প্রস্তাবিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০০৯ by আবুল কাসেম হায়দার
সরকার ৫৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন ১৯৯২ ও সংশোধিত ১৯৯৮ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনে দিয়েছে। বর্তমানে ৫২টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় চালু আছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ লাখ ৯০ হাজারের অধিক ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করছে। ৪টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন সরকার কিছু দিন আগে বাতিল করেছে।
তারাও আইনি লড়াই করে আবার চালু করার জন্য চেষ্টা করছে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ১৯৯২ ও সংশোধিত ১৯৯৮ আইনটি সংশোধন বা বাতিল করে সম্পূর্ণ নতুন আইন করার জন্য ২০০৪ সাল থেকে সরকার নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে। ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ জারি করে। পরে ২৮ ডিসেম্বর, ২০০৮ নির্বাচনের পর গণতান্ত্রিক সরকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ ২০০৮ যুক্তিপূর্ণ প্রয়োজনীয় নয় বিধায় সংসদে পাস না করে বাতিল করে।
বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর শিক্ষামন্ত্রী, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান বিশেষ উদ্যোগ নিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন নতুন করে করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করে। খসড়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন নামে একটি আইনের খসড়া কপি সবার কাছে সরবরাহ করে মতামত গ্রহণ করা হয়। ওই মতবিনিময় সভায় আমি নিজে উপস্থিত ছিলাম। সেখানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বিস্তারিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন যা খসড়া দেয়া হয়েছে, তার ওপর প্রচুর সমালোচনা করা হয় এবং কেন গ্রহণযোগ্য নয় তা শিক্ষা মন্ত্রী ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে সভায় বিশদ আলোচনা করা হয়। সমিতির পক্ষ থেকে লিখিত মতামতও পেশ করা হয়েছে। কিন্তু কোনো কিছু সরকারের উদ্যোগকে বন্ধ করতে এখনও পারেনি; বরং আরও গভীর ও ক্ষতিকর ধারা- উপধারাগুলো যোগ করে নতুনভাবে বিগত ১৯ অক্টোবর ২০০৯ মন্ত্রিপরিষদে নীতিগতভাবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০০৯ অনুমোদন দেয়া হয়। এ আইন পাসের পর ওই আইনের ৫১ ধারা মোতাবেক ১৯৯২ ও ১৯৯৮ আইন বাতিল হয়ে যাবে।
ধারাভিত্তিক পর্যালোচনা ও পরামর্শ
এই অংশে প্রস্তাবিত আইনের কয়েকটি ধারার অসঙ্গতি, অপ্রয়োজনীয়তা, ক্ষতিকর দিক তুলে ধরার চেষ্টা করব এবং কিছু পরামর্শও প্রদানের প্রচেষ্টা থাকবে।
এক. ধারা-২ এ প্রস্তাবিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের দ্বিতীয় ধারার সংজ্ঞায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ১৯৯২, ১৯৯৮ আইনে ট্রাস্টি বোর্ড, পরিচালনা পর্ষদ ও রিজেন্সি কাউন্সিল একসঙ্গে ছিল। বর্তমানে ট্রাস্টি নামে আলাদা কর্তৃপক্ষ হয়েছে এবং ট্রাস্টি, সিন্ডিকেট দুটি কর্তৃপক্ষ সৃষ্টির কারণে এখানে প্রশাসনিক দ্বন্দ্ব তৈরি হবে। বিশ্ববিদ্যালয় সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা খুবই কঠিন হয়ে পড়বে।
এ ধারায় বিশ্ববিদ্যালয় সনদপত্রকে দু’ভাগে ভাগ করে দু’বার নেয়ার নিয়ম করা হয়েছে। সাময়িক সনদ নামে একবার, স্থায়ী সনদ নামে আর একবার। বিশ্ববিদ্যালয় কখনও সাময়িক সনদে স্থগিত হতে পারে না।
১৯৯২ ও ১৯৯৮ সালের আইনে সনদ একবার নেয়ার নিয়ম ছিল। তাই প্রস্তাবিত আইনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়িত্বকে একটি অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দেয়া হয়েছে।
