উত্তর প্রদেশে ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের ভাগ্য পরীক্ষা by গৌতম লাহিড়ী
এই উত্তর প্রদেশে এক সময় রামমন্দির আন্দোলন করে ঝড় তুলে দিয়েছিল বিজেপি। এ দলের কাছেও রয়েছে গান্ধী পরিবারের আরেক সদস্য সঞ্জয় গান্ধীপুত্র বরুণ। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে তাকে এবারের প্রচারে তেমন একটা দেখা যায়নি। যদিও বিজেপি নেতারা আশা করছেন, বরুণ শেষ পর্যন্ত প্রচারে নামবেন।
ভারতের দুই প্রধান রাজনৈতিক দল কংগ্রেস ও বিজেপির দুই তরুণ নেতা_ রাহুল ও বরুণের দ্বন্দ্বযুুদ্ধ দেখার অপেক্ষায় রাজনৈতিক মহল
কোনো প্রাদেশিক রাজ্য বিধানসভা নির্বাচন আগে কখনও ভারতে এত কৌতূহল সৃষ্টি করেনি, যা এবার পাঁচ রাজ্যকে ঘিরে তৈরি হয়েছে। নির্বাচনী ফল যা-ই হোক না কেন, সে প্রতিক্রিয়া এ প্রতিবেদনের মূল উদ্দেশ্য নয়। এবারের বিধানসভা নির্বাচনের অন্যতম প্রধান তাৎপর্য হলো, ভারতের ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের রাজনৈতিক ভাগ্য নির্ধারণ করে দেবে এ নির্বাচন। পাঁচটি রাজ্যের মধ্যে অন্যতম প্রধান কৌতূহল সৃষ্টিকারী রাজ্য ভারতের 'হিন্দি বলয়ের' বৃহত্তম রাজ্য উত্তর প্রদেশ। আশির দশক পর্যন্ত এ উত্তর প্রদেশ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করত। অবিভক্ত উত্তর প্রদেশের পঁচাশি সাংসদ সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন কে হবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। জওহরলাল নেহরু থেকে ইন্দিরা-রাজিব গান্ধী উত্তর প্রদেশেরই সাংসদ। নেহরু-গান্ধী পরিবারের বাইরে ব্যতিক্রম ধরলেও সেই লালবাহাদুর শাস্ত্রীও ওই রাজ্যের। আশির দশকের শেষ ভাগ থেকে কংগ্রেসের একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোয় ভারতে কোয়ালিশন রাজনীতির গোড়াপত্তন। তার মধ্যে উত্তর প্রদেশ বিভক্ত হয়ে পৃথক উত্তরাখণ্ড রাজ্য গঠনের পর উত্তর প্রদেশের সাংসদ সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে আশি। এরপর জাত-পাতের অন্ধগলিতে পড়ে উত্তর প্রদেশ সমাজ এখন বহুধাবিভক্ত।
এমন সামাজিক প্রেক্ষাপটে এবারের উত্তর প্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর হয়ে নির্বাচনী কাণ্ডারি এখন প্রবীণদের পরিবর্তে তরুণ নেতৃত্বের হাতে। তাদেরই নেতৃত্বের অগি্নপরীক্ষা হতে চলেছে এ নির্বাচনে। এবারই কংগ্রেস দলের হয়ে প্রচারের প্রধান দায়িত্বে জাতীয় কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক রাহুল গান্ধী। এর আগে বিহারের বিধানসভা ভোটে দায়িত্ব নিয়ে রাহুল ব্যর্থ হয়েছিলেন। প্রশ্ন উঠেছিল রাহুল গান্ধীর ভোট আকর্ষণ করার ক্ষমতা নিয়ে। তাই এবার তার পরীক্ষা। গত বিধানসভা ভোটে উত্তর প্রদেশের মোট ৪০৩টি আসনের মধ্যে কংগ্রেসের ভাগ্যে জুটেছিল মাত্র ২৩টি আসন। যদিও লোকসভা ভোটে কংগ্রেস ২২টি আসন পেয়ে রীতিমতো চমক সৃষ্টি করেছিল। সুতরাং সেই বাইশ বিধানসভা আসনকে ক্ষমতা দখলের পর্যায়ে পেঁৗছে দিতে না