ডাক্তারদের পদোন্নতিতে নগ্ন দলীয়করণ : শত শত মেধাবী চিকিত্সক পদোন্নতিবঞ্চিত হওয়ায় ক্ষোভ
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে ডাক্তারদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে এবার নগ্ন দলীয়করণ হয়েছে। সোমবার রাত দুইটায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রায় দু’হাজার ডাক্তারের পদোন্নতির তালিকা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে। পদোন্নতির সঙ্গে সঙ্গে তাদের একদিনের সময় দিয়ে গতকালের মধ্যেই মন্ত্রণালয়ে যোগদানের কথা বলা হয়। সে মোতাবেক পদোন্নতিপ্রাপ্ত দলীয় ক্যাডার চিকিত্সকরা গতকালই মন্ত্রণালয়ে যোগদান করেন। বঞ্চিত চিকিত্সকের কেউ যাতে আদালতে যাওয়ার সুযোগ না পান সেজন্য তড়িঘড়ি যোগদানের কথা বলা হয়।
এ পদোন্নতি নিয়ে চিকিত্সকদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, আগে পিএসসি’র মাধ্যমে সরকারি ডাক্তারদের পদোন্নতি হতো। কিন্তু বর্তমানে আওয়ামী লীগ সমর্থক ডাক্তারদের সংগঠন স্বাচিপের সভাপতি মন্ত্রী হওয়ার পর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, পিএসসি নয়, ডিপার্টমেন্টাল প্রমোশন কমিটির (ডিপিসি) মাধ্যমে পদোন্নতি হবে। সে অনুযায়ী এ পদোন্নতি হয়েছে। চিকিত্সকদের মধ্যে যারা শিক্ষকতার জন্য উপযুক্ত তাদের আলাদা পরীক্ষা নেয়া হতো। এছাড়া পাবলিকেশন, জ্যেষ্ঠতা, অভিজ্ঞতা দেখে পদোন্নতি দেয়া হতো। এবার এগুলো লঙ্ঘন করে শুধু দলীয় এবং রাজনৈতিক বিবেচনায় পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। ফলে শত শত মেধাবী চিকিত্সক পদোন্নতি থেকে বাদ পড়েছেন। রাজনৈতিক বিবেচনায় পদোন্নতির এ নগ্ন দলীয়করণের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে ড্যাব। ড্যাব বলেছে, ডিপিসি’র মাধ্যমে যে প্রহসনের পদোন্নতি হয়েছে তা বাতিল করতে হবে।
স্বাস্থ্য বিভাগকে দলীয়করণের উদ্দেশে স্বাচিপ নেতা বা সমর্থকদের প্রাধান্য রয়েছে পদোন্নতির তালিকায়। দেড় বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন স্বাচিপ নেতারা পদোন্নতি পেলেও ১৫ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন চিকিত্সক পদোন্নতি পাননি। নিয়মবহির্ভূত এ পদোন্নতিতে দেশজুড়ে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও স্বাস্থ্য বিভাগের নিয়মশৃঙ্খলায় অবনতি দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে। পাবলিক সার্ভিস কমিশনের কাছ থেকে ক্ষমতা নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সিলেকশন কমিটির এ পদোন্নতি সংক্রান্ত আদেশের বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নেয়ার কথাও উল্লেখ করেন কেউ কেউ। একই সঙ্গে পদোন্নতি সংক্রান্ত আদেশে চাকরি ছেড়ে দেয়া বরিশালের এক গাইনি চিকিত্সকের নাম থাকায় তোলপাড় শুরু হয়েছে।
ওয়েবসাইটে প্রদত্ত স্বাস্থ্য বিভাগের এ আদেশ এবং বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, সোমবার দেশজুড়ে স্বাস্থ্য বিভাগের প্রায় দু’হাজার পদোন্নতিপ্রাপ্ত চিকিত্সকের মধ্যে বরিশাল বিভাগের ৫ জন রয়েছেন। এর মধ্যে নাজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. যোগেশ চন্দ্র রায়কে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের সহকারী পরিচালক পদে, ভোলার চলতি দায়িত্বপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. আতোয়ার রহমান এবং বরগুনার চলতি দায়িত্বপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন এএইচএম জহিরুল ইসলামকে একই পদে নিয়মিত করা হয়েছে। ভান্ডারিয়া থানা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আবদুল করিম শেখকে ঢাকার স্বাস্থ্য অধিদফতরে সহকারী পরিচালক (অর্থ) এবং