শ্রদ্ধা : প্রীতিলতা ওয়াদ্দাদার-জন্মশতবাষির্কীর শ্রদ্ধাঞ্জলি-এই বছর অর্থাৎ ২০১১ সালে পূর্ণ হয়েছে ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের শহীদ নারী বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দাদারের জন্মশতবাষির্কী। বাংলাদেশের চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণকারী এই বিপ্লবী নারী আজ আমাদের তারুণ্যের কাছে বিস্মৃতপ্রায়। তাঁকে স্মরণ করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে না বর্তমান শাসকগোষ্ঠী। তাই সরকারি কোনো উদ্যোগও পরিলক্ষিত হয়নি। অথচ এই মহীয়সী নারীর জীবনগাথা স্মরণ করা উচিত মহাসমারোহে। কেননা তিনি আমাদের কাছে গর্বের বিষয়। তিনিই প্রমাণ করেছিলেন যে সশস্ত্র সংগ্রামে একজন পুরুষের পাশাপাশি নারীও সমান ভূমিকা রাখতে পারে by অনিন্দ্য আরিফ
ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই যাঁরা করেছিলেন, অর্থাৎ সেই সময়কার বিপ্লবীদের ইতিহাস আজ বিস্মৃতপ্রায়। আমাদের স্বাধীনতার আগে পাকিস্তান আমলে এবং পরে বাংলাদেশ আমলে যেসব শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতায় এসেছে তারাও তাঁদের এক রকম উপেক্ষাই করেছে। তাঁদের প্রকৃত ইতিহাসকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা হয়নি। তাই এমন একটা দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হয়েছে যে ভারতের স্বাধীনতা শুধু গান্ধী এবং কংগ্রেসের অবদানে এসেছে।
এ ধরনের প্রচেষ্টা ভারতেও স্বাধীনতার পর থেকে হয়ে আসছে, আর আমাদের এখানে তো তা তাঁদের স্মৃতি ধূসর মলিন হয়ে উঠেছে। কিন্তু ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামে এই সশস্ত্র বিপ্লবীদের অবদান অনস্বীকার্য। তাঁদের একটি বিরাট ভূমিকা রয়েছে। বরং কংগ্রেসের লক্ষ্য ছিল সব সময় ডমিনিয়ন স্ট্যাটাস লাভ করা, আর এই সশস্ত্র বিপ্লবীদের লক্ষ্য ছিল পূর্ণ স্বাধীনতা। আবার কংগ্রেসের মধ্যে একটি অংশ আপসহীন ধারায় থাকতে চাইলেও তারা কখনোই কংগ্রেসের নীতিনির্ধারক জায়গায় পেঁৗছাতে পারেনি। এমনকি তাদের দলচ্যুত হতে হয়েছে। এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু।
মূলত ভারবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামে দুটি ধারা ছিল_একটি ভারতের বৃহৎ বুর্জোয়া শ্রেণীর প্রতিনিধিত্বকারী আপসমুখী ধারা, আরেকটি ভারতীয় জাতীয় বুর্জোয়া ও পেটি বুর্জোয়াদের জাতীয়তাবাদী সশস্ত্র সংগ্রামের ধারা বা আপসহীন ধারা। গান্ধী, জওয়াহেরলাল নেহরু প্রমুখ ছিলেন প্রথমোক্ত দলে আর সুভাষ চন্দ্র বসু, সূর্যসেন, প্রীতিলতা, ভগৎ সিং, আশফাক উল্লাহ, যতীন দাস প্রমুখ ছিলেন শেষোক্ত ধারার। যদিও ভারতবর্ষের স্বাধীনতার পর ক্ষমতা চলে যায় আপসমুখী ধারার হাতে, কিন্তু এ ক্ষেত্রে সশস্ত্র বিপ্লবীদের তৎপরতাও সমান ভূমিকা রেখেছে।
প্রশ্ন হলো_প্রকৃত অর্থে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ কেন ১৯৪৭ সালে কংগ্রেস এবং মুসলিম লীগের হাতে ক্ষমতা তড়িঘড়ি করে হস্তান্তর করে? এর কারণ, তারা সেদিন বুঝতে পেরেছিল তাদের প্রত্যক্ষ শোষণ যদি ভারতবর্ষে আরো সময় ধরে চলতে থাকে তাহলে হয়তো বা গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তাদের দেশ ছাড়তে হবে। আর ক্ষমতা চলে যাবে হয়তো শ্রমিক-কৃষক-মধ্যবিত্তদের দখলে। ৪৬-এর নৌবিদ্রোহ, তেলেঙ্গনা, রশিদ আলী দিবসকে কেন্দ্র করে কলকাতায় গণবিক্ষোভ, সেনাবাহিনীতে অসন্তোষ ইত্যাদি তাদের সেই আশঙ্কাকে প্রায় বাস্তবে পরিণত করেছিল। এমতাবস্থায় এই ভারতবর্ষকে সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে দ্বিখণ্ডিত করে কংগ্রেস এবং মুসলিম লীগের আপসকামী নেতৃত্বের কাছে ক্ষমতা সঁপে গেলে পরবর্তী সময়ে পরোক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। সত্যি সত্যিই ৪৭-পরবর্তী ভারতে ব্রিটিশ এবং মার্কিন লগি্ন পুঁজির আধিপত্য এই মতামতের যৌক্তিকতাকে প্রমাণ করে।
প্রথম শহীদ নারী বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দাদার!
