জাতিসংঘ দিবস-বিশ্ব-অভিভাবকের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
বনফুলের ছোটগল্প। বাঘের বড় উপদ্রব। মানুষ অস্থির হয়ে উঠল। শেষে মানুষ বিধাতার কাছে আবেদন করল। ভগবান, বাঘের হাত থেকে আমাদের বাঁচাও। বিধাতা বললেন, আচ্ছা। কিন্তু পরেই বাঘরা এসে বিধাতার কাছে নালিশ জানাল, মানুষের অত্যাচারে শিকার করতে পারছি না। একটা ব্যবস্থা করুন। বিধাতা বললেন, আচ্ছা। নেড়ার মা বলল, বিধাতা, আমার নেড়ার যেন একটা টুকটুকে বউ হয়। বিধাতা বললেন, আচ্ছা।
হরিহর ভট্টাচার্য মামলা করতে যাওয়ার সময় বিধাতাকে বললেন, শালা ভাইপোকে দেখে নিতে চাই, তুমি সহায় হও। বিধাতা বললেন, আচ্ছা।...অতঃপর বিধাতা ব্রাহ্মর কাছ থেকে একটু খাঁটি সরিষার তেল নিলেন। আজও নাকি বিধাতার ঘুম ভাঙেনি। বিশ্বের ১৯৩টি দেশের অভিভাবকের দায়িত্ব পালনকারী জাতিসংঘের দশা বনফুলের বিধাতার মতো।
সব ক্ষেত্রেই জাতিসংঘ একটি নীরব দর্শক। বিশ্বনিরাপত্তা, অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন, মানবাধিকার রক্ষা ও বিশ্বশান্তির লক্ষ্যে ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে গঠিত হয় সব জাতির একটি সংস্থা জাতিসংঘ। সে বছরই ২৬ জুন স্বাক্ষরিত হয় জাতিসংঘ সনদ। সর্বশেষ জুলাই ২০১১ দক্ষিণ সুদানের অংশগ্রহণে বর্তমানে এ পরিবারের সদস্যসংখ্যা ১৯৩। পৃথিবীর মানুষের ক্ষুধা, দারিদ্র্য আর অশান্তির ভাষা বোঝার প্রত্যয় নিয়ে গঠিত জাতিসংঘ পরিচালিত হয় আরবি, চীনা, ইংরেজি, ফরাসি, রুশ ও স্প্যানিশ ভাষায়। কিন্তু প্রতিষ্ঠার ৬৬ বছর পরও সংস্থাটি বিশ্বের সর্বজনীন ভাষা বুঝতে আজ পরিপূর্ণ ব্যর্থ। স্থায়ী সদস্য_চীন, ফ্রান্স, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং অস্থায়ী সদস্য_বসনিয়া-হার্জেগোভিনা, ব্রাজিল, কলম্বিয়া, গ্যাবন, জার্মানি, ভারত, লেবানন, নাইজেরিয়া, পর্তুগাল, দক্ষিণ আফ্রিকাকে নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদ গঠিত হলেও ৎেবধঃ চড়বিৎ টহধহরসরঃু বা ঠবঃড় নামের একটি শব্দের আবর্তে আটকে আছে জাতিসংঘের সব কার্যক্রম। কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য নিরাপত্তা পরিষদের সব স্থায়ী সদস্যসহ মোট ৯টি ভোট আবশ্যক। আর সনদের এই ধারার সুযোগে স্থায়ী একটি সদস্যের ভোট ১৯২টি ভোটের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। একটি ভেটো ভোটেই আটকে আছে বিশ্বের গণমানুষের অধিকার। সাধারণ সভার সিদ্ধান্ত অবহেলিত হচ্ছে একক ক্ষমতায়।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক সিটিতে সদর দপ্তর নিয়ে পরিচালিত জাতিসংঘের মূল কাজ আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখা, সমঝোতার ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক আপত্তির নিষ্পত্তি, অস্ত্র ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ, শান্তির প্রতিবন্ধকতা নির্ধারণ ও প্রতিকার, অর্থনৈতিক সাহায্যের আবেদন ও শান্তিরক্ষী বাহিনীর সাহায্যে আগ্রাসন বন্ধকরণ, সদস্য দেশগুলোতে ট্রাস্টি হিসেবে কাজ করা এবং আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারক নিয়োগ, যার কোনোটিরও আংশিক সফলতা অর্জিত হয়নি আজও। জাতিসংঘের সাধারণ সভায় যুক্তরাষ্ট্র ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি না দিতে কড়া হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বিশ্বের কাছে স্পষ্ট করেছে জাতিসংঘের অঙ্গসংগঠন সাধারণ সভা, নিরাপত্তা পরিষদ, অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ, সেক্রেটারিয়েট (শিক্ষা, তথ্য ও সেবা প্রদান কার্যক্রম), আন্তর্জাতিক আদালত ও ট্রাস্টিশিপ পরিষদ পরিচালনায় জাতিসংঘ কতটা অসহায়। জাতিসংঘের অসহায়ত্বের কারণে নিরাপত্তার আকুতি বারবার জাতিসংঘের দেয়ালের কংক্রিটে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। বিনিময়ে কোনো সবুজ বাতি জ্বলার প্রতীক্ষায় থাকে জাতিসংঘ। পৃথিবীতে সবুজ বাতি জ্বালানোর প্রত্যয় নিয়ে গঠিত প্রতিষ্ঠানটি বাতি জ্বালানোর বোতাম দিয়ে রেখেছে অন্যের হাতে। জাতিসংঘের কাছে সারা বিশ্বের মানুষের সীমাহীন প্রত্যাশা। সে সীমাহীন প্রত্যাশা হয়তো এক দিনে পূরণ সম্ভব নয়, কিন্তু আপাতত বিশ্বের সব দেশের সত্যিকারের অভিভাবক হয়ে উঠুক প্রতিষ্ঠানটি।