বরিশাল স্বাস্থ্য বিভাগে সহকারী পরিচালক চলতি দায়িত্বে থাকা ডা. খান মোস্তাক আল মেহেদীকে সহকারী পরিচালক পদে নিয়মিত করে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। গতকাল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মো. হুমায়ুন কবির স্বাক্ষরিত এ আদেশে পদোন্নতিপ্রাপ্ত ৫ চিকিত্সকই স্বাচিপ নেতা ও সমর্থক। অভিযোগ উঠেছে, বিভাগজুড়ে পদোন্নতিপ্রাপ্ত হতে অনেক যোগ্য এবং সিনিয়র চিকিত্সককে বঞ্চিত করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অপর এক আদেশে দেশজুড়ে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে ৪৮৩ জন শিক্ষককে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজের ১৫ জন চিকিত্সক রয়েছেন, যার ১১ জনই স্বাচিপ নেতা ও সমর্থক। বরিশালে গাইনি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক (চলতি দায়িত্ব) চিকিত্সক ডা. সেলিনা পারভিনকে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। এছাড়া বাকি ১৪ জনকে সহকারী অধ্যাপক চলতি দায়িত্ব থেকে পূর্ণাঙ্গ সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে।
সহকারী অধ্যাপক চলতি দায়িত্ব থেকে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত চিকিত্সকরা হলেন কার্ডিওলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. হুমায়ুন কবির, ডা. রনজিত্ খান, মেডিসিন বিভাগের ডা. ভাস্কর সাহা, ডা. আনোয়ার হোসেন, ফার্মাকোলজির ডা. অধীর কুমার সাহা, অ্যানেসথেশিয়া বিভাগের ডা. কামরুজ্জামান খান, ফরেনসিক বিভাগের ডা. আখতারুজ্জামান তালুকদার, গ্যাস্ট্রোলজির ডা. স্বপন কুমার সরকার, শিশু বিভাগের অসীম কুমার সাহা, এনাটমির ডা. গোলাম রহমান, প্যাথলজির ডা. ফায়জুল বাসার, নিউনেটোলজির ডা. তাহাসুনুল আমিন, হেপাটোলজির ডা. মো. জমসেদ আলম এবং মাইক্রো বায়লোজি বিভাগের ডা. শহিদুল ইসলাম।
এ আদেশে সহকারী অধ্যাপকের চলতি দায়িত্ব থেকে পূর্ণ সহকারী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন নগরীর প্রতিষ্ঠিত গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. জি কে চক্রবর্তী। অথচ অনেক আগেই তিনি সরকারি চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। এ অবস্থায় তার পদোন্নতি নিয়ে হাস্যরসসহ নানা আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে নগরজুড়ে। আর আদেশের তালিকায় তার নাম থাকায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও সিলেকশন কমিটির দায়িত্ব পালনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে।
এদিকে পদোন্নতির তালিকা প্রকাশের পর পর সারাদেশে চিকিত্সক অঙ্গনে শুরু হয়েছে ক্ষোভ ও বিরূপ প্রতিক্রিয়া। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক চিকিত্সক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এ পদোন্নতির ক্ষেত্রে যথেষ্ট অনিয়ম করা হয়েছে। অনেক যোগ্য ও সিনিয়র চিকিত্সককে বঞ্চিত করে অযোগ্য ও জুনিয়র চিকিত্সককে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। পদোন্নতির ক্ষেত্রে স্বাচিপ নেতাদের লম্বা তালিকা দলীয়করণের প্রমাণ দেয়। এমনকি মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি দাবি করা সরকারের অধীনে পদোন্নতির তালিকায় মুক্তিযুদ্ধের কোটাও রাখা হয়নি বলে দাবি করেন অনেকেই। উদাহরণ হিসেবে দেখা যায়, পদোন্নতির তালিকায় শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ থেকে দেড় বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ৬ চিকিত্সক পদোন্নতি পেয়েছেন। অথচ ৫ বছর, ৮ বছর, ৯ বছর, ১০ বছর, ১২ বছর এবং সর্বোচ্চ ১৪-১৫ বছর পর্যন্ত শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থাকার পরও