যে সশস্ত্র বিপ্লবীরা সেদিন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন তাঁদের মধ্যে প্রথম শহীদ নারী বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দাদার। মাস্টারদা সূর্যসেনের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ভারতীয় রিপাবলিকান আর্মিতে যোগ দিয়ে তিনি স্বাধীনতা আন্দোলনে নিজেকে উৎসর্গ করেন। ১৯৩২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের পাহাড়তলীতে ইউরোপিয়ান ক্লাবে এক দুঃসাহসিক সামরিক অভিযানে তিনি আত্মাহুতি দিয়েছিলেন। প্রাীতিলতা বাংলাদেশের প্রথম নারী শহীদ।
প্রীতিলতা ওয়াদ্দাদারের জন্ম ১৯১১ সালের ৫ মে। তাঁর ডাকনাম ছিল রানি। বাবার নাম জগবন্ধু ওয়াদ্দাদার। তিনি ছিলেন তৎকালীন চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যাল অফিসের হেড কেরানি। মা প্রতিভা ওয়াদ্দাদার গৃহিণী।
ডা. খাস্তগীর উচ্চ ইংরেজি বালিকা বিদ্যালয়ে একেবারে ক্লাস থ্রিতে ভর্তি হয়ে প্রীতিলতার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু হয়। চাচাতো ভাই অমৃত সূদনের মাধ্যমে তিনি বিপ্লবী রাজনীতির খবরাখবর শুনতে পেতেন। স্বদেশি বিপ্লবীদের বীরত্বের সংবাদ জানতে প্রীতিলতার ছিল অদম্য আগ্রহ। স্কুলশিক্ষিকা উষা চট্যোপাধ্যায়ের মাধ্যমে তিনি অনুপ্রাণিত হতেন। চট্টগ্রাম কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র বিজনের কাছ থেকে নিয়ে প্রীতিলতা 'ক্ষুদিরাম', 'কানাইলাল', 'বাঘা যতীন', 'দেশের কথা' ইত্যাদি বইগুলো পড়েন।
বিপ্লবী বিজয় দস্তিদারের মাধ্যমে প্রীতিলতা রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার প্রচেষ্টা চালান। এর মধ্যে ১৯২৮ সালে প্রীতিলতা প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকায় ইডেন কলেজে ভর্তি হন। ইডেন কলেজের অধ্যাপিকা নীলিমা সেনের মাধ্যমে প্রীতিলতা ঢাকায় বিপ্লবী দল শ্রীসংঘের মহিলা শাখা দীপালি সংঘের সঙ্গে যুক্ত হন। এরপর গ্রীষ্মের ছুটিতে চট্টগ্রাম গেলে বিজন দস্তিদারের মাধ্যমে সূর্যসেন প্রীতিলতার বিপ্লবী রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার বিষয়ে অবগত হন এবং তাঁকে অপেক্ষা করতে বলেন। ইতিমধ্যে প্রীতিলতার পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। তিনি মেয়েদের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করে মাসিক কুড়ি টাকা বৃত্তি অর্জন করেন। এদিকে তাঁর মা-বাবা বিয়ের চেষ্টা চালাতে থাকলে প্রীতিলতা ওই প্রস্তাব নাকচ করে দিয়ে কলকাতায় বেথুন কলেজে দর্শন বিষয়ে অনার্সে ভর্তি হন।
১৯২৯ সালে চট্টগ্রামে 'যুগান্তর' দলের উদ্যোগে জেলা রাজনৈতিক সম্মেলন, জেলা যুব সম্মেলন ও জেলা ছাত্রছাত্রী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনগুলোর সভাপতিত্ব করেন যথাক্রমে সুভাষ চন্দ্র বসু, জ্যোতিষ ঘোষ ও নৃপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। এ সময় প্রীতিলতা পূজার ছুটিতে বাড়িতে এসেছিলেন। তাঁর এবং আরো কয়েকজন মেয়ের প্রস্তাব অনুযায়ী একটি নারী সম্মেলনও একই সঙ্গে অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনের প্রধান দায়িত্ব স্থানীয় মহিলারাই গ্রহণ করে। নারী সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন কংগ্রেস নেত্রী লতিকা বসু। এই নারী সম্মেলনের স্বেচ্ছাসেবিকা বাহিনী গঠনের কাজ করতে গিয়েই প্রীতিলতার সঙ্গে যোগাযোগ ঘটে কল্পনা দত্তের।
