মন্ত্রী-এমপিরা এখনও দিলেন না সম্পদের হিসাবঃ এভাবে দুর্নীতি নির্মূল অসম্ভব
বৃহস্পতিবার ঢাকার ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) আয়োজিত ‘দুর্নীতি দমন কমিশন কার্যকর : কেন ও কীভাবে’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এবং পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চেয়ারম্যান গোলাম রহমান কয়েকটি মোক্ষম কথা বলেছেন।
তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে মন্ত্রী ও এমপিরা সম্পদের হিসাব দিলে এবং তা পরীক্ষা করা হলে দুর্নীতি কমবে। এর ফলে যে উদাহরণ সৃষ্টি হবে, তাতে সরকারি কর্মকর্তারাও সাবধান হয়ে যাবেন এবং দুর্নীতিতে জড়াবেন না। রাজনৈতিক নেতাদের ব্যবসায়ীদের ওপর নির্ভরশীলতাকেও দুর্নীতির আরেকটি কারণ বলে উল্লেখ করেছেন দুদক চেয়ারম্যান। তিনি বলেছেন, দায়িত্ব নেয়ার সময় মন্ত্রী-এমপিদের সম্পদের হিসাব দাখিলের বিষয়টি বর্তমান সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকারের মধ্যে ছিল। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত একাধিকবার এ প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের কথা বলেছেন। কিন্তু গত ১১ মাসেও এই অঙ্গীকার বাস্তবায়িত হয়নি। সেমিনারে অধ্যাপক মোজাফফর আহমদও প্রসঙ্গটি তুলেছিলেন। তিনি বলেছেন, দুর্নীতি রোধ করতে হলে রাজনৈতিক দলগুলোকে এক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ করতে হেব। সেমিনারের আগে অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ মন্ত্রী-এমপিদের সম্পদের হিসাব দাখিলে বিলম্ব প্রসঙ্গে আমার দেশ’কে বলেছেন, এটা তো আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অঙ্গীকার। এ অঙ্গীকার অবিলম্বে পূরণ করা উচিত। তাদের নির্বাচনী অঙ্গীকারের কথা মানুষ ভুলে যাবে না। তারা যদি মনে করেন, বেশি দিন গড়িয়ে গেলে মানুষ ভুলে যাবে তাহলে ভুল করবেন। দেশে যেভাবে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দখলবাজি চলছে তাতে ক্ষমতাবানদের অবৈধ সম্পদ বাড়ছেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাই সম্পদ অর্জনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হিসাব দাখিল করা আবশ্যক। শুধু মন্ত্রী এবং এমপিদের সম্পদ বিবরণী নিলে চলবে না, তাদের ওপর নির্ভরশীল কিংবা নির্ভরশীল নয়—পরিবার ও পোষ্যদের মধ্যে পড়ে এমন ব্যক্তির সম্পদের হিসাবও নিতে হবে। কেননা, মন্ত্রী-এমপিদের সন্তান ছাড়াও পরিবারের বিভিন্ন সদস্যের নামে অঢেল সম্পদ থাকার প্রমাণ এরই মধ্যে পাওয়া গেছে। এছাড়া শুধু একবার সম্পদ বিবরণী নিলে কাজ হবে না; নিয়মিতভাবে প্রতি বছর নিতে হবে এবং তা মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
এ কথাগুলো শক্তিশালী অনেকের পছন্দ না হলেও এসবই হচ্ছে সাধারণ মানুষের মনের কথা। এখানে মাও সে তুং-এর সেই অমর উক্তির উল্লেখ অপ্রাসঙ্গিক হবে না—‘মাছের মাথায় যেমন সবার আগে পচন ধরে, তেমনি সমাজের পচন ধরে সর্বাগ্রে শীর্ষ দেশে।’ আমজনতার তুলনায় সমাজের শীর্ষে অবস্থানকারীরা সংখ্যায় একবারেই নগণ্য। তাই দুর্নীতি দমনের নামে কয়েক কোটি মানুষের মধ্যে হুলস্থুল ফেলে দেয়ার পরিবর্তে সমাজের ওপরতলাটি যদি সাফসুতরো করা যায়, তবে দুর্নীতির বিষবৃক্ষটিও জীবনশক্তি হারিয়ে আপনা থেকে মড়াত্ করে ভেঙে পড়বে। প্রশ্ন উঠতে পারে—তাহলে এই সহজ কাজটি এতদিন করা হয়নি কেন? এর উত্তর হচ্ছে— কাজটা অতিসহজ মনে হলেও আদতে একেবারেই সহজ নয়। সমাজের শীর্ষে অবস্থানকারীরা সংখ্যায় কম হলেও অত্যন্ত শক্তিশালী। তারাই সমাজ চালায়, রাষ্ট্র চালায়, নিজের অবস্থান আরও মজবুত করার জন্য পরস্পর শত্রুতায় লিপ্ত হয়। কিন্তু তাদের সাবান-শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করার কথা উঠলেই তারা সব শত্রুতা ভুলে গিয়ে ‘দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে’ একজোট হয়ে যায় এবং দুর্নীতিবিরোধী যে কোনো উদ্যোগ নস্যাত্ করে দেয়। অতএব, সমাজের ওপরতলাকে দুর্নীতিমুক্ত করতে হলে জোরালো রাজনৈতিক অঙ্গীকার চাই।
