ভুল পরীক্ষায় ভুল চিকিৎসা by তৌফিক মারুফ

নোয়ার হোসেনের বয়স ৮২ বছর। তাঁর প্রোস্টেড গ্লান্ডে অস্ত্রোপচার করা হয় রাজধানীর ইস্কাটনের আল বারাকা কিডনি হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটে। অধ্যাপক ড. মো. ফকরুল ইসলাম অস্ত্রোপচার করেন। এর পর অপসারিত মাংসপিণ্ডের টিস্যু বায়োপসি করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। একই হাসপাতালের ভেতর থাকা ইনসাফ ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড কনসালটেশন সেন্টারে বায়োপসি করা হয়। একইসঙ্গে রক্তের পিএসএ টেস্ট করা হয়। উভয় টেস্টের রিপোর্ট পাওয়ার পর চিকিৎসক ওই রোগীর স্বজনদের জানান, রোগীর প্রোস্টেটে ক্যান্সার হয়েছে।


জরুরি ভিত্তিতে আরেকটি অস্ত্রোপচার করে প্রোস্টেট কেটে ফেলতে হবে। এই পরামর্শের পাশাপাশি ওই বায়োপসি রিপোর্টের ভিত্তিতে রোগীকে উচ্চ ক্ষমতার বিশেষ কিছু ওষুধও খাওয়ানো শুরু হয়।
এমন পরিস্থিতিতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন রোগীর স্বজনরা। উচ্চ ক্ষমতার ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় রোগীর অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। উদ্বিগ্ন হয়ে স্বজনরা একই স্যাম্পল নিয়ে ধানমণ্ডি এলাকার আনোয়ারা মেডিক্যালে পুনরায় বায়োপসি করান। সেখানকার রিপোর্টে বলা হয়, ক্যান্সারের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। একইভাবে রক্তের পিএসএ পরীক্ষা করা হয়
পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। এতেও ক্যান্সার থাকার মতো লক্ষণ ধরা পড়েনি। রোগীর স্বজনরা পরে চিন্তামুক্ত হয়ে বিশেষ ওষুধ খাওয়ানো বন্ধ করে দেন।
আনোয়ার হোসেনের স্বজনরা জানান, তাঁরা বিষয়টি নিয়ে অধ্যাপক ডা. ফকরুল ইসলামের সঙ্গে কথা বললে তিনি পুনরায় বিনা মূল্যে বায়োপসি করে দেখার প্রস্তাব দেন। তবে এ নিয়ে বাড়তি সময়ক্ষেপণ, দৌড়ঝাঁপ ও হয়রানির আশঙ্কায় ওই পরিবারটি আর
কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এখন ওই রোগী তুলনামূলক ভালো ও স্বাভাবিক আছেন বলেও ওই পরিবার সূত্র জানায়।
এ রিপোর্টের বিষয়ে জানতে চাইলে ইনসাফ ডায়াগনস্টিক সেন্টারের প্যাথলজিস্ট (যিনি ওই বায়োপসি রিপোর্ট দিয়েছিলেন) ও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের প্যাথলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, 'সব ধরনের পরীক্ষাতেই অনেক সময় কিছু এদিক-সেদিক হতে পারে। সে ক্ষেত্রে হয়তো প্যাথলজিস্টের কিছু করার থাকে না। আবার একজনের পর্যবেক্ষণ এক রকম, অন্যজনের আরেক রকম হতেই পারে। এটির ক্ষেত্রে আমার পর্যবেক্ষণে ক্যান্সারের নমুনা পেয়েছি বলেই হয়তো রিপোর্ট দিয়েছি।'
আনোয়ারা মেডিক্যাল সেন্টারের বায়োপসি রিপোর্ট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ওই সেন্টারের যিনি এ রোগীর স্যাম্পলের রিভিউ করে ক্যান্সার নেই বলে রিপোর্ট দিয়েছেন, 'তিনিই তো আমার ছেলের একটি রিপোর্টে ক্যান্সার বলে উল্লেখ করেছিলেন, পরে অন্য জায়গায় টেস্ট করে দেখা যায়, আমার ছেলের আসলে ক্যান্সার নয়। এটার কী জবাব আছে!'