দুই. ধারা ৮-এ ৫ ভাগ শিক্ষার্থীকে বিনা বেতনে অধ্যয়নের সুযোগ দেয়ার কথা বলা হয়েছে। ৫ ভাগ সংখ্যাটি অনেক বেশি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকার কোনো অনুদান দেয় না। পুরো খরচই বেসরকারিভাবে বহন করতে হয়। তাই এই সংখ্যা শুধু ১ ভাগে করা যেতে পারে। অথবা বিষয়টি স্ব-স্ব বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ওপর ছেড়ে দেয়া যেতে পারে।
ধারা ৮-এ বলা হয়েছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে কোনোভাবে দায়বদ্ধ বা হস্তান্তর করা যাবে না, তাহলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি বা স্থাবর সম্পত্তি বন্ধক দিয়ে ব্যাংক থেকে কোনো ঋণ নিতে পারবে না। তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজ কীভাবে পরিচালিত হবে। তাছাড়া এখনও অনেক বিশ্ববিদ্যালয় জমি বন্ধক দিয়ে ব্যাংক থেকে অর্থ নিয়ে উন্নয়নের কাজ করছে। এসব সমস্যার সমাধান কীভাবে হবে। এ আইনের উপধারা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক, এটি বাতিল করা প্রয়োজন।
তিন. ধারা ১০-এ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নামে বোর্ড অব ট্রাস্টি নতুন এক কর্তৃপক্ষ সৃষ্টি করা হয়েছে। ১৯৯২ সালের আইনে তা ১৪ ধারায় সুন্দরভাবে রয়েছে। এ ক্ষেত্রে নতুন এই ধারার কর্তৃপক্ষের প্রয়োজন নেই।
চার. ধারা ১৩-এ কী কী স্তরের কর্মকর্তা থাকবেন তা নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। অতিরিক্ত কর্মকর্তা এখানে প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ওপর থাকা উচিত। আইনে সব বিষয় আনার প্রয়োজন নেই। আইনে বাধ্য করলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মাথা ভারি হয়ে পড়বে।
পাঁচ. ধারা ২০-এ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি সিন্ডিকেট থাকার কথা বলা হয়েছে। সিন্ডিকেটের প্রধান বলা হয়েছে ভাইস চ্যান্সেলরকে। ১৯৯২, ১৯৯৮ সিন্ডিকেট, ট্রাস্টি একই সংস্থাকে রাখা হয়েছে। মজার ব্যাপার হলো সিন্ডিকেটের সদস্য আছেন ৯ জন, তার মধ্যে ট্রাস্টি/ফাউন্ডেশন থেকে সদস্য থাকবেন শুধু ১ জন। সরকার কর্তৃক ১ জন ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন কর্তৃক ১ জন। বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে সরকার ও বিমক তদারকি প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করবে। কোনোভাবে তারা সংস্থার প্রতিনিধিত্বকারী সিন্ডিকেটে থাকার যুক্তি নেই। আর সিন্ডিকেটের সভাপতি সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচিত করা উচিত। আইনে সরকার ভাইস চ্যান্সেলরকে সিন্ডিকেটে সভাপতি নির্ধারণ করার প্রয়োজন নেই। আর সিন্ডিকেটে ট্রাস্টি/ফাউন্ডেশন থেকে সদস্য হতে হবে কমপক্ষে ৭ জন।
ছয়. ধারা ২১-এ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনে একাডেমিক কাউন্সিল করার নির্দেশ রয়েছে। এ কাউন্সিল বিশ্ববিদ্যালয় স্টাডি উইংস কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হওয়া উচিত। আইনের মধ্যে আনার প্রয়োজন নেই।
সাত. ধারা ২৬-এ অর্থ কমিটির প্রধান করা হয়েছে ভাইস চ্যান্সেলরকে। অর্থ কমিটির প্রধান ফাউন্ডার বা ট্রাস্টি সদস্যদের মধ্য থেকে করা উচিত। ৭ বছর পর নিজস্ব অর্থায়নে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হলে অর্থ কমিটির ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ফাউন্ডার/ট্রাস্টি না হলে অর্থ জোগাড় করা কোনোক্রমে সম্ভব হবে না। ফাউন্ডার/ট্রাস্টি দায়দায়িত্ব না নিলে কোনো ব্যাংক উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়কে অর্থায়নও করবে না।
