একখানা ভাউচার by ইকবাল খন্দকার
হাসপাতাল থেকে রোগী রিলিজ দেওয়ার আগে রোগীর অভিভাবকের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয় একটি ভাউচার তথা বিলপত্র। যেখানে লেখা থাকে কোন সেবার জন্য কত টাকা বিল হয়েছে। দেখা যায়, এমন অনেক সেবার জন্য বিল নেওয়া হচ্ছে, যেগুলো আসলে কোনো সেবাই নয়। জাস্ট টাকা নেওয়ার অজুহাত।
ভবিষ্যতে এসব অজুহাত যখন আরও বাড়বে, তখন একটা ভাউচার কেমন হবে, আসুন দেখি_ যেসব বিল পরিশোধের আগে রোগীর রিলিজের কথা চিন্তাও করা যাবে না_ ডাক্তারের বিল ষ অপারেশনের ঠিক আগে ডাক্তার যেই না রোগীকে অজ্ঞান করার জন্য ইনজেকশন দিতে যাবেন, অমনি রোগী হাত-পা ছুড়তে শুরু করেছিল। এই ছুড়ে মারা হাত-পা এসে লেগেছিল ডাক্তারের পশ্চাৎদেশে। এতে ডাক্তারের বাতের ব্যথাটা আবার উঠেছে। তাকে বেশকিছু বড়ি কিনেও খেতে হয়েছে। কিন্তু কেন তিনি নিজের টাকা দিয়ে বড়ি কিনে খাবেন? হ্যাঁ, এর জন্য আপনাদের বিল হয়েছে ২৫০ টাকা।
ষ অজ্ঞান করে অপারেশন করার পর যখন কোনো চেষ্টাতেই রোগীর জ্ঞান ফিরছিল না, তখন ডাক্তারের এক সহকারী বিরাট ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন। এতটাই ভয় পেয়েছিলেন যে, তার হার্টের সমস্যাটা আবার জটিল হয়ে গিয়েছিল। তাকে বেশ কিছুক্ষণ বেডে শুয়ে থাকতে হয়েছিল। আপনাদের রোগীর কারণে যেহেতু তার এই অবস্থা হয়েছিল, সিট ভাড়াটা তো আপনাদেরই দিতে হবে। বিল ৮০০ টাকা।
ষ ডাক্তার সাহেব এত বড়মাপের একজন মানুষ হওয়া সত্ত্বেও আপনাদের রোগীকে যারপরনাই সম্মান করে কথা বলেছেন। যেমন_ যখনই রোগীর কাছে এসেছেন, জিজ্ঞেস করেছেন_ কী হেকমত সাহেব, এখন কেমন লাগছে? অথচ তিনি এভাবেও জিজ্ঞেস করতে পারতেন_ কী মিয়া, কেমন লাগতাছে? এই যে 'সাহেব' বলে সম্মান করে কথা বলা, এর সম্মানীস্বরূপ বিল দিতে হবে ৬০০ টাকা। ৫০ টাকা ডিসকাউন্ট পেতে পারেন।
ষ ডাক্তার প্রায়ই থার্মোমিটার দিয়ে দেখেছেন রোগীর গায়ে জ্বর আছে কি-না। একবার চিন্তা করে দেখেছেন তিনি কত সূক্ষ্মভাবে জ্বরটা পরীক্ষা করেছেন? অন্য ডাক্তার হলে কী করতেন? হয়তো কপালে হাত দিয়ে জ্বর পরীক্ষা করে চলে যেতেন। কিন্তু তিনি যেহেতু যন্ত্র দিয়ে দেখেছেন অতএব যন্ত্রের তো একটা খরচা আছেই। বিল হয়েছে ১০০ টাকা। তবে জ্বরের উত্তাপে থার্মোমিটার গলে গেলে বিল বেশি হতে পারত।
ষ ডাক্তার সাহেব যখনই প্রেসক্রিপশনে ওষুধের নাম বা উপদেশ লিখেছেন, এমন স্পষ্ট এবং সুন্দর অক্ষরে লিখেছেন, যা দেখে কারোই বিশ্বাস হওয়ার কথা নয় লেখাগুলো ডাক্তারের লেখা। কোনো ডাক্তারের লেখা এত সুন্দর হতে পারে_ আপনারা হয়তো কল্পনাও করতে পারেননি। লেখা সুন্দর হওয়ার কারণে লেখাগুলো বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য আরেকজনের সহায়তা নিতে হয়নি। এই যে আরামটা পেলেন, তার বিল হয়েছে ১৩৫ টাকা।
আনুষঙ্গিক বিল