পদোন্নতি হয়নি প্রায় ৩০ শিক্ষকের। অভিযোগকারীদের মতে, যোগ্যতা এবং সিনিয়র-জুনিয়রের বিষয়টি না মেনে নিয়মবহির্ভূত এ পদোন্নতির ফলে স্বাস্থ্য বিভাগে নিয়মশৃঙ্খলায় অস্থিরতা দেখা দেবে। পদোন্নতির এ আদেশের বিরুদ্ধে অনেকেই আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার চিন্তা করছেন বলেও জানান। শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজের এক সাবেক অধ্যক্ষ পদোন্নতির ক্ষেত্রে একই অভিযোগ করে বলেন, এর আগে পাবলিক সার্ভিস কমিশনে পরীক্ষার মাধ্যমে এবং অন্যান্য বিষয় বিবেচনা করে পদোন্নতি দেয়া হতো। কিন্তু এ সরকারের আমলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি সিলেকশন কমিটির মাধ্যমে এ পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, পদোন্নতির ক্ষেত্রে এ কমিটি প্রণীত নীতিমালাও মানা হয়নি।
পদোন্নতিতে নগ্ন দলীয়করণে ড্যাবের তীব্র প্রতিবাদ : ডিপিসির মাধ্যমে পদোন্নতির প্রকাশিত ফলাফলে ড্যাব কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ডা. একেএম আজিজুল হক ও মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন এক যুক্ত বিবৃতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ ও নগ্ন দলীয়করণের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে তারা বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে স্বাচিপের সভাপতি মন্ত্রী হওয়ার সুবাদে স্বাস্থ্য খাতে দলীয়করণের মহোত্সব শুরু হয়। স্বাচিপ প্রভাবিত প্রশাসন শুধু বিরোধীদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, বদলি এবং নানাভাবে হয়রানি করেই ক্ষান্ত হয়নি; সর্বশেষ ডিপিসি’র মাধ্যমে শুধু দলীয় আনুগত্যকেই বিবেচনায় নিয়ে যে পদোন্নতির ফল প্রকাশিত হয়েছে তাতে ভবিষ্যতে মেডিকেল শিক্ষা ও চিকিত্সা ব্যবস্থায় ধ্বংসের আলামত দেখা যাচ্ছে। এই ডিপিসি’তে শুধু জ্যেষ্ঠতাই লঙ্ঘন করা হয়নি, পদোন্নতির জন্য যে যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, প্রকাশনার প্রয়োজন তা বিবেচনায় আনা হয়নি। যেভাবে যোগ্য, অভিজ্ঞ ও দলনিরপেক্ষ শিক্ষকদের বঞ্চিত করে অযোগ্য-অনভিজ্ঞদের এ ডিপিসি’র মাধ্যমে দলীয় আনুগত্যের পুরস্কারে পুরস্কৃত করা হলো তার নিন্দা জানানোর ভাষা আমাদের নেই।
ড্যাব নেতারা এই অবৈধ ডিপিসি’র মাধ্যমে পদোন্নতির নামে যে প্রহসনের ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে, তা অবিলম্বে বাতিল এবং তদন্ত কমিটি গঠন করে দায়ীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান। পাশাপাশি মেডিকেল শিক্ষা ও চিকিত্সা ব্যবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে দলনিরপেক্ষ প্রশাসনের মাধ্যমে জ্যেষ্ঠতা, মেধা ও যোগ্যতার নিরিখে পদোন্নতির ব্যবস্থা নেয়ারও দাবি জানাচ্ছি।
স্বাস্থ্য বিভাগকে দলীয়করণের উদ্দেশে স্বাচিপ নেতা বা সমর্থকদের প্রাধান্য রয়েছে পদোন্নতির তালিকায়। দেড় বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন স্বাচিপ নেতারা পদোন্নতি পেলেও ১৫ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন চিকিত্সক পদোন্নতি পাননি। নিয়মবহির্ভূত এ পদোন্নতিতে দেশজুড়ে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও স্বাস্থ্য বিভাগের নিয়মশৃঙ্খলায় অবনতি দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে। পাবলিক সার্ভিস কমিশনের কাছ থেকে ক্ষমতা নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সিলেকশন কমিটির এ পদোন্নতি সংক্রান্ত আদেশের বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নেয়ার কথাও উল্লেখ করেন কেউ কেউ। একই সঙ্গে পদোন্নতি সংক্রান্ত আদেশে চাকরি ছেড়ে দেয়া বরিশালের এক গাইনি চিকিত্সকের নাম থাকায় তোলপাড় শুরু হয়েছে।
