ভারতের পার্থ লজ্জা-ইনিংস ও ৩৭ রানে হারল ভারত

রায়ান হ্যারিসের বলে বোল্ড হয়ে গেলেন রাহুল দ্রাবিড়। ভেঙে গেল ৮৪ রানের দেয়াল। ভারতের ইনিংস পরাজয়ের কালিমালেপন হয়ে গেল তখনই। তবুও বিরাট কোহলি চেষ্টা করেছিলেন উইকেট কামড়ে পড়ে থাকতে। তাতে লাভ কিছুই হলো না। মধ্যাহ্নবিরতি পর্যন্ত ৬ উইকেট নিয়ে ১৬৫ রান। মধ্যাহ্নবিরতির পর ভারতের ইনিংস বেঁচে ছিল মাত্র ২০ বল (৩.২ ওভার)। অল আউট ১৭১ রানে। পার্থের ওয়াকা গ্রাউন্ডে আরও একটি ইনিংস পরাজয়বরণ করতে হলো ধোনিদের।


ব্যবধান এক ইনিংস ও ৩৭ রানে। ২০৮ রান করে ইনিংস পরাজয়ও বাঁচাতে পারল না শচীন, দ্রাবিড়, লক্ষ্মণ, শেবাগ, গম্ভীর, কোহলি ও ধোনিদের নিয়ে গড়া বিখ্যাত(?) ব্যাটিং লাইনআপ।
ভারতীয় ব্যাটিংয়ের পাশে প্রশ্নবোধক চিহ্নটি দিতেই হলো। এখনও এক টেস্ট বাকি। স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া সিরিজ নিজেদের করে নিয়েছে ৩-০-তে এগিয়ে থেকে। সফরকারী ব্যাটসম্যানরা যেভাবে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছেন তাতে তাদের নিয়ে খোদ প্রশ্ন উঠে গেছে পুরো ভারতবর্ষেই। সিরিজে এ পর্যন্ত ৩ ম্যাচের ৬ ইনিংসে রাহুল দ্রাবিড় আউট হয়েছেন সাতবার। বোল্ড হয়েছেন ৬ বার। প্রথম টেস্টে বোল্ড হওয়ার পরও বেঁচে গিয়েছিলেন নো বলের কল্যাণে। বাকি একটিতে আউট হয়েছেন ক্যাচ তুলে দিয়ে। এই হলো দ্য ওয়ালের পরিণতি। ভেরি ভেরি স্পেশাল (ভিভিএস) লক্ষ্মণও সিরিজজুড়ে ব্যর্থ। শেবাগ, গম্ভীর, ধোনি আর কোহলিরা কোনোভাবেই নামের প্রতি সুবিচার করতে পারছেন না। এক শচীন কিছুটা ধারাবাহিক। তবে শততম সেঞ্চুরির প্রত্যাশার ভিড়ে হারিয়ে যাচ্ছে তার এই ধারাবাহিকতা। বড় কাণ্ডারিদের যখন এই অবস্থা তখন ডুবন্ত ভারতের হাল ধরবে কে? বিরাট কোহলি (৭৫) শেষ ইনিংসে চেষ্টা করেছিলেন; কিন্তু সেটা অসি পেসারদের ঝড়ের সামনে যথেষ্ট ছিল না। হ্যারিস, সিডল, স্টার্ক আর হিলফেনহাসদের রূদ্রমূর্তির সামনে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেল সব। অ্যাডিলেড টেস্ট নিয়ে স্বপ্ন দেখতে পারে ভারত। সেখানেও যে বড় ব্যবধানে হারবে না তার নিশ্চয়তা নেই। বরং হোয়াইটওয়াশের ভয়েই রয়েছে এখন ধোনি অ্যান্ড কোং। এ নিয়ে বিদেশের মাটিতে টানা সাত টেস্ট হারল ভারত।
তিন দিনেই শেষ হয়ে যায় কি-না পার্থ টেস্ট, সে শঙ্কা দেখা দিয়েছিল দ্বিতীয় দিন শেষের বিকেলে। তবে তিন দিন নয়, সোয়া দুই দিনেই শেষ টেস্ট। কাল সকালে প্রথম সেশনে দুই ঘণ্টা এবং দ্বিতীয় সেশনে মাত্র ২০ বল খেলা হলো। সব মিলিয়ে পার্থ টেস্টের স্থায়িত্ব ছিল ১৪ ঘণ্টার কিছু বেশি। দ্বিতীয় দিন শেষে ভারতের ইনিংস পরাজয় এড়াতে প্রয়োজন ছিল মাত্র ১২০ রান। ৪ উইকেটে ৮৮ রান নিয়ে কাল তৃতীয় দিন শুরু করেন দ্রাবিড় আর কোহলি। চার অসি পেসারের অগি্নমূর্তি উপেক্ষা করে ৩৭ রানের জুটিকে তারা টেনে নিয়ে গিয়েছিলেন ৮৪ রান পর্যন্ত। এ সময় হঠাৎই ঝড় তোলেন রায়ান হ্যারিস। তার বলে বোল্ড হয়ে ফিরে গেলেন দ্রাবিড়। একটু পরই সিডলের বলে ফিরলেন ধোনি। ৬ উইকেটে ১৬৫ রান নিয়ে মধ্যাহ্ন বিরতিতে গেল দু'দল। বিরতির পর নেওয়া হলো নতুন বল। আক্রমণে থাকলেন হিলফেনহাস আর পিটার সিডলই। হিলফেনহাসকে এক ওভার ভালোই সামলে দিলেন বিনয় কুমার। পরের ওভারে সিডলকে একবার বাউন্ডারির বাইরে পাঠিয়ে এবং একটি ডাবলের মাধ্যমে ভারতের রান ১৭১-এ নিয়ে গেলেন বিরাট কোহলি। এ সময়ই হঠাৎ ঝড় উঠল। সেটা তুললেন হিলফেনহাস। নতুন বলের উজ্জ্বলতায় এ সময় সব গুলিয়ে ফেললেন ভারতীয় টেলএন্ডাররা। হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছিল হিলফেনহাসের। তবে তা না হলেও তার সুইং বলে বোকার মতো এক ওভারেই ফিরে গেলেন বিনয় কুমার, জহির খান আর ইশান্ত শর্মা। পরের ওভারের দ্বিতীয় বলে নিঃসঙ্গ হয়ে ওঠা বিরাট কোহলিকেও ফিরিয়ে দিলেন সিডল। ৬ উইকেটে ১৭১ থেকে ১০ উইকেটে ১৭১। দুঃস্বপ্নের ১৭১-এ বসিয়ে ভারতের চার ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে দিলেন এই দুই অসি পেসার। ইনিংস ব্যবধানে জয়ের সঙ্গে সিরিজি জয়ও নিশ্চিত হলো স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার। অসিদের পক্ষে ৪ উইকেট নিলেন হিলফেনহাস। এ নিয়ে সিরিজে তার উইকেট ২৩টি। সিডল নিলেন ৩টি। তিন টেস্টে ভারতীয়দের ৬০ উইকেটের ৫৭টিই ভাগ করে নিয়েছেন অসি পেসাররা। প্রথম ইনিংসে অসি ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার যে রান করেছিলেন ভারত দুই ইনিংসের একটিতেও ১০ জন মিলে সে ইনিংসটির সমান রান করতে পারল না। ম্যাচসেরার পুরস্কার তাই উঠল ওয়ার্নারের হাতেই।

No comments

Powered by Blogger.