প্রীতিলতা ও কল্পনা দত্ত প্রমুখ তখন বেথুন কলেজের বারণসীদাস স্ট্রিটের ছাত্রী নিবাসে থাকতেন। বেথুন কলেজে প্রীতিলতা কলকাতায় অধ্যয়নরত চট্টগ্রামের আরো কয়েকজন ছাত্রী কল্পনা দত্ত, সরোজনী পাল, নলিনী পাল ও অন্যদের সহযোগিতায় গোপন বিপ্লবী চক্র গড়ে তোলেন, যাদের কাজ ছিল অর্থ সংগ্রহ করে চট্টগ্রামে পাঠানো। কলকাতা থেকে বোমা তৈরির সরঞ্জাম 'গান-কটন' কেনার অর্থ জোগাড় করতে ছাত্রীদের কাছ থেকে গায়ের অলংকার সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রীতিলতা প্রথমে নিজের হাতের সোনার চুড়ি ও গলার চেইন দিয়ে দেন। তিনি এমনকি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কলকাতা থেকে বোমার খোল চট্টগ্রামে বয়ে আনেন।
বিপ্লবী আন্দোলনের অমোঘ আকর্ষণ!
১৯৩০ সালে চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহ বা অস্ত্রাগার দখল এবং পরে জালালাবাদ পাহাড়ের যুদ্ধ প্রীতিলতার জীবনের মোড় ঘুড়িয়ে দেয়। বিপ্লবী আন্দোলন তাঁকে অমোঘ আকর্ষণে টানতে থাকে। এ সময় তিনি কলকাতায় অবস্থানরত বিপ্লবীদের সঙ্গে যোগাযোগের কাজ করতে গিয়ে চাঁদপুরে পুলিশ ইন্সপেক্টর তারিণী মুখার্জী হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত বিপ্লবী রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের সঙ্গে বোনের পরিচয়ে দেখা করেন। রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের ফাঁসির ঘটনাও তাঁর মনে গভীর রেখাপাত করে। এর মনে হতে থাকে, মাতৃভূমির পরাধীনতার শৃঙ্খল ছিন্ন করার জন্য যখন দেশে সশস্ত্র সংগ্রাম চলছে, বিপ্লবীরা সাহসের সঙ্গে লড়াই চালিয়ে মৃত্যুবরণ করছে, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ডিগ্রির কী মূল্য আছে? এর পরও অন্যদের অনুরোধে কোনো রকমে বিএ পরীক্ষা দিয়ে প্রীতিলতা চট্টগ্রামে ফিরে এসে নন্দনকানন অপর্ণাচরণ মধ্য ইংরেজি বালিকা বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে যোগ দেন এবং বিপ্লবী রাজনীতির সঙ্গে নিজেকে আরো গভীরভাবে যুক্ত করে ফেলেন। অন্যদিকে ফল প্রকাশ হলে দেখা যায় প্রীতিলতা ডিসটিনকশন নিয়ে বিএ পাস করেছেন।
স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রতি প্রীতিলতার নিষ্ঠা ও একাগ্রতা নিয়ে কারো সংশয় ছিল না। কিন্তু ওই সময় বিপ্লবী আন্দোলনের নারীদের সরাসরি অংশগ্রহণ করার কোনো রীতি ছিল না বিধায় বিষয়টি ছিল অত্যন্ত স্পর্শর্কাতর। চট্টগ্রামে ফিরেই প্রীতিলতা ও কল্পনা দত্ত দুজনইে বিপ্লবী কাজে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করার আগ্রহ প্রকাশ করতে থাকেন। অবশেষে চট্টগ্রামের বিপ্লবীদের তৎকালীন অন্যতম প্রধান কেন্দ্র পটিয়া থানায় ধলঘাটের এক গোপন ঘাঁটিতে সূর্যসেনের সঙ্গে প্রীতিলতার সাক্ষাতের ব্যবস্থা হয়। সাবিত্রী দেবীর বাড়িতে বিপ্লবীরা আছে এই খবর পেয়ে ব্রিটিশ সৈন্যরা বাড়িটি ঘিরে ফেলে এবং উভয় পক্ষের সংঘর্ষে বিপ্লবী নির্মল সেন ও অপূর্ব সেন (ভোলা) শহীদ হন। বিপ্লবীদের গুলিতে ক্যাপ্টেন ক্যামেরন মারা যান। প্রীতিলতাকে সঙ্গে নিয়ে মাস্টারদা সেখান থেকে নিরাপদে আত্মরক্ষা করতে করতে সক্ষম হন।
নেতা থাকবে সবার আগে-নেতা ফিরবে সবার পরে!
