বেহাল চিকিৎসাসেবা-জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতে হবে

চিকিৎসক ঘুমাচ্ছেন বিশ্রামকক্ষে, চিকিৎসকের ভূমিকা পালন করছে ওয়ার্ডবয়। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসাসেবা নিয়ে সরেজমিন প্রতিবেদনে এমন তথ্য প্রকাশিত হয়েছে কালের কণ্ঠে। এতে বোঝা যায়, হাসপাতালে কেমন সেবা পাচ্ছেন জরুরি রোগীরা। সাংবাদিকরা ওই হাসপাতালে দুই দিন অবস্থান করে দুরবস্থাগুলো প্রত্যক্ষ করেছেন।


দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে, কর্তৃপক্ষের কর্তব্যে অবহেলা এতই বেশি ছিল যে দুই দিন পর্যন্ত সাংবাদিকদের উপস্থিতি এবং তাঁদের তথ্য সংগ্রহ করার সময়ও কর্তৃপক্ষ তাদের অবহেলা কাটিয়ে ওঠেনি। তথ্য সংগ্রহ করার জন্য একপর্যায়ে হাসপাতালের পরিচালকের সঙ্গে কথা বললে তখনো তাঁকে বলতে শোনা যায়, তিনি এ ধরনের অনিয়ম হতে দেবেন না! কিন্তু যেটুকু হচ্ছে কিংবা হয়েছে, সে ব্যাপারে কে বলবে, তা বোঝা যায় না।
সরকারি হাসপাতালে সাধারণত নিম্ন আয়ের মানুষ আসে চিকিৎসা পেতে। তাদের মধ্যে আবার অনেকে আছে, যারা লেখাপড়াও তেমন জানে না কিংবা জানলেও সচেতন নয় তেমন। হয়তো গ্রাম থেকে চিকিৎসা নিতে এমন রোগীও আসে, যারা হয়তো এর আগে কখনো শহরেই আসেনি। এমন রোগীর পক্ষে হাসপাতালের চিকিৎসকদের চেনা কিংবা তাঁদের কাছ থেকে প্রাপ্য চিকিৎসাসেবাটুকু সম্পর্কে আলোচনা করা সম্ভব হয় না। সে ক্ষেত্রে চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মীদের সততা ও দায়িত্ববোধই তাদের চিকিৎসাসেবাপ্রাপ্তির নিশ্চয়তা দিতে পারে। কিন্তু চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে যে চিত্র দেখা গেল, তাতে সেখানে চিকিৎসালাভের আশায় আসা রোগীদের অবস্থা যে কী, তা খুলে বলার অপেক্ষা রাখে না।
নিয়ম অনুযায়ী হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক ও স্টাফদের ইউনিফর্ম ও নাম-পরিচয় থাকার কথা। কিন্তু সেই হাসপাতালে তাও ছিল না। এমন পরিস্থিতিতে একজন রোগীর পক্ষে চিকিৎসককে চেনা কোনোমতেই সম্ভব নয়। আর সেই সুযোগে দালালের খপ্পরে পড়াটাও অস্বাভাবিক নয়। এই সুযোগে যেকোনো হাসপাতালে বহিরাগতদের অনুপ্রবেশ সম্ভব। এমন অবস্থা চট্টগ্রাম হাসপাতালেও দেখা গেছে। প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, সেখানে বহিরাগতরা রোগীকে ট্রলিতে করে ওয়ার্ডে নিয়ে যাচ্ছে এবং সে জন্য রোগীর কাছে ২০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত দাবি করছে।
এমন দুরবস্থা শুধু চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে থাকলেও কথা ছিল। অনিয়ম-দুর্নীতি দেশের অন্য মেডিক্যাল কলেজগুলোতেও দেখা যায়। তবে বড় বড় শহরে প্রশাসনের নাকের ডগায় যখন এই দুরবস্থা চলতে থাকে, তখন স্বাভাবিকভাবেই মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস কমে যেতে থাকে। চিকিৎসা-সুবিধার ক্ষেত্রে অবহেলার কারণে রোগীর দুর্ভোগই শুধু বাড়ে না, কখনো রোগীকে বিনা চিকিৎসা কিংবা অপচিকিৎসার কারণে মৃত্যুবরণও করতে হতে পারে। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে একজন ওয়ার্ডবয়কে ইসিজির ব্যবস্থাপত্র দিতে দেখা গেছে। সেই রোগীর কি সত্যিই ইসিজি প্রয়োজন ছিল? যদি না থাকে, তাহলে এই সময়ক্ষেপণ এবং ইসিজি করানোটা তার যথাযথ চিকিৎসায় বিঘ্ন ঘটাবে নিশ্চিত। এ অনিয়ম-অব্যবস্থায় রোগীর মৃত্যু কিংবা দুর্ভোগ বৃদ্ধির জন্য দায়ী থাকবে কে?
এ পরিস্থিতি পরিবর্তনের জন্য পত্রিকান্তরে প্রায়ই লেখালেখি হয়ে থাকে। কিন্তু সরকারের টনক নড়ে খুবই কম। চট্টগ্রামের এই সংবাদ পড়ার পর নিশ্চয়ই তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরে আসার কথা। আশা করি, এখানকার অবহেলাগুলো আমলে এনে সারা দেশের চিকিৎসাকেন্দ্রগুলো থেকে এ ধরনের অনিয়ম দূর করতে সরকার দ্রুত ব্যবস্থা নেবে।

No comments

Powered by Blogger.