কোরবানির পশুর হাটে হিসাব মিলছে না : বিক্রেতা বলছেন দাম কম ক্রেতা বলছেন অস্বাভাবিক by আলাউদ্দিন আরিফ
কুষ্টিয়া সদর উপজেলার চরখোল গ্রামের বাসিন্দা মোফাজ্জল হোসেন। তার ঘরে পোষা ৪টি ও কেনা আরও ১৪টিসহ মোট ১৮টি গরু তুলেছেন গাবতলী হাটে। মোফাজ্জলের গরু আকারে ছোট। কিন্তু দাম চাইছেন ৪০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। স্বাভাবিকভাবে এসব গরুর দাম ২০ থেকে ৩৫ হাজার টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। এত দাম কেন জানতে চাইলে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মোফাজ্জল বলেন, ‘বাজান, আপনেরা বলছেন বেশি দাম কিন্তু আমি তো মনে করি দাম নাই।’হাতের কাছে থাকা একটি ছোট মাঝারি আকৃতির ষাঁড় দেখিয়ে গাবতলী হাটের বিক্রেতা মোফাজ্জল হোসেন বললেন, গরুটি তার ঘরে পোষা। গতবছর কোরবানি ঈদের পর গরুটি কিনেছেন ১২ হাজার টাকায়।
গরুটিকে কৃমিনাশক খাওয়ানোর পর বুটের ভুসি, খেসারির ভুসি, গমের ভুসি, খৈল ও খড় খাইয়েছেন। মোফাজ্জল জানান, ছোলাবুটের ভুসি প্রতিকেজি ৩৫ টাকা, খেসারির ভুসি ৩০ টাকা, গমের ভুসি ৩০ টাকা, ডালের পাউডার কেজি ২২ টাকা, চালের খুদ কেজি ৩০ টাকা, খৈল কেজি ৪৫ টাকা, খড়ের আঁটি ৪০ টাকা। একটি গরুকে প্রতিদিন কমপক্ষে ১০০ টাকার খাবার দিতে হয়। সেই হিসেবে একটি গরুর পেছনে মাসে ৩ হাজার টাকা করে ১০ মাসে খরচ হয় প্রায় ৩০ হাজার টাকা। কুষ্টিয়া থেকে ঢাকায় আনতে গরুপ্রতি খরচ পড়ে ১৮০০ টাকা। হাটে একদিন থাকলে খরচ হয় ৩০০ টাকা। এবার হিসাব করে দেখেন ষাঁড়টির দাম ৫০ হাজার টাকা কি বেশি? অথচ ৪৫ হাজার টাকা দাম চাইলেও ক্রেতারা ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকার বেশি দাম বলেন না।
রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে কোরবানির পশুর হাট জমে উঠতে শুরু করেছে। ক্রেতারা হাটে যাচ্ছেন। বিক্রেতারাও হাটে গরু তুলতে শুরু করেছেন। ঢাকার গাবতলী বাদে অন্যান্য পশুর হাটে আগামীকাল থেকে আনুষ্ঠানিক বেচাবিক্রি শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু দামের হিসেবে মেলাতে হিমশিম অবস্থা ক্রেতাদের। ক্রেতা বলছেন, দাম অস্বাভাবিক বেশি, বিক্রেতা বলছেন দাম কম।
গাবতলী হাটে যাওয়া ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার বেপারী আবিদ হোসেন বলেন, জিনিসপত্রের দাম যে হারে বেড়েছে স্বাভাবিকভাবে গরুর দামও বাড়বে। তিন বছর আগেও হাটে একটি লাউ কেনা যেত ১০ থেকে ১৫ টাকায়। এখন একটি লাউ কমপক্ষে ৫০ টাকা। তাহলে গরুর দাম বেশি কোথায়?