আট. ধারা ৩৩ শিক্ষা কার্যক্রম ইত্যাদি শিরোনামে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের অধীনে এমপিওভুক্ত স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার মানে নিয়ে আসা হয়েছে। কারিকুলাম কমিটি ও একাডেমিক কাউন্সিল এবং সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতিক্রমে নতুন অনুষদ খোলার অধিকার সার্বজনীনভাবে স্বীকৃত।
উক্ত ধারায় মেডিকেল কোর্স, নার্সিং কোর্স চালু করার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। উচ্চ শিক্ষা বিস্তারমূলক কোনো আইনে কোনো ক্ষেত্রের সীমাবদ্ধতা থাকা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক, জ্ঞান চর্চার পরিপন্থী এবং অবশ্যই পরিহার্য।
নয়. ধারা ৩৫-এ সনদ বাতিল শিরোনামে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সুপারিশে সরকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদপত্র বাতিল কার্যক্রম শুরু করবে। এ অবস্থায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়বে। কিন্তু ১৯৯৮ সালে সংশোধিত ১৯৯২ সালের আইনের ১৬নং ধারায় সনদ বাতিলের বিষয়টি শুধু বিশেষ অনিয়মের ক্ষেত্রে সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতি পর্যায়ের ব্যক্তি দ্বারা তদন্তের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে এবং আপিলেরও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কিন্তু প্রস্তাবিত আইন কার্যকরী হলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়িত্ব প্রশ্নের সম্মুখীন হবে।
দশ. ধারা ৩৭-এ অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল শিরোনামে শুধু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সরকারি উদ্যোগে, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুুরী কমিশনের নিয়ন্ত্রণে একটি অপপত্বফরঃরড়হ ঈড়ঁহপরষ গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু দেশে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অপপত্বফরঃরড়হ ঈড়ঁহপরষ গঠনের কোনো প্রস্তাবনা নেই। গুূূণগত মান শুধু কি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রয়োজন? সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে কীভাবে গুণগতমানে আনার জন্য অপপত্বফরঃরড়হ ঈড়ঁহপরষ গঠন হবে? তাই এ ধারাটি বৈষম্যমূলক। গ্রহণযোগ্য নয়। অপপত্বফরঃরড়হ ঈড়ঁহপরষ হবে স্বাধীন, স্বতন্ত্র, নিরপেক্ষ সরকারি নিয়ন্ত্রণমুক্ত এবং সব সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য।
এগার. ধারা ৩৮-এ বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদনের নতুন সুযোগ দেয়া হয়েছে। অথচ সরকারি অভিমত অনুযায়ী ৬০টি প্রতিষ্ঠান বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয় নামে ক্যাম্পাস খুলে অবৈধভাবে সার্টিফিকেট বিক্রি করে যাচ্ছে। এবার এদের আইনের বৈধতা দিয়ে আরও বেশী দুষ্কর্ম করার সুযোগ এ ধারায় দেয়া হলো। বিদেশি বা দেশি সব বিশ্ববিদ্যালয়েও একই আইন হবে। আলাদা আইন হতে পারে না।
বার. ধারা ৩৯-এ দূরশিক্ষণ পদ্ধতিতে শিক্ষা দেয়ার সুযোগ ওই আইনে দেয়া হয়েছে। অথচ সরকারের বড় অভিযোগ দূরশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষা না হয়ে শুধু কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সার্টিফিকেট বিক্রি করছে। কোন উদ্দেশ্যে এ অপকর্ম করার বৈধতা আইনে দিচ্ছে তা আমাদের বোধগম্য নয়। তাই ধারাটি সম্পূর্ণ বাতিল করা হোক বা বলা হোক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় দূরশিক্ষার শিক্ষা কোর্স চালু করতে পারবে না।
