোদন করেন। গণপরিষদে সংবিধান বিল উত্থাপনের সময়ে এই কমিটিকেই ধন্যবাদ দেওয়া হয়েছিল।
শেষ পর্যন্ত নভেম্বরের মধ্যেই সংবিধান প্রণয়ন শেষ হয়ে গেল। যখন লেখা হলো যে, বাংলা পাঠ মূল বলে গণ্য হবে এবং ইংরেজি ও বাংলা পাঠের মধ্যে বিরোধ হলে বাংলা পাঠই প্রাধান্য পাবে, তখন বেশ ভয় পেয়েছিলাম মনে মনে। পরে বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের এক লেখায় পড়েছি, ইংরেজি-বাংলার অসামঞ্জস্য নিয়ে নাকি দুটি মামলা হয়েছিল—তাতে হাইকোর্ট রায় দিয়েছিলেন, আসলে ইংরেজি-বাংলায় বিরোধ নেই।
১৯৭২ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাশ কালটা ঢাকায় থাকি। তাছাড়া এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিমাসের অর্ধেকই ঢাকায় থেকেছি সংবিধানের বাংলা ভাষ্য প্রণয়নের কাজে। অনেক খেটেছিলাম। কখনো গভীর রাতে ঘরে না ফিরে কামালের বসার ঘরে রাত কাটিয়ে সকালে আবার একসঙ্গে ফিরেছি গণপরিষদে। আমার সহকর্মী দুজনও খুব খেটেছিলেন। স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান বাংলায় রচিত হবে, সেটাই হবে বাংলায় লেখা প্রথম সংবিধান—এই লক্ষ্য গতি দিয়েছিল আমাদের কাজে।
No comments