পবিত্র কোরআনের আলো-কাফির ও মুনাফিকদের পরিহার করে নিজস্ব শক্তির ওপর দাঁড়ানোর ইঙ্গিত
৮১। ফারিহাল মুখাল্লাফূনা বিমাক্বআ'দিহিম খিলা-ফা রাসূলি ল্লা-হি ওয়াকারিহূ আইঁ ইয়্যুজা-হিদূ বিআমওয়া-লিহিম ওয়াআনফুছিহিম ফী ছাবীলি ল্লা-হি ওয়াক্বা-লূ লা-তানফিরূ ফিল হার্রি; ক্বুল না-রু জাহান্নামা আশাদ্দু হার্রা-; লাও কা-নূ ইয়াফ্ক্বাহূন।
৮২। ফাল্ইয়াদ্বহাকূ ক্বালীলাওঁ ওয়ালইয়াব্কূ কাছীরান জাযা-আম্ বিমা- কা-নূ ইয়াকছিবূন।
৮৩। ফাইর্ রাজাআ'কা ল্লা-হু ইলা- ত্বা-য়িফাতিম্ মিনহুম ফাছ্তা'যানূকা লিলখুরূজি ফাক্বুল্ লান তাখ্রুজূ মায়ি'ইয়া আবাদাওঁ ওয়ালান তুক্বা-তিলূ মায়ি'ইয়া আ'দুওয়্যা-; ইন্নাকুম রাদ্বীতুম বিলক্বুঊ'দি আওয়্যালা মার্রাতিন ফাক্বউ'দূ মাআ'ল খা-লিফীন।
৮৪। ওয়ালা- তুসালি্ল আ'লা- আহাদিম্ মিনহুম্ মা-তা আবাদাওঁ ওয়ালা-তাক্বুম আ'লা- ক্বাবরিহী; ইন্নাহুম কাফারূ বিল্লা-হি ওয়ারাসূলিহী ওয়ামা-তূ ওয়াহুম ফা-ছিক্বূন।
[সুরা : সুরা আত্ তাওবা, আয়াত : ৮১-৮৪]
অনুবাদ : ৮১. যাদের তাবুক অভিযানের সময় পেছনে পড়ে থাকতে দেওয়া হয়েছিল, তারা আল্লাহর রাসুলের ইচ্ছার বিরুদ্ধে নিজেদের ঘরে বসে থাকতে পেরে খুশি হয়ে গেল। আল্লাহর পথে নিজেদের জান-মাল দিয়ে জিহাদ করা তাদের কাছে নাপছন্দ ছিল। তারা বলছিল, এই তীব্র গরমে বাইরে বের হয়ো না। হে নবী, আপনি তাদের বলুন, জাহান্নামের আগুন তো আরো তীব্র গরম। আহা! তারা যদি বুঝতে পারত।
৮২. সুতরাং তারা একটু হেসে নিক, কারণ তাদের অনেক কাঁদতে হবে। এটা হচ্ছে তাদের কৃতকর্মের প্রতিফল।
৮৩. (হে নবী) এরপর আল্লাহ আপনাকে তাদের কোনো দলের কাছে ফিরিয়ে আনলে এবং তারা আপনার কাছে কোনো জিহাদে বের হওয়ার অনুমতি চাইলে তাদের বলে দেবেন, তোমরা আর কখনো আমার সঙ্গে বের হতে পারবে না এবং আমার দলভুক্ত হয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে পারবে না। তোমরা তো প্রথমবার বসে থাকতে পছন্দ করেছিলে। সুতরাং এখনো অক্ষমদের সঙ্গে বসে থাকো।
৮৪. (হে নবী) তাদের মধ্যে কেউ মারা গেলে আপনি তার উদ্দেশে জানাজার নামাজ পড়বেন না এবং তাদের কবরের পাশেও দাঁড়াবেন না। তারা তো আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের অবাধ্য হয়েছে এবং তারা পাপাচারী অবস্থায় মারা গেছে।
ব্যাখ্যা : ৮১ নম্বর আয়াতে তাবুক অভিযানের সময় মুনাফিকরা যে আচরণ করেছিল, এর বর্ণনা দিয়ে তাদের দুর্ভাগ্যের জন্য আফসোস করা হয়েছে। ৮৩ নম্বর আয়াতে কাফির ও মুনাফিকদের সুস্পষ্টভাবে পরিহার করে চলার নীতি গ্রহণ করে মুসলমানদের নিজস্ব শক্তির ওপর দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। তারা যদি এবার এসে মুসলমানদের দলভুক্ত হওয়ার চেষ্টা করে, তবুও তাদের যেন আর