দেশের ভেতরে দেশ

দীর্ঘদিনের বন্ধু লিওকে সঙ্গে নিয়ে আড্রিয়াটিক দ্বীপ ছাড়লেন ম্যারিনো নামে এক সাহসী পাদ্রি। বেরিয়ে পড়লেন কাজের সন্ধানে। চলতে চলতে উপস্থিত হলেন রিমিনি শহরে। কিন্তু কী করবেন এ অপরিচিত শহরে? পরে গড়ে তোলেন একটি ছোট্ট গির্জা। শুরু হলো তাদের পথচলা। সান ম্যারিনো নামের দেশটির ইতিহাস এমনই। এ এক মজার দেশ। মূলত অবস্থানগত কারণেই দেশটি মজার। কারণ, এর চারদিকেই ইতালির ভূখণ্ড, মাঝখানে হঠাৎ জেগে ওঠা সান ম্যারিনো।


ইংরেজিতে এমন দেশ এনক্লেভ অর্থাৎ দেশের মধ্যে দেশ নামে পরিচিত। সান ম্যারিনোর অবস্থান এ্যাপেনাইন পর্বতমালার এক ক্ষুদ্রাংশে। আর ইতালির ক্ষুদ্রতম দেশের তালিকায় এটি তৃতীয় এবং ইউরোপের সবচেয়ে কম জনসংখ্যাসম্পন্ন দেশের মধ্যে অন্যতম।
সরকারি কাগজপত্র অনুযায়ী, দেশটির প্রতিষ্ঠাকাল ৩০১ খ্রিস্টাব্দের ৩ সেপ্টেম্বর। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দেশটি বিচ্ছিন্ন নিয়ম-কানুনের মধ্য দিয়ে চললেও পঞ্চম শতকের মাঝামাঝি সেখানকার জনসাধারণ সংঘবদ্ধ হয়। তৈরি করে নতুন নিয়ম-কানুন। ফলে শিগগিরই তারা উন্নতি করতে থাকে। এরপর কেটে যায় বহুকাল। দেশটি পোপ শাসনের অধীনে থাকলেও দীর্ঘকাল ছিল একটি স্বাধীন সংবিধান।
সান ম্যারিনো সম্পর্কে বিশেষ খবর হলো, এটিকে সবচেয়ে পুরাতন প্রজাতান্ত্রিক দেশ হিসেবে গণ্য করা হয়। মজার ব্যাপার হলো, ইতালির কোনো শাসকই এ 'দেশের ভেতরে দেশ'টি ইতালির সঙ্গে একীভূত করার চেষ্টা করেননি। এমনকি নেপোলিয়ন বোনাপার্টও এ প্রজাতন্ত্রকে বিশেষ মর্যাদায় দেখতেন আর বলতেন, এটা একটা মডেল প্রজাতন্ত্র। তাছাড়া উনিশ শতকে ইতালির একত্রীকরণ প্রক্রিয়া থেকেও দেশটিকে বাদ রাখা হয়!
১৬৩১ সালে পোপ কর্তৃক এক অধ্যাদেশবলে দেশটি পুরোপুরি স্বাধীনতা লাভ করে। আর সান ম্যারিনো এমন একটি দেশ, যেখানে ১৯৪৫ সালে জনসাধারণের সর্বাত্মক অংশগ্রহণে নির্বাচিত হয় একটি সমাজতান্ত্রিক সরকার।
সমুদ্দুরের আদর আর পাহাড়ঘেরা সবুজ সুন্দর ছোট্ট এই দেশটি ইতালির মানুষের কাছে খুবই প্রিয়। কারণ, দেশটি তাদের অবসর যাপনের প্রিয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম। ফলে দেশটির জাতীয় আয়ের অর্ধেকটাই আসে পর্যটন খাত থেকে।
আশরাফুল আলম মিলন

No comments

Powered by Blogger.