ষ রোগী ভর্তির সময় কাউন্টারে ভর্তি ফি জমা দিয়ে রোগীর অভিভাবক রসিদ না নিয়েই কাউন্টার ছেড়ে চলে গিয়েছিল। কিন্তু আমরা এতটাই সৎ যে, আবার ফোন করে এনে রসিদটা তাকে বুঝিয়ে দিয়েছি। আর ফোন করতে অবশ্যই খরচ লেগেছে। আমরা যদি মোবাইল থেকে ফোন করতাম তাহলে হয়তো পালস পেতাম। টিঅ্যান্ডটি থেকে করার কারণে যেহেতু পালস পাইনি অতএব বিল হয়েছে ১৫ টাকা।
ষ রোগী ভর্তির দ্বিতীয় দিনে রোগীর এক আত্মীয় কেবিনের সামনে দিয়ে হাঁটার সময় জুতা হেঁচড়িয়ে হেঁটেছে। তার জুতার ঘষা খেয়ে বেশ ক'টা টাইলসে দাগ পড়ে গেছে। এই দাগওয়ালা টাইলসগুলো বদলিয়ে ফেলতে হবে। এর জন্য আপনাদের বিল হয়েছে ৩০০+৩০০=৬০০ টাকা। যেহেতু দুই জুতার ঘষা লেগেছে। এক জুতার ঘষা লাগলে বিল হাফ মানে ৩০০ টাকা হতে পারত।
ষ আমাদের হাসপাতালের নামের মধ্যে 'মডার্ন' শব্দটা আছে। মানে হাসপাতালটা খুবই আধুনিক। অথচ রোগীর এক আত্মীয়ের মোবাইলে রিংটোন হিসেবে এমন এক গান বাজছিল, যা অত্যন্ত ক্ষেত। আধুনিক হাসপাতালে ক্ষেত রিংটোন বাজা অবশ্যই মানহানিকর ব্যাপার। এই মানহানির ফি ৩৫০ টাকা। ফি-টা বেশকিছু ডিসকাউন্ট দিয়েই নির্ধারণ করা হয়েছে। অতএব ডিসকাউন্টের জন্য আর কোনো তদবির চলবে না।
ষ ওজন নেওয়ার সময় একটা বিষয় বেশ আতঙ্কের সঙ্গে লক্ষ্য করা গেছে। বিষয়টা হচ্ছে, আপনার রোগীর ওজন হাসপাতালের অনেক রোগীর ওজনের চেয়েই বেশি। এমন ওজনদার রোগীকে বেডে রাখতে গিয়ে আমাদের বেডের যে ক্ষতি হয়েছে, তা পূরণ হওয়ার নয়। এমনও হতে পারে, বেডটা নতুন করে মেরামত করতে হবে। এই মেরামত চার্জ পুরোটা আপনাদের কাছ থেকে নিচ্ছি না। আংশিক দেন। ৪১০ টাকা।
ষ রিলিজ নিয়ে চলে যাওয়ার সময় অনেকেই বকশিশ চাইবে। বকশিশ না দিয়ে উপায় নেই। কিন্তু সবাইকে বকশিশ দিতে গেলে আপনার হাজার দশেক টাকা খরচ হয়ে যেতে পারে। আপনার খরচ বাঁচাতেই আমাদের এই বকশিশ প্যাকেজ। আপনি শুধু একটা অ্যামাউন্ট দেবেন, আমরা এটা থেকে সবাইকে কম কম করে দিয়ে সন্তুষ্ট করব। যা আপনি কখনোই পারবেন না। তো এই অ্যামাউন্টটা হলো ৫৫০০ টাকা।
বি.দ্র. : এসব বিলের ভয়ে রোগী পালিয়ে গেলে রাস্তা থেকে ধরে এনে আবার ভর্তি করা হবে।
ষ অজ্ঞান করে অপারেশন করার পর যখন কোনো চেষ্টাতেই রোগীর জ্ঞান ফিরছিল না, তখন ডাক্তারের এক সহকারী বিরাট ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন। এতটাই ভয় পেয়েছিলেন যে, তার হার্টের সমস্যাটা আবার জটিল হয়ে গিয়েছিল। তাকে বেশ কিছুক্ষণ বেডে শুয়ে থাকতে হয়েছিল। আপনাদের রোগীর কারণে যেহেতু তার এই অবস্থা হয়েছিল, সিট ভাড়াটা তো আপনাদেরই দিতে হবে। বিল ৮০০ টাকা।
ষ ডাক্তার সাহেব এত বড়মাপের একজন মানুষ হওয়া সত্ত্বেও আপনাদের রোগীকে যারপরনাই সম্মান করে কথা বলেছেন। যেমন_ যখনই রোগীর কাছে এসেছেন, জিজ্ঞেস করেছেন_ কী হেকমত সাহেব, এখন কেমন লাগছে? অথচ তিনি এভাবেও জিজ্ঞেস করতে পারতেন_ কী মিয়া, কেমন লাগতাছে? এই যে 'সাহেব' বলে সম্মান করে কথা বলা, এর সম্মানীস্বরূপ বিল দিতে হবে ৬০০ টাকা। ৫০ টাকা ডিসকাউন্ট পেতে পারেন।