তের. ধারা ৪১-এ শিক্ষার্থী ফি শিরোনামে নতুন একটি ক্লজ সংযুক্ত করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের কাছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রছাত্রীদের টিউশন ফি কাঠামো তৈরি করে অনুমোদন নিতে হবে। কিন্তু কেন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় টিউশন ফি কাঠামো বিশ্ববিদ্যালয়ের একান্ত নিজস্ব ব্যাপার। সরকারের অনুমোদন কেন নিতে হবে। তাহলে আর বেসরকারি বা কীভাবে রইল। এ ধারা সম্পূর্ণ বাতিল করা উচিত।
চৌদ্দ. ধারা ৪২-এ বেতন কাঠামো ও চাকরি প্রবিধানমালা শিরোনামে বলা হয়েছে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য উপযুক্ত বেতন কাঠামো ও চাকরি প্রবিধানমালা প্রস্তুত করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অনুমোদন নিতে হবে। কেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে এই অনুমোদন সরকারের কাছ থেকে নিতে হবে। তাহলে বেসরকারি কীভাবে হলো? আমার নিজস্ব প্রতিষ্ঠানের বেতন কাঠামো আমরা তৈরি করতে পারব না এ আবার কী ধরনের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হলো! এ ধারা সম্পূর্ণ বাতিল করা উচিত।
উপসংহার : প্রস্তাবিত বিলের বিভিন্ন ধারা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় এ প্রস্তাবিত বিলের মাধ্যমে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মনীতির ধাঁচে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। কোনো কোনো ধারা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে সরকারের এমপিওভুক্ত বেসরকারি স্কুল, কলেজের পর্যায়ে নামিয়ে ফেলেছে। এ ধরনের আইন দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দেবে এবং মূল উদ্দেশ্য থেকে বিচ্যুত করে বিশ্ববিদ্যালয়কে আইনের বেড়াজালে আবদ্ধ করবে। এ প্রকারের নিয়ন্ত্রণমূলক বিল এই যুগে বিশ্বব্যাপী প্রচলিত বেসরকারিকরণ এবং নিয়ন্ত্রণমুক্ত (উব ত্বমঁষধঃরড়হ) প্রক্রিয়ার সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী প্রচেষ্টা। সারা বিশ্বে এখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সরকারি নিয়ন্ত্রণমুক্ত স্বাধীন ও সার্বভৌম পর্যায়ে শক্তিশালী করার অব্যাহত প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। এর মাধ্যমে প্রতিযোগিতাময় বিশ্বে টিকে থাকার জন্য যুব শ্রেণীকে ব্যাপকভাবে ক্ষমতায়ন প্রচেষ্টা প্রতিটি দেশে চলেছে। এ ব্যাপারে ঈযড়ত্হরপধষ ড়ভ যরমযবত্ ঊফঁপধঃরড়হ, টঝঅ, ঔঁহব ১২, ২০০৯ তারিখে প্রকাশিত ভারতীয় মানবসম্পদ মন্ত্রী কপিল সিবালের বক্তব্য গুরুত্ব সহকারে বিবেচনার দাবি রাখে। তিনি বলেন : There is not such a thing as University Grants Commission. All India Council of Technical Education and Medical Council of India in West and these Indian regulatory institutions ‘What can I say, destroyed our entire efforts to take education forward, it is extremely important “to release” higher education institutions from the control of government to promote a competitive environment. We have to allow our universities to float their own degrees” in a competitive environment. Only good universities will survive. আমরা সবাই জানি বাংলাদেশের তুলনায় ভারতের উচ্চ শিক্ষার মান এবং প্রসারের হার অনেক বেশি (বাংলাদেশে প্রায় ৭% এবং ভারতে ১২%)। সেই দেশটিও এখন এ যুগের ধারণার সঙ্গে তাল মিলিয়ে অতীতের প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে বেরিয়ে এসে একটি উন্মুক্ত পরিবেশের মাধ্যমে উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে উত্কর্ষতা অর্জনের চেষ্টা চালাচ্ছে, আর আমরা পশ্চাত্মুখী নতুন আইন প্রণয়নে সময় নষ্ট করছি। বাংলাদেশের যুব সমপ্রদায়কে শক্তিতে রূপান্তরিত করে বিশ্বে প্রতিযোগী করে তুলতে হলে স্বশাসিত ও স্বাধীন বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থার কোনো বিকল্প নেই।
