ডিজিটাল বাংলাদেশের এনালগ আমলা
পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী বিএনপি দেশব্যাপী রোডমার্চ করছে। ১/১১ পরবর্তী সময়ের ছিন্নভিন্ন বিএনপি অনেক দিন ধরেই নিজেদের গুছিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে, মাঝেমধ্যেই এমন ইঙ্গিত পাওয়া যায়। ইন্টারনেটে সরাসরি লংমার্চের সম্প্রচার বিএনপির এমনই একটি ভালো উদ্যোগ ছিল। তারা বিএনপিলাইভ নামের একটি ওয়েবসাইট থেকে সিলেট অভিমুখে খালেদা জিয়ার লংমার্চ সরাসরি দেখিয়েছে।
দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা বিএনপির নেতা-কর্মীরা ছাড়াও সাধারণ মানুষ ইন্টারনেটে এই লংমার্চটি দেখতে পেয়েছে। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, খালেদা জিয়ার দ্বিতীয়বার লংমার্চের আগেই রহস্যজনকভাবে এ ওয়েবসাইটটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, সরকার ইচ্ছা করেই ওয়েবসাইটটি বন্ধ করে দিয়েছে। এ বিষয়ে সরকারের নীরবতা বিএনপির অভিযোগকেই প্রতিষ্ঠিত করে। আমরা ঠিক জানি না, সরকারের এই আত্মঘাতী সিদ্ধান্তগুলো কারা নেয়। আজকের ইন্টারনেট যুগে ওয়েবসাইট বন্ধ করে দিয়ে সম্প্রচার বন্ধ করা যায় না, এ ধরনের বেসিক কথা যারা জানে না, তারা কোন বুদ্ধিতে সরকারের পক্ষ থেকে ইন্টারনেট ব্যবস্থাপনা করে? পাঠকের অবগতির জন্য জানানো প্রয়োজন যে বিএনপিলাইভ ওয়েবসাইটটি বন্ধ হওয়ার কিছুক্ষণ পরই বিএনপির পক্ষ থেকে আরো একাধিক ওয়েবসাইট তৈরি করে লংমার্চ সম্প্রচার করা হয়েছে। লাভের মাঝে লাভ যতটুকু হয়েছে, ইন্টারনেট সম্পর্কে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অজ্ঞানতাই শুধু প্রকাশিত হয়েছে।
বর্তমান সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ তৈরির স্লোগান দিয়ে ক্ষমতায় এসেছে। ল্যাপটপের হার্ডওয়্যার তৈরির মতো সস্তা চমক ছাড়া ডিজিটাল বাংলাদেশ তৈরিতে তাদের কোনো কার্যকর উদ্যোগ চোখে পড়ে না। নিজেদের লোকজন দিয়ে সরকারি ওয়েবসাইটগুলো নির্মাণ করায় সেগুলোর গ্রাফিঙ্, ব্যবহারোপযোগিতা সব কিছুই প্রশ্নের সম্মুখীন। এর বাইরে যদি সরকার ওয়েবসাইট নিয়ন্ত্রণ করে সেটা জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়াই শুধু তৈরি করবে, সরকারের কোনো উপকারে আসবে না।
স্মরণ করা যেতে পারে যে এর আগেও সরকার ইউটিউব ও ফেসবুক বন্ধ করার মতো হাস্যকর ছেলেমানুুুষি উদ্যোগ নিয়েছিল এবং পরে বাধ্য হয়ে সেগুলো উন্মুক্ত করে দিতে হয়েছে। ধারণা করা হয়, দেশে প্রায় এক কোটি মানুষ ব্যক্তিগত কম্পিউটার এবং মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ইন্টারনেটের অবাধ তথ্যপ্রবাহে যুক্ত। বিশেষ করে তরুণদের জীবন এখন অনেকটাই ইন্টারনেট-নির্ভর। এই সময়ে এসে জনপ্রিয় ওয়েবসাইটগুলো বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া সরকারি এনালগ আমলারা দুর্নাম কুড়ানো ছাড়া কোনো কাজে আসছে না। সরকারের উচিত হবে বিরুদ্ধ মতকে গলাটিপে ধরার এসব ন্যক্কারজনক উদ্যোগ বাদ দিয়ে আধুনিক মানুষের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা। নইলে শেষ বিচারে ডিজিটাল বাংলাদেশ নামের স্লোগান সরকারের এসব উদ্যোগে হাস্যাস্পদ হয়েই উঠবে।
No comments