ওয়েবসাইটে প্রদত্ত স্বাস্থ্য বিভাগের এ আদেশ এবং বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, সোমবার দেশজুড়ে স্বাস্থ্য বিভাগের প্রায় দু’হাজার পদোন্নতিপ্রাপ্ত চিকিত্সকের মধ্যে বরিশাল বিভাগের ৫ জন রয়েছেন। এর মধ্যে নাজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. যোগেশ চন্দ্র রায়কে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের সহকারী পরিচালক পদে, ভোলার চলতি দায়িত্বপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. আতোয়ার রহমান এবং বরগুনার চলতি দায়িত্বপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন এএইচএম জহিরুল ইসলামকে একই পদে নিয়মিত করা হয়েছে। ভান্ডারিয়া থানা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আবদুল করিম শেখকে ঢাকার স্বাস্থ্য অধিদফতরে সহকারী পরিচালক (অর্থ) এবং বরিশাল স্বাস্থ্য বিভাগে সহকারী পরিচালক চলতি দায়িত্বে থাকা ডা. খান মোস্তাক আল মেহেদীকে সহকারী পরিচালক পদে নিয়মিত করে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। গতকাল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মো. হুমায়ুন কবির স্বাক্ষরিত এ আদেশে পদোন্নতিপ্রাপ্ত ৫ চিকিত্সকই স্বাচিপ নেতা ও সমর্থক। অভিযোগ উঠেছে, বিভাগজুড়ে পদোন্নতিপ্রাপ্ত হতে অনেক যোগ্য এবং সিনিয়র চিকিত্সককে বঞ্চিত করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অপর এক আদেশে দেশজুড়ে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে ৪৮৩ জন শিক্ষককে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজের ১৫ জন চিকিত্সক রয়েছেন, যার ১১ জনই স্বাচিপ নেতা ও সমর্থক। বরিশালে গাইনি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক (চলতি দায়িত্ব) চিকিত্সক ডা. সেলিনা পারভিনকে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। এছাড়া বাকি ১৪ জনকে সহকারী অধ্যাপক চলতি দায়িত্ব থেকে পূর্ণাঙ্গ সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে।
সহকারী অধ্যাপক চলতি দায়িত্ব থেকে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত চিকিত্সকরা হলেন কার্ডিওলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. হুমায়ুন কবির, ডা. রনজিত্ খান, মেডিসিন বিভাগের ডা. ভাস্কর সাহা, ডা. আনোয়ার হোসেন, ফার্মাকোলজির ডা. অধীর কুমার সাহা, অ্যানেসথেশিয়া বিভাগের ডা. কামরুজ্জামান খান, ফরেনসিক বিভাগের ডা. আখতারুজ্জামান তালুকদার, গ্যাস্ট্রোলজির ডা. স্বপন কুমার সরকার, শিশু বিভাগের অসীম কুমার সাহা, এনাটমির ডা. গোলাম রহমান, প্যাথলজির ডা. ফায়জুল বাসার, নিউনেটোলজির ডা. তাহাসুনুল আমিন, হেপাটোলজির ডা. মো. জমসেদ আলম এবং মাইক্রো বায়লোজি বিভাগের ডা. শহিদুল ইসলাম।
এ আদেশে সহকারী অধ্যাপকের চলতি দায়িত্ব থেকে পূর্ণ সহকারী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন নগরীর প্রতিষ্ঠিত গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. জি কে চক্রবর্তী। অথচ অনেক আগেই তিনি সরকারি চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। এ অবস্থায় তার পদোন্নতি নিয়ে হাস্যরসসহ নানা আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে নগরজুড়ে। আর আদেশের তালিকায় তার নাম থাকায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও সিলেকশন কমিটির দায়িত্ব পালনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে।