এরপর সর্বাধিনায়ক মাস্টারদা সূর্যসেন প্রীতিলতার দায়িত্ববোধ, সাহসিকতা ও চারিত্রিক দৃঢ়তায় সন্তুষ্ট হয়ে তাঁকে পাহাড়তলীতে অবস্থিত ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ অভিযানের নেতৃত্বের দায়িত্ব অর্পণ করেন। ১৯৩২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর রাত ১০টায় সেই অভিযান শুরু হয়। প্রীতিলতার নেতৃত্বে এই অভিযানে অংশ নেন কালিকিঙ্ককর দে, শান্তি চক্রবর্তী, বীরেশ্বর রায়, প্রফুল্ল দাস, সুশীল দে, মহেন্দ্র চৌধুরী এবং পান্না সেন। এই দুঃসাহসিক অভিযানে সফল নেতৃত্ব দিয়ে ফিরে আসার পথে গুলিবিদ্ধ হন প্রীতিলতা। সামরিক কায়দায় আক্রমণের সময় নেতা থাকবে সবার আগে এবং ফেরার সময় সাথীদের নিরাপদে সরে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়ে নেতা ফিরবে সবার পরে_এই নিয়ম তিনি অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছিলেন। আরো নির্দেশ ছিল যেকোনো অবস্থাতেই জীবিত ধরা দেওয়া চলবে না। আহত অবস্থায় যাতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শক্তি তাঁকে জীবিত ধরে ফেলতে না পারে সে জন্য তিনি পূর্বনির্দেশের প্রতি অবিচল থেকে সায়ানাইড বিষপান করে আত্মাহুতি দেন। ২৪ সেপ্টেম্বর ভোরে ব্রিটিশ পুলিশ যখন প্রীতিলতার দেহ খুঁজে পায়, তারা একজন নারীকে আক্রমণকারী হিসেবে শনাক্ত করে হতভম্ব হয়ে পড়ে। পাহাড়তলী ক্লাব আক্রমণ এবং নির্ভীকচিত্তে মৃত্যুকে বরণ করে নেওয়ার এই ঘটনাই প্রীতিলতাকে একটি ঐতিহাসিক ও কিংবদন্তি চরিত্রে পরিণত করেছে। প্রীতিলতার মৃতদেহের জামার পকেটে পুলিশ হাতে লেখা একখানা বিবৃতি খুঁেজ পায়। এই বিবৃতিখানাই হচ্ছে নারী সমাজের কাছে তাঁর আহ্বান।
প্রীতিলতা লিখেছেন!
'দেশের মুক্তি সংগ্রামে নারী ও পুরুষের পার্থক্য আমাকে ব্যথিত করেছিল। যদি আমাদের ভাইরা মাতৃভূমির জন্য যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে পারে আমরা ভগিনীরা কেন তা পারব না? ইতিহাসে অনেক উদাহরণ আছে... স্বদেশের স্বাধীনতার জন্য ও নারীত্বের মর্যাদা রক্ষার জন্য তার শত্রুর প্রাণ সংহার করতে কিছুমাত্র দ্বিধাবোধ করেননি। ইতিহাসের পৃষ্ঠা কত নারীর বীরত্বগাথায় পূর্ণ। তবে কেন আমরা আজকের ভারতীয় নারীরা বিদেশীর দাসত্বশৃঙ্খল হতে নিজের দেশকে পুনরুদ্ধার করার জন্য এই মহান যুদ্ধে যোগদান করব না?...'
