দখলদারদের সন্ত্রাস আর পুলিশের গাফিলতির বিহিত হোক-চা-বাগানে জোড়া খুন

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে চা-বাগানের মালিকানা নিয়ে সংঘর্ষে দুজন নিহত হওয়ার দায় কার? পুলিশ উপস্থিত ছিল, সমঝোতা বৈঠক চলছিল—তার মধ্যে গুলিতে দুজন মানুষ নিহত হন কীভাবে? স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের নেতৃত্বে একটি সশস্ত্র দল হামলা চালালেও ঘটনাস্থলে গ্রেপ্তারের জন্য কাউকে পেল না পুলিশ? হত্যার দায় হত্যাকারীদের, কিন্তু হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারা, ঘাতক দলের নির্বিঘ্নে সরে পড়তে পারার দায় নিশ্চয়ই স্থানীয় পুলিশের।


হত্যাকাণ্ডের পর বিবদমান চা-বাগানে তারা ১৪৪ ধারা জারি করতে পারল; সংঘাতের আশঙ্কায় আগেই যদি তা করা হতো, তাহলে সম্ভবত প্রাণহানি ও রক্তপাত এড়ানো যেত। এই গাফিলতির দায়ও পুলিশকেই নিতে হবে।
কমলগঞ্জের নন্দরানী চা-বাগানের সত্যিকার স্বত্বাধিকারী কে, তা নিরূপিত হবে আদালতে। কিন্তু মালিকানার নতুন দাবিদার পুরোনো দাবিদারকে হটাতে আইনের পথে গেলেন না। তিনি পাঠালেন ৮০০ লোকের দাঙ্গাবাজ দলকে। অবাক হওয়ার কিছু নেই, সংঘর্ষ ও হত্যাকাণ্ড ঘটেছে প্রকাশ্যে, পুলিশের চোখের সামনে। তাই কমলগঞ্জ থানার এএসপি এবং ওসির তরফে, ‘হঠাৎ করে কীভাবে যে কী হয়ে গেল, তা বোঝা যায়নি’—এমন বক্তব্য কেবল অগ্রহণযোগ্যই নয়, স্পষ্টতই দায়িত্বজ্ঞানহীনতা। বিপুলসংখ্যক লোক প্রকাশ্যে বাইরে থেকে হামলার প্রস্তুতি নিয়ে রওনা হওয়ার সময়ই পুলিশ তাদের বিরত করতে পারত। এসব ক্ষেত্রে যা হয়, সংঘাত ঠেকাতে জারি করা হয় ১৪৪ ধারা। পুলিশ সেটাও করেনি, উপরন্তু সংঘাত শুরু হওয়ার পর তা থামাতে ব্যর্থ হয়েছে।
প্রায়ই দেখা যাচ্ছে, ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরাসরি দখলদারিতে নিয়োজিত হচ্ছেন অথবা অন্যের দখলদারি কায়েমে বলপ্রয়োগের কাজটি করে দিচ্ছেন। কাজটা রাজনৈতিক নয়, অপরাধমূলক। তাই মৌলভীবাজারের নন্দরানী চা-বাগানে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের দায় দলীয়ভাবে স্থানীয় আওয়ামী লীগ এবং প্রশাসনিকভাবে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে নিতেই হবে।
আমরা এ ঘটনার হোতাদের গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি করা এবং দায়িত্বে অবহেলার জন্য প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের জবাবদিহিপূর্বক শাস্তির দাবি করছি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েরও দায়িত্ব রয়েছে ঘটনাটির সুষ্ঠু তদন্তের ব্যবস্থা করার। রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে ঠিক করতে হবে, আর কত অপরাধের হোতারা দলটিকে তাদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে?

No comments

Powered by Blogger.