লেখক : প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, ইস্টার্ণ ইউনিভার্সিটি, সাবেক সহ-সভাপতি, এফবিসিসিআই।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ১৯৯২ ও সংশোধিত ১৯৯৮ আইনটি সংশোধন বা বাতিল করে সম্পূর্ণ নতুন আইন করার জন্য ২০০৪ সাল থেকে সরকার নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে। ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ জারি করে। পরে ২৮ ডিসেম্বর, ২০০৮ নির্বাচনের পর গণতান্ত্রিক সরকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ ২০০৮ যুক্তিপূর্ণ প্রয়োজনীয় নয় বিধায় সংসদে পাস না করে বাতিল করে।
বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর শিক্ষামন্ত্রী, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান বিশেষ উদ্যোগ নিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন নতুন করে করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করে। খসড়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন নামে একটি আইনের খসড়া কপি সবার কাছে সরবরাহ করে মতামত গ্রহণ করা হয়। ওই মতবিনিময় সভায় আমি নিজে উপস্থিত ছিলাম। সেখানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বিস্তারিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন যা খসড়া দেয়া হয়েছে, তার ওপর প্রচুর সমালোচনা করা হয় এবং কেন গ্রহণযোগ্য নয় তা শিক্ষা মন্ত্রী ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে সভায় বিশদ আলোচনা করা হয়। সমিতির পক্ষ থেকে লিখিত মতামতও পেশ করা হয়েছে। কিন্তু কোনো কিছু সরকারের উদ্যোগকে বন্ধ করতে এখনও পারেনি; বরং আরও গভীর ও ক্ষতিকর ধারা- উপধারাগুলো যোগ করে নতুনভাবে বিগত ১৯ অক্টোবর ২০০৯ মন্ত্রিপরিষদে নীতিগতভাবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০০৯ অনুমোদন দেয়া হয়। এ আইন পাসের পর ওই আইনের ৫১ ধারা মোতাবেক ১৯৯২ ও ১৯৯৮ আইন বাতিল হয়ে যাবে।
ধারাভিত্তিক পর্যালোচনা ও পরামর্শ
এই অংশে প্রস্তাবিত আইনের কয়েকটি ধারার অসঙ্গতি, অপ্রয়োজনীয়তা, ক্ষতিকর দিক তুলে ধরার চেষ্টা করব এবং কিছু পরামর্শও প্রদানের প্রচেষ্টা থাকবে।
এক. ধারা-২ এ প্রস্তাবিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের দ্বিতীয় ধারার সংজ্ঞায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ১৯৯২, ১৯৯৮ আইনে ট্রাস্টি বোর্ড, পরিচালনা পর্ষদ ও রিজেন্সি কাউন্সিল একসঙ্গে ছিল। বর্তমানে ট্রাস্টি নামে আলাদা কর্তৃপক্ষ হয়েছে এবং ট্রাস্টি, সিন্ডিকেট দুটি কর্তৃপক্ষ সৃষ্টির কারণে এখানে প্রশাসনিক দ্বন্দ্ব তৈরি হবে। বিশ্ববিদ্যালয় সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা খুবই কঠিন হয়ে পড়বে।
এ ধারায় বিশ্ববিদ্যালয় সনদপত্রকে দু’ভাগে ভাগ করে দু’বার নেয়ার নিয়ম করা হয়েছে। সাময়িক সনদ নামে একবার, স্থায়ী সনদ নামে আর একবার। বিশ্ববিদ্যালয় কখনও সাময়িক সনদে স্থগিত হতে পারে না।
১৯৯২ ও ১৯৯৮ সালের আইনে সনদ একবার নেয়ার নিয়ম ছিল। তাই প্রস্তাবিত আইনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়িত্বকে একটি অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দেয়া হয়েছে।
দুই. ধারা ৮-এ ৫ ভাগ শিক্ষার্থীকে বিনা বেতনে অধ্যয়নের সুযোগ দেয়ার কথা বলা হয়েছে। ৫ ভাগ সংখ্যাটি অনেক বেশি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকার কোনো অনুদান দেয় না। পুরো খরচই বেসরকারিভাবে বহন করতে হয়। তাই এই সংখ্যা শুধু ১ ভাগে করা যেতে পারে। অথবা বিষয়টি স্ব-স্ব বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ওপর ছেড়ে দেয়া যেতে পারে।
