কুমিল্লা সিটির নির্বাচন করবে পরবর্তী নির্বাচন কমিশন by কাজী হাফিজ

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে সাফল্যের সর্বশেষ দৃষ্টান্ত হিসেবে নিয়ে বর্তমান নির্বাচন কমিশনাররা বিদায় নিতে চান। তাঁদের মেয়াদের মধ্যেই নবগঠিত কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠানের আইনি বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। কমিশনাররা নির্বাচন না করার পক্ষে যুক্তি খুঁজছেন এবং এরই মধ্যে তেমন কিছু যুক্তিও দাঁড় করানো হয়েছে। বলা হচ্ছে, পরবর্তী নির্বাচন কমিশন এ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন সম্পন্ন করবে।কমিশন সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বর্তমান নির্বাচন কমিশনারদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে।


আর সংশ্লিষ্ট আইন অনুসারে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের শেষ সময় হচ্ছে আগামী ৫ জানুয়ারি। গত ১০ জুলাই এ সিটি করপোরেশন গঠিত হয়েছে। 'স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন-২০০৯' অনুসারে সিটি করপোরেশন গঠিত হওয়ার ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কমিশনের হাতে এ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য এখনো দুই মাসের বেশি সময় রয়েছে। কিন্তু বর্তমান নির্বাচন কমিশনাররা আর কোনো ঝুঁকি নিতে চান না। তাঁদের ধারণা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের ক্ষেত্রে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে বিশাল সাফল্যের পর আর কোনো ঝুঁকি নেওয়া ঠিক হবে না। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) হাতে জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের নির্বাচনও রয়েছে। কিন্তু এ নির্বাচন স্রেফ আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।
বিষয়টি সম্পর্কে গতকাল নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন করতে হলে আমাদেরকে ৪৫ দিন সময় হাতে রেখে এ মাসের ২০-২২ তারিখের দিকে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করতে হবে। কিন্তু সরকার এখন পর্যন্ত এ সিটি করপোরেশনের সীমানা নির্ধারণসংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করেনি। গেজেট প্রকাশের পরও নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বেশ কিছু কাজ করতে হবে। ওয়ার্ডের সীমানা অনুযায়ী ভোটার তালিকা পুনর্বিন্যাস করতে হবে। এ কাজে কত দিন সময় লাগবে তা বলা যাচ্ছে না। কারণ, নারায়ণগঞ্জের তুলনায় কুমিল্লায় এ কাজটি বেশ জটিল হবে বলেই আমাদের ধারণা। নারায়ণগঞ্জে তিনটি পৌরসভাকে এক সঙ্গে করে সিটি করপোরেশন গঠন করা হয়েছিল। ওয়ার্ডগুলো আগের সীমানায় বহাল রাখা হয়। কিন্তু কুমিল্লাতে তা হচ্ছে না। কয়েকটি ইউনিয়ন পরিষদের অংশও সিটি করপোরেশনের মধ্যে চলে এসেছে। সীমানা নির্ধারণী গেজেট প্রকাশের পর বিষয়টি নিয়ে যে আইন-আদালত হবে না তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। এ ছাড়া আমাদের দেশব্যাপী ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজও শুরু করতে হবে। এই বাস্তবতায় সম্ভবত আমরা কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন সম্পন্ন করে যেতে পারব না। এ কাজটি আমাদের উত্তরসূরী নির্বাচন কমিশনারদেরই করতে হবে।'
এদিকে কমিশন সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, সর্বশেষ গত ৯ অক্টোবর কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের সীমানা নির্ধারণের গেজেট কবে প্রকাশিত হবে, তা জানতে চেয়ে কমিশন থেকে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সেই চিঠির জবাব আজও পাওয়া যায়নি।
সেনা নিয়োগ প্রশ্নে এখনো আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা চাওয়া হয়নি : এদিকে গতকাল পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কেন সেনা মোতায়েন করা হলো না_নির্বাচন কমিশন সে বিষয়ে সরকারের কাছে আনুষ্ঠানিক কোনো ব্যাখ্যা চায়নি। এ নির্বাচনে ভোটগ্রহণের আগে গত শুক্রবার এবং নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার পর গত রবিবার সন্ধ্যায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ড. এ টি এম শামসুল হুদা সাংবাদিকদের বলেছিলেন, তিনি এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারের কাছে ব্যাখ্যা চাবেন। কিন্তু গতকাল নির্বাচন কমিশনার জানান, কী ফরম্যাটে সরকারের কাছে এ বিষয়ে চিঠি দেওয়া হবে, তা নিয়ে এখনো বৈঠক হয়নি।
নতুন দুই কমিশনার নিয়োগ হচ্ছে না : এদিকে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর পর নির্বাচন কমিশনে আরো দুজন কমিশনার নিয়োগ পেতে যাচ্ছে শোনা গেলেও সে ধরনের কোনো ঘটনা ঘটছে না বলে জানান এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, 'এ বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। আমরা জানিয়েছি, অতিরিক্ত দুজন কমিশনার নিয়োগ দেওয়া হলে কমিশন সচিবালয়ে তাদের বসার জায়গা দেওয়া, গাড়ির ব্যবস্থা করা এবং অন্যান্য লজিস্টিক সাপোর্ট দেওয়ায় সমস্যা হবে। আমাদের এখনো নিজস্ব কোনো ভবন হয়নি। এ বক্তব্যের পর আমরা ধারণা করছি, আমাদের মেয়াদে নতুন কোনো নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না।'
নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য আপনারা 'প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার (নিয়োগ পদ্ধতি) আইন-২০১১' প্রণয়নের প্রস্তাব নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেছেন। ওই প্রস্তাব বাস্তবায়নের বিষয়ে আপনারা কতটুকু আশাবাদী_এ প্রশ্নে এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, 'এ বিষয়ে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মতামত এখনো পাইনি। আওয়ামী লীগ নেতারা এটিসহ নির্বাচনী আইন সংস্কারের অন্যান্য বিষয়ে পরে আমাদের সঙ্গে বসবেন বলে জানিয়েছিলেন, কিন্তু এখনো বসেননি। আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে, আওয়ামী লীগের মতামত না পেলেও ডিসেম্বরে আমাদের প্রস্তাবগুলো চূড়ান্ত করে সরকারের কাছে পাঠানো হবে। এর সব বাস্তবায়িত না হলেও নির্বাচন কমিশনের প্রত্যাশার দলিল হিসেবে তা সংরক্ষিত থাকবে।'

No comments

Powered by Blogger.