গ্রহণ করা না হয়, সে জন্য সে ব্যাপারে রাসুলের ওপর সুস্পষ্ট নির্দেশ জারি করা হয়েছে। ৮৪ নম্বর আয়াতে শানেনুজুল সম্পর্কে সহিহ বুখারি ও অন্যান্য গ্রন্থে বর্ণিত আছে যে মুনাফিকদের নেতা আবদুল্লাহ ইবনে উবাইয়ের ছেলে আবদুল্লাহ ছিলেন একজন খাঁটি মুসলমান। বিভিন্ন ক্ষেত্রে আবদুল্লাহ ইবনে উবাইয়ের মুনাফিকি প্রকাশ পেলেও সে যেহেতু নিজেকে মুসলিম বলে দাবি করত, তাই তার সঙ্গে বাহ্যত মুসলিমদের মতোই আচরণ করা হতো। সেই ব্যক্তি মারা যাওয়ার পর তার ছেলে আবদুল্লাহ নবী (সা.)-এর কাছে এসে তাঁকে জানাজা পড়ানোর জন্য অনুরোধ জানালেন। নবী (সা.) ছিলেন উম্মতের জন্য দয়ার সাগর। তিনি অনুরোধ গ্রহণ করলেন এবং জানাজা পড়ানোর জন্য চলে গেলেন। এদিকে হজরত ওমর (রা.) এই মুনাফিক সর্দারের জানাজা না পড়ানোর জন্য রাসুল (সা.)-এর প্রতি অনুরোধ জানালেন এবং এর সপক্ষে পূর্ববর্তী ৮০ নম্বর আয়াতের বরাত দেন। যাতে বলা হয়েছে, আপনি তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন আর না করেন সমান কথা। আপনি যদি তাদের জন্য সত্তরবারও ক্ষমা প্রার্থনা করেন, তবুও আল্লাহ তাদের ক্ষমা করবেন না। কিন্তু নবী (সা.) বললেন, আমাকে তো ক্ষমা প্রার্থনা করার এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে, নিষেধ তো করা হয়নি। আমি তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করব। এভাবেই তিনি আবদুল্লাহ ইবনে উবাইয়ের জানাজা পড়ালেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আলোচ্য আয়াতটি নাজিল হয়।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী
৮৩। ফাইর্ রাজাআ'কা ল্লা-হু ইলা- ত্বা-য়িফাতিম্ মিনহুম ফাছ্তা'যানূকা লিলখুরূজি ফাক্বুল্ লান তাখ্রুজূ মায়ি'ইয়া আবাদাওঁ ওয়ালান তুক্বা-তিলূ মায়ি'ইয়া আ'দুওয়্যা-; ইন্নাকুম রাদ্বীতুম বিলক্বুঊ'দি আওয়্যালা মার্রাতিন ফাক্বউ'দূ মাআ'ল খা-লিফীন।
৮৪। ওয়ালা- তুসালি্ল আ'লা- আহাদিম্ মিনহুম্ মা-তা আবাদাওঁ ওয়ালা-তাক্বুম আ'লা- ক্বাবরিহী; ইন্নাহুম কাফারূ বিল্লা-হি ওয়ারাসূলিহী ওয়ামা-তূ ওয়াহুম ফা-ছিক্বূন।
[সুরা : সুরা আত্ তাওবা, আয়াত : ৮১-৮৪]
অনুবাদ : ৮১. যাদের তাবুক অভিযানের সময় পেছনে পড়ে থাকতে দেওয়া হয়েছিল, তারা আল্লাহর রাসুলের ইচ্ছার বিরুদ্ধে নিজেদের ঘরে বসে থাকতে পেরে খুশি হয়ে গেল। আল্লাহর পথে নিজেদের জান-মাল দিয়ে জিহাদ করা তাদের কাছে নাপছন্দ ছিল। তারা বলছিল, এই তীব্র গরমে বাইরে বের হয়ো না। হে নবী, আপনি তাদের বলুন, জাহান্নামের আগুন তো আরো তীব্র গরম। আহা! তারা যদি বুঝতে পারত।
৮২. সুতরাং তারা একটু হেসে নিক, কারণ তাদের অনেক কাঁদতে হবে। এটা হচ্ছে তাদের কৃতকর্মের প্রতিফল।