ধারা ৮-এ বলা হয়েছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে কোনোভাবে দায়বদ্ধ বা হস্তান্তর করা যাবে না, তাহলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি বা স্থাবর সম্পত্তি বন্ধক দিয়ে ব্যাংক থেকে কোনো ঋণ নিতে পারবে না। তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজ কীভাবে পরিচালিত হবে। তাছাড়া এখনও অনেক বিশ্ববিদ্যালয় জমি বন্ধক দিয়ে ব্যাংক থেকে অর্থ নিয়ে উন্নয়নের কাজ করছে। এসব সমস্যার সমাধান কীভাবে হবে। এ আইনের উপধারা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক, এটি বাতিল করা প্রয়োজন।
তিন. ধারা ১০-এ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নামে বোর্ড অব ট্রাস্টি নতুন এক কর্তৃপক্ষ সৃষ্টি করা হয়েছে। ১৯৯২ সালের আইনে তা ১৪ ধারায় সুন্দরভাবে রয়েছে। এ ক্ষেত্রে নতুন এই ধারার কর্তৃপক্ষের প্রয়োজন নেই।
চার. ধারা ১৩-এ কী কী স্তরের কর্মকর্তা থাকবেন তা নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। অতিরিক্ত কর্মকর্তা এখানে প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ওপর থাকা উচিত। আইনে সব বিষয় আনার প্রয়োজন নেই। আইনে বাধ্য করলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মাথা ভারি হয়ে পড়বে।
পাঁচ. ধারা ২০-এ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি সিন্ডিকেট থাকার কথা বলা হয়েছে। সিন্ডিকেটের প্রধান বলা হয়েছে ভাইস চ্যান্সেলরকে। ১৯৯২, ১৯৯৮ সিন্ডিকেট, ট্রাস্টি একই সংস্থাকে রাখা হয়েছে। মজার ব্যাপার হলো সিন্ডিকেটের সদস্য আছেন ৯ জন, তার মধ্যে ট্রাস্টি/ফাউন্ডেশন থেকে সদস্য থাকবেন শুধু ১ জন। সরকার কর্তৃক ১ জন ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন কর্তৃক ১ জন। বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে সরকার ও বিমক তদারকি প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করবে। কোনোভাবে তারা সংস্থার প্রতিনিধিত্বকারী সিন্ডিকেটে থাকার যুক্তি নেই। আর সিন্ডিকেটের সভাপতি সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচিত করা উচিত। আইনে সরকার ভাইস চ্যান্সেলরকে সিন্ডিকেটে সভাপতি নির্ধারণ করার প্রয়োজন নেই। আর সিন্ডিকেটে ট্রাস্টি/ফাউন্ডেশন থেকে সদস্য হতে হবে কমপক্ষে ৭ জন।
ছয়. ধারা ২১-এ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনে একাডেমিক কাউন্সিল করার নির্দেশ রয়েছে। এ কাউন্সিল বিশ্ববিদ্যালয় স্টাডি উইংস কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হওয়া উচিত। আইনের মধ্যে আনার প্রয়োজন নেই।
সাত. ধারা ২৬-এ অর্থ কমিটির প্রধান করা হয়েছে ভাইস চ্যান্সেলরকে। অর্থ কমিটির প্রধান ফাউন্ডার বা ট্রাস্টি সদস্যদের মধ্য থেকে করা উচিত। ৭ বছর পর নিজস্ব অর্থায়নে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হলে অর্থ কমিটির ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ফাউন্ডার/ট্রাস্টি না হলে অর্থ জোগাড় করা কোনোক্রমে সম্ভব হবে না। ফাউন্ডার/ট্রাস্টি দায়দায়িত্ব না নিলে কোনো ব্যাংক উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়কে অর্থায়নও করবে না।
আট. ধারা ৩৩ শিক্ষা কার্যক্রম ইত্যাদি শিরোনামে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের অধীনে এমপিওভুক্ত স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার মানে নিয়ে আসা হয়েছে। কারিকুলাম কমিটি ও একাডেমিক কাউন্সিল এবং সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতিক্রমে নতুন অনুষদ খোলার অধিকার সার্বজনীনভাবে স্বীকৃত।