আনোয়ারা মেডিক্যাল সেন্টারের রোগী আনোয়ার হোসেনের স্যাম্পলের বায়োপসি করে ক্যান্সার নেই বলে রিপোর্ট দেন জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের হিস্টোপ্যাথলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ গোলাম মোস্তাফা। তিনি এ বিষয়ে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'সবার দক্ষতা, জ্ঞান বা মনোযোগ লেভেল এক নয়। আবার সব জায়গায় টেকনোলজিও এক নয়। ফলে একজনের রিপোর্টের সঙ্গে অন্যজনের রিপোর্ট ভেরি করতেই পারে। এ দিকটার প্রতি সবার নজর দেওয়া উচিত।'
তবে তিনি আরো ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, বায়োপসি টেস্ট হচ্ছে অন্য টেস্টগুলোর চেয়ে খুবই আলাদা। এক্ষেত্রে সাধারণত ৪০/৪৫ শতাংশ সহজে পজিটিভ বলে নিশ্চিত হওয়া যায়, বাকি ৪০ শতাংশের মতো একইভাবে সহজে নেগেটিভ বলে নিশ্চত হওয়া যায়, কিন্তু শেষের ১৫ বা ২০ শতাংশ নিশ্চিত হওয়া খুবই কঠিন। এসব ক্ষেত্রে যিনি পরীক্ষাটা করছেন, তিনি তাঁর জ্ঞান ও শনাক্তকৃত অবস্থানকে একেবারেই ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে বিচার-বিবেচনা করে রিপোর্ট দেন। বিশ্বের অন্যান্য স্থানেও এমন অবস্থা। যদিও উন্নত বিশ্বে এখন কিছু কিছু ব্যয়বহুল অতিউন্নত প্রযুক্তি চালু হয়েছে, যা এ দেশে এখনো সহজলভ্য নয়।
আরেক ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরে এইচআইভি-এইডস নিয়ে দীর্ঘদিন কর্মরত বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে জানান, রাজধানীতেই বেশ কয়েকজনের ক্ষেত্রে প্রথমে রক্ত পরীক্ষায় এইচআইভি পজিটিভ পাওয়া গেলেও অন্য স্থানে পরীক্ষা করা হলে সেগুলো নেগেটিভ হয়। এর মধ্যে পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে বোরহান নামের এক যুবককে এইচআইভি পজিটিভ বলে শনাক্ত করে রিপোর্ট দেওয়ার পর বিষয়টি প্রচার মাধ্যমে চলে আসে, 'যা নিয়ে ওই যুবক ও তাঁর স্বজনরা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর পুনঃপরীক্ষা করা হলে দেখা যায়, আসলে বোরহানের দেহে এইচআইভি নেই। পরে বিষয়টি নিয়ে আমরা পপুলার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলি। তারা এটি বিভিন্নভাবে চাপা দেওয়ার চেষ্টা করে।'
তিনি বলেন, এসব ক্ষেত্রে ভালোভাবে নিশ্চিত না হয়ে কোনো অবস্থাতেই প্রকাশ করা ঠিক না। বরং এক স্থানে পজিটিভ হলে অবশ্যই সরকার অনুমোদিত ও অপেক্ষাকৃত উন্নতমানের ল্যাবরেটরিতে পুনঃপরীক্ষা করা দরকার। কারণ অনেক সময়ই নিম্নমানের যন্ত্র ও অদক্ষ টেকনিশিয়ানের কারণে ভুল রিপোর্ট হতে পারে।
এইচআইভি পজিটিভদের নিয়ে কাজ করা একটি বেসরকারি সংস্থার নির্বাহী প্রধান এম এস মুক্তি কালের কণ্ঠকে জানান, তিনিও এমন একাধিক ঘটনা সম্পর্কে অবহিত আছেন, যে ক্ষেত্রে একই ব্যক্তির একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরীক্ষায় এইচআইভি পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে, অন্য খানে এসেছে নেগেটিভ। আবার একটায় নেগেটিভ হয়েছে কিন্তু অন্যটিতে পজিটিভ হওয়ারও নজির আছে বলে তিনি জানান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন এইচআইভি পজিটিভবাহী রোগী কালের কণ্ঠকে বলেন, 'অনেক দিন ধরেই আমি বিভ্রান্ত ছিলাম। প্রথমে যেখানে টেস্ট করালাম সেখানে পজিটিভ এসেছিল, পরে আরেকখানে দেখি নেগেটিভ। কিন্তু এর পরও আমার সন্দেহ দূর না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত একটি এনজিওর সহায়তায় একটি বড় ল্যাবরেটরিতে গিয়ে টেস্ট করার পর দেখি পজিটিভ এসেছে। এর পরও আরেক দফা টেস্ট করে পজিটিভ হলে তখন নিশ্চিত হই যে, আসলেই আমি এইচআইভি বহন করছি।'
