পিরোজপুরে দু'পক্ষের সংঘর্ষ বাড়িঘরে আগুন, নিহত ২

পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার পেনাখালী গ্রামে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দু'পক্ষের সংঘর্ষে দু'জন নিহত ও দেড় শতাধিক লোক আহত হয়েছে। দীর্ঘদিনের বিরোধের জের ধরে মঙ্গলবার দাড়িয়া বংশের সঙ্গে হাওলাদার ও শেখ বংশের লোকজনের সংঘর্ষ হয়। এ সময় ৯৮টি ঘরবাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ১৮ রাউন্ড রাবার বুলেট ও ৫ রাউন্ড কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে।


পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ৩০ সেপ্টেম্বর ও ১৯ অক্টোবর দুটি হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনার পর বাড়িঘরছাড়া দাড়িয়া বংশের পুরুষরা পার্শ্ববর্তী গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলা থেকে
পেনাখালী বাজারে আসার জন্য মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে জড়ো হলে অস্থায়ী ক্যাম্পের পুলিশ ও হাওলাদার এবং শেখ বংশের লোকজন তাদের যৌথভাবে তাড়া করে। দুপুর ১২টার দিকে দাড়িয়া বংশের লোকজন সংগঠিত ও দেশি অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে পুলিশের দিকে তেড়ে যায়। এ সময় পুলিশ এবং শেখ ও হাওলাদার গ্রুপ একযোগে আক্রমণ চালিয়ে দাড়িয়া বংশের লোকজনকে টুঙ্গিপাড়া উপজেলার মধুখালী গ্রামে তাড়িয়ে নিয়ে যায়। পুলিশ গুলি ও কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। পিরোজপুরের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার আতিকুর রহমান মিয়া জানান, পুলিশ মারমুখী লোকজনকে হটাতে ১৮ রাউন্ড রাবার বুলেট ও ৫ রাউন্ড কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। অভিযোগ উঠেছে, এ সময় পুলিশের সঙ্গে থাকা শেখ ও হাওলাদার বংশের লোকজন প্রতিপক্ষের ওপর দেশি অস্ত্রশস্ত্র এবং আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে আক্রমণ চালায়। গুলি ও অস্ত্রের আঘাতে ইয়াহিয়া দাড়িয়া (৩২) ও দোকানদার বাবুল শেখ (৩০) ঘটনাস্থলেই নিহত হয় এবং ফারুক দাড়িয়া, হাসান, সোলায়মান দাড়িয়া, বাবু কামরুল দাড়িয়া, নজরুল দাড়িয়া, রেফাউল দাড়িয়া, দিলু দাড়িয়া, ফারুক দাড়িয়া, নিলু দাড়িয়া, সাইদুল দাড়িয়া, জাহিদ দাড়িয়া, হাফিজুল ফরাজী, সেলিম দাড়িয়াসহ শতাধিক গ্রামবাসী আহত হয়।
আহতদের গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতাল, টুঙ্গিপাড়া হাসপাতাল ও বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানায়, দাড়িয়ারা হটে গেলে পুলিশের উপস্থিতিতে পুরুষশূন্য দাড়িয়াপাড়ায় ঢুকে প্রতিপক্ষের লোকজন ৯৮টি ঘরবাড়িতে পেট্রোল ও কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় হামলা চালিয়ে নারী-শিশুসহ অর্ধশতাধিক লোকজনকে আহত করা হয়। বাছেত দাড়িয়া ও নজরুল দাড়িয়া মোবাইল ফোনে জানান, ১৯ অক্টোবরের ঘটনার পর পেনাখালীতে ১০ সদস্যের পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করায় দাড়িয়া বংশের পুরুষরা পুলিশের ভয়ে এবং প্রতিপক্ষের হুমকির কারণে পাশের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে আশ্রয় নেয়। ঈদের পরদিন তারা বাড়িঘরে ফেরার চেষ্টা করলে পুলিশ তাড়া করে। একপর্যায়ে পুলিশ গুলি ছোড়ে। পাশাপাশি পুলিশের মদদে টিপু সুলতান শেখের নেতৃত্বে হাওলাদার ও শেখ বংশের লোকজন আগ্নেয়াস্ত্র এবং দেশি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়ে দু'জনকে হত্যা ও দেড় শতাধিক মানুষকে জখম করে। গোপালগঞ্জ শহরের বাসিন্দা জেলা বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সহ-সভাপতি ফিরোজ আহমেদ জানান, পেনাখালী গ্রামে দীর্ঘদিন ধরে গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্ব বিরাজ করছে।
টিপু সুলতানের নির্দেশে পুলিশ পরিচালিত হচ্ছিল। স্থানীয় এমপি একেএমএ আউয়ালের কাছের মানুষ টিপুর মদদে এলাকায় এত বড় ঘটনা ঘটল। পেনাখালী গ্রামের মোসলেম দাড়িয়া, বাছেত দাড়িয়া, সুলতানা বেগম, মাহাতাব দাড়িয়াও একই অভিযোগ করেন।
গতকাল বরিশাল রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি ভানু রঞ্জন ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে বলেন, পেনাখালীতে বিভিন্ন বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়ার বিষয়টি '৭১-এর পাকবাহিনীর ধ্বংসযজ্ঞকেও হার মানিয়েছে। এ ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ সময় ইব্রাহীম শেখ নামে একজন ডিআইজির কাছে অভিযোগ করেন, পুলিশের গুলিতে দু'জন নিহত হয়েছে। এর প্রমাণ বিনষ্ট করতে সন্ত্রাসীরা জখমস্থল ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে বিকৃত করেছে। অভিযোগের জবাবে অতিরিক্ত ডিআইজি বলেন, ময়নাতদন্তে এর প্রমাণ পাওয়া গেলে দায়ী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুলিশের পক্ষপাতিত্বের অভিযোগের বিষয়ে অতিরিক্ত ডিআইজি বলেন, এ বিষয়েও তদন্ত করে ব্যবস্থ নেওয়া হবে।

No comments

Powered by Blogger.