'নারীরা আজ কঠোর সঙ্কল্প নিয়েছে...। সশস্ত্র ভারতীয় নারী সহস্র বিপদ ও বাধাকে চূর্ণ করে এই বিদ্রোহ ও সশস্ত্র আন্দোলনে যোগদান করবেন এবং তার জন্য নিজেকে তৈরি করবেন_এই আশা নিয়ে আজ আত্মদানে আগুয়ান হলাম।'
প্রীতিলতার জন্মশতবার্ষিকীতে দাঁড়িয়ে বলা যেতে পারে যে স্বাধীনতার স্বপ্ন তিনি দেখেছিলেন সেই প্রকৃত স্বাধীনতা এখনো আসেনি। দেশ ভৌগোলিকভাবে স্বাধীন হয়েছে, কিন্তু শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠিত হয়নি। তিনি নারীদের যে অবস্থানে দেখতে চেয়েছিলেন আমাদের দেশের নারীরা আজও সেই জায়গায় পেঁৗছাতে পারেনি। একমাত্র সেই ধরনের শোষণহীন ও নারী-পুরুষের সমতার ভিত্তিতে সমাজব্যবস্থা বিনির্মাণ করাই হবে তাঁর প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা নিবেদন।
মূলত ভারবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামে দুটি ধারা ছিল_একটি ভারতের বৃহৎ বুর্জোয়া শ্রেণীর প্রতিনিধিত্বকারী আপসমুখী ধারা, আরেকটি ভারতীয় জাতীয় বুর্জোয়া ও পেটি বুর্জোয়াদের জাতীয়তাবাদী সশস্ত্র সংগ্রামের ধারা বা আপসহীন ধারা। গান্ধী, জওয়াহেরলাল নেহরু প্রমুখ ছিলেন প্রথমোক্ত দলে আর সুভাষ চন্দ্র বসু, সূর্যসেন, প্রীতিলতা, ভগৎ সিং, আশফাক উল্লাহ, যতীন দাস প্রমুখ ছিলেন শেষোক্ত ধারার। যদিও ভারতবর্ষের স্বাধীনতার পর ক্ষমতা চলে যায় আপসমুখী ধারার হাতে, কিন্তু এ ক্ষেত্রে সশস্ত্র বিপ্লবীদের তৎপরতাও সমান ভূমিকা রেখেছে।
প্রশ্ন হলো_প্রকৃত অর্থে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ কেন ১৯৪৭ সালে কংগ্রেস এবং মুসলিম লীগের হাতে ক্ষমতা তড়িঘড়ি করে হস্তান্তর করে? এর কারণ, তারা সেদিন বুঝতে পেরেছিল তাদের প্রত্যক্ষ শোষণ যদি ভারতবর্ষে আরো সময় ধরে চলতে থাকে তাহলে হয়তো বা গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তাদের দেশ ছাড়তে হবে। আর ক্ষমতা চলে যাবে হয়তো শ্রমিক-কৃষক-মধ্যবিত্তদের দখলে। ৪৬-এর নৌবিদ্রোহ, তেলেঙ্গনা, রশিদ আলী দিবসকে কেন্দ্র করে কলকাতায় গণবিক্ষোভ, সেনাবাহিনীতে অসন্তোষ ইত্যাদি তাদের সেই আশঙ্কাকে প্রায় বাস্তবে পরিণত করেছিল। এমতাবস্থায় এই ভারতবর্ষকে সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে দ্বিখণ্ডিত করে কংগ্রেস এবং মুসলিম লীগের আপসকামী নেতৃত্বের কাছে ক্ষমতা সঁপে গেলে পরবর্তী সময়ে পরোক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। সত্যি সত্যিই ৪৭-পরবর্তী ভারতে ব্রিটিশ এবং মার্কিন লগি্ন পুঁজির আধিপত্য এই মতামতের যৌক্তিকতাকে প্রমাণ করে।
প্রথম শহীদ নারী বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দাদার!