উক্ত ধারায় মেডিকেল কোর্স, নার্সিং কোর্স চালু করার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। উচ্চ শিক্ষা বিস্তারমূলক কোনো আইনে কোনো ক্ষেত্রের সীমাবদ্ধতা থাকা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক, জ্ঞান চর্চার পরিপন্থী এবং অবশ্যই পরিহার্য।
নয়. ধারা ৩৫-এ সনদ বাতিল শিরোনামে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সুপারিশে সরকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদপত্র বাতিল কার্যক্রম শুরু করবে। এ অবস্থায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়বে। কিন্তু ১৯৯৮ সালে সংশোধিত ১৯৯২ সালের আইনের ১৬নং ধারায় সনদ বাতিলের বিষয়টি শুধু বিশেষ অনিয়মের ক্ষেত্রে সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতি পর্যায়ের ব্যক্তি দ্বারা তদন্তের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে এবং আপিলেরও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কিন্তু প্রস্তাবিত আইন কার্যকরী হলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়িত্ব প্রশ্নের সম্মুখীন হবে।
দশ. ধারা ৩৭-এ অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল শিরোনামে শুধু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সরকারি উদ্যোগে, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুুরী কমিশনের নিয়ন্ত্রণে একটি অপপত্বফরঃরড়হ ঈড়ঁহপরষ গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু দেশে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অপপত্বফরঃরড়হ ঈড়ঁহপরষ গঠনের কোনো প্রস্তাবনা নেই। গুূূণগত মান শুধু কি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রয়োজন? সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে কীভাবে গুণগতমানে আনার জন্য অপপত্বফরঃরড়হ ঈড়ঁহপরষ গঠন হবে? তাই এ ধারাটি বৈষম্যমূলক। গ্রহণযোগ্য নয়। অপপত্বফরঃরড়হ ঈড়ঁহপরষ হবে স্বাধীন, স্বতন্ত্র, নিরপেক্ষ সরকারি নিয়ন্ত্রণমুক্ত এবং সব সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য।
এগার. ধারা ৩৮-এ বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদনের নতুন সুযোগ দেয়া হয়েছে। অথচ সরকারি অভিমত অনুযায়ী ৬০টি প্রতিষ্ঠান বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয় নামে ক্যাম্পাস খুলে অবৈধভাবে সার্টিফিকেট বিক্রি করে যাচ্ছে। এবার এদের আইনের বৈধতা দিয়ে আরও বেশী দুষ্কর্ম করার সুযোগ এ ধারায় দেয়া হলো। বিদেশি বা দেশি সব বিশ্ববিদ্যালয়েও একই আইন হবে। আলাদা আইন হতে পারে না।
বার. ধারা ৩৯-এ দূরশিক্ষণ পদ্ধতিতে শিক্ষা দেয়ার সুযোগ ওই আইনে দেয়া হয়েছে। অথচ সরকারের বড় অভিযোগ দূরশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষা না হয়ে শুধু কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সার্টিফিকেট বিক্রি করছে। কোন উদ্দেশ্যে এ অপকর্ম করার বৈধতা আইনে দিচ্ছে তা আমাদের বোধগম্য নয়। তাই ধারাটি সম্পূর্ণ বাতিল করা হোক বা বলা হোক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় দূরশিক্ষার শিক্ষা কোর্স চালু করতে পারবে না।
তের. ধারা ৪১-এ শিক্ষার্থী ফি শিরোনামে নতুন একটি ক্লজ সংযুক্ত করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের কাছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রছাত্রীদের টিউশন ফি কাঠামো তৈরি করে অনুমোদন নিতে হবে। কিন্তু কেন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় টিউশন ফি কাঠামো বিশ্ববিদ্যালয়ের একান্ত নিজস্ব ব্যাপার। সরকারের অনুমোদন কেন নিতে হবে। তাহলে আর বেসরকারি বা কীভাবে রইল। এ ধারা সম্পূর্ণ বাতিল করা উচিত।
