খুলনায় ডাক্তার-রোগী সবাই বিভ্রান্ত by গৌরাঙ্গ নন্দী,

খুলনা নগরীর বসুপাড়ার বাসিন্দা আবদুল আউয়াল তাঁর রক্তে ইউরিক এসিডের মাত্রা বোঝার জন্য তিনটি প্যাথলজিক্যাল প্রতিষ্ঠানে গিয়ে তিন রকম ফলাফল পেয়েছেন। তাঁর চিকিৎসকই একের পর এক প্রতিষ্ঠান পাল্টে পরীক্ষা করিয়েছেন। এতে আউয়াল নিজে খুবই বিভ্রান্ত ও বিরক্ত। পরে তাঁর চিকিৎসক বলেছেন তাঁকে খুলনা মেডিক্যাল কলেজের প্যাথলজি বিভাগ থেকে পরীক্ষা করাতে। সেই পরীক্ষার রিপোর্টের ভিত্তিতে তিনি পরামর্শ দিয়েছেন।


আবদুল আউয়াল বলেন, 'তিন জায়গায় পরীক্ষার ফলাফল তিন রকম হলে আমাদের মতো রোগীরা বিভ্রান্তিতে পড়ে। আর একের পর এক প্যাথলজি পাল্টে তো সবাই পরীক্ষা করানোর সামর্থ্য রাখে না। আমার চিকিৎসক যে প্যাথলজি থেকে পরীক্ষা করানোর কথা বলেছিলেন, ফলাফল তাঁর মনমতো না হওয়ায় প্যাথলজি পাল্টাতে বলেন। শেষ পর্যন্ত মেডিক্যাল কলেজের প্যাথলজিক্যাল রিপোর্টটি তিনি গ্রহণ করেন।'
খুলনা মহানগরীতে প্যাথলজির সংখ্যা অর্ধশতাধিক। এ প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রতিদিন শত শত রোগী তাদের বিবিধ রকমের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানোর জন্য আসে। কতজন সঠিক ফলাফল পায় সে ব্যাপারে সন্দেহ চিকিৎসাপ্রার্থী ও চিকিৎসক উভয়েরই থাকে।
নগরীর শান্তিধামের মোড়, সাউথ সেন্ট্রাল রোড, বাবু খান রোডের উত্তর অংশ, হাজি মুহসীন রোড এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো। এ ছাড়া সোনাডাঙ্গা এলাকার সার্জিক্যাল ক্লিনিক, সাত রাস্তার মোড়ে গরিব নেওয়াজ ক্লিনিকসহ অন্যান্য প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে বিভিন্ন ধরনের টেস্ট করা হয়।
খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্র জানায়, এ হাসপাতাল ও কলেজের ল্যাবে বিভিন্ন ধরনের টেস্টের সুযোগ থাকলেও বেশির ভাগ সময়ই সেখানে সাধারণ রোগীরা সব টেস্টের সুযোগ পায় না। বিভিন্ন সমস্যার অজুহাতে রোগীদের হাসপাতালের বাইরে পাঠানো হয়। এ ছাড়া অভিযোগ রয়েছে, হাসপাতালের এক শ্রেণীর চিকিৎসক বিভিন্ন ডায়াগনস্টি সেন্টারের সঙ্গে যোগসাজশে রোগীদের বাইরের নিজ নিজ পছন্দের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠান। এ জন্য দালাল ব্যবহার করা হয় বলেও জানা যায়। ফলে অনেক সময়ই মানসম্পন্ন ল্যাবরেটরিতে যেতে পারে না রোগীরা। এ ছাড়া দরিদ্র রোগীরা বেশি খরচের ভয়ে ছোটখাটো ল্যাবে গিয়েই পরীক্ষা করিয়ে থাকেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খুলনা মেডিক্যাল কলেজের একজন শিক্ষক জানান, এ হাসপাতালে সরকারিভাবে অনেক মূল্যবান যন্ত্রপাতি দেওয়া হলেও তা ঠিকভাবে কাজ করে না। এমনকি কোনো কোনো যন্ত্রপাতি ব্যবহার করার মতো প্রশিক্ষিত জনবলও নেই।
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. বঙ্গ কমল বসু বলেন, 'সমস্যাটি হচ্ছে খুলনায় দক্ষ প্যাথলজিস্টের অভাব। বর্তমানে খুলনায় পাঁচ-ছয়জন বিশেষজ্ঞ প্যাথলজিস্ট রয়েছেন। কিন্তু প্যাথলজিক্যাল সেন্টার অনেক। এই বিশেষজ্ঞরা সবাই সরকারি চাকরি করেন। ফলে চাকরির বাইরের সময়ে তাঁরা একাধিক প্রতিষ্ঠানে সময় দেন। আবার অনেক প্যাথলজিক্যাল প্রতিষ্ঠান আছে, যেগুলো শুধু টেকনিশিয়ান দিয়ে পরিচালিত হয়।'
বিএমএর সহসভাপতি ডা. শেখ বাহারুল আলম বলেন, প্রকৃতপক্ষে মানুষের সেবা নিশ্চিত করার জন্য আইনের প্রয়োগ হওয়া উচিত। হাসপাতাল ও প্যাথলজিগুলো যথাযথভাবে পরিচালিত হচ্ছে কি না, তা মনিটরিং হয় না। যে কারণে চূড়ান্ত পর্যায়ে রোগীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

No comments

Powered by Blogger.