যে সশস্ত্র বিপ্লবীরা সেদিন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন তাঁদের মধ্যে প্রথম শহীদ নারী বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দাদার। মাস্টারদা সূর্যসেনের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ভারতীয় রিপাবলিকান আর্মিতে যোগ দিয়ে তিনি স্বাধীনতা আন্দোলনে নিজেকে উৎসর্গ করেন। ১৯৩২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের পাহাড়তলীতে ইউরোপিয়ান ক্লাবে এক দুঃসাহসিক সামরিক অভিযানে তিনি আত্মাহুতি দিয়েছিলেন। প্রাীতিলতা বাংলাদেশের প্রথম নারী শহীদ।
প্রীতিলতা ওয়াদ্দাদারের জন্ম ১৯১১ সালের ৫ মে। তাঁর ডাকনাম ছিল রানি। বাবার নাম জগবন্ধু ওয়াদ্দাদার। তিনি ছিলেন তৎকালীন চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যাল অফিসের হেড কেরানি। মা প্রতিভা ওয়াদ্দাদার গৃহিণী।
ডা. খাস্তগীর উচ্চ ইংরেজি বালিকা বিদ্যালয়ে একেবারে ক্লাস থ্রিতে ভর্তি হয়ে প্রীতিলতার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু হয়। চাচাতো ভাই অমৃত সূদনের মাধ্যমে তিনি বিপ্লবী রাজনীতির খবরাখবর শুনতে পেতেন। স্বদেশি বিপ্লবীদের বীরত্বের সংবাদ জানতে প্রীতিলতার ছিল অদম্য আগ্রহ। স্কুলশিক্ষিকা উষা চট্যোপাধ্যায়ের মাধ্যমে তিনি অনুপ্রাণিত হতেন। চট্টগ্রাম কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র বিজনের কাছ থেকে নিয়ে প্রীতিলতা 'ক্ষুদিরাম', 'কানাইলাল', 'বাঘা যতীন', 'দেশের কথা' ইত্যাদি বইগুলো পড়েন।
বিপ্লবী বিজয় দস্তিদারের মাধ্যমে প্রীতিলতা রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার প্রচেষ্টা চালান। এর মধ্যে ১৯২৮ সালে প্রীতিলতা প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকায় ইডেন কলেজে ভর্তি হন। ইডেন কলেজের অধ্যাপিকা নীলিমা সেনের মাধ্যমে প্রীতিলতা ঢাকায় বিপ্লবী দল শ্রীসংঘের মহিলা শাখা দীপালি সংঘের সঙ্গে যুক্ত হন। এরপর গ্রীষ্মের ছুটিতে চট্টগ্রাম গেলে বিজন দস্তিদারের মাধ্যমে সূর্যসেন প্রীতিলতার বিপ্লবী রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার বিষয়ে অবগত হন এবং তাঁকে অপেক্ষা করতে বলেন। ইতিমধ্যে প্রীতিলতার পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। তিনি মেয়েদের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করে মাসিক কুড়ি টাকা বৃত্তি অর্জন করেন। এদিকে তাঁর মা-বাবা বিয়ের চেষ্টা চালাতে থাকলে প্রীতিলতা ওই প্রস্তাব নাকচ করে দিয়ে কলকাতায় বেথুন কলেজে দর্শন বিষয়ে অনার্সে ভর্তি হন।
১৯২৯ সালে চট্টগ্রামে 'যুগান্তর' দলের উদ্যোগে জেলা রাজনৈতিক সম্মেলন, জেলা যুব সম্মেলন ও জেলা ছাত্রছাত্রী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনগুলোর সভাপতিত্ব করেন যথাক্রমে সুভাষ চন্দ্র বসু, জ্যোতিষ ঘোষ ও নৃপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। এ সময় প্রীতিলতা পূজার ছুটিতে বাড়িতে এসেছিলেন। তাঁর এবং আরো কয়েকজন মেয়ের প্রস্তাব অনুযায়ী একটি নারী সম্মেলনও একই সঙ্গে অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনের প্রধান দায়িত্ব স্থানীয় মহিলারাই গ্রহণ করে। নারী সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন কংগ্রেস নেত্রী লতিকা বসু। এই নারী সম্মেলনের স্বেচ্ছাসেবিকা বাহিনী গঠনের কাজ করতে গিয়েই প্রীতিলতার সঙ্গে যোগাযোগ ঘটে কল্পনা দত্তের।
প্রীতিলতা ও কল্পনা দত্ত প্রমুখ তখন বেথুন কলেজের বারণসীদাস স্ট্রিটের ছাত্রী নিবাসে থাকতেন। বেথুন কলেজে প্রীতিলতা কলকাতায় অধ্যয়নরত চট্টগ্রামের আরো কয়েকজন ছাত্রী কল্পনা দত্ত, সরোজনী পাল, নলিনী পাল ও অন্যদের সহযোগিতায় গোপন বিপ্লবী চক্র গড়ে তোলেন, যাদের কাজ ছিল অর্থ সংগ্রহ করে চট্টগ্রামে পাঠানো। কলকাতা থেকে বোমা তৈরির সরঞ্জাম 'গান-কটন' কেনার অর্থ জোগাড় করতে ছাত্রীদের কাছ থেকে গায়ের অলংকার সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রীতিলতা প্রথমে নিজের হাতের সোনার চুড়ি ও গলার চেইন দিয়ে দেন। তিনি এমনকি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কলকাতা থেকে বোমার খোল চট্টগ্রামে বয়ে আনেন।
বিপ্লবী আন্দোলনের অমোঘ আকর্ষণ!