সাংবাদিক দীপঙ্কর গৌতমের রক্তের ক্রিটিনিন পরীক্ষায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্ট দেয় ১ দশমিক ৭ এমজি/জিএল। একই পরীক্ষায় রাজধানীর সোনারগাঁও রোডের পদ্মা জেনারেল হাসপাতাল থেকে রিপোর্ট দেওয়া হয় দীপঙ্করের রক্তের ক্রিটিনিন ০ দশমিক ৯ এমজি/জিএল। দীপঙ্কর গৌতম কালের কণ্ঠকে বলেন, কোনটা ঠিক, কোনটা ভুল আর কোন রিপোর্টের ভিত্তিতে চিকিৎসক কী ওষুধ দিচ্ছেন তা বুঝতে পারছি না। তাই ওষুধ খাওয়া বাদ দিয়েছি। তিনি বলেন, 'বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন চিকিৎসক কোনো পরীক্ষা ছাড়াই আমার একটি পা কেটে ফেলার ব্যবস্থা করেছিলেন অতি ডায়াবেটিসের কথা বলে। পরে অন্য একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষার পর ধরা পড়ে ফাইলেরিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার কারণে আমার পায়ে সমস্যা দেখা দিয়েছে।'
কেবল এই এক-দুটি ঘটনা নয়, বিভিন্ন হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এক রিপোর্টের সঙ্গে অন্য রিপোর্টের আকাশ-পাতাল পার্থক্যের ঘটনা মানুষের মুখে মুখে। মাঝে মাঝে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা নিজেরাই উদ্বিগ্ন থাকেন। 'ভুল চিকিৎসা'র প্রধানতম কারণ হিসেবে তাঁরা ভুল রিপোর্টকেই দায়ী করেন। এ ক্ষেত্রে পরীক্ষা-নিরীক্ষার সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসকদের দক্ষতার অভাব, অসতর্কতা, উন্নত যন্ত্রপাতির অভাব ও ভালো ব্যবস্থাপনার অভাবকেও তাঁরা দায়ী করেন।
জাতীয় অধ্যাপক ডা. এম আর খান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'একজন চিকিৎসক রোগীর রোগ নির্ণয়ের জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্টের ওপর নির্ভর করেন। রিপোর্ট দেখে চিকিৎসক ব্যবস্থাপত্র দেন। সেই রিপোর্ট যদি হয় ভুল, তবে ওষুধ ও পরবর্তী সব চিকিৎসাই ভুল হবে_এটাই স্বাভাবিক। এতে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে। তাই উচ্চ ডিগ্রিধারী বিশেষজ্ঞ বা সাধারণ টেকনোলজিস্ট_যাঁরাই রোগীর বিভিন্ন দিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে থাকেন, তাঁদের অবশ্যই দায়িত্বশীল হতে হবে।' তিনি বলেন, সরকারের উচিত মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা_ যাতে কোনো ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অপ্রশিক্ষিত ও অদক্ষ টেকনোলজিস্ট না থাকেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ড. মাহমুদুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ল্যাবরেটরিগুলোর সার্বিক মানদণ্ড নিশ্চিত করা না গেলে কোনো কাজ হবে না। অনেক ক্ষেত্রেই উপযুক্ত অনুমোদন ছাড়া এখানে-সেখানে ল্যাবরেটরি গড়ে ওঠার কথা শোনা যায়। আবার ল্যাবরেটরির অনুমতি নিলেও উপযুক্ত উপকরণ ও জনবল আছে কি না, তা ঠিকভাবে দেখা হয় না। তিনি বলেন, এটা নিশ্চিত করতে কেবল কেন্দ্রীয় পর্যায়েই নয়, সব জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে একটি করে কার্যকর মনিটরিং টিম থাকা দরকার।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, অধিদপ্তরের নিবন্ধিত সংখ্যা অনুসারে সারা দেশে বর্তমানে ডায়াগনস্টিক সেন্টার আছে সাড়ে চার হাজার। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে দুই হাজার ৫৭টি (ঢাকা মহানগরে এক হাজার ৯টি), রাজশাহী বিভাগে ৪১৪, চট্টগ্রাম বিভাগে এক হাজার ১৬, খুলনা বিভাগে ৩৭৮, বরিশাল বিভাগে ১৪৭, সিলেট বিভাগে ১৯৯ এবং রংপুর বিভাগে ২৪৭টি। এ ছাড়া বিভিন্ন সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ল্যাবরেটরি আছে, যেখানে প্রতিদিন বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা কার্যক্রম চলে। বেসরকারি বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, বাস্তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদনের বাইরে আরো বিপুলসংখ্যক ডায়াগনস্টিক সেন্টার ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। এসব প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টারে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষিত ও দক্ষ টেকনোলজিস্ট সংকট রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই অদক্ষ ও অপ্রশিক্ষিত লোক দিয়ে এসব কাজ চালানো হয়।
রাজধানীর শ্যামলী, মোহাম্মদপুর, কল্যাণপুর, মিরপুর, খিলগাঁও, রামপুরা, ধানমণ্ডি, যাত্রাবাড়ী ও পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পায়ে পায়ে ডায়াগনস্টিক সেন্টার। বিশেষ করে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের আশপাশে ব্যাঙের ছাতার মতো দেখা যায় ডায়াগনস্টিক সেন্টার। অনেক প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিকের ভেতরেও নিজস্ব ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে।
ডায়াগনস্টিক সেন্টার নিয়ে গবেষণারত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন চিকিৎসক কালের কণ্ঠকে জানান, তিনি দেখেছেন রাজধানীসহ দেশের কয়েকটি জেলা শহরের বেশ কিছু ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ডিগ্রিধারী বায়োকেমিস্ট বা প্যাথলজিস্টদের সিল-স্বাক্ষর দেওয়া প্যাড রেখে দেওয়া হয়। সুযোগ বুঝে ডায়াগনস্টিকের সাধারণ কর্মীরা নিজেদের মনগড়া রিপোর্ট লিখে রোগী বা রোগীর স্বজনদের ধরিয়ে দেন। বিশেষ করে সকালের দিকে চিকিৎসকরা হাসপাতালে নিজ নিজ কর্মস্থলে থাকেন তখন আগাম সিল-স্বাক্ষর দেওয়ার রিপোর্ট ফরম ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া অনেক ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সাইন বোর্ডে বিভিন্ন পরীক্ষার তালিকা থাকলেও বাস্তবে সেখানে অনেক পরীক্ষাই হয় না। তাঁরা অন্য কোথাও পরীক্ষা করিয়ে আনেন বা ভুয়া রিপোর্ট দিয়ে দেন।
ওই চিকিৎসক-গবেষক আরো বলেন, অনেক ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যেসব অবকাঠামো বা যন্ত্রপাতি থাকা দরকার, তা নেই। নামমাত্র যন্ত্রপাতি ও অবকাঠামো দিয়ে কাজ করা হচ্ছে সেখানে। এ ছাড়া বেশির ভাগ চিকিৎসকই কমিশনের মাধ্যমে নিজের পছন্দের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষার জন্য রোগীকে নির্দেশ দেন। এ জন্য ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর প্রতিনিধি বা দালাল সার্বক্ষণিক কাজ করে থাকেন। তাঁদের খপ্পরে পড়ে রোগীরা অনেক ক্ষেত্রেই ভুল চিকিৎসার শিকার হন। এ ছাড়া অনেক ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বৈধতা নেই। অনেকে কেবল ট্রেড লাইসেন্স নিয়েই খুলে বসেছেন ডায়াগনস্টিক সেন্টার। বেশি বেতন দেওয়ার ভয়ে ভালো ও দক্ষ জনবল নিয়োগ না দিয়ে আনাড়িদের নিয়োগ দেওয়া হয় বলেও ওই গবেষক জানান।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বেসিক অনুষদের ডিন এবং বিএমডিসির নির্বাহী সদস্য অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সনাল কালের কণ্ঠকে বলেন, কার্যকর তদারকির অভাবেই ল্যাবরেটরি টেস্টের ক্ষেত্রে এমন দুরবস্থা বিরাজ করছে। এ ক্ষেত্রে সরকারের যে কমিটি বা প্রতিষ্ঠানগুলো ল্যাবরেটরি মেডিসিন সেবা নিশ্চিত করার দায়িত্বে রয়েছে, সেগুলোকে সচল হতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.