পারলেও অন্তত 'সম্মানজনক' সংখ্যায় তুলতে না পারলে রাহুল গান্ধীর ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। এ কথা জানেন বলেই রাহুল এখন দিন-রাত লেগে রয়েছেন উত্তর প্রদেশের অলিগলিতে। একা কংগ্রেসের পক্ষে আদৌ ক্ষমতা দখল সম্ভব নয় বলেই এবার রাহুলের উদ্যোগেই উত্তর প্রদেশের পশ্চিম প্রান্তের জাঠ সম্প্রদায়ের নেতা অজিত সিংয়ের সঙ্গে নির্বাচনী আসন সমঝোতা হয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী কিষান নেতা চরণ সিংয়ের ছেলে অজিত সিং; কিন্তু তিনিও এখন প্রবীণের দলে। তাই এবার তার পুত্র জয়ন্ত চৌধুরী রাজনীতির ময়দানে। আগেই তিনি সাংসদ হয়েছিলেন। এই প্রথম তিনিও বিধানসভার প্রার্থী। রাহুলের ব্যক্তিগত বন্ধু জয়ন্তর রাজনৈতিক ভাগ্য এবার নির্ধারিত হতে চলেছে।
রাহুল-জয়ন্ত জোট যদি কার্যকর না হয় তার জন্য কংগ্রেস নেতৃত্ব বিকল্প পথ খুলে রেখেছেন। গান্ধী পরিবারের 'তুরুপের তাস' বলে পরিচিত প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকেও আংশিক ক্ষেত্রে প্রচারে নামিয়েছেন। কেননা, এরপর ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে কংগ্রেস কি ঝুঁকি নেবে? তাই কি প্রিয়াঙ্কা এবারের নির্বাচনে আগামী ভোটের মহড়া শুরু করলেন।
রাজিব গান্ধীকে হারিয়ে ১৯৮৯ সালে বিশ্বনাথ প্রতাপ সিং স্বল্প দিন প্রধানমন্ত্রী থেকেই অন্যান্য অনুন্নত শ্রেণীর জন্য সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নেন, যা ভারতের রাজনীতিতে 'মণ্ডল রাজনীতি' বলে পরিচিত, তা হিন্দি বলয়ে এক জাতপাতের ভিত্তিতে নতুন রাজনীতির সৃষ্টি করে। যে রাজনীতির মন্থনে যাদব জাতির নেতা হিসেবে মুলায়ম সিং যাদবের সমাজবাদী পার্টির সৃষ্টি। সৃষ্টি হলো দলিত শ্রেণীর নেতা হিসেবে কাশীরামের উত্থান। যার উত্তরসূরি এখনকার মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতী। সেই সমাজবাদী পার্টির নেতা মুলায়ম সিংও দলের নেতৃত্ব কার্যত তুলে দিয়েছেন আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত ছেলে অখিলেশ যাদবের হাতে। তাই এবার উত্তর প্রদেশে লড়াই রাহুল-জয়ন্ত জোটের সঙ্গে অখিলেশ ও মায়াবতীর।
এই উত্তর প্রদেশে এক সময় রামমন্দির আন্দোলন করে ঝড় তুলে দিয়েছিল বিজেপি। এ দলের কাছেও রয়েছে গান্ধী পরিবারের আরেক সদস্য সঞ্জয় গান্ধীপুত্র বরুণ। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে তাকে এবারের প্রচারে তেমন একটা দেখা যায়নি। যদিও বিজেপি নেতারা আশা করছেন, বরুণ শেষ পর্যন্ত প্রচারে নামবেন। ভারতের দুই প্রধান রাজনৈতিক দল কংগ্রেস ও বিজেপির দুই তরুণ নেতা_ রাহুল ও বরুণের দ্বন্দ্বযুুদ্ধ দেখার অপেক্ষায় রাজনৈতিক মহল। তারও রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হতে পারে এ নির্বাচনে। উত্তর প্রদেশ ছাড়া নির্বাচন হচ্ছে পাঞ্জাব, উত্তরাখণ্ড, মণিপুর এবং গোয়ায়। কিন্তু ভারতের রাজনীতির মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে বলেই সবার চোখ হিন্দি বলয় উত্তর প্রদেশের দিকেই। সেই সঙ্গে নির্ধারিত হবে ভারতের আগামী প্রজন্মের নেতৃত্ব। চোখ রাখুন ৬ মার্চের দিকে। যেদিন ভাগ্য পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করবে ভারতের নির্বাচন কমিশন।