চৌদ্দ. ধারা ৪২-এ বেতন কাঠামো ও চাকরি প্রবিধানমালা শিরোনামে বলা হয়েছে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য উপযুক্ত বেতন কাঠামো ও চাকরি প্রবিধানমালা প্রস্তুত করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অনুমোদন নিতে হবে। কেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে এই অনুমোদন সরকারের কাছ থেকে নিতে হবে। তাহলে বেসরকারি কীভাবে হলো? আমার নিজস্ব প্রতিষ্ঠানের বেতন কাঠামো আমরা তৈরি করতে পারব না এ আবার কী ধরনের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হলো! এ ধারা সম্পূর্ণ বাতিল করা উচিত।
উপসংহার : প্রস্তাবিত বিলের বিভিন্ন ধারা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় এ প্রস্তাবিত বিলের মাধ্যমে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মনীতির ধাঁচে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। কোনো কোনো ধারা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে সরকারের এমপিওভুক্ত বেসরকারি স্কুল, কলেজের পর্যায়ে নামিয়ে ফেলেছে। এ ধরনের আইন দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দেবে এবং মূল উদ্দেশ্য থেকে বিচ্যুত করে বিশ্ববিদ্যালয়কে আইনের বেড়াজালে আবদ্ধ করবে। এ প্রকারের নিয়ন্ত্রণমূলক বিল এই যুগে বিশ্বব্যাপী প্রচলিত বেসরকারিকরণ এবং নিয়ন্ত্রণমুক্ত (উব ত্বমঁষধঃরড়হ) প্রক্রিয়ার সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী প্রচেষ্টা। সারা বিশ্বে এখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সরকারি নিয়ন্ত্রণমুক্ত স্বাধীন ও সার্বভৌম পর্যায়ে শক্তিশালী করার অব্যাহত প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। এর মাধ্যমে প্রতিযোগিতাময় বিশ্বে টিকে থাকার জন্য যুব শ্রেণীকে ব্যাপকভাবে ক্ষমতায়ন প্রচেষ্টা প্রতিটি দেশে চলেছে। এ ব্যাপারে ঈযড়ত্হরপধষ ড়ভ যরমযবত্ ঊফঁপধঃরড়হ, টঝঅ, ঔঁহব ১২, ২০০৯ তারিখে প্রকাশিত ভারতীয় মানবসম্পদ মন্ত্রী কপিল সিবালের বক্তব্য গুরুত্ব সহকারে বিবেচনার দাবি রাখে। তিনি বলেন : There is not such a thing as University Grants Commission. All India Council of Technical Education and Medical Council of India in West and these Indian regulatory institutions ‘What can I say, destroyed our entire efforts to take education forward, it is extremely important “to release” higher education institutions from the control of government to promote a competitive environment. We have to allow our universities to float their own degrees” in a competitive environment. Only good universities will survive. আমরা সবাই জানি বাংলাদেশের তুলনায় ভারতের উচ্চ শিক্ষার মান এবং প্রসারের হার অনেক বেশি (বাংলাদেশে প্রায় ৭% এবং ভারতে ১২%)। সেই দেশটিও এখন এ যুগের ধারণার সঙ্গে তাল মিলিয়ে অতীতের প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে বেরিয়ে এসে একটি উন্মুক্ত পরিবেশের মাধ্যমে উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে উত্কর্ষতা অর্জনের চেষ্টা চালাচ্ছে, আর আমরা পশ্চাত্মুখী নতুন আইন প্রণয়নে সময় নষ্ট করছি। বাংলাদেশের যুব সমপ্রদায়কে শক্তিতে রূপান্তরিত করে বিশ্বে প্রতিযোগী করে তুলতে হলে স্বশাসিত ও স্বাধীন বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থার কোনো বিকল্প নেই।
লেখক : প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, ইস্টার্ণ ইউনিভার্সিটি, সাবেক সহ-সভাপতি, এফবিসিসিআই।
No comments