গাবতলী হাটে গরু কিনতে যান মিরপুরের পীরের বাগ এলাকার বাসিন্দা সানাউল ইসলাম। তিনি বলেন, যেসব গরুর আড়াই মণের কম অর্থাত্ ১০০ কেজি মাংস হবে না, ওইসব গরুর দাম চাইছে ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা। আর বড় নাদুসনুসুদ গুরুর দাম তো অস্বাবিক বেশি হাঁকছেন কৃষক ও বেপারী।
শ্যামলী থেকে গাবতলী হাটে গরু কেনার জন্য গেছেন মনির হোসেন। তিনি কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার মানিকপুর গ্রামের বাসিন্দা সুমন মিয়ার একটি গরু পছন্দ করেন। সুমন মিয়া ষাঁড়টির দাম চান ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। মনির হোসেন বলেন, দাম শুনে তো আমার ভিরমি খাওয়ার উপক্রম। সুমন বলেন, গরুটিতে ৫ মণের মতো মাংস হবে। বাজারে যদি মাংসের দাম হিসাব করেন তাহলে গরুটির দাম হওয়া উচিত সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকা। মনির বলেন, যেহেতু কোরবানির জন্য গরু কিনব তাই সবচেয়ে বড় গরুটির দাম দিতে পারি এক লাখ বা তার চাইতে সামান্য বেশি। গরুর মালিক সুমন মিয়া জানান, গরুটি কেনা, মোটাতাজা করা ইত্যাদি বাবদ তার প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ১ লাখ ৪০ হাজার টাকার কমে বিক্রি করলে গরুটিতে তার লোকসান আসবে।
গরু পালনের জন্য বিখ্যাত এলাকা মুন্সীগঞ্জের মিরকাদিম। মিরকাদিম পৌরসভা এলাকার বাসিন্দা নূর হোসেন জানান, গত বছর তিনি ১৮টি গরু তৈরি করেছেন। বিক্রির পর দেখা গেছে গড়ে সেগুলোতে তেমন একটা লাভ হয়নি। এবার গরুর খাবারের দাম আরও বেড়েছে। তাই এবার গরু ৬টিতে নামিয়ে এনেছেন। মিরকাদিম এলাকার প্রবীণ বেপারী করিম কাজী জানান, অব্যাহত লোকসানের কারণে মিরকাদিম এলাকার বহু গেরস্ত গরু পোষা বন্ধ করে দিয়েছে। আগে ওই এলাকার ঘরে ঘরে গরু পোষা হতো, কিন্তু এখন সেটি হাতেগোনা কয়েকটি পরিবারে নেমে এসেছে। তিনি আরও বলেন, খৈল, ভুসি, খুদ, কুড়া, খড়সহ গরুর খাবারের দাম আকাশছোঁয়া। বাড়তি দামের খাবার খাইয়ে গরু বিক্রি করে এখন আর পোষানো যায় না।
গাবতলী হাটে প্রবীণ ব্যবসায়ী নূরুল ইসলাম জানান, বর্ডার খোলা। সীমান্তের ওপার থেকে প্রচুর গরু আসছে। হাটে গরুর অভাব নেই। দাম এক হিসেবে বেশি, আরেক হিসেবে বেশি নয়। গরুর খাদ্য, ওষুধ, পরিবহন, রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়সহ সব জিনিসের দাম বেড়েছে। তাই গরুর দাম বেশি হওয়াটাই স্বাভাবিক। বাজারে অন্যান্য জিনিসের দামের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যাবে এখনও গরুর দাম কম।
গাবতলী হাটে বেপার টেলিকম নামে মোবাইল ফোনের দোকান চালান মো. বজলু। তিনি বলেন, হাটে গরু থাকলে এখনও ক্রেতারা নামেননি। দু-একজন শখ করে আগেই গরু কিনছেন। ঢাকায় রাখার সমস্যা, গরুকে প্রতিদিন খাওয়ানো ও পরিচর্যার সমস্যা। তাই ক্রেতারা হাটে এখনও নামেননি। বজলু আরও জানান, জীবনযাত্রার অব্যাহত ব্যয়বৃদ্ধির কারণেও চলতি বছর গরু বিক্রি কম হবে।
গাবতলী হাটের ইজাদারের প্রতিনিধি মো. সোহেল জানান, হাটে বিপুলসংখ্যক গরু, মোষ, খাসি তোলা হয়েছে। রাস্তায় যানজটের কারণে গরু আসতে দেরি হলেও হাটে গরুর কমতি নেই। আগামীকাল থেকে পুরোদমে হাটে গরু আসা শুরু হবে। বর্ডারে তেমন কোনো সমস্যা হলে গরুর কোনো সঙ্কট হবে না। আগামী শুক্রবার থেকে পুরোদমে বেচাকেনা শুরু হবে বলে আশা করছেন তিনি।
রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে কোরবানির পশুর হাট জমে উঠতে শুরু করেছে। ক্রেতারা হাটে যাচ্ছেন। বিক্রেতারাও হাটে গরু তুলতে শুরু করেছেন। ঢাকার গাবতলী বাদে অন্যান্য পশুর হাটে আগামীকাল থেকে আনুষ্ঠানিক বেচাবিক্রি শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু দামের হিসেবে মেলাতে হিমশিম অবস্থা ক্রেতাদের। ক্রেতা বলছেন, দাম অস্বাভাবিক বেশি, বিক্রেতা বলছেন দাম কম।
গাবতলী হাটে যাওয়া ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার বেপারী আবিদ হোসেন বলেন, জিনিসপত্রের দাম যে হারে বেড়েছে স্বাভাবিকভাবে গরুর দামও বাড়বে। তিন বছর আগেও হাটে একটি লাউ কেনা যেত ১০ থেকে ১৫ টাকায়। এখন একটি লাউ কমপক্ষে ৫০ টাকা। তাহলে গরুর দাম বেশি কোথায়?
