অপেক্ষা আরো কিছুদিনের by কামরুল হাসান
দেবেন্দ বিশুর বলটা আলতো করে কাভারে পাঠিয়ে একটা রানের জন্য ছুটলেন। নেহাতই সাদামাটা সিঙ্গেল। কিন্তু সেটা পূর্ণ হওয়ার আগেই ফিরোজ শাহ কোটলা স্টেডিয়ামে বজে র মতো করতালি! কী ব্যাপার? মাত্র তো ২৮ রান হলো শচীন টেন্ডুলকারের। ভারতের জয়টাও তখনো বেশ দূরে। তাহলে গ্যালারিজুড়ে এমন উচ্ছ্বাস আর দর্শকদের কান-ফাটানো চিৎকারের কারণ কী? নিজের দ্বিধাটা দূর করতেই যেন ইলেকট্রনিক স্কোরবোর্ডের দিকে আরো একবার তাকালেন টেন্ডুলকার। তার
পরেই তাঁর মুখে একটা মুচকি হাসি! বড় বড় করে লেখা উঠেছে '১৫ হাজার টেস্ট রানের জন্য অভিনন্দন শচীন।'
একহাতে ব্যাট আর একহাতে হেলমেটটা ওপরে তুলে ধরে স্বভাবসুলভ একবার আকাশের দিকে তাকালেন। ও প্রান্ত থেকে ছুটে এসে হাত মেলালেন রাহুল দ্রাবিড়। আর বিশুর ওভারটা শেষ হওয়ার পর তো করমর্দন করার জন্য রীতিমতো লাইনে দাঁড়ালেন ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেটাররা! হতে পারেন প্রতিপক্ষ কিন্তু এ অর্জনের সাক্ষী হয়ে থাকলেন তো তাঁরাও!
অপেক্ষাটা আসলে ১৫ হাজার রানের জন্য এতটা ছিল না, যতটা ছিল তাঁর ১০০তম সেঞ্চুরির জন্য! সেটা হয়নি। স্বপ্নের অর্জন থেকে মাত্র ২৪ রান দূরে থাকতে সেই বিশুর বলেই এলবিডাবি্লউ হয়ে ফিরে গেছেন। ততক্ষণে ভারত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জয়ের খুব কাছাকাছি, তাই সেটা নিয়ে খুব বেশি দুশ্চিন্তা ছিল না। ছিল আফসোস। সেটাও যতটা না টেন্ডুলকারের, তার চেয়ে বেশি যেন অগুনতি ভক্ত-সমর্থকের। ১৫ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করাটা দিন শেষে তাদের কিছুটা হলেও সান্ত্বনা দিয়েছে।
টেন্ডুলকার এমনই। প্রতিবার তিনি মাঠে নামেন, একটা না একটা রেকর্ড তাঁর হয়ই! হয় ভাঙেন নতুবা নতুন করে গড়েন। তাঁর যত রেকর্ড, অনেক ক্রিকেটারের হয়তো তত রানই হয়নি! প্রত্যাশা যতই আকাশচুম্বী হোক, সেটা যদি টেন্ডুলকারের কাছে হয়, তাহলে তা কখনোই বাড়াবাড়ি নয়। হ্যাঁ, রেকর্ড করাটা টেন্ডুলকার এতই সাধারণ ব্যাপার বানিয়ে ফেলেছেন।
বিখ্যাত ক্রিকেট কলামিস্ট পিটার রোবাক একবার ভারত সফরের সময় সিমলা থেকে দিলি্ল গিয়েছিলেন ট্রেনে করে। সেদিনই কোনো একটা ম্যাচে ব্যাট করছিলেন টেন্ডুলকার। ট্রেনটা যখন একটা স্টেশনে থামল, রেডিওতে শোনা গেল টেন্ডুলকারের ৯৮ রান। সব যাত্রী, রেলওয়ের কর্মকর্তা, স্টেশনে থাকা প্রতিটা মানুষ থেমে অপেক্ষা করতে লাগল ভারতীয় ক্রিকেট ঈশ্বরের সেঞ্চুরির জন্য। ট্রেন ছাড়া হলো নির্ধারিত সময়ের অনেক পরে, টেন্ডুলকার সেঞ্চুরি করলে তবে! যেটা দেখে পরে পিটার রোবাক লিখেছিলেন, 'আমি এমন একটা মানুষকে দেখেছি যিনি ভারতে সময়কে থামিয়ে রাখতে পারেন!'