১৯৩০ সালে চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহ বা অস্ত্রাগার দখল এবং পরে জালালাবাদ পাহাড়ের যুদ্ধ প্রীতিলতার জীবনের মোড় ঘুড়িয়ে দেয়। বিপ্লবী আন্দোলন তাঁকে অমোঘ আকর্ষণে টানতে থাকে। এ সময় তিনি কলকাতায় অবস্থানরত বিপ্লবীদের সঙ্গে যোগাযোগের কাজ করতে গিয়ে চাঁদপুরে পুলিশ ইন্সপেক্টর তারিণী মুখার্জী হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত বিপ্লবী রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের সঙ্গে বোনের পরিচয়ে দেখা করেন। রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের ফাঁসির ঘটনাও তাঁর মনে গভীর রেখাপাত করে। এর মনে হতে থাকে, মাতৃভূমির পরাধীনতার শৃঙ্খল ছিন্ন করার জন্য যখন দেশে সশস্ত্র সংগ্রাম চলছে, বিপ্লবীরা সাহসের সঙ্গে লড়াই চালিয়ে মৃত্যুবরণ করছে, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ডিগ্রির কী মূল্য আছে? এর পরও অন্যদের অনুরোধে কোনো রকমে বিএ পরীক্ষা দিয়ে প্রীতিলতা চট্টগ্রামে ফিরে এসে নন্দনকানন অপর্ণাচরণ মধ্য ইংরেজি বালিকা বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে যোগ দেন এবং বিপ্লবী রাজনীতির সঙ্গে নিজেকে আরো গভীরভাবে যুক্ত করে ফেলেন। অন্যদিকে ফল প্রকাশ হলে দেখা যায় প্রীতিলতা ডিসটিনকশন নিয়ে বিএ পাস করেছেন।
স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রতি প্রীতিলতার নিষ্ঠা ও একাগ্রতা নিয়ে কারো সংশয় ছিল না। কিন্তু ওই সময় বিপ্লবী আন্দোলনের নারীদের সরাসরি অংশগ্রহণ করার কোনো রীতি ছিল না বিধায় বিষয়টি ছিল অত্যন্ত স্পর্শর্কাতর। চট্টগ্রামে ফিরেই প্রীতিলতা ও কল্পনা দত্ত দুজনইে বিপ্লবী কাজে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করার আগ্রহ প্রকাশ করতে থাকেন। অবশেষে চট্টগ্রামের বিপ্লবীদের তৎকালীন অন্যতম প্রধান কেন্দ্র পটিয়া থানায় ধলঘাটের এক গোপন ঘাঁটিতে সূর্যসেনের সঙ্গে প্রীতিলতার সাক্ষাতের ব্যবস্থা হয়। সাবিত্রী দেবীর বাড়িতে বিপ্লবীরা আছে এই খবর পেয়ে ব্রিটিশ সৈন্যরা বাড়িটি ঘিরে ফেলে এবং উভয় পক্ষের সংঘর্ষে বিপ্লবী নির্মল সেন ও অপূর্ব সেন (ভোলা) শহীদ হন। বিপ্লবীদের গুলিতে ক্যাপ্টেন ক্যামেরন মারা যান। প্রীতিলতাকে সঙ্গে নিয়ে মাস্টারদা সেখান থেকে নিরাপদে আত্মরক্ষা করতে করতে সক্ষম হন।
নেতা থাকবে সবার আগে-নেতা ফিরবে সবার পরে!