আমাদের দুর্ভাগ্য যে, এদেশের রাজনৈতিক নেতারা অঙ্গীকার করেন সেটা ভঙ্গ করার জন্যই। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ক্ষেত্রে কথাটা আরও বেশি সত্য। বিগত জাতীয় নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট অঙ্গীকার করেছিল যে, নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় গেলে এই জোটের মন্ত্রী এবং এমপিরা নিজেদের সম্পদ বিবরণী দাখিল করবেন। যদি সেই প্রতিশ্রুতি পালন করা হতো তবে তাদেরই ভাবমূর্তি বাড়তো, দেশও এগিয়ে যেত স্বচ্ছতার পথে। কিন্তু সেটা তো হয়ইনি, উপরন্তু চারদিকে যেভাবে খাই খাই রব শুরু হয়ে গেছে তাতে মনে হয়, বর্তমান ক্ষমতাসীনরা ভাবমূর্তি, স্বচ্ছতা ইত্যাদির থোড়াই পরোয়া করেন। অন্যদল ক্ষমতায় গেলে অবস্থা অন্যরকম, অর্থাত্ ভালো হতো, তেমনটি আশা করার পরিবেশও দেশ থেকে আগেই অন্তর্হিত হয়েছে। অথচ গণতন্ত্রের স্বার্থে, আইনের শাসন নিশ্চিত করার স্বার্থে, সর্বোপরি দেশ ও জাতির স্থায়ী অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির স্বার্থে ক্ষমতাসীন রাজনীতিকদেরই উদ্যোগী হওয়া উচিত দুর্নীতির মূলোচ্ছেদে। এর ব্যত্যয় ঘটলে গোটা জাতিকে ভুগতে হবে; তবে রাজনীতিকতরা ভুগবেন সবচেয়ে বেশি। এক এগারোর তাণ্ডব এত তাড়াতাড়ি ভুলে যাওয়া কারোর জন্যই মঙ্গলজনক নয়।
এ কথাগুলো শক্তিশালী অনেকের পছন্দ না হলেও এসবই হচ্ছে সাধারণ মানুষের মনের কথা। এখানে মাও সে তুং-এর সেই অমর উক্তির উল্লেখ অপ্রাসঙ্গিক হবে না—‘মাছের মাথায় যেমন সবার আগে পচন ধরে, তেমনি সমাজের পচন ধরে সর্বাগ্রে শীর্ষ দেশে।’ আমজনতার তুলনায় সমাজের শীর্ষে অবস্থানকারীরা সংখ্যায় একবারেই নগণ্য। তাই দুর্নীতি দমনের নামে কয়েক কোটি মানুষের মধ্যে হুলস্থুল ফেলে দেয়ার পরিবর্তে সমাজের ওপরতলাটি যদি সাফসুতরো করা যায়, তবে দুর্নীতির বিষবৃক্ষটিও জীবনশক্তি হারিয়ে আপনা থেকে মড়াত্ করে ভেঙে পড়বে। প্রশ্ন উঠতে পারে—তাহলে এই সহজ কাজটি এতদিন করা হয়নি কেন? এর উত্তর হচ্ছে— কাজটা অতিসহজ মনে হলেও আদতে একেবারেই সহজ নয়। সমাজের শীর্ষে অবস্থানকারীরা সংখ্যায় কম হলেও অত্যন্ত শক্তিশালী। তারাই সমাজ চালায়, রাষ্ট্র চালায়, নিজের অবস্থান আরও মজবুত করার জন্য পরস্পর শত্রুতায় লিপ্ত হয়। কিন্তু তাদের সাবান-শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করার কথা উঠলেই তারা সব শত্রুতা ভুলে গিয়ে ‘দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে’ একজোট হয়ে যায় এবং দুর্নীতিবিরোধী যে কোনো উদ্যোগ নস্যাত্ করে দেয়। অতএব, সমাজের ওপরতলাকে দুর্নীতিমুক্ত করতে হলে জোরালো রাজনৈতিক অঙ্গীকার চাই।
আমাদের দুর্ভাগ্য যে, এদেশের রাজনৈতিক নেতারা অঙ্গীকার করেন সেটা ভঙ্গ করার জন্যই। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ক্ষেত্রে কথাটা আরও বেশি সত্য। বিগত জাতীয় নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট অঙ্গীকার করেছিল যে, নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় গেলে এই জোটের মন্ত্রী এবং এমপিরা নিজেদের সম্পদ বিবরণী দাখিল করবেন। যদি সেই প্রতিশ্রুতি পালন করা হতো তবে তাদেরই ভাবমূর্তি বাড়তো, দেশও এগিয়ে যেত স্বচ্ছতার পথে। কিন্তু সেটা তো হয়ইনি, উপরন্তু চারদিকে যেভাবে খাই খাই রব শুরু হয়ে গেছে তাতে মনে হয়, বর্তমান ক্ষমতাসীনরা ভাবমূর্তি, স্বচ্ছতা ইত্যাদির থোড়াই পরোয়া করেন। অন্যদল ক্ষমতায় গেলে অবস্থা অন্যরকম, অর্থাত্ ভালো হতো, তেমনটি আশা করার পরিবেশও দেশ থেকে আগেই অন্তর্হিত হয়েছে। অথচ গণতন্ত্রের স্বার্থে, আইনের শাসন নিশ্চিত করার স্বার্থে, সর্বোপরি দেশ ও জাতির স্থায়ী অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির স্বার্থে ক্ষমতাসীন রাজনীতিকদেরই উদ্যোগী হওয়া উচিত দুর্নীতির মূলোচ্ছেদে। এর ব্যত্যয় ঘটলে গোটা জাতিকে ভুগতে হবে; তবে রাজনীতিকতরা ভুগবেন সবচেয়ে বেশি। এক এগারোর তাণ্ডব এত তাড়াতাড়ি ভুলে যাওয়া কারোর জন্যই মঙ্গলজনক নয়।
No comments