প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য বিচার ছাড়া হত্যার দায়মুক্তিকে উত্সাহী করবে : বিএসএফের হত্যায় বিজিবির নিষ্ক্রিয়তা সার্বভৌমত্বকে হুমকিতে ঠেলে দিচ্ছে

সীমান্তে ভারতীয় বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশী নাগরিক হত্যা, আহত করা ও অপহরণ বিষয়ে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের নিষ্ক্রিয়তা দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে বলে দাবি করেছে মানবাধিকার সংগঠন অধিকার। গতকাল অধিকার অক্টোবর মাসের মানবাধিকার বিষয়ক প্রতিবেদনে সীমান্ত হত্যা ও অপহরণ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে এ মন্তব্য করেছে।অধিকারের প্রতিবেদনে জানানো হয়, অক্টোবর মাসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্বারা বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন ৫ নাগরিক, ৮ জন নিহত হয়েছেন গণপিটুনির শিকার হয়ে।


সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত হয়েছেন এক ব্যক্তি। বিএসএফ আরও ৩ বাংলাদেশীকে আহত করেছে এবং ৬ বাংলাদেশীকে অপহরণ করে নিয়ে গেছে। অক্টোবর মাসে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বিষয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের আলোকে এ রিপোর্ট তৈরি করা হয়।
অধিকারের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, অক্টোবর মাসে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী ৪৭ জন নারী ও কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ৩৫ জনই হচ্ছে কন্যাশিশু। বাকি ১২ জন হলেন প্রাপ্তবয়স্কা নারী। ৩৫ কন্যাশিশুর মধ্যে আবার ৩ জনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১১ জন। ধর্ষণের কারণে আত্মগ্লানি সহ্য করতে না পেরে এক কন্যাশিশু আত্মহত্যা করেছে।
যদিও ১৯৯৫ সালে দিনাজপুরে ইয়াসমিন নামে এক নারীকে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগে মানবাধিকার ও নারী সংগঠনগুলো দেশব্যাপী তোলপাড় করেছিল। এখন প্রতিনিয়ত ধর্ষণের পর হত্যাকাণ্ড ঘটছে। কিন্তু নারী সংগঠনগুলো একেবারেই নীরব।
অধিকারের রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, গত মাসে সাতক্ষীরায় তাদের একজন নারী মানবাধিকার কর্মী বখাটেদের দ্বারা লাঞ্ছিত হয়েছেন। এ বিষয়ে সাতক্ষীরা সদর থানায় একটি মামলাও হয়েছে। রিপোর্টে জানানো হয়, কনকো ফিলিপসের সঙ্গে চুক্তির সত্যায়িত অনুলিপি চেয়ে পেট্রোবাংলাকে বিশিষ্ট ৩ নাগরিকের চিঠির জবাব ২৯ দিনেও পাওয়া যায়নি। তথ্য অধিকার আইন অনুযায়ী বিশিষ্ট ৩ নাগরিক এ চিঠি দিয়েছিলেন। চিঠির জবাব না দেয়ায় অধিকার মানুষের তথ্য জানার অধিকার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার ব্যক্তিদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ধরে নিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় খুন করেছে। এদের মধ্যে একজন কৃষক, দুইজন নিরীহ সাধারণ মানুষ ও একজন বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টির আঞ্চলিক নেতা রয়েছেন। রিপোর্টে বলা হয়, গত ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১১ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, ‘আমি সবসময় বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে ছিলাম। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড দীর্ঘদিন ধরে চলছে। এটা রাতারাতি বন্ধ করা সম্ভব নয়।
প্রধানমন্ত্রীর ‘বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড রাতারাতি বন্ধ করা সম্ভব নয়’ বক্তব্যটি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের দায়মুক্তিকেই উত্সাহিত করছে বলে অধিকার মনে করে। বিএসএফ কর্তৃক হত্যাকাণ্ড ও অপহরণের ঘটনায় অধিকার গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে এবং বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের সদস্যদের নিষ্ক্রিয়তায় নিন্দা জ্ঞাপন করছে। অধিকার মনে করে, বিএসএফের এ ধরনের আগ্রাসী মনোভাব এবং বিজিবির সদস্যদের নিষ্ক্রিয়তা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জে সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে রাজনৈতিক সহিংসতাসহ বিভিন্ন অনিয়ম বিষয়েও অধিকার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

No comments

Powered by Blogger.