উমর ফারুক
সব ক্ষেত্রেই জাতিসংঘ একটি নীরব দর্শক। বিশ্বনিরাপত্তা, অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন, মানবাধিকার রক্ষা ও বিশ্বশান্তির লক্ষ্যে ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে গঠিত হয় সব জাতির একটি সংস্থা জাতিসংঘ। সে বছরই ২৬ জুন স্বাক্ষরিত হয় জাতিসংঘ সনদ। সর্বশেষ জুলাই ২০১১ দক্ষিণ সুদানের অংশগ্রহণে বর্তমানে এ পরিবারের সদস্যসংখ্যা ১৯৩। পৃথিবীর মানুষের ক্ষুধা, দারিদ্র্য আর অশান্তির ভাষা বোঝার প্রত্যয় নিয়ে গঠিত জাতিসংঘ পরিচালিত হয় আরবি, চীনা, ইংরেজি, ফরাসি, রুশ ও স্প্যানিশ ভাষায়। কিন্তু প্রতিষ্ঠার ৬৬ বছর পরও সংস্থাটি বিশ্বের সর্বজনীন ভাষা বুঝতে আজ পরিপূর্ণ ব্যর্থ। স্থায়ী সদস্য_চীন, ফ্রান্স, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং অস্থায়ী সদস্য_বসনিয়া-হার্জেগোভিনা, ব্রাজিল, কলম্বিয়া, গ্যাবন, জার্মানি, ভারত, লেবানন, নাইজেরিয়া, পর্তুগাল, দক্ষিণ আফ্রিকাকে নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদ গঠিত হলেও ৎেবধঃ চড়বিৎ টহধহরসরঃু বা ঠবঃড় নামের একটি শব্দের আবর্তে আটকে আছে জাতিসংঘের সব কার্যক্রম। কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য নিরাপত্তা পরিষদের সব স্থায়ী সদস্যসহ মোট ৯টি ভোট আবশ্যক। আর সনদের এই ধারার সুযোগে স্থায়ী একটি সদস্যের ভোট ১৯২টি ভোটের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। একটি ভেটো ভোটেই আটকে আছে বিশ্বের গণমানুষের অধিকার। সাধারণ সভার সিদ্ধান্ত অবহেলিত হচ্ছে একক ক্ষমতায়।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক সিটিতে সদর দপ্তর নিয়ে পরিচালিত জাতিসংঘের মূল কাজ আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখা, সমঝোতার ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক আপত্তির নিষ্পত্তি, অস্ত্র ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ, শান্তির প্রতিবন্ধকতা নির্ধারণ ও প্রতিকার, অর্থনৈতিক সাহায্যের আবেদন ও শান্তিরক্ষী বাহিনীর সাহায্যে আগ্রাসন বন্ধকরণ, সদস্য দেশগুলোতে ট্রাস্টি হিসেবে কাজ করা এবং আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারক নিয়োগ, যার কোনোটিরও আংশিক সফলতা অর্জিত হয়নি আজও। জাতিসংঘের সাধারণ সভায় যুক্তরাষ্ট্র ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি না দিতে কড়া হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বিশ্বের কাছে স্পষ্ট করেছে জাতিসংঘের অঙ্গসংগঠন সাধারণ সভা, নিরাপত্তা পরিষদ, অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ, সেক্রেটারিয়েট (শিক্ষা, তথ্য ও সেবা প্রদান কার্যক্রম), আন্তর্জাতিক আদালত ও ট্রাস্টিশিপ পরিষদ পরিচালনায় জাতিসংঘ কতটা অসহায়। জাতিসংঘের অসহায়ত্বের কারণে নিরাপত্তার আকুতি বারবার জাতিসংঘের দেয়ালের কংক্রিটে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। বিনিময়ে কোনো সবুজ বাতি জ্বলার প্রতীক্ষায় থাকে জাতিসংঘ। পৃথিবীতে সবুজ বাতি জ্বালানোর প্রত্যয় নিয়ে গঠিত প্রতিষ্ঠানটি বাতি জ্বালানোর বোতাম দিয়ে রেখেছে অন্যের হাতে। জাতিসংঘের কাছে সারা বিশ্বের মানুষের সীমাহীন প্রত্যাশা। সে সীমাহীন প্রত্যাশা হয়তো এক দিনে পূরণ সম্ভব নয়, কিন্তু আপাতত বিশ্বের সব দেশের সত্যিকারের অভিভাবক হয়ে উঠুক প্রতিষ্ঠানটি।
উমর ফারুক
No comments