ষ ডাক্তার প্রায়ই থার্মোমিটার দিয়ে দেখেছেন রোগীর গায়ে জ্বর আছে কি-না। একবার চিন্তা করে দেখেছেন তিনি কত সূক্ষ্মভাবে জ্বরটা পরীক্ষা করেছেন? অন্য ডাক্তার হলে কী করতেন? হয়তো কপালে হাত দিয়ে জ্বর পরীক্ষা করে চলে যেতেন। কিন্তু তিনি যেহেতু যন্ত্র দিয়ে দেখেছেন অতএব যন্ত্রের তো একটা খরচা আছেই। বিল হয়েছে ১০০ টাকা। তবে জ্বরের উত্তাপে থার্মোমিটার গলে গেলে বিল বেশি হতে পারত।
ষ ডাক্তার সাহেব যখনই প্রেসক্রিপশনে ওষুধের নাম বা উপদেশ লিখেছেন, এমন স্পষ্ট এবং সুন্দর অক্ষরে লিখেছেন, যা দেখে কারোই বিশ্বাস হওয়ার কথা নয় লেখাগুলো ডাক্তারের লেখা। কোনো ডাক্তারের লেখা এত সুন্দর হতে পারে_ আপনারা হয়তো কল্পনাও করতে পারেননি। লেখা সুন্দর হওয়ার কারণে লেখাগুলো বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য আরেকজনের সহায়তা নিতে হয়নি। এই যে আরামটা পেলেন, তার বিল হয়েছে ১৩৫ টাকা।
আনুষঙ্গিক বিল
ষ রোগী ভর্তির সময় কাউন্টারে ভর্তি ফি জমা দিয়ে রোগীর অভিভাবক রসিদ না নিয়েই কাউন্টার ছেড়ে চলে গিয়েছিল। কিন্তু আমরা এতটাই সৎ যে, আবার ফোন করে এনে রসিদটা তাকে বুঝিয়ে দিয়েছি। আর ফোন করতে অবশ্যই খরচ লেগেছে। আমরা যদি মোবাইল থেকে ফোন করতাম তাহলে হয়তো পালস পেতাম। টিঅ্যান্ডটি থেকে করার কারণে যেহেতু পালস পাইনি অতএব বিল হয়েছে ১৫ টাকা।
ষ রোগী ভর্তির দ্বিতীয় দিনে রোগীর এক আত্মীয় কেবিনের সামনে দিয়ে হাঁটার সময় জুতা হেঁচড়িয়ে হেঁটেছে। তার জুতার ঘষা খেয়ে বেশ ক'টা টাইলসে দাগ পড়ে গেছে। এই দাগওয়ালা টাইলসগুলো বদলিয়ে ফেলতে হবে। এর জন্য আপনাদের বিল হয়েছে ৩০০+৩০০=৬০০ টাকা। যেহেতু দুই জুতার ঘষা লেগেছে। এক জুতার ঘষা লাগলে বিল হাফ মানে ৩০০ টাকা হতে পারত।
ষ আমাদের হাসপাতালের নামের মধ্যে 'মডার্ন' শব্দটা আছে। মানে হাসপাতালটা খুবই আধুনিক। অথচ রোগীর এক আত্মীয়ের মোবাইলে রিংটোন হিসেবে এমন এক গান বাজছিল, যা অত্যন্ত ক্ষেত। আধুনিক হাসপাতালে ক্ষেত রিংটোন বাজা অবশ্যই মানহানিকর ব্যাপার। এই মানহানির ফি ৩৫০ টাকা। ফি-টা বেশকিছু ডিসকাউন্ট দিয়েই নির্ধারণ করা হয়েছে। অতএব ডিসকাউন্টের জন্য আর কোনো তদবির চলবে না।
ষ ওজন নেওয়ার সময় একটা বিষয় বেশ আতঙ্কের সঙ্গে লক্ষ্য করা গেছে। বিষয়টা হচ্ছে, আপনার রোগীর ওজন হাসপাতালের অনেক রোগীর ওজনের চেয়েই বেশি। এমন ওজনদার রোগীকে বেডে রাখতে গিয়ে আমাদের বেডের যে ক্ষতি হয়েছে, তা পূরণ হওয়ার নয়। এমনও হতে পারে, বেডটা নতুন করে মেরামত করতে হবে। এই মেরামত চার্জ পুরোটা আপনাদের কাছ থেকে নিচ্ছি না। আংশিক দেন। ৪১০ টাকা।
ষ রিলিজ নিয়ে চলে যাওয়ার সময় অনেকেই বকশিশ চাইবে। বকশিশ না দিয়ে উপায় নেই। কিন্তু সবাইকে বকশিশ দিতে গেলে আপনার হাজার দশেক টাকা খরচ হয়ে যেতে পারে। আপনার খরচ বাঁচাতেই আমাদের এই বকশিশ প্যাকেজ। আপনি শুধু একটা অ্যামাউন্ট দেবেন, আমরা এটা থেকে সবাইকে কম কম করে দিয়ে সন্তুষ্ট করব। যা আপনি কখনোই পারবেন না। তো এই অ্যামাউন্টটা হলো ৫৫০০ টাকা।
বি.দ্র. : এসব বিলের ভয়ে রোগী পালিয়ে গেলে রাস্তা থেকে ধরে এনে আবার ভর্তি করা হবে।
No comments