ঈদের ছুটিতে রাজধানী ভেসেছে আনন্দস্রোতে by এসএম মুন্না

দ মানেই আনন্দ। আর সে আনন্দ যদি হয় প্রাণের উচ্ছ্বাসে ভেসে যাওয়া, তাহলে তো কথাই নেই। ঈদুল আজহার ছুটিতে গত তিন দিনে ঢাকার প্রধান বিনোদন কেন্দ্রগুলো দেখে এমনটাই মনে হয়েছে। ঈদের আগের দিন থেকেই খুশির জোয়ার বইতে থাকে। ঈদের দিন দুপুরের পর নগরীর সব পথ যেন মিশেছিল শাহবাগের শিশুপার্ক, ঢাকা চিড়িয়াখানা, শ্যামলীর শিশুমেলা আর গুলশানের ওয়ান্ডারল্যান্ডে। ঢাকা যে প্রায় নির্জন নগরীতে পরিণত হয়ে গেছে, এসব বিনোদন কেন্দ্রের চিত্র দেখে তা বোঝার উপায় ছিল না। এমনকি সংসদ ভবন, বোটানিক্যাল গার্ডেন, চন্দ্রিমা উদ্যানসহ উন্মুক্ত উদ্যানগুলোও জনস্রোতে ভেসে যায়। উৎসবের রঙে রঙিন ছিল তিলোত্তমা ঢাকা।


ঢাকার অদূরে আশুলিয়ার ফ্যান্টাসি কিংডম কমপ্লেক্স ও নবীনগর বারইপাড়ার নন্দন পার্কেও ছিল বিনোদনপ্রিয় মানুষের উপচেড়া ভিড়। শিশুরাই মাতিয়ে রেখেছিল প্রতিটি বিনোদন কেন্দ্র। রূপকথার না হোক, শিশুমেলা আর পার্কের পঙ্খীরাজ ঘোড়ায় চড়ে আনন্দ-উল্লাসে উড়েছে শিশুরা। সঙ্গে অভিভাবক থাকলেও শিশুরা ছিল যেন মুক্ত বিহঙ্গ। ঈদের ছুটিতে সবাই পছন্দমতো খুঁজে নিয়েছেন আনন্দের নানা উৎস। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অনেকেই ঘুরে বেড়িয়েছেন চন্দ্রিমা উদ্যান, সংসদ ভবনের চারপাশ, রমনা ও গুলশান পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, টিএসসি, ধানমণ্ডি লেক, লালবাগ কেল্লা, আহসান মঞ্জিলসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে। তিন দিনের ছুটি শেষে গতকাল বুধবার অফিস-আদালত খুললেও এখনও ছুটির আমেজ কাটেনি।
রাস্তায় নেই যানজট, কালো ধোঁয়া। চারপাশে বইছে নির্মল বাতাস। এ সুযোগে আনন্দপিপাসু নগরবাসীর কেউ রিকশায়, কেউ দলবেঁধে হেঁটে মুক্ত পরিবেশে ঘুরে বেড়িয়েছেন।
এবারও ঈদের ছুটিতে সবচেয়ে বেশি ভিড় ছিল ঢাকা