অনেক আগে 'উইজডেন ক্রিকেটার'-এর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, 'এখন পর্যন্ত যা করেছি, তাতেও আমি সন্তুষ্ট নই। সানি (সুনীল গাভাস্কার) আমাকে বলেছে যদি আমি টেস্টে ১৫ হাজার রান করতে না পারি, তাহলে ও খুব রাগ করবে। আমি ওকে এত সম্মান করি যে তাকে রাগিয়ে দেওয়ার কোনো ইচ্ছে নেই।' তার মানে ফিরোজ শাহ কোটলা স্টেডিয়ামে ১৫ হাজারের হঠাৎ করতালি শুনে যতটা অবাক হয়েছিলেন, আসলে ততটা নয়। বরং এই মাইলফলকে পেঁৗছানোর ইচ্ছেটা তাঁর মধ্যে আগে থেকেই ছিল। বিস্ময়কর! কারণ টেস্টে একা কোনো ক্রিকেটার কোনো দিন ১৫ হাজার রান করবে, এটা ভাবাই অলীক স্বপ্নের মতো। একসময় টেন্ডুলকারের কাছাকাছি যাঁরা ছিলেন, তাঁদের কাউকে জিজ্ঞেস করে দেখুন তাঁরা এমন কিছু ভেবেছিলের কি না? হয়তো সাহসই করেননি। টেন্ডুলকার শুধু সেই স্বপ্ন সত্যিই করেননি, অর্জনটাকে এমন এক জায়গায় রেখে যাচ্ছেন যেখানে হয়তো আর কেউ কোনো দিন পেঁৗছাতে পারবেন না। টেস্ট রানের দিক দিয়ে তাঁর ঠিক পেছনে থাকা রাহুল দ্রাবিড় (১২৮৫৯) যদি ১৫ হাজার রানে পেঁৗছাতে চান, তাহলে বর্তমান ব্যাটিং গড় অনুযায়ী আরো অন্তত ৪০টা ইনিংস খেলতে হবে, রিকি পন্টিংয়ের (১২৪৮৭) লাগবে অন্তত ৪৭টা ইনিংস, জ্যাক ক্যালিসের (১১৯৪৭) অন্তত ৫৩টা! পড়তি বয়সে ফর্ম ধরে রেখে এত কিছু সম্ভব? তাঁরা কেউ তো টেন্ডুলকার নন। আর কিছুদিনের জন্য যদি টেন্ডুলকার হয়েও ওঠেন, তাহলেও লাভ নেই। নিজের রানটাকে কি আর তখনো এই জায়গায় রাখবেন ব্যাটিং জিনিয়াস? কোনোভাবে তাঁকে স্পর্শ করার আশা তাই এখনই বাদ দিয়ে দিতে পারেন বাকি সবাই!
টেন্ডুলকার হয়তো এমনই। আজ না হোক কাল তাঁর শততম সেঞ্চুরিটাও হবে। কিন্তু ক্রিকেটকে তিনি নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছেন তো প্রতিদিনই!
একহাতে ব্যাট আর একহাতে হেলমেটটা ওপরে তুলে ধরে স্বভাবসুলভ একবার আকাশের দিকে তাকালেন। ও প্রান্ত থেকে ছুটে এসে হাত মেলালেন রাহুল দ্রাবিড়। আর বিশুর ওভারটা শেষ হওয়ার পর তো করমর্দন করার জন্য রীতিমতো লাইনে দাঁড়ালেন ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেটাররা! হতে পারেন প্রতিপক্ষ কিন্তু এ অর্জনের সাক্ষী হয়ে থাকলেন তো তাঁরাও!