এরপর সর্বাধিনায়ক মাস্টারদা সূর্যসেন প্রীতিলতার দায়িত্ববোধ, সাহসিকতা ও চারিত্রিক দৃঢ়তায় সন্তুষ্ট হয়ে তাঁকে পাহাড়তলীতে অবস্থিত ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ অভিযানের নেতৃত্বের দায়িত্ব অর্পণ করেন। ১৯৩২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর রাত ১০টায় সেই অভিযান শুরু হয়। প্রীতিলতার নেতৃত্বে এই অভিযানে অংশ নেন কালিকিঙ্ককর দে, শান্তি চক্রবর্তী, বীরেশ্বর রায়, প্রফুল্ল দাস, সুশীল দে, মহেন্দ্র চৌধুরী এবং পান্না সেন। এই দুঃসাহসিক অভিযানে সফল নেতৃত্ব দিয়ে ফিরে আসার পথে গুলিবিদ্ধ হন প্রীতিলতা। সামরিক কায়দায় আক্রমণের সময় নেতা থাকবে সবার আগে এবং ফেরার সময় সাথীদের নিরাপদে সরে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়ে নেতা ফিরবে সবার পরে_এই নিয়ম তিনি অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছিলেন। আরো নির্দেশ ছিল যেকোনো অবস্থাতেই জীবিত ধরা দেওয়া চলবে না। আহত অবস্থায় যাতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শক্তি তাঁকে জীবিত ধরে ফেলতে না পারে সে জন্য তিনি পূর্বনির্দেশের প্রতি অবিচল থেকে সায়ানাইড বিষপান করে আত্মাহুতি দেন। ২৪ সেপ্টেম্বর ভোরে ব্রিটিশ পুলিশ যখন প্রীতিলতার দেহ খুঁজে পায়, তারা একজন নারীকে আক্রমণকারী হিসেবে শনাক্ত করে হতভম্ব হয়ে পড়ে। পাহাড়তলী ক্লাব আক্রমণ এবং নির্ভীকচিত্তে মৃত্যুকে বরণ করে নেওয়ার এই ঘটনাই প্রীতিলতাকে একটি ঐতিহাসিক ও কিংবদন্তি চরিত্রে পরিণত করেছে। প্রীতিলতার মৃতদেহের জামার পকেটে পুলিশ হাতে লেখা একখানা বিবৃতি খুঁেজ পায়। এই বিবৃতিখানাই হচ্ছে নারী সমাজের কাছে তাঁর আহ্বান।
প্রীতিলতা লিখেছেন!
'দেশের মুক্তি সংগ্রামে নারী ও পুরুষের পার্থক্য আমাকে ব্যথিত করেছিল। যদি আমাদের ভাইরা মাতৃভূমির জন্য যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে পারে আমরা ভগিনীরা কেন তা পারব না? ইতিহাসে অনেক উদাহরণ আছে... স্বদেশের স্বাধীনতার জন্য ও নারীত্বের মর্যাদা রক্ষার জন্য তার শত্রুর প্রাণ সংহার করতে কিছুমাত্র দ্বিধাবোধ করেননি। ইতিহাসের পৃষ্ঠা কত নারীর বীরত্বগাথায় পূর্ণ। তবে কেন আমরা আজকের ভারতীয় নারীরা বিদেশীর দাসত্বশৃঙ্খল হতে নিজের দেশকে পুনরুদ্ধার করার জন্য এই মহান যুদ্ধে যোগদান করব না?...'
'নারীরা আজ কঠোর সঙ্কল্প নিয়েছে...। সশস্ত্র ভারতীয় নারী সহস্র বিপদ ও বাধাকে চূর্ণ করে এই বিদ্রোহ ও সশস্ত্র আন্দোলনে যোগদান করবেন এবং তার জন্য নিজেকে তৈরি করবেন_এই আশা নিয়ে আজ আত্মদানে আগুয়ান হলাম।'
প্রীতিলতার জন্মশতবার্ষিকীতে দাঁড়িয়ে বলা যেতে পারে যে স্বাধীনতার স্বপ্ন তিনি দেখেছিলেন সেই প্রকৃত স্বাধীনতা এখনো আসেনি। দেশ ভৌগোলিকভাবে স্বাধীন হয়েছে, কিন্তু শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠিত হয়নি। তিনি নারীদের যে অবস্থানে দেখতে চেয়েছিলেন আমাদের দেশের নারীরা আজও সেই জায়গায় পেঁৗছাতে পারেনি। একমাত্র সেই ধরনের শোষণহীন ও নারী-পুরুষের সমতার ভিত্তিতে সমাজব্যবস্থা বিনির্মাণ করাই হবে তাঁর প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা নিবেদন।
No comments