সেনাদের পিঠ চাপড়ে শান্তির হাত বাড়ালেন গিলানি

সেনাবাহিনীর প্রধান ও সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানের বিরুদ্ধে সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলার কয়েক দিনের মধ্যেই সুর পাল্টে সেই সেনাবাহিনীর পিঠ চাপড়ে দিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানি। দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য সেনাবাহিনীর প্রশংসা করলেন তিনি।


বিশ্লেষকেরা বলছেন, সেনাবাহিনীর প্রশংসার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী মূলত তাদের দিকে শান্তির হাত বাড়িয়ে দিলেন। যুক্তরাষ্ট্রকে পাঠানো বিতর্কিত গোপন চিঠির বিষয়টি ফাঁস হওয়ার পর থেকে সেনাবাহিনীর সঙ্গে তাঁর সরকারের উত্তেজনার পারদ যে ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছিল, তা নিচে নামিয়ে আনার চেষ্টাই করেছেন গিলানি।
গত শনিবার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী গিলানি বলেন, ‘আমাদের সরকার ও পার্লামেন্ট এবং সবকিছুর ওপর দেশের জনগণ আমাদের সাহসী সেনাবাহিনী এবং নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের পেছনে আছে।’
দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা নিয়ে কোনো আপস করার সুযোগ নেই জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘দেশের সব প্রতিষ্ঠানকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে তাদের দায়িত্ব পালনের সুযোগ দেওয়াই আমার সরকারের নীতি।’
বৈঠকে সেনাবাহিনীর প্রধানসহ বিভিন্ন বাহিনীর প্রধান ও মন্ত্রিপরিষদের জ্যেষ্ঠ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। তবে লক্ষ করার বিষয় হলো সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের প্রধান আহমেদ সুজা পাশার অনুপস্থিতি। তিনি প্রতিরক্ষাবিষয়ক সংসদীয় কমিটির সদস্য না হলেও অন্য সময় সাধারণত তাঁকে বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। আইএসআইয়ের প্রধানের জায়গায় বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বেসামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর প্রধান।
যে গোপন চিঠির জের ধরে সরকার ও সেনাবাহিনীর মধ্যে এই দ্বন্দ্বের সূত্রপাত, তার কেন্দ্রস্থলেই ছিলেন আইএসআইয়ের প্রধান সুজা। সুপ্রিম কোর্টের একটি কমিশন গোপন চিঠির তদন্ত করছে। কিন্তু এর পরও বিষয়টি জাতীয় নিরাপত্তা-সম্পর্কিত বলে গুরুত্ব দিয়ে তদন্তের জন্য সুপ্রিম কোর্টের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন সেনাপ্রধান জেনারেল আশফাক পারভেজ কায়ানি এবং আইএসআইয়ের প্রধান সুজা। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী বলে বসেন, সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়ে সেনাপ্রধান ও আইএসআইয়ের প্রধান সংবিধান লঙ্ঘন করছেন। এর পর থেকে দ্রুত পাল্টাতে থাকে পরিস্থিতি।
এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার জন্যই শনিবার সেনাবাহিনীর প্রতি শান্তির হাত বাড়িয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী গিলানি। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্য পরিষ্কার বোঝা যায় যখন দেখা যায়, প্রতিরক্ষাবিষয়ক সংসদীয় কমিটির বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনী বিবৃতি রেকর্ড করে টেলিভিশনে প্রচার করা হচ্ছে। সাধারণত এই কমিটিতে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য রেকর্ড বা প্রচার করা হয় না।
প্রধানমন্ত্রী ও সেনাপ্রধানের সাক্ষাতের আগেই সম্ভবত শান্তির ক্ষেত্র প্রস্তুত করে দেয় প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারির সঙ্গে কায়ানির বৈঠক। এএফপি।

No comments

Powered by Blogger.