এদিকে পদোন্নতির তালিকা প্রকাশের পর পর সারাদেশে চিকিত্সক অঙ্গনে শুরু হয়েছে ক্ষোভ ও বিরূপ প্রতিক্রিয়া। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক চিকিত্সক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এ পদোন্নতির ক্ষেত্রে যথেষ্ট অনিয়ম করা হয়েছে। অনেক যোগ্য ও সিনিয়র চিকিত্সককে বঞ্চিত করে অযোগ্য ও জুনিয়র চিকিত্সককে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। পদোন্নতির ক্ষেত্রে স্বাচিপ নেতাদের লম্বা তালিকা দলীয়করণের প্রমাণ দেয়। এমনকি মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি দাবি করা সরকারের অধীনে পদোন্নতির তালিকায় মুক্তিযুদ্ধের কোটাও রাখা হয়নি বলে দাবি করেন অনেকেই। উদাহরণ হিসেবে দেখা যায়, পদোন্নতির তালিকায় শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ থেকে দেড় বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ৬ চিকিত্সক পদোন্নতি পেয়েছেন। অথচ ৫ বছর, ৮ বছর, ৯ বছর, ১০ বছর, ১২ বছর এবং সর্বোচ্চ ১৪-১৫ বছর পর্যন্ত শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থাকার পরও পদোন্নতি হয়নি প্রায় ৩০ শিক্ষকের। অভিযোগকারীদের মতে, যোগ্যতা এবং সিনিয়র-জুনিয়রের বিষয়টি না মেনে নিয়মবহির্ভূত এ পদোন্নতির ফলে স্বাস্থ্য বিভাগে নিয়মশৃঙ্খলায় অস্থিরতা দেখা দেবে। পদোন্নতির এ আদেশের বিরুদ্ধে অনেকেই আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার চিন্তা করছেন বলেও জানান। শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজের এক সাবেক অধ্যক্ষ পদোন্নতির ক্ষেত্রে একই অভিযোগ করে বলেন, এর আগে পাবলিক সার্ভিস কমিশনে পরীক্ষার মাধ্যমে এবং অন্যান্য বিষয় বিবেচনা করে পদোন্নতি দেয়া হতো। কিন্তু এ সরকারের আমলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি সিলেকশন কমিটির মাধ্যমে এ পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, পদোন্নতির ক্ষেত্রে এ কমিটি প্রণীত নীতিমালাও মানা হয়নি।
পদোন্নতিতে নগ্ন দলীয়করণে ড্যাবের তীব্র প্রতিবাদ : ডিপিসির মাধ্যমে পদোন্নতির প্রকাশিত ফলাফলে ড্যাব কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ডা. একেএম আজিজুল হক ও মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন এক যুক্ত বিবৃতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ ও নগ্ন দলীয়করণের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে তারা বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে স্বাচিপের সভাপতি মন্ত্রী হওয়ার সুবাদে স্বাস্থ্য খাতে দলীয়করণের মহোত্সব শুরু হয়। স্বাচিপ প্রভাবিত প্রশাসন শুধু বিরোধীদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, বদলি এবং নানাভাবে হয়রানি করেই ক্ষান্ত হয়নি; সর্বশেষ ডিপিসি’র মাধ্যমে শুধু দলীয় আনুগত্যকেই বিবেচনায় নিয়ে যে পদোন্নতির ফল প্রকাশিত হয়েছে তাতে ভবিষ্যতে মেডিকেল শিক্ষা ও চিকিত্সা ব্যবস্থায় ধ্বংসের আলামত দেখা যাচ্ছে। এই ডিপিসি’তে শুধু জ্যেষ্ঠতাই লঙ্ঘন করা হয়নি, পদোন্নতির জন্য যে যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, প্রকাশনার প্রয়োজন তা বিবেচনায় আনা হয়নি। যেভাবে যোগ্য, অভিজ্ঞ ও দলনিরপেক্ষ শিক্ষকদের বঞ্চিত করে অযোগ্য-অনভিজ্ঞদের এ ডিপিসি’র মাধ্যমে দলীয় আনুগত্যের পুরস্কারে পুরস্কৃত করা হলো তার নিন্দা জানানোর ভাষা আমাদের নেই।
ড্যাব নেতারা এই অবৈধ ডিপিসি’র মাধ্যমে পদোন্নতির নামে যে প্রহসনের ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে, তা অবিলম্বে বাতিল এবং তদন্ত কমিটি গঠন করে দায়ীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান। পাশাপাশি মেডিকেল শিক্ষা ও চিকিত্সা ব্যবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে দলনিরপেক্ষ প্রশাসনের মাধ্যমে জ্যেষ্ঠতা, মেধা ও যোগ্যতার নিরিখে পদোন্নতির ব্যবস্থা নেয়ারও দাবি জানাচ্ছি।
No comments