৮৩. (হে নবী) এরপর আল্লাহ আপনাকে তাদের কোনো দলের কাছে ফিরিয়ে আনলে এবং তারা আপনার কাছে কোনো জিহাদে বের হওয়ার অনুমতি চাইলে তাদের বলে দেবেন, তোমরা আর কখনো আমার সঙ্গে বের হতে পারবে না এবং আমার দলভুক্ত হয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে পারবে না। তোমরা তো প্রথমবার বসে থাকতে পছন্দ করেছিলে। সুতরাং এখনো অক্ষমদের সঙ্গে বসে থাকো।
৮৪. (হে নবী) তাদের মধ্যে কেউ মারা গেলে আপনি তার উদ্দেশে জানাজার নামাজ পড়বেন না এবং তাদের কবরের পাশেও দাঁড়াবেন না। তারা তো আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের অবাধ্য হয়েছে এবং তারা পাপাচারী অবস্থায় মারা গেছে।
ব্যাখ্যা : ৮১ নম্বর আয়াতে তাবুক অভিযানের সময় মুনাফিকরা যে আচরণ করেছিল, এর বর্ণনা দিয়ে তাদের দুর্ভাগ্যের জন্য আফসোস করা হয়েছে। ৮৩ নম্বর আয়াতে কাফির ও মুনাফিকদের সুস্পষ্টভাবে পরিহার করে চলার নীতি গ্রহণ করে মুসলমানদের নিজস্ব শক্তির ওপর দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। তারা যদি এবার এসে মুসলমানদের দলভুক্ত হওয়ার চেষ্টা করে, তবুও তাদের যেন আর গ্রহণ করা না হয়, সে জন্য সে ব্যাপারে রাসুলের ওপর সুস্পষ্ট নির্দেশ জারি করা হয়েছে। ৮৪ নম্বর আয়াতে শানেনুজুল সম্পর্কে সহিহ বুখারি ও অন্যান্য গ্রন্থে বর্ণিত আছে যে মুনাফিকদের নেতা আবদুল্লাহ ইবনে উবাইয়ের ছেলে আবদুল্লাহ ছিলেন একজন খাঁটি মুসলমান। বিভিন্ন ক্ষেত্রে আবদুল্লাহ ইবনে উবাইয়ের মুনাফিকি প্রকাশ পেলেও সে যেহেতু নিজেকে মুসলিম বলে দাবি করত, তাই তার সঙ্গে বাহ্যত মুসলিমদের মতোই আচরণ করা হতো। সেই ব্যক্তি মারা যাওয়ার পর তার ছেলে আবদুল্লাহ নবী (সা.)-এর কাছে এসে তাঁকে জানাজা পড়ানোর জন্য অনুরোধ জানালেন। নবী (সা.) ছিলেন উম্মতের জন্য দয়ার সাগর। তিনি অনুরোধ গ্রহণ করলেন এবং জানাজা পড়ানোর জন্য চলে গেলেন। এদিকে হজরত ওমর (রা.) এই মুনাফিক সর্দারের জানাজা না পড়ানোর জন্য রাসুল (সা.)-এর প্রতি অনুরোধ জানালেন এবং এর সপক্ষে পূর্ববর্তী ৮০ নম্বর আয়াতের বরাত দেন। যাতে বলা হয়েছে, আপনি তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন আর না করেন সমান কথা। আপনি যদি তাদের জন্য সত্তরবারও ক্ষমা প্রার্থনা করেন, তবুও আল্লাহ তাদের ক্ষমা করবেন না। কিন্তু নবী (সা.) বললেন, আমাকে তো ক্ষমা প্রার্থনা করার এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে, নিষেধ তো করা হয়নি। আমি তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করব। এভাবেই তিনি আবদুল্লাহ ইবনে উবাইয়ের জানাজা পড়ালেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আলোচ্য আয়াতটি নাজিল হয়।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী
No comments