আইএইএ’র প্রতিবেদন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত - ইরান : তেহরান পরমাণু অস্ত্র তৈরি করছে - জাতিসংঘ

রান পরমাণু অস্ত্র তৈরি করছে বলে শক্ত প্রমাণ পাওয়া গেছে—দাবি জাতিসংঘ পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ)। দেশটি তাদের দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে পরমাণু অস্ত্রের উন্নতি করছে। আইএইএ’র প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ইরান পরমাণু বোমার নকশা তৈরি করছে।জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষক সংস্থা আইএইএ ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। মঙ্গলবার আইএইএ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পরমাণু অস্ত্র তৈরির ব্যাপারে তেহরান কাজ করছে বলে তাদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য রয়েছে।


আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরানের পরমাণু কার্যক্রমের সম্ভাব্য সামরিক তত্পরতা নিয়ে সংস্থাটি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। সাবধানতার সঙ্গে যাচাই করা ও বিশ্বস্ত তথ্যে দেখা গেছে, পরমাণু বোমার নকশা তৈরির ক্ষেত্রে ইরান কাজ করেছে। সংস্থাটি আরও জানায়, ২০০৩ সালের শেষ দিকে ইরান এ কাজ করেছে এবং এখনও কিছু কাজ চলছে। সংস্থাটি বলছে, ইরান পরমাণু অস্ত্রের প্রাথমিক নকশাসহ সংশ্লিষ্ট উপকরণের পরীক্ষাও চালিয়েছে। এ বিষয়ে পরমাণু পর্যবেক্ষক সংস্থা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে আগামী সপ্তাহে প্রতিবেদন দিতে পারে। একইসঙ্গে সংস্থাটি ইরানকে কোনো ধরনের বিলম্ব ছাড়াই সত্যিকার অর্থে আইএইএ’কে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে। ইরান প্রথম থেকে বলছে, তাদের পরমাণু কার্যক্রমের উদ্দেশ্য শান্তিপূর্ণ। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আহ্বান অবজ্ঞা করায় জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ তেহরানের ওপর এ পর্যন্ত চার দফা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। আইএইএ’র এই প্রতিবেদন তেহরান নাকচ করে দিয়ে বলেছে, মিথ্যা তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। মঙ্গলবার প্রকাশিত আইএইএ’র প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, ইরান পরমাণু কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ফলে বিশ্বে যে সামরিক ভিন্নতা সৃষ্টি হবে তা নিয়ে সংস্থাটি উদ্বিগ্ন। প্রতিবেদনে পাওয়া তথ্যগুলো অত্যন্ত সতর্ক এবং পুঙ্খনাপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করে সংস্থাটি জানিয়েছে, ইরানের পরমাণু কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে পাওয়া তথ্যগুলো অত্যন্ত ‘বিশ্বাসযোগ্য’। প্রতিবেদনের তথ্যগুলোই নির্দেশ করে, ইরান পরমাণু বিস্ফোরক যন্ত্রপাতি এবং অস্ত্রগুলোর উন্নতির জন্য কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সংস্থাটি বলছে, প্রকাশিত তথ্যে দেখা যায়, অত্যন্ত পরিকল্পিত কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ২০০৩ সালের আগে থেকেই ইরান এ ধরনের কাজ চালিয়ে আসছে এবং এখনও তারা সেই কাজের কিছু এখনও চালিয়ে যাচ্ছে। ভিয়েনাভিত্তিক একটি সংস্থাটি বলেছে, তাদের কাছে এমন তথ্য রয়েছে যে ইরান তাদের দেশীয় নকশায় পরমাণু অস্ত্রের উন্নয়ন করছে। এমনকি পরমাণু অস্ত্রের বিভিন্ন উপাদানের পরীক্ষাও ইরান করছে। এদিকে আইএইএ’র মহাসচিব ইউকিয়া আমানো ইরানের শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচি সম্পর্কে যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন, তেহরান তাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।
এদিকে ইরান পরমাণু বোমা তৈরির চেষ্টা করছে—এমন কোনো প্রমাণ পাশ্চাত্যের কাছে নেই বলে তেহরান ঘোষণা করেছে। আইএইএ ইরানের বিরুদ্ধে নতুন প্রমাণ উপস্থাপন করতে যাচ্ছে বলে পশ্চিমা গণমাধ্যমে যখন ফলাও করে খবর প্রচার হচ্ছে, তখন তেহরান এ ঘোষণা দিল।
আর্মেনিয়া সফররত ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলি আকবর সালেহি মঙ্গলবার দেশটির রাজধানী ইয়েরেভানে বলেছেন, ইরান পরমাণু বোমা তৈরি করতে যাচ্ছে—এমন কোনো প্রমাণ নেই। পাশ্চাত্য ও যুক্তরাষ্ট্র কোনো প্রমাণ ছাড়াই ইরানের ওপর চাপপ্রয়োগের চেষ্টা করছে।
আমানো এমন সময় ভিয়েনায় আইএইএ’র সদর দফতরে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন, যখন তিনি নিজেই এর আগে স্বীকার করেছিলেন, ইরানের বেসামরিক পরমাণু কর্মসূচিতে কোনো ধরনের বিচ্যুতি ঘটেনি। অন্যদিকে এ প্রতিবেদন প্রকাশের আগে জাতিসংঘের সদর দফতর সফরের অজুহাত দেখিয়ে আমানো যুক্তরাষ্ট্র সফর করেছেন। সেখানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাত্ করেছেন। এসব সাক্ষাত্ থেকে দীক্ষা নিয়ে আমানো ইরান সম্পর্কে এমন কিছু অভিযোগ করেছেন যা তিনি দায়িত্ব গ্রহণের আগে ও পরে আইএইএ, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের চাপ সত্ত্বেও প্রত্যাখ্যান করে আসছিলেন।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, আমানোর প্রতিবেদনে নতুন কোনো তথ্যউপাত্ত তুলে ধরার পরিবর্তে প্রমাণ হিসেবে ২০০৪ সালে পাওয়া কথিত একটি ল্যাপটপের তথ্য তুুলে ধরা হয়েছে। আইএইএ’র সাবেক মহাসচিব মোহাম্মাদ আলবারাদি ওই ল্যাপটপকে বানোয়াট ও ভিত্তিহীন বলে প্রত্যাখ্যান করে তা ফাইলবন্দি করে রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন। ওয়াশিংটন ও তেলআবিব চেয়েছিল, ওই ল্যাপটপের তথ্যকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে ইরানের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হোক। আলবারাদি সে চাপ প্রত্যাখ্যান করলেও আমানো তার কাছে নতিস্বীকার করেছেন। কাজেই দেখা যাচ্ছে, আমানোর প্রতিবেদনে ইরান সম্পর্কে নতুন কোনো তথ্য নেই এবং নতুন তথ্য থাকার যে দাবি তিনি করেছেন, তা সম্পূর্ণ অসত্য।
চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হোং লেই মঙ্গলবার সাংবাদিকদের জানান, পরমাণু কর্মসূচির বিষয়ে ইরানকে ‘নমনীয়তা’ দেখানোর পাশাপাশি দৃঢ়ভাবে ‘সহযোগিতা করা’ উচিত। একইসঙ্গে হোং লেই আইএইএ’কে ‘সঠিক এবং নিরপেক্ষভাবে’ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন। হোং লেই আরও জানান, চীন পরমাণু অস্ত্র বিস্তারের পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যের যে কোনো দেশের পরমাণু অস্ত্র উন্নয়ন কর্মসূচির বিরোধী।

No comments

Powered by Blogger.