গৌতম লাহিড়ী : সমকাল প্রতিনিধি দিলি্ল, ভারত
কোনো প্রাদেশিক রাজ্য বিধানসভা নির্বাচন আগে কখনও ভারতে এত কৌতূহল সৃষ্টি করেনি, যা এবার পাঁচ রাজ্যকে ঘিরে তৈরি হয়েছে। নির্বাচনী ফল যা-ই হোক না কেন, সে প্রতিক্রিয়া এ প্রতিবেদনের মূল উদ্দেশ্য নয়। এবারের বিধানসভা নির্বাচনের অন্যতম প্রধান তাৎপর্য হলো, ভারতের ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের রাজনৈতিক ভাগ্য নির্ধারণ করে দেবে এ নির্বাচন। পাঁচটি রাজ্যের মধ্যে অন্যতম প্রধান কৌতূহল সৃষ্টিকারী রাজ্য ভারতের 'হিন্দি বলয়ের' বৃহত্তম রাজ্য উত্তর প্রদেশ। আশির দশক পর্যন্ত এ উত্তর প্রদেশ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করত। অবিভক্ত উত্তর প্রদেশের পঁচাশি সাংসদ সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন কে হবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। জওহরলাল নেহরু থেকে ইন্দিরা-রাজিব গান্ধী উত্তর প্রদেশেরই সাংসদ। নেহরু-গান্ধী পরিবারের বাইরে ব্যতিক্রম ধরলেও সেই লালবাহাদুর শাস্ত্রীও ওই রাজ্যের। আশির দশকের শেষ ভাগ থেকে কংগ্রেসের একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোয় ভারতে কোয়ালিশন রাজনীতির গোড়াপত্তন। তার মধ্যে উত্তর প্রদেশ বিভক্ত হয়ে পৃথক উত্তরাখণ্ড রাজ্য গঠনের পর উত্তর প্রদেশের সাংসদ সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে আশি। এরপর জাত-পাতের অন্ধগলিতে পড়ে উত্তর প্রদেশ সমাজ এখন বহুধাবিভক্ত।
এমন সামাজিক প্রেক্ষাপটে এবারের উত্তর প্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর হয়ে নির্বাচনী কাণ্ডারি এখন প্রবীণদের পরিবর্তে তরুণ নেতৃত্বের হাতে। তাদেরই নেতৃত্বের অগি্নপরীক্ষা হতে চলেছে এ নির্বাচনে। এবারই কংগ্রেস দলের হয়ে প্রচারের প্রধান দায়িত্বে জাতীয় কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক রাহুল গান্ধী। এর আগে বিহারের বিধানসভা ভোটে দায়িত্ব নিয়ে রাহুল ব্যর্থ হয়েছিলেন। প্রশ্ন উঠেছিল রাহুল গান্ধীর ভোট আকর্ষণ করার ক্ষমতা নিয়ে। তাই এবার তার পরীক্ষা। গত বিধানসভা ভোটে উত্তর প্রদেশের মোট ৪০৩টি আসনের মধ্যে কংগ্রেসের ভাগ্যে জুটেছিল মাত্র ২৩টি আসন। যদিও লোকসভা ভোটে কংগ্রেস ২২টি আসন পেয়ে রীতিমতো চমক সৃষ্টি করেছিল। সুতরাং সেই বাইশ বিধানসভা আসনকে ক্ষমতা দখলের পর্যায়ে পেঁৗছে দিতে না পারলেও অন্তত 'সম্মানজনক' সংখ্যায় তুলতে না পারলে রাহুল গান্ধীর ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। এ কথা জানেন বলেই রাহুল এখন দিন-রাত লেগে রয়েছেন উত্তর প্রদেশের অলিগলিতে। একা কংগ্রেসের পক্ষে আদৌ ক্ষমতা দখল সম্ভব নয় বলেই এবার রাহুলের উদ্যোগেই উত্তর