অপেক্ষাটা আসলে ১৫ হাজার রানের জন্য এতটা ছিল না, যতটা ছিল তাঁর ১০০তম সেঞ্চুরির জন্য! সেটা হয়নি। স্বপ্নের অর্জন থেকে মাত্র ২৪ রান দূরে থাকতে সেই বিশুর বলেই এলবিডাবি্লউ হয়ে ফিরে গেছেন। ততক্ষণে ভারত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জয়ের খুব কাছাকাছি, তাই সেটা নিয়ে খুব বেশি দুশ্চিন্তা ছিল না। ছিল আফসোস। সেটাও যতটা না টেন্ডুলকারের, তার চেয়ে বেশি যেন অগুনতি ভক্ত-সমর্থকের। ১৫ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করাটা দিন শেষে তাদের কিছুটা হলেও সান্ত্বনা দিয়েছে।
টেন্ডুলকার এমনই। প্রতিবার তিনি মাঠে নামেন, একটা না একটা রেকর্ড তাঁর হয়ই! হয় ভাঙেন নতুবা নতুন করে গড়েন। তাঁর যত রেকর্ড, অনেক ক্রিকেটারের হয়তো তত রানই হয়নি! প্রত্যাশা যতই আকাশচুম্বী হোক, সেটা যদি টেন্ডুলকারের কাছে হয়, তাহলে তা কখনোই বাড়াবাড়ি নয়। হ্যাঁ, রেকর্ড করাটা টেন্ডুলকার এতই সাধারণ ব্যাপার বানিয়ে ফেলেছেন।
বিখ্যাত ক্রিকেট কলামিস্ট পিটার রোবাক একবার ভারত সফরের সময় সিমলা থেকে দিলি্ল গিয়েছিলেন ট্রেনে করে। সেদিনই কোনো একটা ম্যাচে ব্যাট করছিলেন টেন্ডুলকার। ট্রেনটা যখন একটা স্টেশনে থামল, রেডিওতে শোনা গেল টেন্ডুলকারের ৯৮ রান। সব যাত্রী, রেলওয়ের কর্মকর্তা, স্টেশনে থাকা প্রতিটা মানুষ থেমে অপেক্ষা করতে লাগল ভারতীয় ক্রিকেট ঈশ্বরের সেঞ্চুরির জন্য। ট্রেন ছাড়া হলো নির্ধারিত সময়ের অনেক পরে, টেন্ডুলকার সেঞ্চুরি করলে তবে! যেটা দেখে পরে পিটার রোবাক লিখেছিলেন, 'আমি এমন একটা মানুষকে দেখেছি যিনি ভারতে সময়কে থামিয়ে রাখতে পারেন!'
অনেক আগে 'উইজডেন ক্রিকেটার'-এর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, 'এখন পর্যন্ত যা করেছি, তাতেও আমি সন্তুষ্ট নই। সানি (সুনীল গাভাস্কার) আমাকে বলেছে যদি আমি টেস্টে ১৫ হাজার রান করতে না পারি, তাহলে ও খুব রাগ করবে। আমি ওকে এত সম্মান করি যে তাকে রাগিয়ে দেওয়ার কোনো ইচ্ছে নেই।' তার মানে ফিরোজ শাহ কোটলা স্টেডিয়ামে ১৫ হাজারের হঠাৎ করতালি শুনে যতটা অবাক হয়েছিলেন, আসলে ততটা নয়। বরং এই মাইলফলকে পেঁৗছানোর ইচ্ছেটা তাঁর মধ্যে আগে থেকেই ছিল। বিস্ময়কর! কারণ টেস্টে একা কোনো ক্রিকেটার কোনো দিন ১৫ হাজার রান করবে, এটা ভাবাই অলীক স্বপ্নের মতো। একসময় টেন্ডুলকারের কাছাকাছি যাঁরা ছিলেন, তাঁদের কাউকে জিজ্ঞেস করে দেখুন তাঁরা এমন কিছু ভেবেছিলের কি না? হয়তো সাহসই করেননি। টেন্ডুলকার শুধু সেই স্বপ্ন সত্যিই করেননি, অর্জনটাকে এমন এক জায়গায় রেখে যাচ্ছেন যেখানে হয়তো আর কেউ কোনো দিন পেঁৗছাতে পারবেন না। টেস্ট রানের দিক দিয়ে তাঁর ঠিক পেছনে থাকা রাহুল দ্রাবিড় (১২৮৫৯) যদি ১৫ হাজার রানে পেঁৗছাতে চান, তাহলে বর্তমান ব্যাটিং গড় অনুযায়ী আরো অন্তত ৪০টা ইনিংস খেলতে হবে, রিকি পন্টিংয়ের (১২৪৮৭) লাগবে অন্তত ৪৭টা ইনিংস, জ্যাক ক্যালিসের (১১৯৪৭) অন্তত ৫৩টা! পড়তি বয়সে ফর্ম ধরে রেখে এত কিছু সম্ভব? তাঁরা কেউ তো টেন্ডুলকার নন। আর কিছুদিনের জন্য যদি টেন্ডুলকার হয়েও ওঠেন, তাহলেও লাভ নেই। নিজের রানটাকে কি আর তখনো এই জায়গায় রাখবেন ব্যাটিং জিনিয়াস? কোনোভাবে তাঁকে স্পর্শ করার আশা তাই এখনই বাদ দিয়ে দিতে পারেন বাকি সবাই!
টেন্ডুলকার হয়তো এমনই। আজ না হোক কাল তাঁর শততম সেঞ্চুরিটাও হবে। কিন্তু ক্রিকেটকে তিনি নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছেন তো প্রতিদিনই!
No comments