পবিত্র কোরআনের আলো-আরব ভূমিতে একক মুসলিম সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া শুরু

সুরা আত-তাওবা আয়াত ১২৯, রুকু ১৬  ১. বারাআতুম মিনাল্লাহি ওয়া রাসূলিহি ইলাল্লাযীনা 'আহাদ্তুম মিনাল মুশ্রিকীন। ২. ফাছীহূ ফিল আর্দ্বি আরবা'আতা আশ্হুরিন ওয়া'লামূ আন্নাকুম গাইরু মু'জিযিল্লাহি ওয়া আন্নাল্লাহা মুখ্যিল কাফিরীন। ৩. ওয়া আযানুম মিনাল্লাহি ওয়া রাসূলিহি ইলান নাসি ইয়াওমাল হাজ্জিল আকবারি আন্নাল্লাহা বারীউম মিনাল মুশরিকীনা ওয়া রাসূলুহ্; ফা-ইন তুব্তুম ফা-হুয়া খাইরুল লাকুম; ওয়া ইন তাওয়াল্লাইতুম ফা'লামূ আন্নাকুম গাইরু মু'জিযিল্লাহি্; ওয়া বাশ্শিরিল্লাযীনা কাফারূ বি'আযাবিন আলীম।


৪. ইল্লাল্লাযীনা 'আহাদ্তুম মিনাল মুশ্রিকীনা ছুম্মা লাম ইয়ান্ক্বুসূকুম শাইআন ওয়া লাম ইউযাহিরূ 'আলাইকুম আহাদান ফাআতিম্মূ ইলাইহিম 'আহ্দাহুম ইলা মুদ্দাতিহিম্; ইন্নাল্লাহা ইউহিব্বুল মুত্তাক্বীন।
[সুরা : আত-তাওবা, আয়াত : ১-৪]
অনুবাদ : ১. (হে মুসলমানরা!) এটা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের পক্ষ থেকে সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা, যেসব মুশরিকের প্রতি যাদের সঙ্গে তোমরা চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলে।
২. সুতরাং (হে মুশরিকরা!) এই আরব ভূমিতে আর চার মাস তোমাদের স্বাধীনভাবে বিচরণের সুযোগ আছে। জেনে রাখো, তোমরা আল্লাহকে ব্যর্থ করতে পারবে না। আর এটা নিশ্চিত যে, আল্লাহ অবাধ্যদের লাঞ্ছিত করবেনই।
৩. (আজ) মহান হজের দিন, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের পক্ষ থেকে সব মানুষের জন্য ঘোষণা করা যাচ্ছে যে, আল্লাহ অবশ্যই মুশরিকদের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তির বাধ্যবাধকতা থেকে মুক্ত এবং তাঁর রাসুলও মুক্ত। (হে মুশরিকরা!) তোমরা যদি এখনো তাওবা করো, তাহলে সেটাই হবে তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তাহলে জেনে রেখো, তোমরা কখনোই আল্লাহকে অক্ষম করে দিতে পারবে না। (হে নবী!) আপনি কাফিরদের কঠোর শাস্তির সুসংবাদ (দুঃসংবাদ) দিন।
৪. তবে সেসব লোকের কথা আলাদা, যেসব মুশরিকের সঙ্গে তোমরা চুক্তি করেছ, অতঃপর তারা চুক্তি রক্ষার ব্যাপারে ত্রুটি করেনি, আর তারা কখনো তোমাদের বিরুদ্ধে কাউকে সাহায্যও করেনি। তাদের সেই চুক্তি তোমরা মেয়াদকাল শেষ হওয়া পর্যন্ত মেনে চলবে। অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা দায়িত্বনিষ্ঠদের ভালোবাসেন।
ব্যাখ্যা : সুরাটি নাজিল হয়েছে মক্কা বিজয়ের পর। আরবের বহু গোত্র রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে কুরাইশ কাফিরদের যুদ্ধ কোন পরিণতিতে পেঁৗছে, তা দেখার অপেক্ষায় ছিল।
কুরাইশরা যখন হুদায়বিয়ার সন্ধি বাতিল করল, তখন রাসুল (সা.) মক্কা আক্রমণ করলেন এবং বিজয় অর্জিত হলো। এভাবেই কাফিরদের মেরুদণ্ড ভেঙে গেল।
এরপর আর দু-একটি যুদ্ধের মধ্য দিয়েই সারা আরবে ইসলামের জয়যাত্রা ছড়িয়ে পড়ে। মানুষ দলে দলে মদিনায় এসে ইসলাম গ্রহণ করতে থাকে। এভাবেই জাজিরাতুল আরবকে ইসলামের কেন্দ্রভূমি ঘোষণা করার প্রসঙ্গটি এসেছে এসব আয়াতে। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল আরব উপদ্বীপকে একক মুসলিম সমাজে পরিণত করা, যাতে মুসলমানদের কোনো শত্রু এখানে না থাকে। তবে এ লক্ষ্য বাস্তবায়ন করা হয় পর্যায়ক্রমে। সুরা তাওবার শুরুর দিকের এসব আয়াতে সেই প্রক্রিয়াটার কথাই খোলাখুলি বর্ণনা করা হয়েছে। আরব ভূমিকে ইসলামের কেন্দ্রভূমি ও একক মুসলিম সমাজের আবাসভূমি বানানোর লক্ষ্যে আল্লাহর পক্ষ থেকে যে ঘোষণা এলো তা এ রকম_ মুশরিক ও অবাধ্যদের সাধারণভাবে কিছুকালের অর্থাৎ চার মাসের জন্য অবকাশ দেওয়া হলো। এর মধ্যে তাদের আরবভূমি ছাড়তে হবে। অন্যথায় যুদ্ধের মুখোমুখি হতে হবে। মুসলমানদের সঙ্গে সম্পর্কের বিবেচনায় মুফাসসিররা এসব মুশরিককে চারটি ভাগে বিভক্ত করেছেন_
১. সেসব মুশরিক, যাদের সঙ্গে মুসলমানদের কোনো শান্তিচুক্তি হয়নি। তাদের জন্যই চার মাসের সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। ২. যাদের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়েছিল, কিন্তু এর কোনো নির্দিষ্ট মেয়াদ ধার্য করা হয়নি। ৩. যাদের সঙ্গে রাসুল (সা.) শান্তিচুক্তি সম্পাদন করেছিলেন, কিন্তু তারা চুক্তির মর্যাদা রক্ষা না করে বিশ্বাসঘাতকতার পরিচয় দিয়েছে। যেমন, হুদায়বিয়ার সন্ধি কুরাইশরাই ভঙ্গ করেছিল। ৪. যাদের সঙ্গে মুসলিমদের যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়েছিল নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য এবং তারা এটা সযত্নে রক্ষা করে চলেছেন।
কোরআন মজিদে মুশরিকদের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা হলেও যারা চুক্তি রক্ষা করে চলেছিল, তাদের সঙ্গে চুক্তি বলবৎ রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আর চার মাসের এ মেয়াদ শুরু হয়েছে জিলহজ মাসের ৯ তারিখ তথা মূল হজের দিন থেকে। কারণ এই দিনই জাতীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ কোনো ঘোষণা প্রচার করা হতো। রাসুল (সা.)-এর পক্ষ থেকে এ চরমপত্রের ঘোষণা দিয়েছিলেন হজরত আলী (রা.)।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.