প্রদেশের পশ্চিম প্রান্তের জাঠ সম্প্রদায়ের নেতা অজিত সিংয়ের সঙ্গে নির্বাচনী আসন সমঝোতা হয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী কিষান নেতা চরণ সিংয়ের ছেলে অজিত সিং; কিন্তু তিনিও এখন প্রবীণের দলে। তাই এবার তার পুত্র জয়ন্ত চৌধুরী রাজনীতির ময়দানে। আগেই তিনি সাংসদ হয়েছিলেন। এই প্রথম তিনিও বিধানসভার প্রার্থী। রাহুলের ব্যক্তিগত বন্ধু জয়ন্তর রাজনৈতিক ভাগ্য এবার নির্ধারিত হতে চলেছে।
রাহুল-জয়ন্ত জোট যদি কার্যকর না হয় তার জন্য কংগ্রেস নেতৃত্ব বিকল্প পথ খুলে রেখেছেন। গান্ধী পরিবারের 'তুরুপের তাস' বলে পরিচিত প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকেও আংশিক ক্ষেত্রে প্রচারে নামিয়েছেন। কেননা, এরপর ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে কংগ্রেস কি ঝুঁকি নেবে? তাই কি প্রিয়াঙ্কা এবারের নির্বাচনে আগামী ভোটের মহড়া শুরু করলেন।
রাজিব গান্ধীকে হারিয়ে ১৯৮৯ সালে বিশ্বনাথ প্রতাপ সিং স্বল্প দিন প্রধানমন্ত্রী থেকেই অন্যান্য অনুন্নত শ্রেণীর জন্য সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নেন, যা ভারতের রাজনীতিতে 'মণ্ডল রাজনীতি' বলে পরিচিত, তা হিন্দি বলয়ে এক জাতপাতের ভিত্তিতে নতুন রাজনীতির সৃষ্টি করে। যে রাজনীতির মন্থনে যাদব জাতির নেতা হিসেবে মুলায়ম সিং যাদবের সমাজবাদী পার্টির সৃষ্টি। সৃষ্টি হলো দলিত শ্রেণীর নেতা হিসেবে কাশীরামের উত্থান। যার উত্তরসূরি এখনকার মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতী। সেই সমাজবাদী পার্টির নেতা মুলায়ম সিংও দলের নেতৃত্ব কার্যত তুলে দিয়েছেন আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত ছেলে অখিলেশ যাদবের হাতে। তাই এবার উত্তর প্রদেশে লড়াই রাহুল-জয়ন্ত জোটের সঙ্গে অখিলেশ ও মায়াবতীর।
এই উত্তর প্রদেশে এক সময় রামমন্দির আন্দোলন করে ঝড় তুলে দিয়েছিল বিজেপি। এ দলের কাছেও রয়েছে গান্ধী পরিবারের আরেক সদস্য সঞ্জয় গান্ধীপুত্র বরুণ। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে তাকে এবারের প্রচারে তেমন একটা দেখা যায়নি। যদিও বিজেপি নেতারা আশা করছেন, বরুণ শেষ পর্যন্ত প্রচারে নামবেন। ভারতের দুই প্রধান রাজনৈতিক দল কংগ্রেস ও বিজেপির দুই তরুণ নেতা_ রাহুল ও বরুণের দ্বন্দ্বযুুদ্ধ দেখার অপেক্ষায় রাজনৈতিক মহল। তারও রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হতে পারে এ নির্বাচনে। উত্তর প্রদেশ ছাড়া নির্বাচন হচ্ছে পাঞ্জাব, উত্তরাখণ্ড, মণিপুর এবং গোয়ায়। কিন্তু ভারতের রাজনীতির মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে বলেই সবার চোখ হিন্দি বলয় উত্তর প্রদেশের দিকেই। সেই সঙ্গে নির্ধারিত হবে ভারতের আগামী প্রজন্মের নেতৃত্ব। চোখ রাখুন ৬ মার্চের দিকে। যেদিন ভাগ্য পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করবে ভারতের নির্বাচন কমিশন।
গৌতম লাহিড়ী : সমকাল প্রতিনিধি দিলি্ল, ভারত
No comments