গাবতলী হাটে গরু কিনতে যান মিরপুরের পীরের বাগ এলাকার বাসিন্দা সানাউল ইসলাম। তিনি বলেন, যেসব গরুর আড়াই মণের কম অর্থাত্ ১০০ কেজি মাংস হবে না, ওইসব গরুর দাম চাইছে ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা। আর বড় নাদুসনুসুদ গুরুর দাম তো অস্বাবিক বেশি হাঁকছেন কৃষক ও বেপারী।
শ্যামলী থেকে গাবতলী হাটে গরু কেনার জন্য গেছেন মনির হোসেন। তিনি কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার মানিকপুর গ্রামের বাসিন্দা সুমন মিয়ার একটি গরু পছন্দ করেন। সুমন মিয়া ষাঁড়টির দাম চান ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। মনির হোসেন বলেন, দাম শুনে তো আমার ভিরমি খাওয়ার উপক্রম। সুমন বলেন, গরুটিতে ৫ মণের মতো মাংস হবে। বাজারে যদি মাংসের দাম হিসাব করেন তাহলে গরুটির দাম হওয়া উচিত সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকা। মনির বলেন, যেহেতু কোরবানির জন্য গরু কিনব তাই সবচেয়ে বড় গরুটির দাম দিতে পারি এক লাখ বা তার চাইতে সামান্য বেশি। গরুর মালিক সুমন মিয়া জানান, গরুটি কেনা, মোটাতাজা করা ইত্যাদি বাবদ তার প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ১ লাখ ৪০ হাজার টাকার কমে বিক্রি করলে গরুটিতে তার লোকসান আসবে।
গরু পালনের জন্য বিখ্যাত এলাকা মুন্সীগঞ্জের মিরকাদিম। মিরকাদিম পৌরসভা এলাকার বাসিন্দা নূর হোসেন জানান, গত বছর তিনি ১৮টি গরু তৈরি করেছেন। বিক্রির পর দেখা গেছে গড়ে সেগুলোতে তেমন একটা লাভ হয়নি। এবার গরুর খাবারের দাম আরও বেড়েছে। তাই এবার গরু ৬টিতে নামিয়ে এনেছেন। মিরকাদিম এলাকার প্রবীণ বেপারী করিম কাজী জানান, অব্যাহত লোকসানের কারণে মিরকাদিম এলাকার বহু গেরস্ত গরু পোষা বন্ধ করে দিয়েছে। আগে ওই এলাকার ঘরে ঘরে গরু পোষা হতো, কিন্তু এখন সেটি হাতেগোনা কয়েকটি পরিবারে নেমে এসেছে। তিনি আরও বলেন, খৈল, ভুসি, খুদ, কুড়া, খড়সহ গরুর খাবারের দাম আকাশছোঁয়া। বাড়তি দামের খাবার খাইয়ে গরু বিক্রি করে এখন আর পোষানো যায় না।
গাবতলী হাটে প্রবীণ ব্যবসায়ী নূরুল ইসলাম জানান, বর্ডার খোলা। সীমান্তের ওপার থেকে প্রচুর গরু আসছে। হাটে গরুর অভাব নেই। দাম এক হিসেবে বেশি, আরেক হিসেবে বেশি নয়। গরুর খাদ্য, ওষুধ, পরিবহন, রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়সহ সব জিনিসের দাম বেড়েছে। তাই গরুর দাম বেশি হওয়াটাই স্বাভাবিক। বাজারে অন্যান্য জিনিসের দামের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যাবে এখনও গরুর দাম কম।
গাবতলী হাটে বেপার টেলিকম নামে মোবাইল ফোনের দোকান চালান মো. বজলু। তিনি বলেন, হাটে গরু থাকলে এখনও ক্রেতারা নামেননি। দু-একজন শখ করে আগেই গরু কিনছেন। ঢাকায় রাখার সমস্যা, গরুকে প্রতিদিন খাওয়ানো ও পরিচর্যার সমস্যা। তাই ক্রেতারা হাটে এখনও নামেননি। বজলু আরও জানান, জীবনযাত্রার অব্যাহত ব্যয়বৃদ্ধির কারণেও চলতি বছর গরু বিক্রি কম হবে।
গাবতলী হাটের ইজাদারের প্রতিনিধি মো. সোহেল জানান, হাটে বিপুলসংখ্যক গরু, মোষ, খাসি তোলা হয়েছে। রাস্তায় যানজটের কারণে গরু আসতে দেরি হলেও হাটে গরুর কমতি নেই। আগামীকাল থেকে পুরোদমে হাটে গরু আসা শুরু হবে। বর্ডারে তেমন কোনো সমস্যা হলে গরুর কোনো সঙ্কট হবে না। আগামী শুক্রবার থেকে পুরোদমে বেচাকেনা শুরু হবে বলে আশা করছেন তিনি।
No comments