হুবহু-বর্তমান সরকার যুক্তরাষ্ট্রের ফর্মুলা অনুযায়ী দেশ পরিচালনা করছে

রাজনীতিক মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক। দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির দিকদর্শন নিয়ে কথা বলেছেন আমাদের সঙ্গে দেশের গ্যাস ক্ষেত্র ইজারা দেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করতে যাচ্ছে সরকার। অন্যদিকে ধারাবাহিকভাবে চলছে সরকারের এসব জাতীয় স্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে মিছিল, মিটিং, লংমার্চ।


হিসাব অনুযায়ী দেশীয় প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও সরকারের এমন সিদ্ধান্তকে কিভাবে বিশ্লেষণ করবেন? দেশের সম্ভাব্য গ্যাস ক্ষেত্র অন্য দেশের হাতে তুলে দেওয়ার এ যড়ষন্ত্র প্রতিহত করতে হবে। আমরা চাই না সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও দেশের সম্ভাব্য গ্যাস ক্ষেত্রগুলো বিদেশিদের কাছে ইজারা দেওয়া হোক। যদি গ্যাস ক্ষেত্রগুলো অন্যের কাছে তুলে দেওয়া হয়, তাহলে দেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হবে। লাভবান হবে অন্য দেশ। তাই সরকারকে বলব, গ্যাস ক্ষেত্রগুলো ইজারা দেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বানের প্রক্রিয়া বাতিল করতে।

নিজামী, মুজাহিদ, দেলাওয়ার স্বাধীনতাবিরোধী নয় বলে সরাসরি ঘোষণার মাধ্যমে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া প্রকারান্তরে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিপক্ষ শিবিরে অবস্থান নিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়ার সফলতা ও দেশের ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি কোন দিকে?

সরকারের উচিত, যত দ্রুত সম্ভব আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দোসর রাজাকার, আল বদর ও আল শামসদের বিচারপ্রক্রিয়া শেষ করা। এখানে প্রধান বিরোধী দলনেতা খালেদা জিয়া কী বললেন সেটা বড় বিষয় নয়। তবে এ ইস্যুটিকে নিয়ে কখনোই রাজনীতি করা উচিত নয়। আমি মনে করি, এসব বিষয় রাজনীতির ঊধর্ে্ব। তবে দ্রুত বিচারপ্রক্রিয়া শেষ করা সরকারের দায়িত্ব। ১৯৭১ সালে যারা আমাদের মা-বোনদের ইজ্জত নিয়েছে, দেশ স্বাধীন হওয়ার ঠিক আগে যারা আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবী হত্যা করে দেশকে মেধাশূন্য করার চক্রান্ত করেছে, তাদের বিচারের জন্য গঠিত ট্রাইব্যুনাল যথেষ্ট শক্তিশালী নয়। এসব ট্রাইব্যুনাল আর্থিকভাবে স্বাধীনও নয়। জনবলের অভাবও রয়েছে। এ ছাড়া এই বিচারের প্রক্রিয়াকে আরো স্বচ্ছ করলে কারো কোনো প্রশ্ন জাগবে না।

জামায়াত নেতাদের রাষ্ট্রবিরোধী উল্লম্ফন কর্মকাণ্ড বেড়েই চলেছে। সম্প্রতি রাজশাহী জেলা জামায়াতের নেতা মোহাম্মদ ওবাইদুল্লাহ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মারার হুমকি দিয়েছেন। জামায়াত নেতার এই ঔদ্ধত্যকে কিভাবে দেখছেন?

জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার জন্য আমরা সব সময় বলে এসেছি। কিন্তু বর্তমান সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ওই দলটিকে নিষিদ্ধ না করে সাংবিধানিকভাবে রাজনীতি করার স্বীকৃতি দিয়েছেন। এখন এর ফল শেখ হাসিনাকে ভোগ করতেই হবে। তিনি এরই ফল ভোগ করছেন। এ দেশে প্রথমবারের মতো জামায়াতে ইসলামীকে রাজনীতির সুযোগ করে দিয়েছেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মেজর জিয়াউর রহমান। আর দ্বিতীয়বার তাদের রাজনীতির সুযোগ করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা কৌশল নিয়েছিলেন জামায়াতে ইসলামীকে সঙ্গে নিয়ে রাজনীতি করার। ১৯৭২ সালের সংবিধানের ৩৮ ধারা অনুযায়ী জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে জামায়াতে ইসলামীসহ ধর্মভিত্তিক দলগুলোকে রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছেন। এই দলটিকে আবার নিষিদ্ধ করতে হবে। বর্তমান সরকার যুক্তরাষ্ট্রের ফর্মুলা অনুযায়ী দেশ পরিচালনা করছে। আর এই জামায়াতে ইসলামী যুক্তরাষ্ট্রের প্রিয়ভাজন একটি দল। সরকারের উচিত, যুক্তরাষ্ট্রের কথামতো না চলে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করা। এটি করতে না পারলে এ দেশে এসব দলের ঔদ্ধত্য চলতেই থাকবে। দেশ পরিণত হবে একটি জঙ্গিবাদ রাষ্ট্রে।

বৃহৎ বিরোধী দলের বিভিন্ন ইস্যুতে আন্দোলনের কর্মসূচি ও সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ধারাবাহিক ব্যর্থতা রাজনৈতিক গতিমুখ কোন দিকে ধাবিত হচ্ছে বলে ভাবছেন?

বিএনপি আন্দোলন করছে ঠিকই। কিন্তু জনগণের দোরগোড়ায় তারা কি পেঁৗছাতে পারছে? পারছে না। কারণ আওয়ামী লীগ খারাপ। কিন্তু বিএনপি আরো বেশি খারাপ। জনগণ কিন্তু বিএনপির বিগত শাসন আমলের কথা ভুলে যায়নি। তাই জনগণ গরম উনুন থেকে জ্বলন্ত উনুনে ঝাঁপ দিতে চায় না। এ কারণেই বিএনপি আন্দোলনের ডাক দিলেও সাড়া পাচ্ছে না। তা ছাড়া বিএনপি এখন একটি খণ্ডবিখণ্ড দল। তাদের নেতা-কর্মীরা যেখানেই যাচ্ছেন, সেখানে কোন্দল আর হাতাহাতি। তাই জনগণ কোন দিকে যাবে বুঝতে পারছে না।


দুর্নীতি, ত্রুটিযুক্ত ব্যবস্থাপনাসহ নানা সমস্যায় মুখ থুবড়ে পড়েছে জাতীয় উন্নয়ন। বেড়ে চলেছে সামাজিক বৈষম্য, সংস্কৃতি ও সাংস্কৃতিক বিপর্যয়_এমন অবস্থায় দেশের সরকার কাঠামো কেমন হওয়া দরকার?

সরকারের উচিত, জনগণের কল্যাণ হয় এমন কাজ হাতে নেওয়া। দেশের রাস্তাঘাটের অবস্থা বেহাল। অন্যান্য কিছু ক্ষেত্রেও সরকার পিছিয়ে পড়েছে। এর মানে এই নয় যে কোনো কিছুই হচ্ছে না। তবে সামাজিক বৈষম্য দূর করার জন্য সরকারের নীতি পরিবর্তন করতে হবে। সাধারণ মানুষের কল্যাণে কাজ করতে হবে। সাধারণ মানুষ যাতে সহজেই শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসহ সব সুযোগ-সুবিধা পায় তা নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষাকে কখনোই বাণিজ্যিকীকরণ করা যাবে না। সামাজিক বৈষম্যের প্রধান একটি কারণ দেশের নানামুখী শিক্ষাব্যবস্থা। আজকাল টাকা থাকলেই অনেকে উচ্চশিক্ষা কিনে নিতে পারছে। অন্যদিকে অনেক মেধাবী ছাত্র টাকার অভাবে পড়ালেখা করতে পারছে না। রাষ্ট্রের উচিত, সবার জন্য সর্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা।
সাক্ষাৎকার গ্রহণে : সফেদ সিরাজ

No comments

Powered by Blogger.