কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে কারসাজি :তিন বছরের মধ্যে দাম কম by আবু হেনা মুহিব

ত তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম দামে এ বছর কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রি হয়েছে। গত বছরের তুলনায় প্রতি পিস গরুর চামড়ার দর কমেছে গড়ে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। খুচরা পর্যায়ে গত বছর মাঝারি আকারের গরুর চামড়া প্রতি পিসের দাম ছিল গড়ে ২ হজারর ১০০ থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা। এ বছর ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকার বেশি দাম ওঠেনি। সাধারণত কোরবানির মৌসুমে একদিনের জন্য চামড়া সংগ্রহ করে আড়তদারের কাছে বিক্রি করেন এমন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা কেনা চামড়া নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। অনেকের সংগ্রহ করা চামড়া পচে যাচ্ছে।


এ পরিস্থিতির জন্য মৌসুমি ব্যবসায়ীরা স্থানীয় পর্যায়ের চামড়ার আড়তদারদের দায়ী করেছেন। আর আড়তদার এবং বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন পরস্পরের বিরুদ্ধে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কারসাজির অভিযোগ করেছে।
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ গতকাল সমকালকে জানান, স্থানীয়ভাবে আড়তদার পর্যায়ে শক্তিশালী একটি সিন্ডিকেটের কারণে এ বছর চামড়ার প্রকৃত দর পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় আড়তদাররা চামড়ার
কৃত্রিম সংকট তৈরি করে ট্যানারি মালিকদের কাছ থেকে বেশি দর আদায়ের চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী আরও ২-৩ দিন পর চামড়া সংগ্রহ করা হবে। তখন প্রকৃত পরিস্থিতি বোঝা যাবে। তবে এ বছর আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার দর ১৫ শতাংশ হারে কম থাকায় স্বাভাবিক কারণে কোরবানির মৌসুমে গত বছরের দর পাওয়া যাওয়ার কথা নয়। ট্যানারি মালিক পর্যায়ে কোনো ধরনের কারসাজির অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি। এদিকে বাংলাদেশ
কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী
সমিতির সভাপতি মোঃ আফতাব গতকাল সমকালকে বলেন, খোলা বাজার থেকে যে কেউ চামড়া কিনতে পারেন। ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশেনের নেতারা বিভিন্ন মাধ্যমে কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করেছেন। সুতরাং আমাদের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ সত্য নয়। দর কম প্রসঙ্গে আফতাব বলেন, চার মাস ধরেই চামড়ার দর কমছে। অন্যদিকে আড়তদার পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা এ পরিস্থিতির জন্য রাজধানীর ট্যানারি মালিকদের দায়ী করেন। বগুড়ার চামড়া আড়তদার আবদুর রউফ জানান, গত তিন বছরের মধ্যে সবচেয় কম দামে এ বছর কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রি হয়েছে। তিনি বলেন, গত বছর সারাদেশের আড়তদাররা কোটি কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হন। খুচরা ব্যবসায়ীদের ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা হারে আর্থিক ক্ষতি গুনতে হয়েছে। রউফ বলেন, গত বছর ট্যানারি মালিকরা দর বেঁধে না দিয়ে চামড়ার ভালো দর দেওয়ার কথা বলেও পরে টালবাহানা করেন। ফলে বেশি দামে চামড়া কিনে ব্যবসায়ীদের কোটি কোটি টাকা ক্ষতি গুনতে হয়। সে অভিজ্ঞতায় এ বছর ঈদের আগে থেকে ব্যবসায়ীরা ট্যানারিগুলোকে আগাম রেট নির্ধারণ করে দিতে দাবি জানালেও ঈদের পর পর্যন্ত দর নির্ধারণ করা হয়নি। বরং আন্তর্জাতিক বাজারের পড়তি দরের অজুহাতে কম দামে চামড়া কিনতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এবার গরুর চামড়া গড়ে কেনা হয়েছে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৫০০ এবং ছাগল ১৫০ টাকায়।
চট্টগ্রাম মহানগর কাঁচা চামড়া আড়তদার সমবায় সমিতির সভাপতি মোসলেম উদ্দিন সমকালকে বলেন, সাধারণত ট্যানারি মালিকরাই চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দেন। এবার তারা দাম নির্ধারণ না করায় এ নিয়ে বিভ্রান্তি ছিল। তৃণমূল পর্যায়ের মৌসুমি ব্যবসায়ীরা ধারণার ওপর দাম নির্ধারণ করে চামড়া সংগ্রহ করেন। সে চামড়া প্রতি বর্গফুট হিসাবে ৭৫ থেকে ১০০ টাকায় কেনা হয়েছে।
বিভিন্ন এলাকার মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা ফুট হিসাবের পরিবর্তে গরুর চামড়াকে তিন সাইজে ভাগ করে অনুমাননির্ভর দামে কিনেছেন। ছোট সাইজের চামড়া ৬০০ থেকে ৮০০, মাঝারি ৮০০ থেকে ১ হাজার ১০০ এবং বড় সাইজের চামড়া ১ হাজার ২০০ থেকে দেড় হাজার টাকায় কেনা হয়েছে। চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের বেলচো এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মহিন সমকালকে জানান, সদর থেকে পাইকার না আসায় তার কেনা ৯০ পিস চামড়া লবণ দিয়ে ফেলে রেখেছেন। মহিন বলেন, ঢাকা এবং জেলা শহরের পরিচিত আড়তদাররা কারসাজি করে দু'দিন ধরে মোবাইল ফোন বন্ধ রেখেছেন। এ অবস্থায় তারা এখন বিপাকে পড়েছেন।
ঈদের আগেই এ বছর কোরবানির পশুর চামড়া পাচার কিংবা অব্যবহৃত অবস্থায় পচে যাওয়ার আশঙ্কা করেছিলেন এ খাতের ব্যবসায়ীরা। পর্যাপ্ত ব্যাংক ঋণ না পাওয়া, আন্তর্জাতিক বাজারে দরের ব্যাপক ওঠানামা এবং বাংলাদেশের তুলনায় ভারতে চামড়ার দর বেশি হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এসব আশঙ্কা করা হয়। সে কারণে চামড়ার দর আগাম নির্ধারণ করা হয়নি। সূত্রমতে বর্তমানে দেশের ট্যানারিগুলোতে ৬০ লাখ পিস চামড়া মজুদ রয়েছে। দু'মাস ধরে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রফতানিও কমেছে। কমছে অর্ডারও। ফলে চামড়ার সরবরাহের তুলনায় চাহিদা কম। এসব কারণেও দাম কম হতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.