চিড়িয়াখানায়। পরিবার-পরিজন নিয়ে অনেকেই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি নানা পশু-পাখি দেভে সময় কাটিয়েছেন। নিম্নবিত্ত থেকে শুরু করে উচ্চবিত্তরাও ভেসেছেন প্রকৃতির বুকে নির্মল আনন্দে। ঈদের পরের দিন থেকে টানা দু'দিন ঢাকা চিড়িয়াখানা ছিল লোকারণ্য। একাধিক টিকিট কাউন্টার স্থাপন করার পরও দর্শনার্থীদের ভিড় সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয়েছে কর্তৃপক্ষকে। তবে দর্শনার্থীদের মধ্যে ছোটরাই রাজত্ব করেছে পুরো চিড়িয়াখানায়। বানরের বাঁদরামি, বাঘের হম্বিতম্বি, লম্বা গলার জিরাফ, হাতির পিঠে চড়ে আনন্দমুখর সময় কাটিয়েছে শিশু-কিশোররা।
আট বছরের শিশু সুরমা চিড়িয়াখানায় এসে হাতির পিঠে চড়ে যারপরনাই খুশি। তারপরই বায়না ধরল লম্বা গলার জিরাফের পিঠে চড়বে। জিরাফের পিঠে যে চড়া যায় না, সে কিছুতেই মানতে চাচ্ছে না। তাই তার মন খারাপ। তবে বানরের বাঁদরামি দেখে মুখে হাসি ফোটে তার। তার মা খাদিজা বেগম জানান, সারা বছর স্কুল আর নানা ব্যস্ততার কারণে ঘর থেকে বাইরেই বেরোতে পারে না মেয়ে। তাই এখানে এসে একেবারে বাঁধনছাড়া হয়ে গেছে।
সুরমার মতোই অবস্থা এখানে আসা প্রায় সব শিশুর। তারাও নির্মল আনন্দে মেতেছিল। এসব শিশুর সঙ্গে অভিভাবকরাও ফিরে যাচ্ছিলেন নিজের স্মৃতিভাবাতুর অতীতে।
শাহবাগের শিশুপার্কেও ছিল প্রচণ্ড ভিড়। এখানেও ছোটদের সঙ্গী ছিলেন বড়রা। রোমাঞ্চ চক্র, আনন্দ ঘূর্ণি, উড়ন্ত বিমান, উড়ন্ত নভোযান, ফুলদানি আমেজ, ঝুলন্ত চেয়ার, লম্ফঝম্ফ, ব্যাটারি কার, এফ সিং জঙ্গি বিমান, রেলগাড়ি, বিস্ময় চক্রসহ প্রতিটি রাইডে চড়ার জন্য শিশুদের লাইন ছিল দীর্ঘ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও তারা চড়েছে এসব রাইডে। এত ভিড় ছিল যে, কেউ সুযোগ পেয়েছে_ কেউ পায়নি।
অনেকেই ছুটে গেছেন শ্যামলীর শিশুমেলা, গুলশানের ওয়ান্ডারল্যান্ডসহ রাজধানী ও এর আশপাশে বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে। ঐতিহাসিক স্থাপনা লালবাগ কেল্লা ও আহসান মঞ্জিলে ছিল ব্যাপক জনসমাগম। আশুলিয়ার ফ্যান্টাসি কিংডম, ওয়াটার কিংডম, হেরিটেজ পার্ক ও নবীনগর বাড়ইপাড়ার নন্দন পার্ক ঈদ উপলক্ষে বিশেষ বিশেষ অফার ঘোষণা করে। এ সুযোগ লুফে নিতে হাজার হাজার শিশু-অভিভাবক ভিড় জমায় এসব বিনোদন কেন্দ্রে। ঈদের দিন দুপুর থেকে গতকাল বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ফ্যান্টাসি কিংডম, ওয়াটার কিংডম ও নন্দনপার্কের প্রতিটি রাইডে চড়ার জন্য ছিল শত শত মানুষের দীর্ঘ লাইন। ছোটদের পাশাপাশি তরুণ-তরুণীরাও সরব ছিল এই আনন্দ আয়োজনে।
ঢাকার সিনেমা হলগুলোতেও ছিল সিনেমাপ্রেমীদের সরব সমাগম। মধুমিতা, অভিসার, বলাকা, রাজমণি, পূর্ণিমা, বসুন্ধরা স্টার সিনেপ্লেক্সসহ সব প্রেক্ষাগৃহ ছিল পরিপূর্ণ।
ঈদ উপলক্ষে 'ঢাকাবাসী' সংগঠনের উদ্যোগে গতকাল বুধবার নগরীতে ঈদ আনন্দ শোভাযাত্রা বের হয়। শোভাযাত্রা উপলক্ষে শিশু একাডেমী প্রাঙ্গণে ছিল শিশু-কিশোরদের প্রাণের উচ্ছ্বাস। এই আনন্দে শুধু ছোটরাই নয়, যোগ দিয়েছিলেন বড়রাও। বহুদিন ধরে চলে আসা এই আনন্দ শোভাযাত্রায় ফুটে ওঠে পুরনো ঢাকার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি।
'ঢাকার প্রাণ বুড়িগঙ্গা' প্রতিপাদ্য নিয়ে এবারের শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন কমনওয়েলথ সোসাইটি বাংলাদেশের সভাপতি ইনাম আহমেদ চৌধুরী। এ সময় 'ঢাকাবাসীর' উপদেষ্টা শেখ খোদা বকস, শিরিন সুলতানা, নাগিনা চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ঢাকাবাসীর সভাপতি মোঃ শুকুর সালেক।
বক্তারা বলেন, বাবুবাজার থেকে আমিন বাজার পর্যন্ত বুড়িগঙ্গা দখল হয়ে গেছে। এগুলো উদ্ধার করে বুড়িগঙ্গার প্রাণ ফিরিয়ে আনতে হবে। নৌযোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করার জন্য ওয়াটারবাস চালুর দাবি জানান বক্তারা।

No comments

Powered by Blogger.